এই সময়টা বেশ অন্যরকম। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ঝকঝকে নীল আকাশ। সেই আকাশে ভেসে যাচ্ছে সাদা সাদা তুলোর মত মেঘ। কখনও বা আকাশ হটাত ঢেকে যাচ্ছে জল ভরা ধূসররঙা নাছোড় মেঘে। এক-দুই পশলা বৃষ্টি ঝুপঝুপ করে এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে গাছপালা, পথ ঘাট। সে মেঘ সরে গেলে নীল আকাশে ঝলকাচ্ছে সোনালি রোদ্দুর। এ রোদ অনেক নরম, অনেক মায়াময়। নীল-সোনালি- সাদা-সবুজ মিলিয়ে যে ছবি আঁকছেন প্রকৃতি মা, সেই ছবি দেখেই মন আনন্দে থই থই করে উঠছে। সে ছবি যেন ডেকে ডেকে বলছে- এসেছে ছুটির সময়, এসেছে উতসবের সময়, এসেছে আনন্দ করার সময়। এসেছে শরত।
হ্যাঁ, এসেছে শরত। এসেছে বাঙালির সবথেকে বড় উতসব শারদীয়া দুর্গাপুজো। দুর্গাপুজোর পেছনে পেছনেই আসছে লক্ষ্মীপুজো, দীপাবলী ও কালীপুজো, ভাইফোঁটা...তার ও পরে শীতের মুখে আছে নবান্ন। কিন্তু এই শরতে উতসব কি শুধু বাঙালিদের বা বাংলাদেশেই? একদমই না। এই তো কিছুদিন আগে হয়ে গেল মারাঠিদের সবথেকে বড় উতসব গণপতির পুজো; কেরালায় হয়ে গেল শস্যকাটার উতসব ওনাম। মুসলিম ধর্মের মানুষদের আনন্দের উতসব ঈদ পালিত হল তার পাশাপাশি। আর আমাদের দুর্গাপুজোর সাথে সাথেই অনুষ্ঠিত হবে উত্তর ভারতীয়দের নবরাত্রি; দীপাবলীর রাতে আলোর উতসব পালিত হবে প্রায় সারা দেশ জুড়ে। পাশাপাশি এই সময়েই অসমে পালিত হবে ধান চারা রোপণ উতসব- কাটি বিহু। ওদিকে পশ্চিমের দেশগুলিতে আর কিছুদিনের মধ্যেই পালিত হবে হ্যালোউইন আর থ্যাঙ্কস্গিভিং।
পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের মানুষেরা সবাই সারা গ্রীষ্ম, বর্ষা খাটাখাটনি করে, ফসল ফলিয়ে, শরতে সেই ফসল সঞ্চয় করে প্রস্তুতি নিচ্ছে শীত আসার, উতসব আনন্দ করে বিদায় জানাচ্ছে গ্রীষ্মকে, আরাধনা করছে প্রকৃতির অফুরন্ত দানের। দক্ষিণ গোলার্ধ সবে শীত ছেড়ে গ্রীষ্মে পা দিচ্ছে। সেখানে এখন বসন্ত। শীতের অবসানে, গ্রীষ্মের আগমনে সেখানে জীবন নতুনের আনন্দে ভরপুর। সেখানে পালিত হচ্ছে বসন্তের উতসব।
তাই এই উতসবের মরসুমে, ইচ্ছামতী সেজে এল নতুনভাবে - তোমার জন্য নতুন প্রচ্ছদকাহিনী নিয়ে। শরত সংখ্যা ২০১১ থেকে ইচ্ছামতী শুরু করছে নতুন বিভাগ -প্রচ্ছদকাহিনী। আর আমাদের প্রথম প্রচ্ছদকাহিনী - অবশ্যই- 'উতসব'। বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের নানারকমের উতসব পালন নিয়ে থাকছে বেশ কয়েকটি লেখা। রয়েছে দুর্গাপুজো, ঈদ, থ্যাঙ্কস্গিভিং আর হ্যালোউইন নিয়ে নানারকম তথ্যে ভরপুর সব লেখা। লেখাগুলি পড়তে পড়তে দেখবে, কিরকমভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের একই সময়ে পালিত হওয়া উতসবগুলি অনেক ক্ষেত্রে একইরকম ভাবনা থেকে শুরু হয়। তাই আমাদের ভূত চতুর্দশীর সাথে কোথায় যেন মিল খুঁজে পাই হ্যালোউইনের, আর নবান্ন উতসবের সাথে মিলে যায় থ্যাঙ্কস্গিভিং উতসব পালনের ভাবনা।
প্রচ্ছদকাহিনী ছাড়াও রয়েছে অনেক গল্প, অনেক ছড়া আর অন্যান্য নিয়মিত বিভাগগুলি । এই পুজোর ছুটিতে , ঠাকুর দেখার ফাঁকে ফাঁকে অবশ্যই পড়ে ফেল নতুন ইচ্ছামতী শরত সংখ্যা ২০১১।
তোমার এবং তোমার পরিবারের পুজো খুব ভাল কাটুক।
চাঁদের বুড়ি
২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০১১
৯ই আশ্বিন, ১৪১৮
মহালয়া