সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
ছোটোদের ওয়েব পত্রিকা ইচ্ছামতী ১৬ বছর পূর্ণ করল।

চাঁদের বুড়ির চরকা-চিঠি: ১৪৩১/০২ - আমরা চাই ন্যায়বিচার

অনেকদিন পর বসেছি তোমার সঙ্গে একটু গল্প করতে, একটু করা বলতে। কেমন আছ তুমি?মহালয়া পেরিয়ে গেছে, কাগজে কলমে দুর্গাপুজো এসে হাজির। জানলা দিয়ে মুখ বাড়ালেই হয়ত দেখা যাবে মা দুর্গা সপরিবারে পাড়ার মোড় থেকে এগিয়ে আসছেন । চারদিকে অনেক আলো, পাড়ায় পাড়ায় বিশাল সব মন্ডপ। তবুও, এইবছর পুজোটা অনেকখানিই অন্যরকমের পুজো। তার ইঙ্গিত যেন ছড়িয়ে রয়েছে আকাশে-বাতাসে। আকাশের মুখ পরিষ্কার হয়েও হচ্ছে না, জল ভরা মেঘ, ঘূর্ণী বাতাস, ফিরে ফিরে আসছে । পশ্চিমবঙ্গের উত্তর থেকে দক্ষিণে, বিভিন্ন জেলা বন্যায় ভেসে যাচ্ছে।

গত ৯ অগাস্ট, ২০২৪, কলকাতা শহরের বুকে ঘটেছে এক ভয়ানক, নৃশংস হত্যাকান্ড। আর জি কর মেডিকাল কলেজ ও হাসপাতালের ভিতর, নিজের কর্মস্থলে নিহত হয়েছেন এক তরুণী চিকিৎসক। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, এবং হত্যা করার আগে তাঁর উপর নানাভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। এই খবর সবার সামনে উঠে আসার পরে, চুপ করে বসে থাকেনি এই শহর, এই রাজ্য, এই দেশ। 'তিলোত্তম' /'অভয়া'-র মৃত্যুর জন্য দায়ী দোষীদের শাস্তির দাবীতে পথে নেমেছেন সমস্ত বয়সের, সমস্ত রকম পেশার মানুষজন। বাদ যায়নি ছোটো ছোটো মেয়েরা আর ছেলেরাও।

হঠাৎ করেই যেন, কয়েকদিনের মধ্যে এক ধাক্কায় অনেকখানি বড়ো হয়ে গেছে আমাদের ছোট্ট বন্ধুরা, তাই না? যে সমস্ত বিষয় নিয়ে সাধারণত তোমাদের সঙ্গে আমরা — বড়োরা — আলোচনা করতে চাই না, বাংলা শব্দভান্ডারের যে সমস্ত শব্দকে 'সাবালক' শব্দ বলা যায়, যে সমস্ত অভিজ্ঞতা আমরা চাই না যে কারোর হোক — সেই সব কিছু টেলেভিশন চ্যানেলে, খবরের কাগজে, সোশ্যাল মিডিয়াতে ছয়লাপ হয়ে গেল। এর সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা ব্যাপার হল। অনেকেই তাদের মা-বাবার সঙ্গে সঙ্গে যোগ দিতে গেল পথসভায়, হাঁটতে গেল মিছিলে। সবাই বুঝে গেল, জেনে গেল যে একজন ভালো ডাক্তার দিদিকে খুব, খুব কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলেছে কয়েকটা দুষ্টু লোক। সেই দুষ্টু লোকেদের শাস্তির জন্য, এই বাংলার বুকে বড়োদের সঙ্গে ছোটোরাও কচি গলায় দাবী তুলল- 'We Want Justice'।

প্রায় দুই মাস ধরে ঘটে চলা এই অভূতপূর্ব, অহিংস গণআন্দোলন আমাদের আশেপাশে ছোটোদের, ইচ্ছামতীর বন্ধুদের জীবনকে কেমনভাবে প্রভাবিত করে চলেছে — ভালোভাবে না খারাপভাবে— তা আমরা বুঝব আরও বেশ কিছুদিন পরে। আপাতত, ইচ্ছামতীর 'ইচ্ছেমতন' বিভাগে গুছিয়ে তুলে রাখলাম বিভিন্ন বয়সী ছোটোদের কিছু আঁকা, লেখা;সঙ্গে রইল তাদের মা-বাবাদের অভিজ্ঞতা। ইচ্ছেমতন বিভাগটি নথীভুক্ত করে রাখুক এই সময়ের কচিকাঁচাদের মনের ভাবনাগুলি। বেশীরভাগ লেখা/ছবিই অভিভাবকদের অনুমতিসহ নেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। নিজের বাড়ির ছোট্টো মানুষদের আগামী দিনের সংবেদনশীল, বুঝদার নাগরিক তৈরি করার পথে হাঁটার জন্য তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আগামী দিনেও যদি কেউ চায় , অভিভাবকেরা যদি চান, তাহলে আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন এমন সব ছবি বা লেখা।

এই পুজো ভালো কাটুক বা খারাপ, একা কাটুক বা অনেকের সঙ্গে, ঘরের কোণে কাটুক কিংবা পাড়ার প্যান্ডেলে কিংবা রাতজাগা মিছিলে, নতুন জামাকাপড় পরি বা না-ই পরি, উপহার পাই বা না পাই, ভালোমন্দ খাই বা না খাই, হই-হুল্লোড় করি বা না করি, বেড়াতে যাই বা না যাই, ... একটা কথা যেন আমরা কেউ না ভুলে যাই — 'We Want Justice / আমাদের চাই ন্যায়বিচার'।

এই দেবীপক্ষে, সবাই মিলে একসঙ্গে মা দুর্গাকে বলি চলো - দুষ্টের দমন করো। তিলোত্তমার অপরাধীদের শাস্তি দাও।

৩ অক্টোবর ২০২৪
১৬ আশ্বিন ১৪৩১

বৃহস্পতিবার, অক্টোবার 03, 2024

অত্রীশ মুখার্জি (তিয়াম), ৬ বছর, কলকাতা

তিয়ামের মা প্রজ্ঞা দেবনাথ লিখেছেন:
চারিদিক থেকে শুনে রোজ নিরন্তর প্রশ্ন করেছে তিয়াম। ওকে যতটা বোঝানো সম্ভব ততটা বুঝিয়েছি। বরাবরই ওর সঙ্গে মোটের উপর খোলাখুলিই কথা বলি। তাতেও সবটা বোঝাতে পারিনি। না বুঝিয়ে ওকে মিছিলে সামিল করতে চাইনি আমি। যেটুকু যা বোঝার পর থেকে আমায় বলেছে, মা আমিও মিছিলে যাব। ওকে সব বোঝানোর পর আরও কিছু কথা বলেছিলাম। প্রমিস করতে বলেছিলাম। ছবি ভিডিওতে দেখেছে লোকের হাতে পোস্টার। নিজে হাতে পোস্টার লিখেছে আজ। শুধু 'কষ্ট' বানানটা আমি বলে দিয়েছি।আজ আমি আর তিয়াম অনেকগুলো জমায়েতে গেলাম। আমায় রাস্তায় যেতে যেতে বলেছে, 'মা তুমি ভয় পেও না, আমি মেয়েদের সঙ্গে কখনও খারাপ করব না।' জমায়েতের পাশে পুলিশদের দেখে বলেছে, 'ওরা কেন বাজে লোকগুলোকে ধরছে না মা?' গড়িয়া থেকে যাদবপুর ৮বি অবধি প্রায় ৫-৬টি জমায়েতে আমরা 'we want justice' বলে স্লোগান তুলেছি। স্কুটিতে 'লড়াই করো' গান গেয়েছি। বাড়ি ঢোকার একটু আগে তিয়াম বলল, 'মা, কাল আমরা এই মিছিলের সবাই মিলে বাজে লোকগুলোকে খুঁজতে যাই চলো। সবাই মিলে খুঁজলে ঠিক পেয়ে যাব। দিদি টাকে এত কষ্ট দিয়েছে, ওদের ধরতেই হবে। তারপর‌ তুমি আর (হাত গুণে) আরও ৯টা মেয়ে লাগবে।‌ দশজন একসঙ্গে হলেই দুর্গা হয়ে যাবে। অসুরকে মেরে ফেলতে পারবে।' এই কথার একটি বর্ণও আমার বানানো নয়, বিশ্বাস করুন। ও এটাই বলল। ভবিষ্যত কী বলবে জানি না, আপাতত এটাই আমার‌ পুঁজি! ভেবেছিলাম ছবি তুলব না, পোস্ট করব না। কিন্তু আমার মনে হল ওর আশাটুকু আরও মানুষের আশা হোক। ওর বিশ্বাসটুকু সত্যি হোক। সত্যি হোক। সত্যি হোক।

অনুমেহা ঘোষ, ১২ বছর, রায়গঞ্জ

অনুমেহার মা শর্মিষ্ঠা ঘোষ জানিয়েছেন অনুমেহা তার মা-বাবার সঙ্গে বিচারের দাবী চেয়ে তার শহরের সমস্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে। 

স্রোত বসু (মেঘ), ৮ বছর, কলকাতা

মেঘের মা শ্রী বসু জানিয়েছেন:
মেঘের স্কুল থেকে মিস বলেন, ১টা এক্সট্রা খাতা দিতে যেখানে অবসর সময়ে ওরা ছবি আঁকবে । সেই খাতাটা মাঝে মাঝেই আমি উল্টে পাল্টে দেখি । ও ছবি আঁকতে ভালবাসে । তাই ওর মনের মধ্যে কি চলছে তার ১টা প্রতিচ্ছবি আমি ওই খাতাটার মধ্যে পাই । কখনো স্কুলের ছবি, মিসের ছবি, রোনাল্ডোর ছবি, শপিং মল, হোটেল ইত্যাদি ইত্যাদির ছবি চোখে পড়ে। আজ হঠাৎ এটা চোখে পড়ল... বুঝলাম বিষয়টার গভীরতা না বুঝলেও এটাও ওর মধ্যে ছাপ ফেলেছে... বানান ভুল, ট্যারাব্যাকা ফিগার কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যেও কি অদ্ভুত ১টা ভালো লাগার অনুভূতি হল । গত ৯ তারিখ থেকে আমায় প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়েছে বহুবার । অনেকরকম ভাবে ৮ বছরের ছেলে কে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যতটা ওর পক্ষে বোঝা সম্ভব । বাড়িতে ব্যাজ, গাড়িতে স্টিকার, মা মাঝরাতে মিছিলে যাচ্ছে, বাবা হাসপাতালের মিছিলে সবই দেখছে কিন্তু তার মাঝে স্কুলে গিয়ে তিনিও যে এসব করছেন জানতাম না । আজ এটা দেখার পর জিজ্ঞেস করলাম এটা কখন আঁকলি ? বলল - "কেন ? স্কুলে । আর আমি সবাই কে শিখিয়েও দিয়েছি কি ভাবে উই ওয়ান্ট জাস্টিস করতে হয় । কেউ কেউ জানত, যারা জানত না, তাদের শিখিয়ে দিয়েছি ।"

ধীময়ী দাশ (পুটপুট), ৬ বছর, কলকাতা

পুটপুটের দাদু বিমোচন ভট্টাচার্য লিখেছেন:
কাল সন্ধেবেলা হেঁটে আসার পর আমার কাছে এলো। বলে - বাবা আমায় একতা জিনিস দিয়েছে।কী জিনিস বলো তো দাদুই? আমি বললাম- পারবো না। দেখি ওকে ওর মোবাইলটা ফেরত দিয়েছে ওর বাবা৷ প্রচুর অ্যাক্টিভিটি আছে তাতে। সিম নেই৷ অবসর সময়ে খেলে। বলে - জাস্তিস বানান কী? শুনে চলে গেল নিজেদের ঘরে৷ ফিরে এসে বলে - চোখ বন্ধ করো। বন্ধ করলাম চোখ৷ খুলে কি দেখলাম? আপনারাও দেখুন।

ঐশঞ্জাত সাহা (বাহার), ৯ বছর, কলকাতা

ঐশঞ্জাত-র মা নীপমঞ্জরী বর্মনের কথায়:
বাহার জলরং সবে শুরু করেছে। ওর মামা ওকে একটা ছবি বানাতে বলেছিল নিজের ভাবনা দিয়ে এখনকার সময় নিয়ে। কাল রাতে এটা বানালো ওর নিজের মতন করে। একদম নিজের ভাবনার প্রথম পোস্টার। সত্যি আমরা না চাইলেও ওরা কত বড় হয়ে গেল...

রিদা আলিনা, ১১ বছর, কলকাতা

রাজ জি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া খুব খারাপ ঘটনার প্রতিবাদে কবিতা লিখেছে রিদা আলিনা। কবিতাটি পাঠিয়েছেন রিদার দাদু জামাল ভড়।

তৃষা ব্যানার্জি,  ১২ বছর, কলকাতা

আমাদের রাজ্যে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে তৃষার লেখা কবিতা এবং আঁকা ছবি পাঠিয়েছেন তৃষার বাবা স্নেহাংশু ব্যানার্জি

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ইচ্ছেমতন বিভাগ থেকে

ছড়া-কবিতা বিভাগ থেকে

গল্পস্বল্প বিভাগ থেকে

বসুন্ধরা বিভাগ থেকে

অতীতকথা বিভাগ থেকে

পুরাণকথা বিভাগ থেকে

জানা-অজানা বিভাগ থেকে

ধারাবাহিক