আফ্রিকার ঠিক মাঝখানে রয়েছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো ( আগে নাম ছিল জায়রে)। এই দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া কঙ্গো নদীর নামে এই দেশ নিজের নতুন নাম রেখেছে। এটি আফ্রিকার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত এবং এই মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ --- এর চারদিকেই রয়েছে অন্যান্য দেশ, আর কোনো সমুদ্রের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ নেই, তাই একে বলে landlocked country।
আমার স্বামীর কর্মসূত্রে আমরা এখন থাকি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর রাজধানী কিনশাশা শহরে। এই শহরেই রয়েছে লোলা ইয়ো বোনোবো অভয়ারণ্য, যার দুদিকে রয়েছে কঙ্গো নদী আর কাসাই নদী। এই অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে বোনোবোদের জন্য। বোনোবোরা হল প্রাইমেট বর্গের (Great Ape) প্রাণী, যারা এই মূহুর্তে বিপন্ন প্রজাতি রূপে চিহ্নিত। এদের কাছাকাছি প্রজাতির প্রাণীরা হল শিম্পাঞ্জি, গোরিলা আর ওরাংউটান।
আমরা একদিন লোলা ইয়ো বোনোবো অভয়ারণ্যে গেছিলাম বোনোবোদের সঙ্গে আলাপ করতে। তোমাদের সঙ্গেও ভাগ করে নিচ্ছি সেই অভয়ারণ্যের আর বোনোবোদের কিছু ছবি।
আমি এক বোনোবো। আমার সঙ্গে মানুষের ( Homo Sapiens) মিল প্রায় ৯৭ %। আমরা পঞ্চাশ থেকে ষাট বছর অবধি বাঁচি।
দেখো বাপু, এত লোক আমাদের দেখতে এসেছে বলে আমার মাথায় আজ অনেক চিন্তা। ভাবছি, তোমরা আমাদের সম্পর্কে ঠিক কতটা জানো? দাঁড়াও, আমিই বলি। আমাদের দেহের গড়ন রোগাটে, আর মাথার ওপরে রয়েছে মানুষের মত সিঁথি। আমাদের গায়ের রং বেশ কালো, চোখ আর ঠোঁটের চারপাশে চামড়ার রং গোলাপি। আমাদের অনেকেরই পায়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় আঙুলগুলি লিপ্তপদ বৈশিষ্টযুক্ত।
আমাদের সামনের আর পেছনের হাত আর পাগুলি প্রায় মানুষেরই মত।
তোমাদের মতই, আমরাও একটা পরিবারের মধ্যে বাঁচতে ভালোবাসি। আমাদের সমাজ মাতৃতান্ত্রিক। মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক খুব দৃঢ়। বয়ঃসন্ধি হওয়ার পরে, মেয়েরা আলাদা হয়ে নতুন পরিবার শুরু করে। স্ত্রী বোনোবো প্রতি পাঁচ থেকে ছয় বছরে একবার সন্তানের জন্ম দিতে পারে।
আমরা এখানে এক ঘেরা জায়গায় থাকি। মানুষের মতই, আমাদেরও প্রত্যেকের নাম আছে। আমাদের মানুষ অভিভাবক/ পালকেরা আমাদের দেখা শোনা করেন।
আমরা মূলতঃ নিরামিশাষী। পেঁপে, কলা, আনারস আমাদের প্রিয় ফল। এই দেখো, আমাদের জন্য পেঁপে কেটে রাখা হয়েছে।
অনাথ বোনোবোদের ভালোবেসে দেখভাল করেন মানুষ মায়েরা।
এই দেখো, আমার পালিকা মা আমার হাত ধরে রেখেছেন যাতে আমি পড়ে না যাই।
যাও বাপু, আমার এখন তোমার সঙ্গে সেল্ফি তোলার কোনো ইচ্ছেই নেই। বরং, পরিবারের সবার সঙ্গে আমার একটা ছবি তুলে দাও দেখি।
এই হল লোলা ইয়া বোনোবো অভয়ারণ্য। ভারী সুন্দর প্রকৃতি, মাঝে বয়ে চলেছে এক ছোট্ট নদী। ছবি তোলার জন্য ভালো জায়গা, তাই না?
আমরা এই দেশের এবং এই বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, এবং আমাদের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন। ১৯৮০-এর দশকে আমাদের মোট সংখ্যা ছিল ১০০,০০০; এখন আমাদের সংখ্যা মোটে ২০,০০০। চোরাশিকার যদি চলতে থাকে তাহলে আমরা একদিন এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাব। তাই সবাইকে বলছি — আমাদের রক্ষা করো।