বাঁ দিকে জিয়ানমার্কো তামবেরি, ডান দিকে মুতাজ ইসসা বারশিম
সদ্য শেষ হল টোকিও অলিম্পিক্স্। এবার অলিম্পিক্স-এ যে ঘটনাটা আমার মনে সবথেকে বেশি দাগ কেটেছে সেটা হয়ত তুমি জানো, তবুও আরো একবার বলি। এমন গল্প বার বার শোনা উচিত। মুতাজ ইসসা বারশিম আর জিয়ানমার্কো তাম্বেরি —দুইজনে একে অপরের খুবই ভালো বন্ধু এবং দুজনেই হাই-জাম্প প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ত্রিশ বছর বয়সী মুতাজ হলেন কাতারের প্রতিনিধি আর উনত্রিশ বছরের জিয়ানমার্কো হলে ইতালির প্রতিনিধি। ফাইনালের দিনে, অন্যান্য সব প্রতিযোগীকে হারিয়ে দুজনেই একে অপরকে সমানে সমানে টক্কর দিয়ে চলেছেন। শেষে ২.৩৯ মিটার উচ্চতা অতিক্রম করতে গিয়ে দুজনেই পরপর তিনবার বিফল হলেন। তাহলে উপায়? কী করে ঠিক করা হবে যে কে পাবেন সোনা আর কে পাবেন রূপো? একটা 'জাম্প-অফ' অর্থাৎ চূড়ান্ত পরীক্ষা হতেই পারে, কিন্তু তাতে দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে, দুজনেই বা কেউ একজন খারাপভাবে জখম হতে পারেন। এমন যখন চিন্তাভাবনা চলছে, সেই সময়ে মুতাজ বারশিম অলিম্পিক্স্ এর এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চান — আমরা কি দুটো সোনার পদক পেতে পারি? অবশ্যই পারো, জানালেন উলটোদিকের মানুষটা। তবে তাই হোক —দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে দুই বন্ধু একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন। দুজনেই পেলেন সোনার পদক, দুজনের বন্ধুত্ব রইল অটুট। বারশিম এর আগে দুটো অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ এবং রূপো পেয়েছেন। এবারে সোনা পাওয়ায় তাঁর সব স্বপ্ন সফল হল বলা যায়। ওদিকে তাম্বেরি ২০১৬-এর রিও অলিম্পকের কিছুদিন আগে পায়ে চোট পেয়ে আর অংশ নিতে পারেন নি। এবারের পদক জয় তাঁর সেই দুঃখ ভুলিয়ে দিল। এই বিষয়ে বারশিম পরে জানান,
" আমি ওর দিকে তাকালাম, ও আমার দিকে তাকালো,আর আমরা দুজনেই বুঝে গেলাম... আমরা একে অপরকে দেখেই বুঝে গেলাম, যথেষ্ট হয়েছে। আর দরকার নেই। ও আমার সবথেকে প্রিয় বন্ধুদের মধ্যে একজন, শুধু খেলার মাঠে নয়, তার বাইরেও। আমরা একসঙ্গে অনুশীলন করি। ...এটা একটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মত ঘটনা।...এটাই আসল খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব, আর আমরা সেই বার্তাই সবাইকে দিলাম। "
ওপরেঃ ভারতীয় পুরুষ হকি দল, দ্বিতীয় সারি, বাঁদিক থেকে মীরাবাঈ চানু, লাভলিনা বরগোহাঁই, পি ভি সিন্ধু, তৃতীয় সারি, বাঁদিক থেকে বজরঙ্গ পুনিয়া, রবি কুমার দাহিয়া,নীরজ চোপড়া, নীচে ভারতীয় মহিলা হকি দল
এই বছরের অলিম্পিক্স্ ভারতীয়দের কাছে অতি স্মরণীয় হয়ে থাকবে আগামি বহুদিন। অতিমারির আবহে, একবছর পিছিয়ে হওয়া খেলাধুলোর এই সেরা উৎসবে এবারে ভারত জিতে এসেছে সাতটা পদক। সবার মুখে মুখে ফিরবে নীরজ চোপড়ার জেতা সোনা, মীরাবাঈ চানু আর রবি কুমার দাহিয়ার জেতা রূপো আর রূপো, আর লাভলিনা বরগোহাঁই, পি ভি সিন্ধু আর বজরং পুনিয়ার জেতা ব্রোঞ্জ পদকের গল্প। সঙ্গে রয়েছে ৪৯ বছর পরে ভারতীয় পুরুষ হকি দলের পাওয়া ব্রোঞ্জ পদক। আর অবশ্যই আমাদের সবার মনে থেকে যাবে ভারতীয় মহিলা হকি দল- অলিম্পক্স্-এ চতুর্থ স্থান অধিকার করা খুব সহজ কাজ নয় কিন্তু। আর বাকি যাঁরা বহু পরিশ্রম করার পরেও শেষ মূহুর্তে পদক লাভ করেন নি, তাঁরাও কিন্তু অন্য সবার মতই আমাদের কাছে খুব আদরের, খুব সম্মানের মানুষ। এঁদের প্রত্যেকের জীবনেই রয়েছে অনেক কঠিন লড়াই আর কঠোর পরিশ্রমের গল্প। আমাদের দেশের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই আসেন দেশের দূর দূর প্রান্তের ছোট্ট ছোট্ট অজানা গ্রাম, অচেনা শহর থেকে। এঁদের একেক জনের ছোট্টবেলার থেকে চালিয়ে যাওয়া লড়াইএর গল্প জানলে ---এঁদের প্রত্যেককেই আলাদা করে সুপারম্যান বা সুপারউওম্যান ভাবতে ইচ্ছা করবে।
আগামি রবিবার রাখীপূর্ণিমা। রাখীপূর্ণিমায়, ভাই-বোন-বন্ধুদের রাখী পরানোর সময়ে আমাদের মনের মধ্যে থাকুক বারশিম আর তাম্বেরির বন্ধুত্বের গল্প; থাকুক ভারতের মহিলা এবং পুরুষ হকিদলের খেলোয়াড়দের বন্ধুত্বের গল্প। নিজেদের মধ্যে খুব ভালো বোঝাপড়া না থাকলে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা সহজে করা যায় কি?
দেশ-বিদেশের এই সমস্ত খেলোয়াড়দের সঙ্গে সঙ্গে এবারের অলিম্পিক্স-এ আমাদের সবার নজর কেড়েছেন রিফিউজি অলিম্পিক্স্ টীমের সদস্যেরা। একলা, একে অপরের অচেনা, দেশছাড়া মানুষদের নিয়ে তৈরি এই দলের প্রতিটি সদস্যের জীবন সংগ্রামের গল্প জানলে নিজেদের প্রতিদিনের সামান্য অসুবিধাগুলোকে আর অসুবিধা বলে মনেই হয়না। সব কষ্ট ছাপিয়ে বেঁচে থাকার, লড়াই করার, স্বপ্ন দেখার গল্পগুলোই ফিরে আসে, সাহস যোগায়। অলিম্পিক্স্-এ মোটে দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণ করা এই বিশেষ দলটিকে নিয়ে এমাসের কিস্তিতে রয়েছে একটি ভারি সুন্দর প্রতিবেদন।
আজ আবার শুরু হচ্ছে ঝুলনযাত্রা। তুমি কি বাড়িতে ঝুলন সাজাও? নাকি 'ঝুলন' সম্পর্কে এই প্রথম জানলে? প্রায় হারিয়ে যেতে বসা আমাদের এই উৎসব নিয়ে একটা নিবন্ধ রয়েছে ইচ্ছামতীর এই মাসের কিস্তিতে। চটপট পড়ে ফেলো, আর ইচ্ছে হলে আগামি কয়েকদিনের মধ্যে নিজের বাড়িতেই আগামি কয়েকদিনের মধ্যে কোনো একদিন সাজিয়ে ফেল ছোট্ট ঝুলন। যদি সাজাও, আমাদের ছবি তুলে পাঠাতে ভুলো না কিন্তু।
ভালো থেকো, সুস্থ থেকো।
১ ভাদ্র ১৪২৮
১৮ অগাস্ট ২০২১
গ্রাফিকঃ মিতিল
ফটোগ্রাফঃ অলিম্পিক্স্ ডট কম, টুইটার এবং অন্যান্য সংবাদ পোর্টাল