২০২০ সাল শেষ হচ্ছে। অন্যান্য সব বছরের মতই, ভালো-মন্দ মেশানো ছিল এই বছরটা। তবে এবার মন্দের ভাগ ভালোর থেকে অনেক অনেক বেশি। সেই মার্চ মাস থেকে, আমরা সবাই এমন সমস্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে বাধ্য হলাম, যেগুলির কথা ছোটরা শুধু নয়, আমরা বড়রাও কোনোদিন ভাবিনি। ঘরে বন্দী থাকা, নিজের কাজ নিজে করা, অনলাইন ক্লাস থেকে পরীক্ষা অবধি, — কত কিছুই আমাদের অভ্যাস হয়ে গেল। মাঝে 'আম্ফান'-এর তান্ডব ও ভোলার নয়। বছরের শেষে এসে অবশ্য অনেক কিছুই আবার আগের মত হয়ে গেছে তবুও, আমরা কেউই কিন্তু পুরোপুরি বিপদ মুক্ত নই। করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক কোনো কোনো দেশে সবে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও এই প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হবে খুব তাড়াতাড়ি। ভারতবর্ষের মত বিশাল দেশের সমস্ত মানুষের কাছে প্রতিষেধক পৌঁছে দেওয়া সোজা কাজ নয়। তাই সেই কাজ সম্পূর্ণ হতেও অনেক, অনেকদিন সময় লাগবে। আমাদের সবাইকে ততদিন নিজেদের এবং আশেপাশের সমস্ত মানুষের জন্য, নিরাপদে এবং পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস বজায় রাখতে হবে। আশা করা যায়, তারপরে হয়ত আমাদের সবার জীবন আরও একটু সহজ হবে। নতুন বছরে আমাদের এবং আশেপাশের সব মানুষের জীবন আর একটু বেশি সুস্থ, বেশি সহজ হোক, ইচ্ছামতী আর চাঁদের বুড়ির তরফ থেকে এই প্রার্থনাই রইল।
হঠাৎ লকডাউন হওয়ার ফলে ইচ্ছামতীর অবশ্য একটা লাভ হয়েছে বলা যায়। লকডাউনের কারণে যেহেতু অনেকেই অনেকটা সময় অনলাইন কাটিয়েছে, তাই আমাদের অ-নে-ক নতুন নতুন বন্ধু হয়েছে। সেই মার্চ মাসের শেষেই লকডাউনের একঘেয়েমি কাটাতে আমরা আমাদের বন্ধুদের জন্য শুরু করেছিলাম ফেসবুকে রোজ ছবি বা হাতের কাজ আপলোড করার জন্য 'লকডাউন স্ক্র্যাপবুক'। সেই স্ক্র্যাপবুকের সমস্ত ছবি দেখতে পাওয়া যাবে এই লিংকে। তার পরে কয়েক মাস ধরে চলেছে আমাদের 'সূত্র ধরে গল্প লেখো'- খেলা। আমরা কয়েকটা করে ছবি সূত্র হিসাবে দিয়েছি। আর আমাদের বন্ধুরা সেইসব সূত্র ধরে আমাদের খুব ভালো সব গল্প লিখে পাঠিয়েছে। সেইসব গল্প আবার ফিরে পড়তে পারো 'ইচ্ছেমতন' বিভাগে।
পুজোর আগে এবং পরে আমাদের 'ইচ্ছেমতন' বিভাগের লেখার খেলার বিষয় ছিল 'মনের জানলা'। এই লেখালিখির খেলাতেও অংশ নিয়েছে অনেক বন্ধু। লেখার সঙ্গে সঙ্গে এঁকে পাঠিয়েছে সুন্দর সব ছবি। অক্টোবর মাসের সমস্ত লেখাগুলিকে ফিরে দেখতে পারো এই লিংকেঃ মনের জানলা। এই খেলাটি নভেম্বর মাসেও চলছিল, আমাদের বন্ধুরা লেখাও পাঠিয়েছে। তবে নভেম্বরের বদলে সেই সমস্ত লেখা আমরা প্রকাশ করলাম ডিসেম্বরে।
এক অনিবার্য কারণবশতঃ আমরা নভেম্বর মাসে কোনো নতুন লেখা বা আঁকা প্রকাশ করতে পারিনি। গত নভেম্বরের কুড়ি তারিখে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন সন্তোষ কুমার রায়। সেই ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে, ইচ্ছামতীর 'আন্মনে' বিভাগটি শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই - 'আমার ছোট্টবেলা' ধারাবাহিকের মাধ্যমে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল অবধি, ইচ্ছামতীর 'পরশমণি' বিভাগে নিয়মিত লিখেছেন নানা বিষয় নিয়ে সহজ বিজ্ঞানভিত্তিক নিবন্ধ। তিনি ছিলেন ইচ্ছামতীর সর্বাধিক বরিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে একজন এবং আমার বাবা। সহজ বাংলায় লেখা তাঁর যত বিজ্ঞানভিত্তিক নিবন্ধগুলি এবং তাঁর ছোট্টবেলার স্মৃতিকথার হদিশ পাবে এই লিংকে।
এই বছরে আমরা হারিয়েছি একাধিক জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত মানুষকে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বয়সজনিত কারণে বা অন্য অসুখে চলে গেলেও, অনেকেই কোভিড আক্রমণের শিকার। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, কিংবদন্তী শিল্পী অমলা শংকর; অভিনয় জগতের সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্তু মুখোপাধ্যায়, মনু মুখোপাধ্যায়, জগন্নাথ গুহ, ঋষি কাপুর, ইরফান খান, সুশান্ত সিং রাজপুত, বাচিক শিল্পী প্রদীপ ঘোষ, কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, কবি বিজয়া মুখোপাধ্যায়, ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্ত, সঙ্গীতশিল্পী এস পি বালসুব্রমনিয়ম, নৃত্যগুরু সরোজ খান, ফুটবলের দুনিয়া থেকে পি কে ব্যানার্জি, চুনী গোস্বামী...দেশের বাইরে তাকালে দিয়েগো মারাদোনা, সন কনরি, ...এই ছোট্ট তালিকাটা একেবারেই অসম্পূর্ণ, একটা না শেষ হওয়া সুদীর্ঘ তালিকার শুরু মাত্র। যাঁরা চলে গেছেন, দেশের এবং বিদেশের সেই সমস্ত চেনা এবং অচেনা মানুষদের জানাই আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
শেষ হয়ে আসা বছরের সমস্ত রকম চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে সর্বদা পাশে থাকা ইচ্ছামতীর সমস্ত লেখক, শিল্পী এবং সহযোগী বন্ধুদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
নতুন বছরের শুরুতে , আমাদের সব বন্ধুদের জন্য রইল সোনালি রোদ্দুরের ওম, কমলালেবুর সুগন্ধ আর মরসুমি ফুলের হাসি। সবাই সুস্থ থেকো, ভালো থেকো।
৩১ ডিসেম্বর, ২০২০
১৬ পৌষ, ১৪২৭
ছবিঃ মিতিল