সকাল গেলে সন্ধ্যে আসে, রাত্রি গেলে ভোর,
একটা বছর পেরিয়ে আসে আরেকটা বছর।
সুখে-দুখে-হাসি-কান্নায় দিন করলাম পার-
মাস-তারিখের হিসেব জানায় নতুন ক্যালেন্ডার।
হ্যাঁ, চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই যেন এসে গেল আরেকটা নতুন বাংলা সন। এসে গেল ১৪২৩ সন। এল আরেক পয়লা বৈশাখ।
১৪২৩ সনে এটাই চাঁদের বুড়ির তরফ থেকে তোমাকে লেখা প্রথম চিঠি। নতুন বছরের শুরু, তাই ভাল ভাল কথাবার্তাই লেখা উচিত - নতুন বছরে তোমার নতুন জামা হল কিনা, কোথাও বেড়াতে যাবে কিনা, কি কি খাবে- এইসব আর কি...কিন্তু সে সব লিখলেই কি শুধু হবে? আমাদের পৃথিবী আর আমাদের আশেপাশের মানুষ জন যে একদমই ভাল নেই, সেটা খুব ভাল করে জেনে, তারপরে শুধুই কি আনন্দ -ফূর্তি করে থাকা যায়?
এই মাত্র কিছুদিন আগে, কলকাতা শহরের এক অতি ব্যস্ত অঞ্চলে, ভরদুপুরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে এক আধা তৈরি উড়ালপুল। মাত্র কয়েক মূহুর্তে, কত বিভিন্ন বয়সী মানুষ, যাদের মধ্যে ছিল স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও, চিরঘুমে ঘুমিয়ে পড়ে।আর তার আগে এবং পরে, প্রতিদিন খবরের কাগজ, রেডিও, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেটে শুধুই যুদ্ধের খবর, ধ্বংসের খবর, মৃত্যুর খবর--- যেন বড় বেশি খারাপ খবরের জোয়ার চারিদিকে; যেন ভাল কিছুই হচ্ছে না কোথাও; পৃথিবীর কোন প্রান্তে লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে নতুন বাসস্থানের সন্ধানে অচেনা, ভয়াল সমুদ্রে ডিঙ্গি ভাসাচ্ছে; কোথাও বা স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নির্বিচারে মেরে ফেলা হচ্ছে; অন্য দিকে কোথাও প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষন করতে চেয়েছেন বলে চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কোন পরিবেশবিদকে; কোথাও মানুষের তৈরি করা জঞ্জাল বদলে দিচ্ছে জলের এবং মাটির বিভিন্ন প্রাণীদের জীবন; কোথাও বা সমুদ্রের জলের নীচে যেকোন মূহুর্তে তলিয়ে যাওয়ার ভয় বুকে নিয়ে বেঁচে রয়েছে একটা আস্ত জনপদ।
এই পয়লা বৈশাখে, একে অপরকে হাসিমুখে 'শুভ নববর্ষ' বলার আগে, এস কিছু মূহুর্ত স্মরণ করি সেইসব অসহায় মানুষদের , প্রার্থনা করি তাঁদের জন্য যাঁরা বছরভর ঘটে যাওয়া নানান দুর্ঘটনার শিকার। যাঁরা অসময়ে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁদের প্রতিজনের আত্মার শান্তি কামনা করি।
তবে কিনা জীবনের নিয়মই হল, খারাপ অভিজ্ঞতাগুলিকে পেছনে ফেলে রেখে ভালোর আশায় সামনের দিকে এগিয়ে চলা। চলতে চলতে পড়ে গেলে আবার উঠে দাঁড়িয়ে , গায়ের ধুলো ঝেড়ে, নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে চলা; নতুন দিনের স্বপ্ন দেখা, নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা- যেখানে সব মানুষের সমান অধিকার। এই পৃথিবীতে খারাপ এবং শক্তিশালী মানুষ, যারা সবসময়ে নিজেদের লাভের কথা ভাবছে আর অন্যদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, তাদের থেকে ভাল মানুষ, যাঁরা অন্যদের নানাভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন - তাঁদের সংখ্যা অনেক অনেক গুণ বেশি। আর সেইসব ভাল মনের মানুষেরা, কখনও একলা, কখনও সমবেত ভাবে, ক্রমাগত সাহায্য করে চলেছেন সেইসব মানুষদের - যাঁরা অসহায়, দুঃখী, গৃহহীন, যাঁদের দরকার মাথার ওপর ছাদ, দুবেলার খাবার, রোজগার করার জন্য কাজ, পড়াশোনা করার সুযোগ। এই নববর্ষে, পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এইসব ভাল মানুষদের জানাই অনেক শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন।
এইবারে আসি আমাদের ইচ্ছামতীর কথায়। এই পয়লা বৈশাখে, ইচ্ছামতীর প্রাপ্তি হয়েছে ভালই। দুটো খুব ভাল খবর আছে।
প্রথমটা হল, আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট 'গুডনিউজনেটওয়ার্ক' এর সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে ইচ্ছামতীর। 'গুডনিউজনেটওয়ার্ক' সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলা নানা ধরণের ভাল ভাল খবরের যোগান দিয়ে থাকে। যেখানে সারাদিন অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে শুধুই যেন খারাপ খবরের জোয়ার, সেখানে 'গুডনিউজনেটওয়ার্ক' নিয়ে আসে তাজা বাতাসের ঘ্রাণ; আশ্বাস দেয়, এই দুনিয়ার সমস্ত মানুষ এখনো খারাপ হয়ে যায়নি। খবর মানেই শুধু ভেঙে ফেলার বা ধ্বংসের খবর নয়, পাশে পাশে তৈরি হচ্ছে অজস্র গড়ে ওঠার গল্প-ও। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত এই ওয়েবসাইটের কর্তৃপক্ষ আমাদের অনুমতি দিয়েছেন, মাঝে মাঝে তাঁদের ওয়েবসাইট থেকে পছন্দমত ভাল খবর অনুবাদ করে আমরা ইচ্ছামতীর পাতায় প্রকাশ করতে পারি। খবরটা পেয়ে ইচ্ছামতী যে বেজায় খুশি সে কথা বলাই বাহুল্য।
দ্বিতীয়টা হল, জনপ্রিয় বাংলা শব্দের খেলার ওয়েবসাইট 'শব্দবাজি' হাত ধরেছে ছোট্ট ইচ্ছামতীর। এখন থেকে মাঝে মাঝেই ইচ্ছামতীর পাতায় দেখতে পাওয়া যাবে 'শব্দবাজি'র তৈরি নানা ধরনের বাংলা শব্দ নিয়ে খেলা। খেলাগুলি মোটেও কঠিন নয়, বরং ইচ্ছামতীর বন্ধুদের জন্য আলাদা করে সহজ ভাবে তৈরি করে দিচ্ছে 'শব্দবাজি'। আজ , নববর্ষে তোমার জন্য উপহার রইল কিছু মজাদার 'রিবাস' ও একটি 'শব্দসন্ধান'। সারাদিন নববর্ষের ভাল থাকার আমেজের মধ্যে দেখ তো খেলাগুলির সমাধান বা উত্তর সব দিতে পার কিনা। খেলতে খেলতে বাংলা ভাষাটাও একটু রপ্ত করে নেওয়া যাবে, ব্যাপারটা মন্দ নয়, বল?
আমাদের সবার নতুন বছর খুব ভাল কাটুক - এই আশা নিয়েই শেষ করলাম আজ। ইচ্ছামতী ও চাঁদের বুড়ির তরফ থেকে তোমার ও তোমার পরিবারের সব্বার জন্য রইল নববর্ষের অনেক শুভেচ্ছা। সকলের শুভ হোক।
ছবিঃ অর্কপ্রিয়া কোলে