সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

অনেকদিন পর বসেছি তোমার সঙ্গে একটু গল্প করতে, একটু করা বলতে। কেমন আছ তুমি?মহালয়া পেরিয়ে গেছে, কাগজে কলমে দুর্গাপুজো এসে হাজির। জানলা দিয়ে মুখ বাড়ালেই হয়ত দেখা যাবে মা দুর্গা সপরিবারে পাড়ার মোড় থেকে এগিয়ে আসছেন । চারদিকে অনেক আলো, পাড়ায় পাড়ায় বিশাল সব মন্ডপ। তবুও, এইবছর পুজোটা অনেকখানিই অন্যরকমের পুজো। তার ইঙ্গিত যেন ছড়িয়ে রয়েছে আকাশে-বাতাসে। আকাশের মুখ পরিষ্কার হয়েও হচ্ছে না, জল ভরা মেঘ, ঘূর্ণী বাতাস, ফিরে ফিরে আসছে । পশ্চিমবঙ্গের উত্তর থেকে দক্ষিণে, বিভিন্ন জেলা বন্যায় ভেসে যাচ্ছে।

গত ৯ অগাস্ট, ২০২৪, কলকাতা শহরের বুকে ঘটেছে এক ভয়ানক, নৃশংস হত্যাকান্ড। আর জি কর মেডিকাল কলেজ ও হাসপাতালের ভিতর, নিজের কর্মস্থলে নিহত হয়েছেন এক তরুণী চিকিৎসক। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, এবং হত্যা করার আগে তাঁর উপর নানাভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। এই খবর সবার সামনে উঠে আসার পরে, চুপ করে বসে থাকেনি এই শহর, এই রাজ্য, এই দেশ। 'তিলোত্তম' /'অভয়া'-র মৃত্যুর জন্য দায়ী দোষীদের শাস্তির দাবীতে পথে নেমেছেন সমস্ত বয়সের, সমস্ত রকম পেশার মানুষজন। বাদ যায়নি ছোটো ছোটো মেয়েরা আর ছেলেরাও।

হঠাৎ করেই যেন, কয়েকদিনের মধ্যে এক ধাক্কায় অনেকখানি বড়ো হয়ে গেছে আমাদের ছোট্ট বন্ধুরা, তাই না? যে সমস্ত বিষয় নিয়ে সাধারণত তোমাদের সঙ্গে আমরা — বড়োরা — আলোচনা করতে চাই না, বাংলা শব্দভান্ডারের যে সমস্ত শব্দকে 'সাবালক' শব্দ বলা যায়, যে সমস্ত অভিজ্ঞতা আমরা চাই না যে কারোর হোক — সেই সব কিছু টেলেভিশন চ্যানেলে, খবরের কাগজে, সোশ্যাল মিডিয়াতে ছয়লাপ হয়ে গেল। এর সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা ব্যাপার হল। অনেকেই তাদের মা-বাবার সঙ্গে সঙ্গে যোগ দিতে গেল পথসভায়, হাঁটতে গেল মিছিলে। সবাই বুঝে গেল, জেনে গেল যে একজন ভালো ডাক্তার দিদিকে খুব, খুব কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলেছে কয়েকটা দুষ্টু লোক। সেই দুষ্টু লোকেদের শাস্তির জন্য, এই বাংলার বুকে বড়োদের সঙ্গে ছোটোরাও কচি গলায় দাবী তুলল- 'We Want Justice'।

প্রায় দুই মাস ধরে ঘটে চলা এই অভূতপূর্ব, অহিংস গণআন্দোলন আমাদের আশেপাশে ছোটোদের, ইচ্ছামতীর বন্ধুদের জীবনকে কেমনভাবে প্রভাবিত করে চলেছে — ভালোভাবে না খারাপভাবে— তা আমরা বুঝব আরও বেশ কিছুদিন পরে। আপাতত, ইচ্ছামতীর 'ইচ্ছেমতন' বিভাগে গুছিয়ে তুলে রাখলাম বিভিন্ন বয়সী ছোটোদের কিছু আঁকা, লেখা;সঙ্গে রইল তাদের মা-বাবাদের অভিজ্ঞতা। ইচ্ছেমতন বিভাগটি নথীভুক্ত করে রাখুক এই সময়ের কচিকাঁচাদের মনের ভাবনাগুলি। বেশীরভাগ লেখা/ছবিই অভিভাবকদের অনুমতিসহ নেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। নিজের বাড়ির ছোট্টো মানুষদের আগামী দিনের সংবেদনশীল, বুঝদার নাগরিক তৈরি করার পথে হাঁটার জন্য তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আগামী দিনেও যদি কেউ চায় , অভিভাবকেরা যদি চান, তাহলে আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন এমন সব ছবি বা লেখা।

এই পুজো ভালো কাটুক বা খারাপ, একা কাটুক বা অনেকের সঙ্গে, ঘরের কোণে কাটুক কিংবা পাড়ার প্যান্ডেলে কিংবা রাতজাগা মিছিলে, নতুন জামাকাপড় পরি বা না-ই পরি, উপহার পাই বা না পাই, ভালোমন্দ খাই বা না খাই, হই-হুল্লোড় করি বা না করি, বেড়াতে যাই বা না যাই, ... একটা কথা যেন আমরা কেউ না ভুলে যাই — 'We Want Justice / আমাদের চাই ন্যায়বিচার'।

এই দেবীপক্ষে, সবাই মিলে একসঙ্গে মা দুর্গাকে বলি চলো - দুষ্টের দমন করো। তিলোত্তমার অপরাধীদের শাস্তি দাও।

৩ অক্টোবর ২০২৪
১৬ আশ্বিন ১৪৩১

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা