সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
আশ্চর্য পুকুর ও লক্ষ্মীর পদ্ম

লক্ষ্মী তক্তাপোশের উপর বসে মাকে দেখছে। স্টোভ জ্বেলে রুটি বানাচ্ছে মা। পর পর ক'মাস ইলেকট্রিক বিল দিতে না পারার জন্য লক্ষ্মীদের ঘরের কারেন্টের লাইন কেটে দিয়েছে। স্টোভের আলোয় মাকে দুর্গা মা-র মত লাগছে। রুটিগুলো গোল হয়ে ফুলে উঠছে আর মা অপূর্ব কৌশলে শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে উলটে নিচ্ছে এক একটা রুটি। লক্ষ্মী একমনে দেখতে দেখতে স্থির হয়ে যায়। একমনে ও যখনই কোনকিছু দেখে, কাঠের মতো স্থির হয়ে যায়। তখন লক্ষ্মী আর কিচ্ছু শুনতেও পায় না, দেখতেও পায় না। ও যেন কেমন একটা অন্যরকম হয়ে যায়! কিছুক্ষণ পরে মাকে গজ গজ করতে শুনতে পায় লক্ষ্মী, "সবই আমার অদেষ্ট। অ লক্ষ্মী, মা আমার, খাবি আয়!" সে সব শুনতে পায়, সব দেখতেও পায়, বুঝতেও পারে অনেক কিছু, কেবল কিচ্ছুটি বলতে পারে না। কেন যে তার গলা থেকে কোন শব্দ বের হয় না, তা লক্ষ্মী জানে না। তবে মা মাঝে মাঝেই কাঁদে আর বলে, "গরীবের কপালেই যত দুঃখ লিখেছো ঠাকুর!" বাবাকে লক্ষ্মী চোখে দেখেনি। মা তাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলে, শুনে শুনে লক্ষ্মীর মুখস্থ হয়ে গেছে, "সেই যে, যেবার পুজো একমাস পেছিয়ে গেলো, মল মাস না কি যেন পড়েছিলো। পুজো ভালোয় ভালোয় কেটে গেল। লক্ষ্মীপুজোর দিন সকালে ব্যথা উঠলো। সরস্বতী দিদি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিল। সারাটা দিন হাসপাতালে শুয়ে রয়েছি, ব্যথায় কঁকাচ্ছি। নার্স দিদি দেখে বলল, এখনও দেরি আছে। কী মন খারাপ! কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন এমন করে শুয়ে থাকতে কার ভালো লাগে? তারপর সন্ধ্যাবেলা, যখন চারদিকে উলুধ্বনি বেজে উঠলো, তুই ঠিক তখনই এলি আমার কোলে। আকাশের দিকে চেয়ে দেখি, গোল থালার মত পূর্ণিমার চাঁদ। হাসপাতালে সবাই বলল, তোমার ঘরে মা লক্ষ্মী এসেছে গো!"

বড়দিদিমণি রিনাকে খুব ভালোবাসেন। নার্সারি সেকশনে বাচ্চাদের মাসির কাজটা উনিই পাইয়ে দিয়েছেন। তা না হলে লক্ষ্মীকে নিয়ে মরা ছাড়া তার আর গতি ছিল না। রিনা যতক্ষণ স্কুলে বাচ্চাদের নিয়ে থাকে, লক্ষ্মী স্কুল মাঠে ঘুরে বেড়ায়, নয়তো বড়দির ঘরের বাইরে করিডোরে বসে থাকে। বড়দি ওকে ছবির বই দেন, মাঝে মাঝে এসে সস্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে যান। বড়দির মতোই দারোয়ান থেকে শুরু করে স্কুলের সব্বাই লক্ষ্মীকে ভালোবাসে। টিফিনের সময় মা যখন কচিকাচাগুলোকে টিফিন খাইয়ে দেয়, হিসি করিয়ে আনে, তখন লক্ষ্মী মার কাছে গিয়ে বাড়ি থেকে আনা খাবার খেয়ে নেয়। মা ওকেও খাইয়ে দেয়, জল টল খেয়ে লক্ষ্মী আবার স্কুলের গেটের সামনে আমগাছের নিচে টুলে বসে খৈনি ডলতে থাকা রামশরণের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, তখন রামশরণ হাত মুখ নেড়ে অনেক কিছু বলে, লক্ষ্মী সেসব শোনে। তারপর আস্তে আস্তে পুকুরের ধারে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে। পুকুরের কাছে বাচ্চারা যাতে যেতে না পারে, তার জন্য তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। তবুও ঐ জায়গাটায় ঘাসের উপর বসে থাকতে বেশ লাগে। লক্ষ্মীর পড়াশুনোর বালাই নেই। ও অন্য ক্লাসের হৈ হৈ, দিদিমণিদের পড়ানোর শব্দ, দাদাদের পিটি স্যারের সঙ্গে মাঠে পিটি করা, প্রজাপতির ছুটোছুটি, পাখিদের ঝগড়া, ফেরিওয়ালাদের ডাক এই সমস্ত শুনতে শুনতে অনেক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। মা এসে ওকে জাগিয়ে, মাথা আঁচড়ে, চটি পরিয়ে হাত ধরে বাড়ি নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে বড়দির ঘরের সামনে রোজ একবার এসে সারাদিনের ঘটনা বলে যায়। বড়দি মার সুখদুঃখের খোঁজ নেন। বাচ্চাদের কার কী সমস্যা সব জিজ্ঞেস করেন। লক্ষ্মীর চিকিৎসার কথাও জিজ্ঞেস করেন। আর শেষে নরম স্বরে জিজ্ঞেস করেন, "ওর বাবার কোন খোঁজ পেলে?" রিনা মুখ শুকনো করে বলে, "কোথায় আর পেলাম বড়দি? এই বোবা মেয়েকে আমার পেটে দিয়ে সে যে কোথায় নিখোঁজ হয়ে গেল... ", মা ফোঁপাতে থাকে রোজকার মত। বড়দিদিমণি রিনার কাঁধে হাত রাখেন, "আমি তো আছি! লক্ষ্মীর ভোকাল কর্ডে একটা অপারেশন করলে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তারবাবু তো বলেছেন, আশা আছে। এত ছোট বাচ্চার পক্ষে এই অপারেশনের ধকল নেওয়া সম্ভব হয় না বলেই ডাক্তারবাবুরা লক্ষ্মীর দশ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন বলেছেন, সে তো তুমি জানোই। তারপর অপারেশন হবে। তোমার যখন যা দরকার হবে, আমাকে বলবে।
— আপনি আছেন বলেই তো বেঁচে আছি।
— ছিঃ ওভাবে বলতে নেই। মেয়েই তো তোমার সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মী। দেখবে, ওই তোমার সব দুঃখ দূর করবে।
— আপনি আশীর্বাদ করুন, তাই যেন হয়।
লক্ষ্মী বড় বড় চোখে ওদের কথা শুনতে থাকে। বড়দি ওর চিবুক ছুঁয়ে চুমু খেয়ে বলেন, "মা লক্ষ্মীর হাতে থাকে পদ্ম। তিনি পদ্মের উপর বসে থাকেন, পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে। পদ্ম জলে থাকে। কিন্তু নিজে জলের উপরে মাথা উঁচু করে থাকে। পদ্মের পাতায় জলের দাগ ধরে না। কোন বিরুদ্ধ পরিবেশের মধ্যেও মাথা উঁচু করে থাকা যায়। পরিবেশকে ছাপিয়ে ওঠা যায়।"
লক্ষ্মী এসব কথা খুব মন দিয়ে শোনে। ও মনে মনে দেখতে পায় ওদের স্কুলের টলটলে পুকুরটা আর সেখানে ওর মানস দৃষ্টিতে ফুটে ওঠে একটা লাল টুকটুকে পদ্ম।

রিমি রাতের খাবার গোছাচ্ছিলো রান্নাঘরে। এমন সময় ল্যান্ড ফোনটা বেজে উঠলো। ল্যান্ড ফোনে খুব কমই ফোন আসে। তবুও লাইনটা আছে। এখন রাত প্রায় দশটা। এই সময় কে আবার ফোন করলো? রিমি শাশুড়ি মা-কে ডেকে বললো, "মা, একটু দেখো না কে ফোন করছে? পকাই, বাবাকে ডেকে নিয়ে খেতে আয়।"
পকাই কার্টুন দেখছিলো। মায়ের ডাকে ড্রইং রুমের সোফা থেকে এক ছুটে ডাইনিং টেবিলে এসে বসে গেলো। দেরি করলেই মা রাগ করবে। ঠাকুমা আর বাবাও চলে এসেছে। বাবাই গিয়ে ফোনটা তু্ললো। ও প্রান্ত থেকে অনেকক্ষণ কেউ কিছু বলছিলো, বাবা মন দিয়ে শুনলো। তারপর ইশারায় পকাইকে ডাকলো কাছে। ফোনে এক হাত চাপা দিয়ে পকাইকে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো, "পকাই, তোমার বন্ধু সুশ্বেত আজ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরেনি। তুমি কিছু জানো?" পকাই জোরে জোরে দুদিকে মাথা নাড়লো। বাবা ফোন রেখে খুব গম্ভীর মুখে টেবিলে এসে বসলো। মা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, ঠাকুমাও। দুজনের চোখেই প্রশ্ন। বাবা বললো, "সুশ্বেত আজ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরেনি। ওরা সবার বাড়িতে ফোন করে জিজ্ঞেস করছে। থানায় ডায়রিও করেছে।"
ঠাকুমা বললো, "দেখো গে, কোথায় বদমাইশি করে বসে আছে গিয়ে। যা শয়তান ছেলে!"
মা বললো, "এ কি কথা বলছো মা? সেও তো পকাইয়ের মতোই একটা বাচ্চা। ওর বাবা-মা কত দুশ্চিন্তা করছে।"
— না, আমি তো তেমন কিছু বলিনি। যেমন মা তার তেমন ছেলে। মা দিনরাত ব্যাটাছেলেদের মতো পোশাক পড়ে টো টো করে বেড়ালে এইই হবে।
— মা, এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। জিমির মা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ওকে সাইটে যেতে হয়। শাড়ি পরে সাইটে কাজ করবে?
— রিমি, তুই জিমির মা-র হয়ে কথা বলছিস? এই গত সপ্তাহেই না ছেলেটা আমাদের পকাইয়ের সঙ্গে মারামারি করে ওর ঠোঁট ফাটিয়ে দিয়েছিল?
— সে হলেই বা। বাচ্চারা অমন কত মারামারি করে। তা বলে কারো অমঙ্গল চাইবো কী করে?
পকাই নিজের ঠোঁটে হাত বুলায়। সত্যি বাবা! সুশ্বেতটা যা মারকুটে।
বাবা বলে, "পকাইকে কাল স্কুলে পাঠিয়ে কাজ নেই।"
ঠাকুমা অবাক হয়ে বলে, "ওমা! একটা বাচ্চাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে আমাদের পকাই কেন ঘর বন্দী হয়ে বসে থাকবে?"
মা বলে, "ঠিকই তো! আচ্ছা, আমি কাল গিয়ে বড়দির সঙ্গে কথা বলে আসবো।"

সুশ্বেতর ডাক নাম জিমি। ও পকাইদের পাড়াতেই থাকে। পকাইয়ের ভালো নাম অর্কপ্রভ। পকাইয়ের মা একটা এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত। সেই সুবাদে রিনা লক্ষ্মীকে নিয়ে ক'বার পকাইদের বাড়িতে গিয়েছে। তখনই লক্ষ্মীর সাথে পকাইদাদার একটা এক্সট্রা বন্ধুত্ব হয়েছে। স্কুল ড্রেস ছাড়াও বাড়ির জামায় ও পকাইদাদাকে পড়ার টেবিলে বসে বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে টিঙ্কল ডাইজেস্ট পড়তে দেখেছে। মা যখন পকাইদাদার মায়ের সঙ্গে কথা বলে, লক্ষ্মী গুটি গুটি চলে যায় পকাইদাদার ঘরের দরজায়। পকাই ওকে দেখলেই ইশারা করে ডাকে আর কত ছবি দেখায়। পকাইয়ের কম্প্যুটার আছে। সেখানে গেমস আছে। লক্ষ্মীকে ও নিনজাদের কাণ্ডকারখানা দেখায়। লক্ষ্মী তার পদ্মের পাপড়ির মতো বিশাল দুটি চোখ মেলে দেখে, ওর মুখে ফুটে ওঠে নানা অভিব্যক্তি, তাই দেখে পকাইয়ের মাস্টার-সত্তা খুব জেগে ওঠে। ওকে সব কিছু বুঝায় আর বলে, "লক্ষ্মী বুঝতে পারছিস তো?" লক্ষ্মী ঘন ঘন মাথা নেড়ে সায় দেয়, হ্যাঁ হ্যাঁ, সে সব বুঝেছে। জিমির সঙ্গে পকাইয়ের মারামারির সম্পর্ক। পাড়ায় আর স্কুলে সবার সঙ্গে সবার আলাদা আলাদা সম্পর্ক থাকে। কারুর সাথে কারুর মারামারির, কারুর চকলেটের, কারুর গেমস-এর, কারুর কম্পিটিশনের এইরকম সব। জিমি খুব চনমনে আর ওর চেহারাও বেশ মজবুত। পকাই রোগা পটকা। চোখে চশমা। কোমর থেকে প্যান্ট খসে পড়ে যায়, সব সময় প্যান্ট এক হাতে ধরে থাকে। সুশ্বেত সুযোগ পেলেই পিছন থেকে অর্কপ্রভর প্যান্ট ধরে জোরসে একটা টান মারে। আর পকাই রেগেমেগে ওর পিছনে ছুটতে থাকে, তখন মাঠের সবকটা বাচ্চা দু'ভাগ হয়ে দুজনের পিছনে দৌড়ায়। সে এক বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার। তারপর আরম্ভ হয় ঢিল ঢ্যালা ইটের কুচি ছোঁড়াছুঁড়ি। শেষ হয় পিটি স্যারের চিৎকারে। মাঠের এক কোণে বসে লক্ষ্মী এসব দেখে হাসে খিলখিল করে। সেই জিমি বাড়ি ফিরেছে পাক্কা তিন দিন পরে। স্কুলের পুকুরের ধারে একদম ভেজা জামাকাপড়ে মড়ার মত পরে ছিল। লক্ষ্মীই তাকে দেখে দারোয়ান রামশরণের হাত ধরে টানতে টানতে সেখানে নিয়ে এসেছে। সবাই অবাক হয়ে গেছে। জোর আলোচনা চলছে এই নিয়ে যে স্কুল ড্রেস পরে আছে যখন, তাহলে দায়টা স্কুলের। একটা বাচ্চা খেলতে খেলতে কখন পুকুরের কাছে চলে গিয়েছে, জলে ডুবে গেছে, কেউ খেয়ালও করেনি? একদল দাবী তুলেছে, তদন্ত কমিটি বসুক। জিমির বাবার প্রশ্ন, জলে এতদিন ডুবে থাকলে মারা যাওয়ার কথা। জল খেয়ে পেট ফুলে ভেসে ওঠবার কথা। তেমন তো কোন লক্ষণ নেই। যেন ঘুমিয়ে আছে। বরং এমন হতে পারে স্কুল থেকে কিডন্যাপ করে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, পরে স্কুলকে ফাঁসানোর জন্যেই অজ্ঞান করে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া খুব গম্ভীর। স্কুলের দিদিমণি আর স্যারদের কারো মুখে কোন কথা নেই। বড়দি খুব গম্ভীর ভাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। স্কুলের সব ক্লাসের ছেলেমেয়েদের মাঠে বেরিয়ে খেলা বন্ধ করার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলেছিলো, এই বিষয়ে তদন্ত সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখা হোক। কিন্তু বড়দি তাতে রাজী নন। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনোর সঙ্গে তিনি কোনরকম আপোস করতে চান না।
পকাইয়ের মায়ের সঙ্গে জিমির মায়ের কথা হচ্ছিলো সেদিন স্কুলের গেটের বাইরে। জিমির বাবা-মা এসেছিলেন বড়দির সঙ্গে দেখা করতে। পকাইয়ের মা-ও এসেছিলো কোন কাজে। তখন লক্ষ্মী বড়দির ঘরের বাইরে বসে শুনেছে, জিমির কিছুই মনে নেই। জ্ঞান ফেরার পর থেকে ও নাকি একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। কথাও বলতে পারছে না। পড়াশুনো তো দূরের কথা। আর অনেক কিছু ভুলেও গেছে। লক্ষ্মী শোনে, পকাইদাদার মা জিমিদাদার মা-কে 'ফিজিওথেরাপি'-র কথা বলছে। এই কথাটা ও শুনেছে, 'স্পিচ থেরাপি'। ডাক্তারবাবুরা ওর সম্বন্ধে বলেন। কিন্তু ফিজিওথেরাপিটা কি? পকাইদাদাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। কিন্তু জিজ্ঞেস করবেই বা কি করে? সে তো বলতে পারবে না। লক্ষ্মীর বুকের মধ্যে অনেক কথা ঝড় তোলে।

এর দুদিন পরে ওদের স্কুলে আবার ঝড় ওঠে। ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে মানিকলাল ভাদোরিয়া মেমোরিয়াল স্কুলের একটা বাচ্চা মিসিং। কয়েকদিন খোঁজাখুঁজি চলাকালীন ঠিক একই ভাবে ওদের স্কুলের পুকুরপাড়ে জিমির মতোই ভেজা চুপচুপে স্কুল ড্রেসে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় তাকে পাওয়া গেলো। ছেলেটার নাম অনীশ আগরওয়াল। ক্লাস ফাইভের হাসিখুশি স্বাস্থ্যবান একটা ছেলে। পুলিশ এই অদ্ভুত কেস-এর মাথামুণ্ডু কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। সমস্ত শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, অনীশেরও আগেকার কথা কিছুই মনে নেই। সে ভালো করে কথা বলতেও পারছে না। জ্ঞান ফেরার পর থেকে ফ্যালফ্যাল করে সবার দিকে তাকাচ্ছে। যেন কাউকেই চেনে না।

সবকটা টিভি চ্যানেলে, খবর কাগজে একটাই খবর। স্কুলের ছাত্রদের রহস্যজনক অন্তর্ধান এবং ততোধিক রহস্যজনক তাদের ফিরে আসা ও স্মৃতি লোপ পাওয়া। পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের সাহায্য নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। কিন্তু কোথাও কোনও সূত্র তারা পায়নি এখনও পর্যন্ত। লক্ষ্মী টিভিতে অনীশের ছবি দেখেছে পরে। কিন্তু আগে তো তাকে চিনতই না। সেদিন রোজকার মতোই সে মাঠের কোণে বসে থাকতে থাকতে ঘুমে ঢুলছিলো। ঘুমের মধ্যে সে কি স্বপ্নই দেখলো? তাদের স্কুলের পুকুরের মধ্যিখানে একটা জায়গায় মশারি টাঙানোর মতো গোল করে একটা ধোঁয়ার বেলুন দিয়ে যেন ঘেরা। একটা মিশ কালো লোক, একেবারে ফিনফিনে পাতলা, হাওয়ার মতো, ভাসতে ভাসতে যেন পুকুর পাড়ে এলো আর এদিক ওদিক চাইতে লাগলো। তারপরেই লোকটা মিলিয়ে গেলো। লক্ষ্মী চমকে উঠে বসলো। ও দেখলো, ঠিক কাঁচের জানলার বাইরে বৃষ্টির একটা রেখার মতো ওই ধোঁয়ার আবছা বলটার মধ্যে লোকটা হাওয়া বের হওয়া বেলুনের মতো চুপসে লেগে গেলো। তারপর সবকিছু আবার মিলিয়ে গেলো। লক্ষ্মী দুচোখ কচলে আবার দেখলো। দুপুরের ঝকঝকে রোদ্দুরে পুকুরপাড়ের করবী গাছে একটা নীলকান্ত মণির মতো উজ্জ্বল মাছরাঙা পাখি বসে আছে। আমগাছের মগডালে বসে দুটো কাক গল্প করছে, স্কুলবাড়ির ভেতরে ছেলেদের হৈ হৈ শোনা যাচ্ছে, দূরে কোথাও টিভিতে ক্রিকেট খেলার ধারাবিবরণী ভেসে আসছে। সব কিছু রোজকার মতো। কিন্তু লক্ষ্মী ভাবছিল, একটু আগে কী দেখলো ও? তারপর সেদিন সন্ধ্যাবেলাতেই অনীশের হারিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছিলো। লক্ষ্মীর ছোট্ট মাথার মধ্যে সারাদিন সারারাত কত কী চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কাউকে কিচ্ছু বলতে পারছে না সে, এ যে কী কষ্টের!

রাত্রে লক্ষ্মী স্বপ্নে দেখে আলোয় আলোয় ঘর ভরে গেছে। খুব সুন্দর একটা গোলপানা মুখ তার মুখের উপর ঝুঁকে আছে। তার মাথায় মুকুটের মণিগুলো ঝলমল করে উঠছে। বিশাল বড় বড় দুটো চোখ মেলে সেই মুখ লক্ষ্মীর দিকে চেয়ে আছে। লক্ষ্মী চিনতে পারে। "তুমি তো মা দুর্গা!" দুর্গা লক্ষ্মীর গাল টিপে বলে, "আর তুই যে আমার লক্ষ্মী! তোকে আমার কাজ করতে হবে।"
লক্ষ্মী বলতে চায়, "আমি কি করবো? আমি যে কাউকে কিছু বলতেই পারি না!" কিন্তু এখনও তার কথা ফোটে না। গলা দিয়ে ঘর ঘর করে শব্দ বের হয়। লক্ষ্মীর মা লক্ষ্মীকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে, "কি কষ্ট হচ্ছে সোনা? ওমা! গায়ে যে জ্বর! কী করি আমি এখন?"
আজ মা তাকে বার্লি খাইয়ে দিয়ে চলে গেছে। আজ স্কুল থেকে একটু আগেই বেরিয়ে যাবে। বড়দির কাছে ছুটি চেয়ে নিয়েছে। মা আজকে হেলথ সেন্টারে যাবে। নতুন কিছু ওষুধ এসেছে। পকাইদাদার মা বলেছে প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসতে, মা-কে কিছু ওষুধ ওরা দেবে। সরস্বতী মাসিকে মা বলে গেছে লক্ষ্মীকে দেখে রাখতে। সরস্বতী মাসি দু'বার এসে লক্ষ্মীকে বেলেডোনা খাইয়ে দিয়ে গেছে। জল খাইয়েছে। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে। এখন টালির ফাঁক থেকে একটা রোদ্দুরের ফলা তেরচা হয়ে দেওয়ালের উপর পড়েছে। দেওয়াল থেকে সেই আলো চুইয়ে আসছে মেঝেতে। আলো আর ছায়া দিয়ে সুন্দর একটা আলপনা আঁকা হয়েছে। সেই দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে লক্ষ্মীর একটা ঘুম ঘুম ভাব আসে। ও ঘুমিয়েই পড়ল বোধহয়। আর ঘুমের মধ্যে টলটল করে জেগে উঠল ওদের স্কুলের পুকুরটা। লক্ষ্মী পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল পুকুরের কাছে। এবার সে স্পষ্ট দেখতে পেলো সেই ধোঁয়ার মতো আবছা বলটাকে। লক্ষ্মী জলের উপর ভাসমান সেই বলটাকে কাছ থেকে দেখতে চায়। কিন্তু ওর কাছে যাবে কি করে? ঠিক তক্ষুনি দুর্গা এসে গেলো। দুর্গার হাতে একটা ইয়া বড় পদ্ম। পদ্মটা দুর্গা লক্ষ্মীকে দিলো। বললো, "যা। ওর ভিতরে যা!"
"কেমন করে?" অস্ফুটে বললো লক্ষ্মী। দুর্গা হেসে বললো, "কেন? এই তো চাবি!" এই বলে মিলিয়ে গেলো। লক্ষ্মী ধরাস করে উঠে বসলো। দেখলো ওর বুকের উপর একটা ইয়া বড় পদ্ম। ও ভীষণ অবাক হয়ে দেখলো, পদ্মটা ওর বুকের উপরে, আর পদ্মের ডাঁটিটা বেরিয়েছে ওরই নাভির মধ্যে থেকে। ও মাথা ঝুঁকিয়ে পদ্মের ভিতরে তাকালো। ওমা! ভিতরে সোনার মতো আলো ঠিকরে উঠছে। লক্ষ্মীর চোখের ভিতর থেকে ওর বাইরে থাকা মনটা হাওয়ায় মেশা গন্ধের মতো পদ্মের ডাঁটির ভিতর দিয়ে চলে গেলো ওরই নাভির ভিতর থেকে ওর নিজের ভিতরের মনের মধ্যে। অনেকক্ষণ পরে মায়ের ডাকাডাকিতে লক্ষ্মী চোখ মেলে তাকালো। মা বলল, "লক্ষ্মী, তোর জন্য ওষুধ এনেছি। খুব দামী ওষুধ। এগুলো খেলে তোর গলার অসুখ সেরেও যেতে পারে, ডাক্তার বাবু বললো রে! ওঠ্ মা, খিচুড়ি রেঁধেছি। দু'গাল খেয়ে নিয়ে ওষুধ খাবি।"
লক্ষ্মী একটা ঘোরের মধ্যে খিচুড়ি খেলো, ওষুধ খেলো। সকাল বেলা রিনা লক্ষ্মীর কপালে হাত দিয়ে বললো, "আর জ্বর নেই। যাক বাবা, বাঁচলাম! চল্, আজ আমার সাথে ইস্কুলে যাবি। বড়দির ঘরে তোকে শুইয়ে রাখবো।"

আশ্চর্য পুকুর ও লক্ষ্মীর পদ্ম

আজ স্কুলে সমস্ত দিন লক্ষ্মী শুধু ছেলেধরাদের গল্প শুনছে। সবার মুখে মুখে একটাই আলোচনা। আরেকটা স্কুলের বাচ্চাকেও নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। ওদের স্কুলের পুকুরের সামনে পুলিশ গার্ড বসানো হয়েছে। সিসি টিভি লাগানো হয়েছে চারিদিকে। ছেলেধরাকে এবার ধরতেই হবে। দুপুর বেলা লক্ষ্মীর ঘুম পেয়ে গেলো। কড়া ওষুধের জন্যেই বোধহয়, মাথাটা ঝিম ঝিম করছিলো। ঘুমের মধ্যে সে দেখতে পেলো, তাদের পুকুরের মধ্যিখানের সেই ধোঁয়ার বলটাকে। আজ একেবারে কাছে গিয়ে সে দেখলো, ওর ভিতরে মড়ার মতো নেতিয়ে পড়ে আছে চার/পাঁচটা বাচ্চা। আর কতগুলো মিশ কালো শুঁটকো লোক তাদেরকে ঘিরে বসে আছে। ওরা অদ্ভুত সুরে পিন পিন করে মশার মতো কথা বলছে। খুবই আস্তে। কিন্তু লক্ষ্মী সেসব শুনতে পাচ্ছে আর বুঝতেও পারছে। ওরা বলাবলি করছে, "আয়ু দরকার। বুদ্ধিও। সুস্থ বাচ্চাগুলোই তার জন্য ভালো। কিন্তু সকলে সন্দেহ করছে। এখন কিছুদিন গা ঢাকা দিতে হবে। তবে বেশিদূর যাওয়ার মতো দম সঞ্চয় করতে হলে আরও কয়েকটা ছেলের আয়ুর ভাগ নিতে হবে। এখানে নিরিবিলিতে যে স্টেশনটা বানিয়েছি, এরকমটা বানানোর জায়গা আর কোথায় আছে, খুঁজে দেখতে হবে। তার জন্য সময় চাই। হাতে খুব বেশি সময় নেই।" ওদের এইসব আলোচনা শুনতে শুনতে লক্ষ্মীর মনে পড়লো, পকাইদাদা বলেছিলো, একটা জাতের এলিয়ান আছে, যারা পৃথিবীর মানুষের কাছ থেকে আয়ু আর মগজ শুষে নিতে আসে। ওদের অনেক শক্তি। অনেক কিছু করতে পারে। ওদের শরীর কাজের অযোগ্য হয়ে গেলে ওরা তাতে আরও আয়ু ভরে নিয়ে বেঁচে থাকার মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে পারে। ওদের পুরনো ব্রেইন সেল ড্যামেজ হয়ে গেলে বা ক্ষয় হয়ে গেলে ওরা নতুন ব্রেইন সেল নিজেদের ব্রেইনে ট্রানসপ্লান্ট করে আবার নতুন মগজ তৈরি করে নেয়। আর এই কাজের জন্য একমাত্র পৃথিবী গ্রহেই আসতে হয় ওদের। ওরা শরীর থেকে নির্গত 'অরা' নিয়ন্ত্রণে এনে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে থাকতে পারে। এমনকি ওরা অন্যের ব্রেইনে অস্থায়ী স্মৃতিলোপ ঘটাতে পারে। ফলে যার ব্রেইন সেল সংগ্রহ করে, তার কোন ঘটনাই মনে থাকে না। তবে পৃথিবীর কারো কারো মধ্যে গভীর একাগ্রতার ফলে বিশেষ আধ্যাত্মিক শক্তি বা যোগ শক্তি জেগে ওঠে, তারা এদের 'ইনভিজিবল অরা'ও দেখতে পায়।

যেন একটা ঝাঁকুনি খেয়ে লক্ষ্মী উঠে বসলো। বড়দির ঘরের সোফায় ও শুয়েছিলো। উঠে বসে লক্ষ্মী দেখলো, ওর হাতে একটা অপূর্ব সুন্দর পদ্ম। ও একটুও অবাক হলো না। ও বুঝতে পেরেছে ওকে কি করতে হবে। সমস্ত স্কুল থম থম করছে। একটাও শব্দ নেই যেন। সবাই ভয়ে কাঠ হয়ে আছে। লক্ষ্মী নিঃশব্দে চলে গেলো পুকুরপাড়ে। কিন্তু পুলিশ কাকুরা যেন ওকে দেখতেই পেলো না। লক্ষ্মীর হাতে ধরা একটা বড়সড় পদ্ম। গোলাপি রঙের পাপড়িগুলো থেকে যেন আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। পাপড়ির মাঝখানে উঁকি দিচ্ছে সোনার মতো কর্ণিকা। ডাঁটিটা ফিকে সবুজ, দীর্ঘ, কোমল অথচ দৃঢ়। লক্ষ্মী সোজা চলে গেলো কুয়াশার মত আবছা ধোঁয়ার বলটার কাছে। ওকে দেখে ভিতরের মিশ কালো জীবগুলো ভয়ে কুঁকড়ে গেলো। লক্ষ্মী তীরের ফলার মতো পদ্মের ডাঁটিটা ফুটিয়ে দিল ধোঁয়ার বলটার গায়ে। ওর দেওয়ালটা বেলুন ফুটো হওয়ার মতো ফুটুস করে ফেটে গেলো। ঐ লোকগুলো চুপসে তেবড়ে তুবড়ে ওই ধোঁয়ার গায়ে লেপ্টে না জানি কোথায় মিলিয়ে গেলো। আর চার/পাঁচটা মোটাসোটা ছেলে ঝপাঝপ করে জলে পড়ে গেলো। অমনি চারদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ পড়ে গেলো। পাঁচটা ছেলের মধ্যে খবরে জানাজানি হওয়া ছেলেটার সঙ্গে অজানা চারটে ছেলেও রয়েছে, যাদের কথা কেউ জানতে পারেনি। হয়তো তাদের বাবা-মা নেই, হয়তো তারা অনাথ কিম্বা খুব দূরে থাকে, ধরে এনে এই পুকুরে ডুবিয়ে রেখেছিলো, এইসব তুমুল আলোচনার মধ্যে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে লক্ষ্মীর মা এসে তার মেয়েকে বুকে চেপে ধরলো। লক্ষ্মীও ভেজা জামায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে ওই ছেলেদের দলে। ও যে বড়দির ঘরে শুয়েছিলো! এখানে কেমন করে এলো, কখনই বা এলো? এইসব খবরে সংবাদ মাধ্যমের অত মাথাব্যথা নেই। বোবা লক্ষ্মীকে নিয়ে গরীব মা রিনা বাড়ি চলে এলো। বড়দি এত গণ্ডগোলের মধ্যেও বলে দিলেন, "এখনই বাড়ি গিয়ে ভেজা জামা ছাড়িয়ে শুকনো জামা পরিয়ে একটু গরম দুধ খাইয়ে দিও। কেমন থাকে, খবর দিও। বড় নরম মন মেয়েটার। কদিন ধরে দেখছিলাম দুঃখে মুখটা শুকিয়ে গেছে। যাও, তুমি বাড়ি যাও মেয়েকে নিয়ে।"

সারারাত মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে ঠায় জেগে বসে থাকে লক্ষ্মীর মা। ভোরের দিকে চোখটা একটু লেগে গিয়েছিলো। ঘরঘরে শব্দে 'মা' ডাক শুনে চমকে চেয়ে দেখে লক্ষ্মী উঠে বসেছে, ওর গলা জড়িয়ে ধরে মেয়েই কি 'মা' বলে ডাকলো? ডাক্তারবাবুর কথা কি তবে সত্যি হলো? লক্ষ্মীর মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে শুধু কাঁদে আর কাঁদে। লক্ষ্মী দেখে, তার মায়ের মুখটা ঠিক স্বপ্নে দেখা দুর্গা মায়ের মতো। অবশ্য লক্ষ্মীর মা তো দুর্গাই।

প্রাণীবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা; শিক্ষিকা হিসেবে কাজ বিভিন্ন স্কুলে। বর্তমানে একমাত্র নেশা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা। 'উদ্বোধন' (রামকৃষ্ণ মিশনের একমাত্র সাংস্কৃতিক বাংলা মাসিক পত্রিকা) পত্রিকার 'চিরন্তনী' বিভাগের পুরাণ-কাহিনীর নিয়মিত লেখিকা । এছাড়াও রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠের অন্যান্য পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন এবং বই অনুবাদের সঙ্গে যুক্ত।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা