সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
রাতপরী

মধুপুর হাই স্কুলে আজ ক্লাস ফাইভের পরীক্ষার খাতা বেরিয়েছে। বুলবুলি মুখ বেজার করে বাড়ি ঢুকল। ওর নম্বরগুলো একদমই ভালো হয়নি। সারা দুপুর ও চুপচাপ ছিল। মা হাজার জিজ্ঞেস করাতেও ও কোনো উত্তর দেয়নি। শেষে সন্ধ্যেবেলা মা বাবা একসাথে চেপে ধরাতে ও সমস্ত নম্বর একটানে বলে দেয়। সেই শুনেই তো তারা ওকে প্রচন্ড বকাবকি করে। ও জানে, নম্বর খারাপ হওয়ার একমাত্র দোষ ওরই। পরীক্ষার আগে ওর যেন পড়তে ইচ্ছেই করছিল না, পড়ায় মনই বসছিল না। তাই অন্য কিছু কারণও দেখাতে পারল না বুলবুলি। সবকিছু মা বাবাকে বলার পর একটা কথা যা ও বলল না সেটা ওর মনখারাপের একটা বড়ো কারণ। স্কুলে ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু অন্তরার সাথে ওর ঝগড়া হয়েছে। পরীক্ষার খাতা দেখে ওর মন এমনিতেই খারাপ ছিল। তাই অন্তরার একটা ছোট্ট কথাতেই ওর রাগ ধরে গেল, অন্তরা যদিও কথাটা মজা করেই বলেছিল। বুলবুলি তাই নিয়ে অন্তরার সাথে তর্ক জুড়ে দিল। অন্তরাও বা ছাড়বে কেন, ওর তো কোনো দোষ নেই। শেষে পরিস্থিতি এমন হয়ে পড়ল যে বুলবুলি অন্তরার পাশ থেকে উঠে গিয়ে ক্লাসরুমের কোণার একটা বেঞ্চে একা একা বসে রইল।

রাতে ওর নিজের ঘরের বিছানায় শুয়ে ওর কিছুতেই ঘুম আসছিল না। খালি মনে হচ্ছিল যারা পরীক্ষায় কম নম্বর পায়, যারা পড়াশোনায় বাজে হয়, তারা মানুষও খুব খারাপ হয়। ও নিজেও তো পরীক্ষায় বাজে নম্বর করেছে। তার মানে ও নিজেও খুব খারাপ মানুষ। তাই তো ও অন্তরার সাথে শুধু শুধু ঝগড়া বাধালো। ওর নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মেয়ে বলে মনে হচ্ছিল। নিজের ওপর খুব রাগ হচ্ছিল। এই সব ভাবনার মধ্যে ও কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল বুঝতেই পারল না। সময় তখন হয়তো মাঝরাতেরও পর। ঘুমের ঘোরে বুলবুলির মনে হলো ওর মাথাটা যেন কেউ তার কোলে তুলে নিল আর মাথায় হাত বোলাতে লাগল। কিন্তু ওর চোখ তখন ঘুমে এতই জড়িয়ে যে ও তাকে দেখতে পেল না, আবার ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে উঠে ওর মনে হলো যেন ওর মনটা খুব হাল্কা হয়ে গেছে। আগের দিনের মন খারাপটা আর নেই। তারপরই ওর হঠাৎ মনে পড়ল রাতের ঘটনাটা। ও মা বাবাকে জিজ্ঞেস করতে গেল যে কে ওর ঘরে এসেছিল কাল রাতে। দুজনেই কোনো উত্তর দিতে পারল না। ও খুব অবাক হলো। ও স্পষ্ট অনুভব করেছিল ওই কোল যার ওপর ওর মাথা রাখা হয়েছিল, ওই হাতের ছোঁয়াটা পর্যন্ত ওর স্পষ্ট মনে আছে। ওর মনে কোনো সন্দেহই ছিল না যে ওটা মা বা বাবা। ও বুঝে উঠতে পারল না এটা কিভাবে সম্ভব।

স্কুল ছুটি বলে মা বুলবুলিকে কাজ দিয়েছে মা'র বইয়ের তাক সুন্দর করে গোছানোর। বইয়ের তাক ঘাঁটতে ঘাঁটতে বুলবুলির হঠাৎ একটা ডায়রি চোখে পড়ে। ডায়রিটা দেখতে খুব সুন্দর। যদিও মা বলেছে কারুর ডায়রি লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তে নেই, তবুও ও পড়ার লোভ সামলাতে পারল না। ডায়রির পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হঠাৎ মার হাতে লেখা একটা ছড়া চোখে পড়ল ওর-

'ঘুমের দেশে পাড়ি দিলি।
ঘুমজালে যেই জড়ালি,
রাতপরী এল কি?
সব দুখ নিল কি?'

বুলবুলি বিস্ময়ে হতভম্ব।


ছবি ও লেখাঃ শ্রীরূপা সরকার
সেন্ট জন্‌স ডায়োসেশন স্কুলের একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী।বই পড়তে (বিশেষ করে গোয়েন্দা গল্প), লিখতে, আঁকতে এবং গান শুনতে ভালবাসে।প্রিয় লেখিকা লীলা মজুমদার।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা