দেশটা বেশ! মণিপুর।
ইম্ফল ছাড়িয়ে যত এগোতে থাকি, চোখে পড়ে ঘননীল আকাশে সাদা সাদা মেঘের আনাগোনা; আর রয়েছে আদিগন্ত বিশাল মাঠ, গাছ গাছালি আর মাঝে মধ্যে ছোট ছোট টুকরো টিনের চালা, মাটির বা লালচে ইঁটের কোঠা বাড়ির ছোট ছোট জনবসতি। তার সামনে পুরানো ডোবা আর এঁদো রাস্তা এসে মিশেছে রাজপথে। হঠাৎ আমাদের গাড়িটির গতি ধীর হতে হতে একসময় স্থির হল। চেয়ে দেখি সামনে রংবেরঙের পোশাকের কিশোরী থেকে মহিলাদের রাস্তা অবরোধ। দাবী! চাঁদা চাই, ওদের উৎসব। বড় উৎসব - "ছাওয়াল থাম্বা"। অবশেষে চাঁদার বিনিময়ে মিলল মুক্তি। আবার এগিয়ে চলা। আঁকাবাঁকা রাস্তা এবার এগিয়ে চলে কখনও ঘন ঝোপ ঝাড়ে ভরা টিলার ওপর, আবার পর মুহুর্তে নেবে গেছে ফাঁকা মাঠ প্রান্তরে।
আই এন এ স্মারক, মইরাং
আমরা এসে পৌঁছলাম শহরতলি মইরাঙে। পরাধীন ভারতবর্ষে ১৯৩০ সালে এখানে সুভাষ চন্দ্র বসু আই. এন. এ. বাহিনী নিয়ে প্রথম স্বাধীন পতাকা উত্তলন করেছিলেন। আজ উনত্রিশ মার্চ দুহাজার একুশ সাল। আজ হোলি। জাতীয় ছুটি। তাই সংগ্রহালয় বন্ধ। বাইরে সুভাষ চন্দ্র বসুর মুর্তিতে প্রণাম জানিয়ে এগিয়ে এলাম সেই বিখ্যাত স্থান যেখানে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। এখনো পতপত করে উড়ছে পতাকা তবে এটা স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা। গর্বে ও অনুগত্যে মাথা নুইয়ে গিয়েছিল বইকি। বড় একটা সেলাম ঠুকে চোখ বন্ধ করে সেই বীর যোদ্ধাকে স্মরণ করলাম আমরা সবাই।
গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদায়
এবার গন্তব্য লোকতাক হ্রদের দিকে। ক্রমশ রাস্তা এগিয়ে চলে বিশাল জলরাশির মধ্যেকার ছোট ছোট টিলার কোলের মধ্য দিয়ে। ঘাড় উঁচু টিলার উপর ঘন বাঁশের জঙ্গল আর তার কোলে আঁকা বাঁকা চড়াই উৎরাই কংক্রিট পথ। তার নিচে অসংখ্য ঘুপচি টিনের চালার বাড়ি ঘরদোর। তারপরেই যতদূর চোখ যায় শুধু জল আর জল, মাঝে মাঝে সবুজ ঘাস-গুল্ম দিয়ে ছোট ছোট গোলাকার বাঁধের মতো অবয়ব। উত্তরের হাওয়ায় বয়ে আনে হ্রদের হাল্কা জোলো আঁশটে গন্ধ। আমাদের রাস্তা কখনও চালা বাড়ির বারান্দার নীচ দিয়ে, আবার কখনও খাড়াই রাস্তার উপর টলমল চালাঘরের পাশ দিয়ে এগিয়ে চলে। পথের ধারে দাওয়ায় বসা অসংখ্য বলিরেখার উদাস চাউনির বৃদ্ধ বৃদ্ধা, নয়তো কচিকাঁচাদের এদিক ওদিক বিচরণ। আবার পথের বাঁকে রঙ্গিন পোশাকের খুদে কিশোরীদের দড়ি ধরে এপার ওপার ঘেরাও। চাঁদা চাই, চাইই - চাই।
উঁচু নীচু পথে
এবার গাড়িটা একটা টিলার নিচে "ঘ্যারর – ঘ্যারর" শব্দ করে বড় একটা ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেল। অমনি সবাই একে একে নেমে রাস্তা পার হয়ে হ্রদের দিকে খাড়া ঢালু গেরুয়া পথে এগিয়ে চলি। আঁকাবাঁকা সে রাস্তার দুপাশে গজিয়ে ওঠা ঘন সবুজ ঘাস পাতার মধ্যে হলুদ, বেগুনী ফুল হ্রদের উপর থেকে ধেয়ে আসা হাওয়ায় তিরতিরিয়ে হেলেদুলে আমাদের স্বাগতম জানায়। ঠিক তার পরেই গেরুয়া মাখা সাদাটে মাটির দেওয়াল ও মরচে পড়া টিনের ছাউনির ছোট ছোট বাড়িগুলো একে অপরের ঘাড়ে মুখ গুঁজে নির্বাক বিস্ময়ে চেয়ে আছে বিদেশীদের দিকে!
অবশেষে বিরাট মাটির উঠোনে এসে আমাদের যাত্রা শেষ। পাকা বাড়ি মাথায় টালির ছাউনি। এটাই আমাদের আপাত অস্থায়ী আস্তানা। গাঁট্টাগোট্টা তামাটে রং, আর্ধেক মাথা সাদা কালো খোঁচা খোঁচা চুলের গৃহকর্তা আমাদের সাদরে ডেকে নিয়ে গেল। পরনে সাদা পাজামা পাঞ্জাবী ঘাড়ে সাদা উত্তরীয়, মুখে অমলিন হাসি। ভাব ভঙ্গিতে বোঝা যায় আতিথিয়তার কোন ত্রুটি রাখতে নারাজ। পাকা মেঝের দাওয়ায় সাজানো চেয়ারে বসার অনুরোধ করছেন আকারে ইঙ্গিতে। আমার চোখ তখন বাড়ির মাথায় আধমরচে সরু টিভির "স্টিক অ্যান্টেনার" দিকে। তার মাথায় একটা ফিঙ্গে উল্টোদিকের হ্রদের হাওয়ায় দিব্যি দোল খাচ্ছে।
মস্ত খাবারের আয়োজন। বাঙালি খাবার। ভাত, ডাল, মাছ, মাংস, চাটনি ইত্যাদি ইত্যাদি। যাকে বলে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া। বাড়ির মহিলারা রান্না থেকে পরিবেশন সবই করলেন। তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে আমরা যেইনা বারান্দার চেয়ারে আরাম করে বসেছি, অমনি ডাক পড়ল। রওনা দিতে হবে এক্ষুনি। বেলা পড়ে আসছে। এবার গন্তব্য সব থেকে বড় টিলার মাথা থেকে সূর্যাস্ত দেখা। সে এক মনোরম দৃশ্য! কেউ ছাড়তে নারাজ সে দৃশ্য দেখতে। আবার দৌড়।
বড় টিলার মাথায় 'ওয়াচ টাওয়ার' থেকে উত্তর-দক্ষিণ, পূব-পশ্চিম চারদিকটা অবলীলায় দেখা যায়। এখন আমরাই এই বিশাল জলরাশির মধ্যে জেগে থাকা দ্বীপের একমাত্র বাসিন্দা। দৌড়ঝাঁপ করে এদিক ওদিক দাপিয়ে বেড়িয়ে আমরা আবার শৈশবে ফিরে গেছি! উল্টোদিকের ঢালু সিঁড়িটা নেমে গেছে পাশাপাশি কাঁটাতার ঘেরা সুসজ্জিত বসত বাড়ির মাঝখানে। ঠিক যেমন কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের 'ওয়াল পেপারের' ছবির মতো। অতি মনোরম। কতগুলো কিশোর কিশোরী ওদের ভাষায় চেঁচিয়ে দৌড় ঝাঁপ করে আনন্দে মাতোয়ারা। এখনতো ওদের পরবের সময়। নাঃ প্রবেশ নিষেধ। বন্ধ দ্বার। অনুরোধে ওরা কোন সাড়া দিলনা। অগত্যা ফিরে আসি ক্যামেরা বন্ধ করে।
লোকতাক হ্রদ
ক্যামেরা বা চলভাষে প্রকৃতির মনোরম মুহুর্তগুলো ধরে রাখছে সবাই। আবার কেউ খাতা পেন নিয়ে দ্রুত আঁকিবুকি কেটে তা কাগজ ধরে রাখছে। এদিকে দুটি লম্বা গাছের গুঁড়ির মাঝখানে পাতা বেঞ্চে মৌজ হয়ে বসে উপভোগ করতে থাকি বিশাল জলরাশির জলরঙ্গের দিকে। প্রতি প্রহরে যার রূপ ও রং পরিবর্তন মোহময় করে তোলে চারিদিক। সঙ্গে ঝিরঝিরে হাওয়ায় প্রাণ জুড়িয়ে যায় বইকি। নগর সভ্যতার অত্যাচার থেকে সাময়িক নিষ্কৃতি। আমার তখন কাব্যিক মেজাজ।
ততক্ষণে সূয্যিমামা পশ্চিমে ঢলে পড়ে টিলার মাথায় লুকোচুরি খেলছে। আর তার গৈরিক আভায় চারিদিকে মায়াবী জলরং খেলা করছে হ্রদের জল ক্যানভাসে। দূরে হ্রদের সবকিছু আধো কুয়াশার আস্তরণে ঢেকে যাচ্ছে। জলের উপর জেগে থাকা ঝোপঝাড় ক্রমশ আধো অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। এদিকে উল্টোদিকের জঙ্গলে গাছে গাছে বাসায় ফেরা পাখিদের ক্যাচর ম্যাচর শব্দে ভরে যাচ্ছে চারিদিক। আর সামনের কালচে স্থির জলরাশির গভীরে তার প্রতিফলন মিলিয়ে যাচ্ছে খুব ধীরে। একটু পরে নিস্তব্ধতা ও অন্ধকারে সব তলিয়ে যাবে। চোখ ফেরাতেই দেখি সূয্যি ঠাকুর কখন যেন ওপারের টিলার পেছনে ডুব দিয়েছেন! আর তার লালচে কমলা তীব্র আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে পশ্চিমের নীলাভ আকাশে। তখন প্রকৃতিও মেতেছে বসন্তের রঙ্গিন দোলে।
ফিরতেই হল। পুরানো আস্তানায়। গরম চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে দেখি, উঠোনে দুটি ছোট্ট 'খুকুমনি' খেলায় মগ্ন। খুব সম্ভবত গৃহকর্তার নাতনী। আমরা বিদেশী অতিথি ওদের বাড়িতে, কোন গুরুত্ব দিতে নারাজ। ফিরেও তাকালো না, নিজেদের খেলায় মগ্ন। তক্ষুণি গৃহকর্তার ছেলে কতগুলো গেরুয়া রঙের 'লাইফ জ্যাকেট' নিয়ে এসে ফেলে রাখল সামনের কালো চৌপাইয়ের উপর। এবার আর এক রোমাঞ্চকর যাত্রার শুরু। সবাই একে একে জ্যাকেটগুলো গায়ে চড়িয়ে নিল। রোমাঞ্চ ও উত্তেজনায় সবাই তটস্থ। আমরা এবার হ্রদের মাঝে এদের ভাসমান বাড়িতে রাত্রীতে অতিথি হয়ে রাত কাটাবো। তাই জ্যাকেট পরে এখন ডিঙ্গি নৌকায় যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি।
বাড়ির পেছনে সবজি ক্ষেতের মাঝে সরু চিলতে মেঠো পথে আমরা বীরদর্পে এগিয়ে চলি। পালং, লঙ্কা, বেগুন, মূলো, ওলকপি, বাঁধাকপি আরো কত কীসব ড্যাবডেবিয়ে চেয়ে আছে আমাদের দিকে। তারপরেই মুরগি খোঁয়াড়। বিদেশীদের দেখে "কোঁয়াক–কোঁয়াক" শব্দে তঠস্থ হয়ে ওঠে। তার ওপারে সরু ফালি কাঠের রান্নাঘরে মহিলাদের রান্নার তোড়জোড়। সম্ভবত আমাদের জন্য রাত্রির আহারের প্রস্তুতি।
এবার রাস্তা এসে ঠেকল পাশাপাশি পুকুরপাড়ে। সাঁঝ আলোতে ধরা পড়ে তলানি জলে চুনোপুঁটির রুপোলী আভা! কিন্তু সামনে যে বড় বাধা! প্রকান্ড ফলন্ত সবুজ পেঁপেগাছ রাস্তা আগলে দাঁড়িয়ে আছে নির্বিকারে। কী করি! বাধ্য হয়ে ওকে আলিঙ্গন করে টপকে এগোতে থাকি। অমনি চোখে পড়ে পাশের বাড়ির পেছনে পুকুর পাড়ে তক্তার খালি খোঁয়াড়ঘরে ফ্যাকাশে মোটা লেজওয়ালা সারমেয় মশাই বিশ্রামে বুঁদ। পরিচয় করতে ইচ্ছে করল। ঘাড় ঘুরিয়ে ডাক দিলাম – "হ্যালো – হ্যালো" বলে। বিশ্রামে ব্যাঘাত হল বুঝি! ভিষণ বিরক্ত হয়ে তারস্বরে – "ঘেউ – ঘেউ" করে আমাদের একরাশ বকা দিল। একেতো আমরা বিদেশী তাও আবার অসময়ে বিব্রত করা! সত্যি আমাদের সহবতের অভাব। কী আর করা, দুখিঃত মনে এগিয়ে চলি।
পুকুরপাড়ের শেষে হ্রদের শুরু। নলবনের ঝোপের ধারে ঘাট। তাতে দুটো ভোঁতামাথা ডিঙ্গা বাঁধা। আর তাদের ছইয়ের উপর পরপর সার দিয়ে তক্তা বাঁধা। অতিথীদের বসার আয়োজন। একে একে টাল সামলে আমরা চেপে বসি সেই অদ্ভুত জলযানে। ডিঙ্গার খোলে পা ঝুলিয়ে তক্তার আসনে গ্যাঁট হয়ে বসলাম সবাই। ততক্ষণে চারিদিকে সাঁঝের অন্ধকার ঢেকে যাচ্ছে, মাথার উপর বিস্তৃত অর্ধগোলক আকাশে দু'একটা করে তারারা জেগে উঠছে ধীরে। আমাদের গতিপথে জলজ অলিগলির দুপাশে উঁচু উঁচু নলবনের ঝোপঝাড় ঘাড় নিচু করে ঝিমুতে শুরু করেছে। এদিকে চারদিকে উঁচু উঁচু কালচে টিলাগুলোর কোলে মাঝে মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে আগুনের লেলিহান। আজ দোল উৎসব। তারই অঙ্গ এই ন্যাড়া পোড়ানো। যেন চারদিকে আবছা অন্ধকার ক্যানভাসে লালচে আগুন পেলব তুলির টানে ভরে যাচ্ছে কালো ক্যানভাসে। আর পূবের টিলাগুলোর পেছন থেকে পূর্ণিমার চাঁদের রুপোলী চকচকে আভা ঠিকরে বেরিয়ে আসছে তীব্র উদ্দিপনায়! আর তাতেই জেগে উঠছে এক অপুর্ব মায়াবী রূপকথার দেশ!
পেছন ফিরে দেখি দাঁড় টানছে গৃহকর্তার ছেলে। নির্বিকারে সে ছপাৎ, ছপাৎ করে বৈঠা বেয়ে আমাদের এগিয়ে নিয়ে চলে। বাকিরা তখন সেই মায়াবী জগতে বাকরুদ্ধ। ছেলেটি আমাকে দেখে একটা হাল্কা হাসি বিনিময় করল। প্রশ্রয় পেয়ে আমি তাকে আকার ইঙ্গিতে বলি যে আমিও দাঁড় টানতে পারি। সে আবার ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে হাসল। আমি কী করে যে বোঝাই এই অপূর্ব চাঁদনী রাতে আমার নৌকা বাওয়া আমার স্বপ্নে বিচরণের মতো। কিন্তু ওর ভাষা যে আমার অধরা। একসময় বলেই ফেলি – "আই নো বোটিং, উড ইউ গিভ মি আ চান্স, প্লিস্..." সে বৈঠা টানা বন্ধ করে মুহুর্তে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। এবার আমি আকার ইঙ্গিতে অনুরোধ করতে থাকি। অবশেষে সে আমার হাতে বৈঠা দিয়ে পাশে সরে বসল। আর নৌকার সামনে বসা ছেলেটাকে কী সব বলে দিল। অমনি ছেলেটা একাটা বড় হ্যাজাকের মত ব্যাটারি চার্জের আলো জ্বেলে দিল। অমনি সামনের ঝোপঝাড়, নলবন সেই সাদা আলোতে সব কাঁপা কাঁপা ভৌতিক অবয়বে জেগে উঠল। আর তার মধ্যিখানে কালো জলের গতিপথে আমি বৈঠা বাইতে শুরু করি বেশ উদ্যমে। সমস্যা হল ছেলেটি যত দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল আমি তত ধীর গতিতে নৌকা বাইছি। কারণ জলের নিচে শ্যাওলা শাপলা সব বৈঠায় জড়িয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ওই ছেলেটি দিব্যি বেয়ে নিয়ে চলে। বুঝলাম ও কত বড় পাকা মাঝি!
ভাসমান বাড়ি
এবার একটু ফাঁকা কালো জলো জায়গায় আমরা ভেসে যাচ্ছি। এখানে নলবন বা ঘাস আবাদা কম। তারপরেই দেখা গেল দূরে একটা কুঁড়ে ঘরেরে কালো প্রতিকৃতি আর তার ভেতরে থেকে কাঁপা কাঁপা সাদা বৈদ্যুতিক আলো ভেসে আসছে। চমক লাগে! তার প্রতিছবি কালো জলে স্বচ্ছ প্রতিফলন আমাদের উৎকণ্ঠা ও আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিল। অধীর আগ্রহে সেই ভাসমান বাড়ির দিকে চেয়ে রইলাম, কখন আমরা পৌঁছবো! দেরি যে সইছে না।
অবশেষে ভাসমান বাড়ির দাওয়ায় ঠেকল আমাদের ডিঙ্গা। একে একে আমরা সেই কাঠের পাটাতনে উঠে এলাম। মাথার উপর 'ফড়-ফড়' আওয়াজ করে লালচে রঙ্গিন সামিয়ানা দাপাদাপি করে চলেছে হ্রদের জলের উপর ধেয়ে আসা জলো হাওয়ার দাপটে। সামিয়ানার নিচে প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল অতিক্রম করে আমরা বাড়ির ভেতরে ঢুকেই দেখি কাঠের খোপ খোপ ঘর। সামনে রান্নাঘর, চানঘর। মাথার উপর সোলার চার্জের বৈদ্যুতিক আলো ঝলমল করছে। একে একে আমাদের ব্যাগ-ট্যাগ ফেলে বেরিয়ে এলাম বাইরের সামিয়ানার নিচে। মৌজ হয়ে বসতে গিয়ে দেখি পূবের উঁচু উঁচু কালচে অবয়ব টিলার মাথার উপর বিশাল রুপোলী থালার চাঁদটা হাসছে। তার তীব্র রুপোলী রশ্মি সমস্ত হ্রদটাকে 'জল জোছনায়' ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে! সে এক মায়াবী রূপ।
আতিথিয়েতার অঙ্গ চায়ে ততটা মন বসল না। এবার যদি জোছনা আড়ি করে! একটু একা একা চাঁদের সে রূপ দেখতে মন উতলা। বন্ধুরা সবাই যখন গানে গল্পে মশগুল, আমি উদাসভাবে এদিক ওদিক তাকিয়ে অন্যমনষ্ক। কী করা যায়! আনমনে বসার চেয়ারের পেছনে তাকাতেই দেখি বাঁশ ও তক্তা দিয়ে ধাপে ধাপে সিঁড়ি উঠে গেছে ছোট্ট একটা মাচা, নাঃ, 'ওয়াচ টাওয়ারের' মাথায়। ধীরে ধীরে উঠে এলাম সব থেকে উপরের ধাপে। তক্তার পাটাতনে চারদিকে বঁশ দিয়ে ঘেরা উপরের ধাপ। এখানে এসে দাঁড়াই আনমনে। উত্তরের ঝড়ো হাওয়া শোঁ শোঁ করে ধেয়ে এসে আমার গায়ে ঝামটা মারে! আর 'ওয়াচ টাওয়ার' তাতে বেশ দোল খায়। অনুভুতি অনেকটা পাখির মতো উড়ে উড়ে দেখা হ্রদটা।
মাথার উপর তখন এক আকাশ চাঁদনী আলো আর নিচে 'জল জোছনার' ছলাৎ ছলাৎ কাব্যময়তা চারদিক। আর দূরে দূরে জলে জেগে থাকা কালচে ঝোপঝাড়ে ঝিঁ ঝিঁর ডাক ভরে যাচ্ছে এখানে বিশ্ব চরাচর। সে এক অদ্ভুৎ একাকী আমায় পেয়ে বসেছে। কত সুখ দুঃখের স্মৃতি কথা, কতশত ভাব ভাবনা এলোমেলো বয়ে আনে জলো ঠান্ডা হাওয়া। যেন কানের কাছে ফিসফিসিয়ে স্মৃতিগুলো জাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছে একে একে।
ততক্ষণে সামনের ক্ষীণ ফ্যাকাশে টিলার মাথার অনেকটা উপরে চাঁদমামা জাঁকিয়ে চড়ে বসেছে বেশ । তার চকচকে ছটা জলের ঢেউয়ে খেলা করছে এলোমেলো। হঠাৎ সেই ঢেউয়ের মধ্য থেকে কালো মতো কোন বস্তু যেন নড়েচড়ে উঠল! চোখের ভুল হতে পারে। চোখ রগড়ে ভালো করে চেয়ে থাকি ওই দিকে। নাঃ আবারো দেখা গেল একই দৃশ্য। উঠে দাঁড়াই। স্থির দৃষ্টে চেয়ে থাকি ওই দিকে। ধীরে ধীরে দেখা গেল ক্রমশ সেই কালো বস্তুটি ডিঙ্গার অবয়ব হয়ে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। একটু ভয় ভয় করছে বটে। বিদেশ বিভুঁইয়ে আবার কোন বিপদে পড়বো না তো! মনে একটা আশঙ্কা। চোর ডাকাতের আক্রমণে আমরা পড়তে যাচ্ছি না তো! ভাবি নীচ থেকে বন্ধুদের ডাক দেব কি না, কিন্তু তার আগেই মন একপ্রকার রোমাঞ্চকর কিছু হওয়ার আশায় চুপ করে অপেক্ষা করতে বলে। নিজেকে ফেলু মিত্তির, কাকাবাবু বা ব্যোমকেশ ভাবতে বেশ রোমাঞ্চিত হই। বড় লগির মতো বাঁশটা 'ওয়াচ টাওয়ারের' গায়ে হেলান দেওয়া ছিল, ওটাকে দুহাতে চেপে ধরে অপেক্ষা করতে থাকি। শত্রুকে ঠেকাতে ওটাই এখন বড় অস্ত্র। ডিঙ্গাটা সত্যি সত্যি এবার গোলাকার ঘাস-বাঁধের কাটা অংশ দিয়ে তরতরিয়ে আমাদের বাড়ির দাওয়ার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি উপর থেকে ঝুঁকে পড়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে আবিষ্কার করি - ডিঙ্গায় সেই গৃহকর্তা দাঁড় বেয়ে এগিয়ে আসছে আর সামনে গৃহকর্ত্রী কতগুলো খাবারের ক্যান, পোঁটলা পুঁটলি আঁকড়ে ধরে বসে আছে! মুহুর্তে আমার গোয়েন্দাগিরী নস্যাৎ করে গৃহকর্ত্রী ডাক পাড়েন – "কাম ডাউন। ডিনার রেডি।"
তৃপ্তির ঢেকুর তুলে আবার 'জল জোছনায়' ডুব দেওয়া। ভাসমান বাড়ির দাওয়ার নীচে রুপোলী চকচকে জলে চাঁদ তখন মধ্য গগন থেকে ডুব সাঁতারে মেতে আছে। আতিথেয়তা সেরে বাড়ির কর্তা ও কর্ত্রী আবার ফিরে যাচ্ছে ডিঙ্গার মুখ ফিরিয়ে। অমনি রূপোলী জলের আভা ভেঙ্গেচুরে একাকার! এবার বাকি রাতটা বাইরের জগৎ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে 'জলবাস' করতে হবে। কেমন একটা অসহায় লাগছিল। নগরবাসী মানুষ তো, মনে মনে একটু ভয় করছিল বইকি। আমি একটু জড়তার সঙ্গে গৃহকর্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম – "দিদি, ইজ দিস প্লেস সেফ ফর আস?" মহিলা সেই চাঁদের হাসির মতো হেসে ডিঙ্গায় ঠেলা দিয়ে উঠে পড়ে উত্তর দিয়েছিলেন – "ডোন্ট ওরি, ইট ইজ ফুললি সেফ।" তারপর ওরা ডিঙ্গাটা ছপাৎ ছপাৎ করে বেয়ে দূরে, আরো দূরে আধো অন্ধকার থেকে অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে থাকল।
এখন হাওয়ার গতিবেগ অনেকটা কম। ঝিরিঝিরি বইছিল, বেশ আমেজ আনছে এই হাওয়ায়। সামিয়ানাটা তখন তার তীব্র নাচন থামিয়ে এদিক ওদিক ছন্দে ছন্দে হেলেদুলে মেতে উঠলো আমাদের সঙ্গে। আমরা সবাই পূর্ণ শশীর খুশীতে ভাগ নিতে গানে গপ্পে মেতে উঠলাম। তাই নিদ্রাদেবীও ভয়ে আমাদের ধারে পাশে আসতে সাহস পেলনা।
লোকতাক হ্রদটাও বুঝি কখন যেন নিশব্দে আমাদের বেসুরো গলায় রবি ঠাকুরের চাঁদ বন্দনা শুনছে বুঁদ হয়ে – 'চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙ্গেছে...' ভিনদেশী নগরবাসী মানুষগুলোর এই উন্মাদনা সে রাতজাগা চোখে সজাগ হয়ে উপভোগ করছিল নীরবে। হাজার স্মৃতি, ছড়া, কবিতা, গান, গপ্পো সবই বলা হল। কিন্তু ততক্ষণে যে পূর্ণশশী ঢলে পড়েছে পশ্চিম গগনে। খেয়াল করে দেখি তার জৌলুসে পড়েছে ভাঁটা। গায়ে লেগেছে তামাটে রং। কেমন যেন একটা ঝিমুনি ধরা ভাব। আর হাওয়ায় শীতের পরশ। কাছে দূরে ক্রমশ আধো কুয়াশা ছেয়ে যাচ্ছে। ছেয়ে গেল সমস্ত আকাশময়। একটা ঘন সাদা আলোয় চারদিক ভরে গেল। বাধ্য হয়ে ঢুকে পড়লাম বাড়ির ভেতর।
বিছানায় শুয়ে ভাবি আমরা রয়েছি বিস্তীর্ণ জলরাশির উপর একখন্ড ভাসমান কাঠের পাটাতনের উপর। যদি কোন বড় জলজ প্রাণী লাফিয়ে উঠে আসে, নয়তো এই আধো অন্ধকারে কোন রাক্ষস খোক্কশ এসে উপস্থিত হয়। ওই যে হলিউডের সিনেমার মতো! একটু ভয় ভয় করছিল। তাই সজাগ হয়ে মাথার উপর জ্বলন্ত সাদা বাল্বটার দিকে তাকিয়ে কতশত ভেবে চলেছি। হঠাৎ দেখি বাল্বটাও দপদপ করে বার কয়েক জ্বলে নিভে গেল। ব্যাটারীর চার্জ ফুরিয়েছে, তাই বাল্ব নিভে গেল। চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার আর বাইরে শুধু ঝিঁঝিঁর ডাক। ভয়ে ভয়ে গুটিশুটি মেরে কম্বলের ভেতর মুখ ঢুকিয়ে শুয়ে রইলাম।
বন্ধুদের ডাকে যখন ঘুম ভাঙ্গল দেখি পূব আকাশ লাল। তার ছটা এসে পড়েছে আমার বিছানায়। উঠে বসি। চেয়ে দেখি দূরে দূরে আধো কুয়াশার মধ্যে ছোট ছোট ডিঙ্গা বেয়ে মেয়ে, পুরুষ সবাই মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়েছে। তাদের মাথায় ছুঁচোল গোল বাঁশের টোকা, হাতে বৈঠা বেয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়িয়ে মাছ ধরতে ব্যাস্ত। ক্যামেরা হাতে বারিয়ে আসি সামিয়ানার নীচে। পায়ের কাছে বাঁশের পাটাতনে ও পাশের গজানো হলদে সবুজ ঘাসে শিশিরের বিন্দু উত্তুরে হাওয়ায় তিরতির করে কাঁপে। তারপরেই কাক চক্ষের মত স্বচ্ছ জলরাশি। যার প্রায় দশ ফুট নিচের কোটি কোটি জলজ শ্যাওলা,পর্ণ সবই নিখুঁতভাবে দেখতে পাওয়া যায়। এবার বুঝলাম লোকতাক হ্রদ কেন বিখ্যাত। পূর্বভারতের বৃহত্তম স্বচ্ছ মিষ্টি জলের হ্রদ। শুনেছি LOK শব্দের অর্থ হল স্রোত বা ধারা আর TAK শব্দের অর্থ হল শেষ। দুটো শব্দের একত্রিত করলে মানে দাঁড়ায় যে একাধিক নদী এসে তাদের যাত্রা যেখানে শেষ করে বা একত্রিত হয় তা হল লোকতাক।
ইচ্ছে হল আবার সেই বাঁশের তৈরী মাচায় বা 'ওয়াচ টাওয়ারে' চড়ে বসতে। দেখি চারিদিকে ছোট ছোট টিলা দিয়ে ঘেরা এই বিশাল আকৃতির হ্রদে হাজারো নলখাগড়ার ভাসমান ছোট ছোট গোলাকৃতি দ্বীপ জেগে রয়েছে। এদের নাকি স্থানীয় ভাষায় বলে 'ফুমাদি' বা ভাসমান দ্বীপ। আর আমি তেমনি একটা ফুমাদির উপর তৈরী বাঁশ কাঠের বাড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে। বেশ লাগে। উত্তরের হাল্কা ঠান্ডা হাওয়ায় গায়ে হিমেল পরশ আমাকে উদাসী করে।
আলো বাড়ার সঙ্গে ক্রমশ কুয়াশার চাদরটা সরে যাচ্ছে ধীর লয়ে। ততক্ষণে লালচে থালার মত সূর্য্যটা পুবের টিলার মাথার উপর চেপে বসেছে। তার উল্টো প্রতিচ্ছবি স্বচ্ছ জলের ক্যানভাসে জেগে ওঠে ধীরে। হঠাৎ ছবি একেবারে এঁকেবেঁকে ভেঙ্গেচুরে একাকার! দেখি উল্টোদিকের পাশাপাশি দুটো ডিঙ্গার বৈঠার টানে ঢেউয়ে এমন ভাঙ্গাচোরা খেলা। একটিতে এই বাড়ির ছেলে বড় চায়ের ফ্লাস্ক ও রকমারি জিনিষপত্র চাপিয়ে এগিয়ে আসছে আর তাকে পাল্লা দিয়ে পাশে লম্বা ছিপছিপে ছেলেটি দাঁড়িয়ে ডিঙ্গা বেয়ে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। তাদের নিজেদের কথোপকথন, হাসি ঠাট্টা সবই আমার কাছে অধরা।
হ্রদের জলে যাতায়াতে নৌকাই ভরসা
এবার আমাদের 'জলবাসের' সমাপ্তি। ফিরতে হবে। একে একে সবাই ডিঙ্গায় চেপে বসেছে। আমার আগ্রহ ওই লম্বা ঢ্যাঙ্গা ছেলেটার ডিঙ্গার সামনে রাখা অ্যালুমিনিয়ামের বালতির দিকে। তাকে ভাবভঙ্গিতে অনেক কসরত করে বোঝানোর পর সে হেসে বালতিটা আমাদের সামনে তুলে ধরে। দেখি তার শিকারে ধরা পড়েছে বেশ কিছু পুঁটি, চাঁদা, ল্যাটা আরো কত ছোট ছোট মাছ। তার মুখে তখন সাফ্যলের হাসি। আমার মনে মনে শুধু প্রশ্ন, এরা এত সকালে মাছ ধরতে ব্যদস্ত, কিন্তু পড়াশুনা করে না? মা বাবা বকুনি দেয় না! শুধু নীরবে ছেলেটার অমলিন হাসির দিকে তাকিয়ে থাকি।
এগিয়ে চলেছি হাজারো ছোট ছোট সবুজ 'ফুমাদি' বা ঝোপঝাড় ঘাসের দ্বীপের পাশ কাটিয়ে আমাদের আস্তানার দিকে। তিরতিরিয়ে কাঁপা ঘাসপাতা আর নীলচে ঘাস ফুলের বিদায়ী সম্ভাষণে মন খারাপ করে দেয় বইকি। আনমনে চেয়ে দেখি ভীষণ গভীর সেই জলের তলায় শয়ে শয়ে লালচে সবুজ শ্যাওলা, বেশ বাড়বাড়ন্ত। আর জলের আলোড়নে তার ভেতর থেকে ছোট ছোট চুনো পুঁটি দ্রুত চিৎ হয়ে রুপোলী আভা দেখিয়ে আরো গভীর শ্যাওলার ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে। সে দৃশ্যে ব্যাঘাত ঘটায় বৈঠার 'ছপাৎ' জলের টানে। চেয়ে দেখি বৈঠা বাওয়া ছেলেটি আমাকে দেখছে একমনে। অস্বস্তি কাটাতে একটা মৃদু হাসির বিনিময় হয়। এদের এই শান্ত অকৃত্রিম জীবন যাপন বুঝি না জানি কত মজার ও রোমাঞ্চকর! যদি এদের সঙ্গে বসবাস করতে পারতাম, কী মজাটাই না হত! কিন্তু আমি যে বাঁধা শহুরে সভ্যতায়। ফিরতেই হবে সেই ধোঁয়া ময়লা, দৌড়ঝাঁপের একঘেয়েমি বিরক্তিকর জীবনে। একটা দীর্ঘশ্বাস চলে আসে আপনা থেকে।
সবাই একে একে ফিরবো ধাপ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উপরে টিলার কোলে পাকা সড়কে। যেখানে যন্ত্রযানটা নিরবে দাঁড়িয়ে আমাদের অপেক্ষায়। তার আগেই চোখে পড়ে গৃহকর্তার সেই দুটি নাতনির দিকে যারা উঠোনে দাঁড়ান স্কুটির উপর বসে খেলছে আপন মনে। ইচ্ছে হল ওদের সঙ্গে স্মৃতি ভাগ করে নেই। তাই একটা মোবাইল ক্লিক তুলতে যেতেই ছোটটি তীব্র প্রতিবাদ করে ওদের ভাষায়। আমায় তখন জেদে পেয়ে বসে। যেই না ওর হাত ধরে ছবি তুলতে যাচ্ছি একরাশ বিরক্তি নিয়ে ও আমাকে 'ব্যাড বয়' বলে বকা দেয়। আমিও বকুনি খেয়ে নিজের দোষ মেনে নিই।
আমি জানি, আবার ফিরে গিয়ে ডুবে যাবে শহুরে গলি ঘুপচির জটিল জীবন যাপনে। ঘাস জঙ্গল আর সোঁদামাটি ফেলে ইট কাঠ জঙ্গলের শুষ্ক জগতে। তখন ক্লান্ত মনে যদি ভেসে ওঠে এই সবজে গন্ধমাখা সহজ সরল জীবনের ছবি, তার স্বাদ নিতে আবার ফিরবে এই হ্রদের হৃদয়ে - প্রতিশ্রুতি। এ এক অন্য পৃথিবী, যার টানে শহুরে মানুষ বারে বারে ফিরে আসতে চায় এই জলজঙ্গলের জীবনে।