আজ ২৫শে ডিসেম্বর। খ্রীস্টমাস। যীশুখ্রীষ্টের জন্মদিন। বড়দিন।
খ্রীস্টমাস মানেই ছুটি। যারা সারা বছর ভাল হয়ে থেকেছে , একফোঁটাও দুষ্টুমি করেনি, তাদের জন্য আবার সান্টাক্লস রাতের বেলা চুপিচুপি মনের মত উপহার নিয়ে আসেন। যদি তুমি গরমের দেশে থাক, তাহলে এই দিনে পিকনিক তো একটা হতেই হবে। যদি তুমি শীতের দেশে থাক, আর তোমার বাড়ির চারিপাশে বরফ জমে থাকে, তাহলে হয়ত তুমি স্নোম্যান তৈরি করছ। মোট কথা হল, এই সময়টা বছরের শেষ, সামনেই একটা নতুন বছর আসছে, অনেকেরই স্কুলের পরীক্ষা শেষ, বাবা-মাও শীতের রোদ্দুরে খেলা করলে বকাবকি করছেন না, তাই, পুরোটাই বেশ মজা আর আনন্দ করে কাটানোর দিন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খ্রীষ্টধর্মের মানুষেরা খ্রীষ্টমাস পালন করেন নিজেদের নিয়মে। কেউ আলোর মালা আর খেলনা দিয়ে সাজিয়ে তোলেন খ্রীষ্টমাস ট্রি, কেউ বা খ্রীস্টমাস ইভে কবরখানায় যান নিজেদের পূর্বপুরুষদের জন্য মোমবাতি জ্বালাতে; কোন দেশে বাড়ির ছোট বড় সবাই মিলে খ্রীস্টমাস পুডিং তৈরি করে-পুডিং এর মিশ্রন ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরাতে হয়, এবং প্রত্যেকে ঘোরানোর সময়ে মনে মনে ঈশ্বরের কাছে নিজের মনের ইচ্ছার কথা জানায়; কোন দেশে সব মানুষ সকালে উঠে রোলার স্কেট পড়ে গীর্জায় যান প্রার্থনা করতে।
কিন্তু এই সবের মধ্যে একটা ভাবনা কিন্তু সব দেশেই এক থাকে- নিজের আনন্দটুকু সবার সাথে ভাগ করে নাও। তুমি যেমন উপহার পাচ্ছ, সেইরকম, যারা খুব দুঃখী, যাদের ভাল জামা নেই, যারা দু-মুঠো খাবার যোগাড় করতে হিমশিম খায়, তাদের সবার জন্য পোষাক বা খাবারের ব্যবস্থাও করতে হয়। যীশুর জন্মদিনে কেউ যেন মন খারাপ করে না থাকে। সবার জীবনে যেন থাকে শান্তি, ভালবাসা আর আনন্দ।
এই বিষয়ে তোমাকে তাহলে বলি স্যালভেশন আর্মির লাল কেটলির কথা। সারা পৃথিবী জুড়ে স্যালভেশন আর্মির শাখা-প্রশাখাগুলি খ্রীস্টমাসের সময়ে গরীব -অসহায় মানুষদের ভোজের ব্যাবস্থা করেন। আর সেটা কি ভাবে হয় জান? ওঁরা ওঁদের লাল কেটলি খুলিয়ে দেন শহরের বিভিন্ন জায়গায়। আমার তোমার মত সাধারণ মানুষেরা সেই কেটলিতে টাকা ফেলে দেন, যাঁর যেটুকু সাধ্য। সেই সমস্ত টাকা এক সাথে করে গরীব মানুষদের খাওয়ানো হয়। আর আরো আশ্চর্যের কথা হল, প্রায় প্রতি বছরই, সারা পৃথিবী জুড়ে, কোন না কোন কেটলিতে পাওয়া যায় এক বা একের বেশি সোনার মুদ্রা!!
১২২ বছর আগে, ১৮৯১ সালে , ক্যালিফোর্ণিয়ার সান ফ্রান্সিসকোর স্যালভেশন আর্মির ক্যাপ্টেন জোসেফ ম্যাকফি-র মাথায় প্রথম আসে এই লাল কেটলির ভাবনাটা। আজকে যখন চারিদিকে খালি নেই-নেই রব, ভালভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার মত রোজগার করতে মানুষকে সত্যিই হিমশিম খেতে হচ্ছে - এই সময়েও স্যাল্ভেশন আর্মির এই সত্যি গল্প আমাদের আস্থা দেয়- এই পৃথিবীতে ভালমানুষের অভাব নেই।
এইবার তোমাকে একটা দারুণ ম্যাজিকের কথা বলি। যীশুর জন্মদিনের জন্য এক সপ্তাহ বা পনেরো দিনের ছুটি পেয়ে খুব আনন্দ তো অবশ্যই করবে। কিন্তু তার সাথে কিছু আনন্দ ভাগ ও করে নাও বইকি। তোমার পুরনো কিন্তু আস্ত জামা, পুরনো গল্পের বই, বা খেলনা, এইসব দিয়ে দাও সেইসব সংস্থাগুলির হাতে, যাঁরা অনাথ বা গরীব বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করেন। এইভাবে তুমি কিন্তু আসলে ঠিক কার মত হয়ে যাবে জান? তুমি হয়ে যাবে সান্টাক্লস!! আর এই ম্যাজিকের মজাটা হল, এইভাবে সান্টাক্লস হওয়ার জন্য তোমার শীতকালের জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। তুমি এটা সারা বছরে যখন খুশি করতে পার !!
তথ্য সঙ্কলন সহযোগিতায়- প্রশান্তি গোভিন্দু অস্টভোল্ড, মিনেসোটা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
ছবিঃ বিভিন্ন ফ্রি গ্রাফিক্স ওয়েবসাইট এবং স্যাল্ভেশন আর্মি ওয়েবসাইট