আজ ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯। ১৮২০ সালে এই তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এই বছর পালিত হচ্ছে তাঁর দ্বিশতজন্মবার্ষিকী, সহজ কথায় বলতে গেলে ২০০ বছরের জন্মদিন। এই পুণ্যদিনে, ইচ্ছামতী পরিবার থেকে তাঁকে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম।
বাংলাভাষার সময় খুব ভালো যাচ্ছে না, এমন কথাই বেশি শুনি আজকাল। নিত্যদিন নানারকম অভিজ্ঞতার গল্প শুনি, বাংলার ছেলেমেয়েরা নাকি যথেষ্ট বাংলা বই পড়ছে না; তাদের বাংলা ভাষা নিয়ে রয়েছে নানা ভয়। স্কুলের পড়ার সমস্ত বিষয়গুলির মধ্যে বাংলা পড়তে সব থেকে কম সময় দিচ্ছে, এবং ফল খারাপ করছে। সবাই হয়ত করছে না, কিন্তু অনেকেই করছে। সঙ্গে একথাও বলতে বাধা নেই যে বাংলা বিজ্ঞাপনে এবং টেলিভিশন-রেডিও- ইন্টারনেট এবং পত্রপত্রিকাতে অনেক সময়েই বাংলা ভাষার ভুল প্রয়োগ এবং খুব খারাপ অনুবাদ চোখে পড়ে।
এইসব কথা শুনলে এবং উদাহরণ দেখলে মনে পড়ে বিদ্যাসাগরমশাই কেমনভাবে বাংলা অক্ষর পরিচিতি সহজ করার জন্য, বাংলা ভাষা শেখা সহজ করার জন্য, বাংলার শিশুদের জন্য দুটি ভাগে লিখেছিলেন 'বর্ণপরিচয়'। সাল-তারিখের হিসেব মেলালে, মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র 'বর্ণপরিচয়' প্রণয়ন করে, ১৮৫৫ সালে। তারপরে, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং একাধিক সামাজিক সংস্কারের কর্মকান্ডের পাশাপাশি শুধুমাত্র বাংলা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ভাষাকে সহজ করার জন্য, এবং লেখাপড়ায় উৎসাহিত করার জন্য লিখেছিলেন এবং অনুবাদ করেছিলেন একাধিক গল্পের বই; দেশ-বিদেশের গল্পমালার থেকে অনুপ্রাণিত এইসব বইগুলি লিখতে লিখতে বাংলা ভাষায় সহজ, আধুনিক গদ্য লেখার রীতি প্রবর্তন করেছিলেন। এবং তিনি এই সমস্ত কাজ প্রায় একা হাতেই করেছিলেন বলা চলে।
'বর্ণপরিচয়' প্রকাশের প্রায় দেড়শো বছর পরে, আজ কি আমরা সবাই মিলে সেই বাংলা ভাষাকে, আমাদের মাতৃভাষাকে আরেকটু আদর-যত্ন করে বাঁচিয়ে রাখতে পারি না? খুব কষ্ট তো কিছু করার নেই। শুধু বাংলাভাষাকে ভালোবেসে পড়া, লেখা, বলার অভ্যাস করা, সে কাজ কি এমনই কঠিন?
ইচ্ছামতী পরিবারের সদস্যরা মনে করেন এটা এমন কিছু শক্ত কাজ নয়। একেবারে ছোট্ট বেলা থেকে বাংলা ভাষায় গল্পের বই পড়া, ওয়েব পত্রিকা পড়া, বলা এবং লেখার অভ্যাস করলেই অন্য যেকোনো ভাষার মত বা বিষয়ের মত বাংলাও একেবারেই সহজ মনে হবে।
এই ভাবনা মনে রেখেই, ইচ্ছামতীর তরফে, বিদ্যাসাগরমশাইয়ের দ্বিশতজন্মবার্ষিকীতে,মঞ্জুষা বিভাগে রইল 'কথামালা'র থেকে পাঁচটি ছোট্ট ছোট্ট গল্প, রঙিন ছবিসহ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা বইগুলির মধ্যে একটি অনুবাদ গল্প সংকলন ছিল 'কথামালা'। গ্রীসদেশের কথাকার ঈশপের গল্পমালার থেকে বেছে নিয়ে পঁচাশিটি গল্পের অনুবাদ করের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। গল্পগুলি কিন্তু 'ঈশপ্স্ ফেব্ল্স্'-এর সরাসরি অনুবাদ ছিল না, বরং সেগুলিকে প্রয়োজনে এই দেশের ছেলেমেয়েদের বোঝার সুবিধার জন্য অল্পস্বল্প বদল ও করেছিলেন তিনি। ১৮৫৬ খ্রীষ্টাব্দে 'কথামালা' বইটি প্রকাশিত হয়। গল্পগুলির সঙ্গে অনেক সময়েই নীতিবাক্য থাকত, যাতে পাঠক-পাঠিকাদের ন্যায়-অন্যায় বোধ তৈরি হয়।
মূল গল্পগুলিকে বদল করা হয়নি। তবে ভাষা অনেক সহজ করে নেওয়া হয়েছে। নীতিবাক্যগুলি আমরা ব্যবহার করিনি। ইচ্ছামতীর যারা একেবারে ছোট্ট ছোট্ট পাঠক-পাঠিকা, সবে নিজে নিজে বাংলা পড়তে শিখছে, কিংবা মা বা বাবার কাছে গল্প শোনে, বিশেষ করে তাদের জন্যই রইল কথামালার এই পাঁচটি গল্প।
আর এই চিরনতুন গল্পগুলির সঙ্গে সঙ্গেই, আমাদের একটু বড় বন্ধুদের জন্য রইল বিদ্যাসাগর আর তাঁর কালের মেয়েদের শিক্ষা - এই বিষয়ে একটি নিবন্ধ।
আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আজও মেয়েদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে নানারকমের বাধা রয়েছে। সেই ধরনের বাধা, আরও অনেক বেশি ছিল আজ থেকে দেড়শো বছর আগে। সেইসব বাধাবিপত্তির পরোয়া না করে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগের জন্য লড়াই করে যাওয়া অদম্য বিদ্যাসাগরের খোঁজ পাবে এই নিবন্ধে।