কল্পবিজ্ঞানের গল্পে বা কমিক্সে পড়া, বা সাই-ফাই থ্রিলার ছবিতে দেখা যায় যেমন, প্রায় ঠিক তেমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা, এই পৃথিবীর সমস্ত মানুষ। 'নভেল করোনাভাইরাস'-এর হাত থেকে বাঁচতে আমরা সবাই ঘরবন্দী। স্কুলে যাওয়া বারণ, কিছুমাত্র কাজের জায়গা বাদ দিয়ে বাড়ির বড়দের কাজে যাওয়া বারণ, বাইরে খেলতে যাওয়া বারণ, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা, হইহই করা বারণ--- খুবই মন খারাপ নাকি? কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল, কারোর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল, কিছু কিনতে যাওয়ার কথা ছিল , কত জনের কত রকমের কাজ ছিল...কিন্তু সবকিছুকে বন্ধ করে নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেই একমাত্র রক্ষা পাওয়া যেতে পারে করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে। সবকিছু বন্ধ রেখে, নিজেদের 'লকডাউন' করে রাখতে বাধ্য হচ্ছি আমরা, নিজেদের স্বার্থে, অন্যদের স্বার্থে।
এদিকে অনেকের আবার এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে স্কুলের 'অনলাইন ক্লাস'। একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা, তাই না? স্কুল যাওয়া নেই, কিন্তু পড়াশোনা চলছে। বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সুযোগ নেই, কিন্তু হোমওয়ার্ক তো করতেই হচ্ছে। আবার বাড়ির বড়রাও তো ভিডিও কলের মাধ্যমে দিনভর অফিসের কাজ সারছেন। বাড়িতে যাঁরা প্রতিদিনের কাজে সাহায্য করতে আসেন, তাঁরাও তো আসছেন না। ফলে সবাই মিলে বাড়ির কাজ করতে হচ্ছে। তাই কাজে ভুল হচ্ছে, একটু রাগ-বকুনিও হচ্ছে, কিন্তু সবাই আবার নিজেদের কাজ নিজেরাই করে নিতে বাধ্য হচ্ছেন, তাই না?এই সমস্ত অভিজ্ঞতা শুধু ছোটদের কাছেই নয়, বড়দের কাছেও বেশ নতুন।
ভারতে প্রথম দফার 'লকডাউন' শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইচ্ছামতীর ফেসবুক পাতায় আমরা তৈরি করত শুরু করেছিলাম 'লকডাউন স্ক্র্যাপবুক'। আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম আমাদের ছোট থেকে বড়, সব বন্ধুদের ; বলেছিলাম ইচ্ছেমতন ছবি আঁকো, নানারকমের সুন্দর জিনিষ বানাও, আর আমাদের কাছে তার ছবি পাঠাও। ইচ্ছামতীর ডাকে সাড়া দিয়ে আমদের পুরনো বন্ধুরা তো বটেই, অনেক নতুন বন্ধুও এঁকে পাঠিয়েছে খুব সুন্দর সব ঝলমলে রঙিন ছবি। পাঠিয়েছে তাদের নানারকমের হাতের কাজের ছবি। সেই সমস্ত ছবি আমাদের ফেসবুক পাতার স্ক্র্যাপবুকে তো দেখতে পাওয়া যাচ্ছেই; তা ছাড়াও ছবিগুলিকে আমরা এই ওয়েবসাইটেও সাজিয়ে রাখছি । খুব ভালো লাগছে দেখে, যে ছোটদের সঙ্গে সঙ্গে বড়রাও অনেকেই যোগ দিয়েছেন আমাদের এই আমন্ত্রনে। লকডাউনের কারণে, বাইরে বেরিয়ে ইচ্ছেমতন কাজকর্ম করা বন্ধ, কিন্তু ঘরে বসে ইচ্ছেমতন রঙিন দুনিয়ায় অল্প সময়ের জন্য থাকতে বাধা নেই কারোরই।
অন্যদিকে বেশিরভাগ কলকারখানা বন্ধ থাকার কারণে, রাস্তায় গাড়ি কম চলছে বলে, মানুষ ঘরবন্দী বলে, প্রকৃতির বুকে ঘটে চলেছে খুব ভালো কিছু ঘটনা। তার মধ্যে যেগুলি আমরা সবাই খুব বেশি অনুভব করতে পারছি, চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি --- আকাশ অনেক বেশি পরিষ্কার আর নীল , বাতাস অনেক বেশি ঠান্ডা, পরিবেশ দূষণের মাত্রা অনেক কম। এ বিষয়ে আমরা পরে কোনোও একদিন ভালো করে গল্প করব।
এই সব অভিজ্ঞতার মধ্যেই এসে গেল আরেকটা বাংলা নতুন বছর, ১৪২৭। এমন নববর্ষের অভিজ্ঞতাও আমাদের কাছে প্রথম। চারদিকের এত অসুখের খবর, মানুষের কষ্টের খবরের মাঝখানে নতুন বছর আসার আনন্দটা একটু হলেও ফিকে। তবুও, আমরা জানি, সব মন খারাপ ভুলে, আশায় বুক বেঁধে নতুন দিনকে স্বাগত জানাতে হয়। আগামি দিন গুলি আমাদের জীবনে আবার পুরনো ছন্দে ফিরে আসবে কিনা জানিনা;কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রকোপ যাতে ক্রমশঃ কমে যায়, সেই আশা রাখছি। যাঁরা আমাদের সুস্থ রাখার জন্য করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে রাতদিন লড়াই করছেন, চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং জরুরী পরিষেবা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সেই সব মানুষকে আমরা কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
সারা পৃথিবী জুড়ে যাঁরা এই অসুখের কাছে হার মেনেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের আত্মার শান্তি কামনা করি। যাঁরা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, আমরা তাঁদের সমব্যথী।
সবাই ভালো থেকো, সুস্থ থেকো, সাবধানে থেকো।
১লা বৈশাখ, ১৪২৭
১৪ এপ্রিল, ২০২০
গ্রাফিকঃ মিতিল