গত ৫০ বছরে বন্যপ্রাণীকূলের ৫০% অবলুপ্ত হয়েছে। মানবজাতির বায়োমাস ব্যবহারের ফলে পৃথিবীর উদ্ভিদসমূহের মধ্যে সঞ্চিত কার্বনের পরিমাণ প্রায় ৫০% কমে গেছে, যেটার অর্থ এই যে গত কয়েক হাজার বছর ধরে বায়ুমন্ডলে বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে পৃথিবীর মোট ক্রান্তীয় বনাঞ্চল গুলির (tropical forests) অর্ধেকের বেশি কাঠের জন্য কেটে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেখানে নতুন গাছ আর পোঁতা হয়নি। পৃথিবীর ৩০% জুড়ে এখনও বনাঞ্চল রয়েছে, কিন্তু প্রতিবছরে পানামা দেশের আয়তনের সমান বনাঞ্চল পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামি একশো বছরের মধ্যে পৃথিবীর ক্রান্তীয় বনাঞ্চল পুরোপুরি শেষ হয়ে যেতে পারে। মানুষের নানারকমের কর্মকান্ডের ফলে গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রাও অনেক বেড়ে গেছে যার ফলে উষ্ণায়ন ঘটছে। পৃথিবীর ওপরের স্তরের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জলস্তরের উচ্চতাও বাড়ছে যার ফলে বিভিন্ন দেশের অনেক উপকূলবর্তী এলাকা ধীরে ধীরে জলের তলায় চলে যাচ্ছে। এই সমস্যাগুলি আগামি দিনে আরও বৃদ্ধি পাবে। জলবায়ুর পরিবর্তন এবং চরম জলবায়ু এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, ভয়ানক সাইক্লোন - এসব এখন সাধারণ ঘটনা।
পৃথিবীর ওপরের এই সমস্ত ঘটনা ঘটছে মানুষের কার্যকলাপের কারণে। আর সেইসব কার্যকলাপ অবশ্যই শুরু হয়েছে এই পৃথিবীর বুকে প্রথম মানুষের আবির্ভাবের পরে। মানুষের কর্মকান্ডের প্রভাবে পৃথিবীতে প্রচুর পরিবর্তন এসেছে যে সময়কালে, তাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন অ্যান্থ্রোপোসেন (Anthropocene)। জিওলজিক্যাল টাইম স্কেলে অ্যান্থ্রোপোসেনকেই সর্বশেষ ইপক বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে, যদিও এই ধারণাটি সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃতি পায়নি।
এবার জানা যাক এই শব্দটা এলো কোথা থেকে? তুমি নিশ্চয় Anthropology শব্দটা শুনেছে। বাংলায় আমরা বলি নৃতত্ত্ব বা নৃবিদ্যা। আর anthropologists বা নৃতত্ত্ববিদেরা হলেন সেইসব মানুষ যাঁরা মানবজাতির ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি, সমাজ ইত্যাদি নিয়ে পড়াশোনা করেন। একইরকম ভাবে , Anthropocene নামটা পৃথিবীর জীবনের সেই সময়কালকে নির্দেশ করে, যেই সময়ে পৃথিবীর বুকে মানুষের বসবাস এবং কর্মকান্ড পৃথিবীর জীবজগৎ, বনাঞ্চল, আবহাওয়া প্রভৃতির ওপরে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। তাহলে এই Anthropocene শুরু হয়েছে কবে থেকে? কেউ কেউ বলেন যে এই সময়কালের শুরু প্রায় ১৫০০০ বছর আগে, আবার কারোর কারোর মত এই যে শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে , মানে মাত্র ২০০-২৫০ বছর আগে Anthropocene শুরু হয়েছে।
পল জে. ক্রাতজেন
২০০০ সালে, আবহ-রসায়নবিদ ( atmospheric chemist) পল জে. ক্রাতজেন (Paul J. Crutzen) এই নামটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। জিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ আমেরিকা তাদের ২০১১ সালের বার্ষিক অধিবেশনের পরিচিতি রাখেন "Archean to Anthropocene: The past is the key to the future"। ২০১৬ সালের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় যেখানে মানুষের কর্মকান্ডের প্রভাবের চিহ্ন কীভাবে মাটি এবং বরফ স্তরের গভীরে রয়ে গিয়ে তার ছাপ রেখেছে পৃথিবীর আবহাওয়া, জীবজগৎ এবং ভূ-রসায়নের ওপর, সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এই রিপোর্ট অনুযায়ী বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে সময়কালকে হলোসেন পরবর্তী এক বিশেষ ভূতাত্বিক ইপক হিসাবে ধরে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আধুনিক যুগে, বিভিন্ন কারণে, মানব সমাজের জনসংখ্যা যত বাড়ছে আমাদের যৌথ জ্ঞানের ভান্ডার তত বিস্তৃত হচ্ছে। এই পৃথিবীর বুকে প্রথম মানুষের আবির্ভাবের পরে , প্রায় ২৫০০০০ বছর মানুষ মূলতঃ এদিক ওদিকে ঘুরে বেড়িয়ে খাদ্য সংগ্রহ করত। এই সময়কালে প্রায় ৯ লক্ষ কোটি/ ৯ বিলিয়ন মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু হয়। মানুষ কৃষিকাজ শুরু করার পরে, গত ১০০০ বছরে, মোট প্রায় ৫৫ লক্ষ কোটি / ৫৫ বিলিয়ন মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু হয়েছে এবং তার মধ্যে এখনও প্রায় ৭ লক্ষ কোটি/ ৭ মিলিয়ন মানুষ বেঁচে আছে। এ সবই হল ভূতাত্বিক সময় স্কেলে / Geological time scale এ ক্রমাগত তৈরি হওয়া বিবিধ জটিলতার এক অংশ, যা গত প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন / ১৩.৮ লক্ষ কোটি বছর ধরে চলে আসছে - সেই বিগ ব্যাং থেকে শুরু করে গ্যাস ক্লাউড্স্, সেখান থেকে গ্রহ এবং নক্ষত্রগুলির জন্ম, এক কোষী জীবাণু থেকে ট্রাইলোবাইট্স্ হয়ে ডাইনোসর এবং তারপরে মানুষের আগমন এবং তারও পরে সংস্কৃতির প্রভাব।
অ্যান্থ্রোপোসেনের শুরু খুব একটা সহজ বা সুগম ছিল না। উনিশ শতকের মধ্য এবং শেষ ভাগ জুড়ে পৃথিবীময় বাড়তে থাকে যুদ্ধ, অস্ত্রশস্ত্রের কৌশলবৃদ্ধি, , উপনিবেশ এবং সাম্রাজ্যবৃদ্ধি। এর পরে আসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধে ১৫০ লক্ষ/ ১৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। তার পরে পরেই আসে স্প্যানিশ ফ্লু। এই মহামারীতে মারা যায় প্রায় ৪০০ লক্ষ / ৪০ মিলিয়ন মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হয় প্রায় ৫০০ লক্ষ/ ৫০ মিলিয়ন মানুষ। একদিক থেকে দেখতে গেলে, এ সবই হল নিত্যনতুন আবিষ্কার এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির বিধ্বংসী প্রভাব।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, পূর্ব এশিয়া, মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা আর মধ্য প্রাচ্যে এক নতুন শিল্প বিপ্লবের জোয়ার আসে। নতুন প্রজাতির শস্যদানার আগমনে , বিশেষত ধান এবং গমের চাষে বিশাল পরিবর্তন আসে, যার ফলে ভারত এবং চীনের মত দেশগুলি উপকৃত হয় এবং খরা ও মন্বন্তর রুখতে পারে। এর ফলে এই সমস্ত অঞ্চলে মানুষের মৃত্যুর হার অনেক কমে যায়, বলা ভালো জনবিস্ফোরণ ঘটে। এই সময়েই মানবসমাজ পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগাতে শেখে, যার ফলে মানুষের হাতে চলে আসে অসীম শক্তির যোগানের চাবিকাঠি। এই শক্তিকে মানুষ ভালো বা খারাপ- দুইরকমের কাজেই লাগাতে পারত। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আমরা দেখতে পাই পারমাণবিক শক্তির খারাপ ব্যবহার - যখন হিরোশিমা ও নাগাসাকির ওপরে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়। বোমা বিস্ফোরণের ফলে হিরোসিমা এবং নাগাসাকির মানুষদের দেখে বিজ্ঞানীরা এই ধরনের নিউক্লিয়ার হলোকস্টের সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন এবং এই সৌরমন্ডলের অন্যত্র মানুষের উপনিবেশ স্থাপন করা যায় কি না সে বিষয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেন।
মানুষ সহ এই বিশ্বের সমস্ত প্রজাতিকেই বিভিন্ন অভাবের সঙ্গে সমঝোতা করে চলতে হয়। এবং এই সমঝোতার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে ধনী-গরিবের বিভেদ। মানুষের ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায়, আমাদের প্রায় গোটা অতীতটা জুড়েই রয়েছে অনেক বিভেদ- নানা গোষ্ঠী, নানা শ্রেণী, সমাজের বিভিন্ন ভাগ ইত্যাদি। এবং এরই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে যে মানবজাতির ইতিহাসে প্রায় সর্বদাই মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০%-২০% ছিল ধনী এবং জমিজমার অধিকারী।
১৯৭০ এর দশক থেকে, বিভিন্ন রকমের উৎপাদন ব্যবস্থা প্রায় ৬০০ লক্ষ কোটি/ ৬০০ মিলিয়ন মানুষকে কাজ এবং রোজগার দিয়েছে। আজকের প্রযুক্তি এত উন্নত যে আগের যেকোনও সময়কালের থেকে অনেক বেশি মানুষকে খাদ্য এবং পোষাকের যোগান দেওয়া সম্ভব। কিন্তু এসবের ফলে আমাদের জীবনযাত্রায় এক পরিবর্তন এসেছে। অধিকাংশ মানুষ বাধ্য হয়েছে অপরিচ্ছন্ন জীবন, খুব কম রোজগার বা বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করার পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উৎপাদন করা বেশিরভাগ পণ্য বিক্রির জন্য চলে যায় ধনী, উন্নত দেশগুলির বাজারে। এর ফলে ধনী- গরীব, বা Haves and Have-not-দের মধ্যে বিভেদ ক্রমশঃ বাড়ছে। ১৮২০ সালে গরীব এবং ধনী দেশের অনুপাত ছিল ৩:১। কিন্তু আজকের দিনে এই বিভেদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২:১ অনুপাতে। ধনের ভিত্তিতে বিভেদের পরিমাণ ক্রমশঃ বাড়ছে।
অন্যদিকে আমরা বিভিন্ন ধরনের উৎস , যেমন কয়লা, জল, পরমাণু পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি থেকে শক্তি উৎপাদন করতে পারছি। এই সমস্ত শক্তির সাহায্যে আমরা খুবই জটিল এবং উন্নত সমাজব্যবস্থা এবং জীবনযাপন প্রণালী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। উন্নত জীবনযাত্রার কারণে পৃথিবীর জনসংখ্যাও বহুগুণে বেড়ে গেছে, সঙ্গে বেড়ে গেছে জ্বালানীর চাহিদা। তাই একদিকে এইরকম বহুল পরিমাণে শক্তি উৎপাদনের ফলে দূষণের মাত্রাও বহুগুণ বেড়ে গেছে, অন্যদিকে সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে আমাদের শক্তি/ জ্বালানী হারিয়ে ফেলার ভয়ও। প্রবল দূষণ, ক্রমশঃ বেড়ে চলা জনসংখ্যা, গাছপালা কেটে ফেলা, নগর তৈরি করা এবং পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের অপব্যবহারের ফলে আমরা নিজেরাই নানারকমের বিপর্যয় ডেকে আনছি, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, উষ্ণায়ন, অ্যাসিড বৃষ্টি এবং মানুষের তৈরি খরা। এই mass extinction বা ব্যাপকহারে বিলুপ্তি প্রক্রিয়া এর আগে পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায়নি। পৃথিবীর ওপরে মানুষের আবির্ভাবের আগে যখন প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের বিলুপ্তি ঘটেছে, সেগুলি সবই ছিল কোনও না কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে। কিন্তু আজকের দিনে যে বিলুপ্তি ঘটছে, সেগুলি সবই জীবমন্ডলের ওপর মানুষের কাজের খারাপ প্রভাবের ফল।
বিজ্ঞানে অগ্রগতির ফলে আমরা পেয়েছি উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা, উন্নতমানের কৃষিকাজের সুযোগ এবং হাইব্রিড ফসল, যেগুলি রোগ এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে। এর ফলে বিংশ শতক থেকে পৃথিবীর বুকে দুর্ভিক্ষ/ মন্বন্তর বিশেষ ভাবে দেখা যায়নি। কিন্তু এই একই সুবিধার ফলে পৃথিবীর বুকে মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে গেছে এবং জল ও জমি নিয়ে বিবাদ বেড়ে গেছে ।
এই মুহূর্তে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা হল ৭ বিলিয়নের কাছাকাছি, আর এই শতকের শেষের মধ্যে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ১২ বিলিয়নের কাছাকাছি। সমস্যা হল এই যে আমাদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং কৃষিব্যবস্থা খুব বেশি হলে-২-৩ বিলিয়ন মানুষের খাবার যোগাতে সক্ষম। সমস্যাটা ক্রমশঃ বাড়বে কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষিযোগ্য জমির ১০%-২৫% কৃষিকাজের অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। তাই ভবিষ্যতে একদিনে যেমন জনসংখ্যা বাড়বে , অন্যদিকে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে, যার ফলে আবার শুরু হতে পারে ধ্বংস ও যুদ্ধের আরেকটি নতুন অধ্যায়।
অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সামাজিক জীবনেও পরিবর্তন এসেছে। আগে কৃষিভিত্তিক পরিবারগুলিতে অনেক সন্তান থাকা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রা দাবী করে ছোট্ট পরিবার, কারণ জীবনযাপনের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তাই অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যা কমার একটা সরাসরি যোগাযোগ আছে। এই পরিস্থিতিতে পৃথিবীর অনেক দেশেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হয়ে এসেছে বা আসছে। কিন্তু আবার অনেক উন্নতিশীল দেশেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তেমন কমেনি। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, এবং মধ্য প্রাচ্য ও দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই সমস্যা দেখা যায়।
২০১১ সালে জাপানে ভূমিকম্প এবং তারপরে সুনামির অভিঘাতে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে। জাপান এবং জার্মানির মত দেশগুলি তাদের পরমাণু চুল্লিগুলি বন্ধ করে দিয়ে কয়লা এবং লিগনাইট থেকে শক্তি উৎপাদন করা শুরু করেছে। কিন্তু এই দুই উৎস থেকেই দূষণ অনেক বেশি পরিমাণে হয়। কয়লা ও লিগনাইট ব্যবহারের ফলে এই দেশগুলির সামগ্রিক কার্বন ফুটপ্রিন্ট অনেক বেড়ে গেছে।
এই সমস্ত সমস্যা মাথায় রাখলে মনে হবে, আমরা একটা অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি। হয়তো কোনও যাদুকাঠির ছোঁয়াই আমাদের বাঁচাতে পারে। অথবা আমরা যদি নিজেদের অভ্যাসগুলোকে বদলে ফেলে সহজ সরল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারি, তাহলে হয়ত আমরা নিজেদের পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব। কিন্তু পৃথিবীর কোনও প্রান্তেই সব স্তরের মানুষদের যে সেইরকম ইচ্ছা বা উৎসাহ আছে, সেটা তেমন মনে হচ্ছে না। বরং মনে হচ্ছে আমরা সবাই কোনও নতুন প্রযুক্তি বা উদ্ভাবনীর অপেক্ষায় রয়েছি যা আমাদের মধ্যেকার অসাম্য, দারিদ্র্য, জনসংখ্যার সমস্যা এবং শেষ ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবে। কিন্তু সেরকম কিছু আদৌ হবে কিনা সেটা বলা খুবই মুশকিল।
যাইহোক, আমরা আশা রাখতে পারি যে মানবসমাজ যত বেশি শিক্ষিত এবং সমাজ ও জগৎ সম্পর্কে সচেতন হবে, তত তারা আধুনিক জীবনের জটিলতা সম্পর্কে সচেতন হবে এবং চেষ্টা করবে তার থেকে বেরিয়ে এসে প্রকৃতি এবং পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে এক অন্যরকমের জীবন-যাপন করতে। আমরা যদি সচেতন ভাবে সেইরকম না করি, তাহলে হয়ত আজ থেকে ৫০০ বছর পরে, একদল ভীনগ্রহী পৃথিবীর বুকে পা রেখে দেখতে এবং বুঝতে পারবে, কেমনভাবে মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কাজকর্মের ফলে, মানুষ সহ পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রাণী ও উদ্ভিদজগৎ সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়েছে। সেটাই হয়ত হবে অ্যানথ্রোপোসেনের শেষ।
মূল ইংরেজি থেকে অনুবাদ এবং গ্রাফিক্সঃ মহাশ্বেতা রায়