সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
 বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগের সীমান্ত

আমাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটা কিছু দিন আগে নাম বদলে 'বাংলা' হল। বাংলা একটি অতি উচ্চমানের ভাষা। আবার বাংলা শব্দটি কিন্তু একটি বিশেষ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে ।আজ সেই বাংলার প্রাচীন ভৌগলিক সীমান্ত নিয়ে কথা বলব।

হিমালয় থেকে নেমে আসা অনেক গুলো নদী এই অঞ্চলটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত। নদীদের পলিমাটিতেই উর্বর এই 'বাংলা'।প্রাচীন কালে এই নদী গুলো ছিল বিভিন্ন অঞ্চলের সীমান্ত নির্দেশকারী রেখা।তখন থেকেই এই অঞ্চল উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত, এই সব থেকে একটু স্বতন্ত্র ভাবে থেকে এসেছে। উত্তরে হিমালয়, দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে মালভূমি, পূর্বে পাহাড়ি আদিবাসী অধ্যুষিত দুর্গম পাহাড় । এর মধ্যেখানে বর্ষা তে ভেসে যাওয়া, খুব উর্বর ভূখণ্ড টি কে 'বঙ্গদেশ' নামে ভাবা বেশ সুবিধে জনক হবে। বর্তমানে এই অঞ্চলটি তিন ভাগে বিভক্ত। ভারতবর্ষে স্থিত পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলা ও ত্রিপুরা। এই দুই রাজ্যের মধ্যেখানে বাংলাদেশ রাষ্ট্র।

বঙ্গদেশের প্রাচীন যে জন গোষ্ঠী ছিল তারা খুব সম্ভবত অস্ট্রিক জাতি ভুক্ত ছিল- কোল, শবর, হাড়ি,ডোম, পুলিন্দ, চণ্ডাল ইত্যাদি। পরে অবশ্য দ্রাবিড়, তিব্বতীদের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। আসলে বঙ্গদেশ ছিল মূল ভারতীয় সংস্কৃতি থেকে অনেকটা দূরে। এখানে নদীমাতৃক জীবন যাপনে  নৌকা, খুব ভেজা আবহাওয়া,মাছ খাওয়া,সহজ আর অলস জীবন শৈলী স্বাভাবিক ভাবে ছিল। খাওয়ার কষ্ট ছিল না।অস্বাস্থ্যকর আবহাওয়াও এর সাথে সাথে ছিল।এই বঙ্গদেশের গল্প নানা ভাবে ইতিহাসের মধ্যে ফিরে ফিরে দেখতে পাই।

গঙ্গানদীর পশ্চিমভাগ অর্থাৎ এখনকার বর্ধমান ও বীরভূম জেলা পাল যুগের পূর্ব থেকেই সুক্ষ বা রাঢ় নামে পরিচিত ছিল। উত্তরবঙ্গ অর্থাৎ গঙ্গানদীর উত্তর পূর্ব ভাগ,আর বাংলাদেশের উত্তর ভাগ পুণ্ড্র নামে পরিচিত ছিল। সম্ভবত এখন বাংলা দেশের রংপুর, রাজশাহী এই অঞ্চলে পড়তো।তবে তখন তো এমন মাপ করা প্রশাসনিক বিভাগ ছিল না।অন্য আর একটি তথ্য থেকে পাওয়া যাচ্ছে যে, ঢাকা ফরিদপুর,যশোহর অঞ্চল বঙ্গ আর তার নিম্নস্থ অঞ্চল বঙ্গাল নামে পরিচিত ছিল।নোয়াখালি কুমিল্লা এই অঞ্চলকে সমতট বলা হতো।আবার সমতট হরিকেলের অন্তর্গত ছিল। ডঃ বি এস মুখোপাধ্যায় বলছেন- চট্টগ্রাম, নয়াখালি,কুমিল্লা, শ্রীহট্ট এই অঞ্চল কে হরিকেল বলা হত। বেশ গুলিয়ে যাওয়া বিষয়।

ঋকবেদ সংহিতায় বঙ্গদেশের কোন উল্লেখ নেই। ঐতরেয় আর আরণ্যক ,এই দুই বৈদিক সাহিত্যে বঙ্গদেশ আর মগধের কথা ঘৃণা ভরে তুচ্ছতার সাথে বলা হয়েছে। বৌধায়ন পুণ্ড্র আর বঙ্গে গেলে দেশে ফিরে প্রায়শ্চিত্ত করতে বলেছেন। আবার গঙ্গাসাগর কিন্তু পুন্য স্থান ছিল।  

পেরিপ্লাস এবং টলেমির বিবরণ থেকে মনে হয় খৃস্টীয় প্রথম দুই শতাব্দীতে বঙ্গদেশের বদ্বীপ অঞ্চলে একটা শক্তিশালী রাজ্য ছিল।রাজধানীর নাম পাওয়া যাচ্ছে 'গঙ্গে'।টলেমি তাম্রলিপ্তের দক্ষিন পূর্বে এই নগরীর স্থান নির্দেশ করেছেন। খৃস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর গ্রীক লেখকদের লেখায় বঙ্গদেশ সমন্ধে একটা আভাস পাওয়া যায়।'গঙ্গারিদয়' বলে একটা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।যার অর্থ গঙ্গার পূর্বতীরবাসী। তবে এর আরও অর্থ আছে বলে ইতিহাসবিদরা মনে করছেন। সংকীর্ণ অর্থ হল- ভারতের পূর্বতম অঞ্চল তবে ,আলেকজান্ডার যখন ভারত আক্রমন করেন তখন 'গঙ্গারিদয়' একটি শক্তিশালী জাতি কিংবা রাজ্য হিসাবে বর্তমান ছিল এ বিষয়ে কোন মত পার্থক্য নেই।

সমুদ্রগুপ্তের লেখাতে বঙ্গদেশের দুটি রাজ্যের হদিস পাওয়া যাচ্ছে। সমতট আর পুস্করণ। পুস্করন আসলে বাঁকুড়া অঞ্চল। সমুদ্রগুপ্তের করদ রাজ্য ছিল। সমতটের উল্লেখযোগ্য প্রদেশ ছিল বর্ধমান ভুক্তি এবং নব্য বকসিস। সমতট স্বাধীন হলেও গৌড় কিন্তু গুপ্তদের অধিনে ছিল। ৬০৬ খৃস্টাব্দে রাজা শশাঙ্ক গৌড়ের রাজা হয়ে ছিলেন। যার রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ । যেটি মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত রাঙ্গামাটির কাছে 'কানসোনা' বলে পরিচিত।

রাজা শশাঙ্ক একটি সর্বভারতীয় শক্তি রূপে বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করেন। একদিকে কনৌজের মৌখরি বংশকে, অন্যদিকে পূর্বে ভাস্করবর্মাকে হারিয়ে দেন, দক্ষিনে গঞ্জাম অবধি, মোদ্দা কথা প্রাকৃতিক সীমান্ত তৈরি করে দেন। ৬৩৮ সালে হিউয়েন সাং যখন বঙ্গদেশে আসেন। তখন বঙ্গদেশে পাঁচটি রাজ্যের খবর দিচ্ছেন-

কজঙ্গল (রাজমহল), পুণ্ড্রবর্ধন এবং কর্ণসুবর্ণ(উত্তরবঙ্গ),তাম্রলিপ্ত (দক্ষিনবঙ্গ) এবং সমতট ( পূর্ববঙ্গ)।

তবে রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর প্রবল অরাজকতা শুরু হয়। এই সময় বঙ্গ দেশের পশ্চিম অংশ হর্ষবর্ধন আর কামরূপের ভাস্কর বর্মা পূর্ব বাংলা দখল করেন। আবার হর্ষবর্ধন মারা গেলে তিব্বতি রাজা স্রং-সান-গাম্পো চিনাদের সাহায্যে আসামের একাংশ এবং উত্তর বাংলার বেশ কিছু অংশ অধিকার করেন। মোদ্দা কথা বাংলায় শাসনতান্ত্রিক টানাপোড়েন চলতেই থাকল।


পাল বংশের আমলে বাংলার সীমান্ত

৭৫০ খৃষ্টাব্দ গোপাল বলে একজন সাধারণ মানুষ নির্বাচিত শাসক হিসেবে বাংলায় এলেন। তার আগে ঘোর অরাজকতা চলেছে। গোপালের থেকে পাল বংশের সূচনা হয়। ধর্মপাল দেব বলে শক্তিশালী রাজার কনৌজ অবধি প্রত্যক্ষ শাসন ছিল। পাঞ্জাব,রাজপুতানা,মালব তাঁর সামন্ত রাজ্য ছিল। তাঁকে 'উত্তরপথস্বামীন'উপাধি দেওয়া হয়েছিল। তবে এই সময় কেবল সীমানা পরিবর্তন হত। কারণ পাল-প্রতিহার-রাষ্ট্রকূট ,এই তিন শক্তির মধ্যে ভয়ানক সংগ্রাম চলছিল।দশম শতাব্দীর (১১৬৫ নাগাদ) শেষদিকে পাল শক্তি অস্তাচলে যায়। সন্ধ্যাকর নন্দীর 'রামচরিত' থেকে 'বারেন্দ্রী' কে পালদের প্রাচীন বাসস্থান বলে মনে করা হয়। বারেন্দ্রী অর্থাৎ গৌড় বা উত্তরবঙ্গ। সেই সময়ের প্রচুর সামন্ত রাজ্যের খবর পাওয়া যাচ্ছে।যেমন, ঢেককারি বা বর্ধমান, সঙ্কট গ্রাম,অপারমন্দা বা হুগলী, উচ্ছাল বা বীরভূম, তৈলকম্পা বা বীরভূম।

দেওপাড়া লিপি থেকে পাওয়া যাচ্ছে রাঢ় প্রদেশের রাজা বিজয়সেন তাঁর ক্ষুদ্র রাজ্যকে প্রায় সাম্রাজ্য বানিয়েছিলেন। যার ব্যাপ্তি হল, পূর্বে ব্রহ্মপুত্র, দক্ষিনে কলিঙ্গ, পশ্চিমে কোশী গণ্ডক অঞ্চল। সেনবংশের বিখ্যাত রাজা হলেন বল্লাল সেন। তাঁর সময়ে রাঢ়, বারেন্দ্রী, মিথিলা যেমন তাঁর অন্তর্গত ছিল তেমনি সুন্দরবন আর মেদিনীপুরও তাঁর রাজ্যভুক্ত ছিল। তাঁর পুত্র বারানসী আর এলাহাবাদ জয় করেন কারণ সে অঞ্চলে জয়স্তম্ভ আছে। কিন্তু এই সময় কুতুবউদ্দিন আইবেকের অধীনস্ত জায়গিরদার বক্তিয়ার খলজি মাত্র ১৮ জন অশ্বারোহী নিয়ে রাজধানী নবদ্বীপ আক্রমন করেন ও অধিকার করেন। লক্ষন সেন পালিয়ে যান পূর্ববঙ্গ। সময়টা ১১৯৯ খৃস্টাব্দ ।

বাংলা খলজিদের হাতে আসার পর রাজধানী হয় পাণ্ডুয়া। রাজ্যটি কতগুলি ইক্তায় ভাগ হয়। ১৩২২ খৃস্টাব্দে মহম্মদ-বিন-তুঘলকের ইক্তা গুলির নাম পাওয়া যাচ্ছে- লখনৌতি,সাতগাঁ, সোনারগাঁ ইত্যাদি।যে জনপদ গুলিতে দুর্গ প্রাকার ছিল না তাকে 'কসবাহ্‌' আর দুর্গ প্রাকার থাকতো যে গুলোতে সেগুলো হল, 'খিট্‌টাহ্‌'।চট্টগ্রাম, আর সপ্তগ্রাম এই সময়ের সমৃদ্ধশালী বন্দর। মহম্মদ-বিন-তুঘলকের শাসন দুর্বল হলে ফকরুদ্দিন-মুবারক শাহ বলে এক শাসকের খবর জানা যায় যিনি চট্টগ্রাম জয় করেন। তিনি চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর অবধি একটা বাঁধ তৈরি করেন।

১৩৫২ কিংবা ১৩৫৪ সাল নাগাদ ইলিয়াস শাহ পূর্ব বাংলা অধিকার করেন। তিনি বাংলার ভূভাগ কে প্রাকৃতিক সীমানায় প্রতিষ্ঠা করলেন। দক্ষিনে চিল্কা, পূর্বে ব্রহ্মপুত্র,উত্তরে হিমালয়, পশ্চিমে তিন নদীর অববাহিকা। তাঁর সময়ে নেপাল আর কামরূপ অভিযানের খবর পাওয়া যায়। তাঁর বংশধদের সাথে দিল্লীর একটা শক্তিপরীক্ষা চলতেই থাকে। ইলিয়াস শাহের বংশধরদের ক্ষমতা কমে গেলে রাজা গণেশ, জালালুদ্দিন প্রভৃতি শক্তিশালী সামন্তদের কথা জানা যায়। তাঁদের সীমান্ত আরাকান অঞ্চল অবধি বিস্তৃত ছিল। মুঘল আক্রমনের পরে ১৫২৯ সাল নাগাদ বাংলার শাসকের সাথে বাবরের একটা সন্ধি সাক্ষরিত হয়। যেখানে ঘর্ঘরা নদী বাংলার সীমান্ত হিসাবে নির্দিষ্ট হয়।


মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তার

মুঘল আমলের প্রথম দিকে বাংলা একটা বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল। কারণ বাবরের পুত্র হুমায়ুনের  সাথে শেরশাহ সুরীর সংগ্রাম উপস্থিত হয়। হুমায়ুন শেরশাহকে পরাস্ত করতে বাংলায় এলে শেরশাহ অন্য পথে দিল্লী আক্রমন করেন। শেরশাহ হুমায়ুন কে ক্ষমতা চ্যুত করেন। শেরশাহের সময় বাংলা একটা নতুন প্রশাসনিক বিভাগ হয় । এই সময়ের শাসকদের নাম পাওয়া যায়- গিয়াসুদ্দিন, তাও খাঁ, সলেমন খাঁ ইত্যাদি। এরা প্রচুর উপঢৌকন দিয়ে আকবরের কাছ থেকে শান্তি ক্রয় করেন। ১৫৭৫-৭৬ সাল নাগাদ তেলিয়াগিরির যুদ্ধে বাংলার বিদ্রোহী শাসক দাউদ খাঁ কে হারিয়ে টোডরমল বাংলাকে দিল্লীর শাসনে নিয়ে আসেন। মানসিংহ বাংলার দায়িত্ব গ্রহন করেন।

আকবরের মৃত্যুর পরে জাহাঙ্গীর বাংলার শাসন ভার প্রদান করেন ইসলাম খাঁর   হাতে। তিনি সেই সময়  'বারো ভূঁইঞা' বারো জন সামন্ত রাজাকে দমন করেন। তাঁদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন ময়মন সিংহের ঈশা খাঁ, যশোরের প্রতাপাদিত্য, মাল্ভুমের বীর হাম্বীর ইত্যাদি। ইসলাম খাঁ ঢাকা কে রাজধানী হিসাবে গড়ে তোলেন। ঢাকার নাম হয় জাহাঙ্গীর নগর। এই সময় কাছাড়ের রাজাকে পরাজিত করে করদ রাজ্যে পরিণত করে মুঘল সৈন্য।

মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সময় হুগলীতে জলদস্যু পর্তুগীজদের ঘাঁটি হয়। কাশেম খাঁ এদের পরাজিত করে। আসামের রাজার সাথেও একটা যুদ্ধ হয় , আসাম আর মুঘল দের মধ্যে সীমানা নির্দিষ্ট হয়। ঔরংজেবের ভাই সুজা ১৬৩৯ থেকে ৬০ সাল পর্যন্ত বাংলার সুবেদার ছিলেন।সেই সময় উড়িষ্যা বাংলার সাথে যুক্ত হয়। রাজধানী ছিল রাজমহল। কিন্তু ঔরংজেবের শাসন শুরু হলে মীরজুমলা সুবেদার হন। পুনরায় ঢাকা হয় রাজধানী। কুচবিহারের বিদ্রোহী রাজা কে দমন করে মুঘল শাসন কায়েম হয়। আর আসামের সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। একটি সন্ধি স্থাপন হয়।আসাম কোন দিন সে ভাবে মুঘল শাসনের আওতায় আসেনি। এরপর বাংলার শাসক হন শায়েস্তা খান। তিনি মগ জলদস্যু দের প্রবল অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে আরাকান রাজার সাথে যুদ্ধ করেন। সন্দীপ জয় করেন। চট্টগ্রামের নাম রাখা হয় ইসলামাবাদ। এই যুদ্ধে নৌবহর তৈরি হয়। সেই সময় মুঘল শাসনের সাথে পর্তুগীজদের একটা যোগাযোগ স্থাপন হয়। ১৬৫১ খৃষ্টাব্দে হুগলীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একটা কুঠি স্থাপিত হয়।যথারীতি মুঘল দের সাথে তাদের ক্ষমতার টানা পোড়েন শুরু হয়। ইস্ট-ইন্ডিয়া  কোম্পানি পালিয়ে যায়। কিন্তু সুতানুটি তে কুঠী স্থাপন করেন জব চারন্‌ক ১৬৯০ খৃষ্টাব্দে।


বাংলার নবাবের আমলে বাংলার সীমান্ত

ঔরংজেবের মৃত্যুর পর বাংলার সুবেদার ছিলেন আজিম-উন শাহ। আর তাঁর দেওয়ান ছিলেন মুর্শিদকুলি খাঁন। পরবর্তী কালে মুর্শিদকুলি খাঁ আজিম-উন শাহের কুশাসন থেকে বাংলাকে মুক্ত করেন। মুর্শিদকুলি খাঁর সময়ের রাজধানী স্থাপন হয় মুর্শিদাবাদে। মুঘলদের সর্বাধিক কর দেওয়া  রাজ্য হিসাবে  বাংলা পরিগনিত হতে থাকে। এর পরে শাসক সুজাউদ্দিন খাঁ আর সরফরাজ খাঁ শাসক থাকার সময় বাংলা –বিহার – উড়িষ্যার সীমান্তেই বাংলা আবদ্ধ হয়ে ছিল। এরপর নাটকীয় ভাবে আলীবর্দি খাঁন বাংলার শাসনে প্রবেশ করেন।তবে তাঁর সময় কালে বাংলায় বহু বিপর্যয় নেবে আসে। একদিকে তাকে আফগানদের বিদ্রোহ সামলাতে হয় অন্যদিকে মারাঠা বর্গী আক্রমণ ঘটে। সেই আক্রমণের প্রাবল্য এতো বেশী ছিল যে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ সব ভয়ে উত্তরবঙ্গ আর পূর্ববঙ্গে আশ্রয় নেয়।ইংরেজরা কলিকাতার কুঠির চারপাশে একটা খাল খনন করে । তাদের কামানকে বর্গীরা ভয় পেত।তারা কলিকাতা আক্রমন করেনি।আর সেই কারনে সেই সময় বহু মানুষ এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে।কলিকাতা বাংলার অন্যতম জনপদ হয়ে ওঠার এটা প্রথম দিককার অবস্থা।অত্যচারী বর্গীদের দমন করা খুব কঠিন ছিল। বাংলার সীমান্ত খুব শিথিল হয়ে পড়ে সেই সময়ে।তবে ঐতিহাসিক নানান তথ্য থেকে জানা যায়, ডাচ, ফরাসী, আর ইংরেজরা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতো। আলিবর্দি বুঝেছিলেন বিদেশী এই ইংরেজ শক্তি খুব বুদ্ধিমান আর দক্ষ। তিনি তাঁর উত্তরাধিকারী সিরাজউদৌল্লাকে এব্যাপারে জানিয়ে ছিলেন।মুঘল শাসনের যে শক্তিশালী সুরক্ষা ছিল সেটা বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় ছোট আকৃতির সেনাদলের পক্ষে আগের মতো সেই সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব ছিল না। এছাড়া ভেঙে যাওয়া রাজ্য গুলো একে অন্যের ওপর আক্রমণ করে আরো দুর্বল হতে থাকলো। তাই বাংলার শাসক আর শাসন দুই দুর্বল হয়ে যেতে থাকে। ইংরেজরা এই সময় আর্থিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করার জন্যে স্বাভাবিক ভাবে শাসন ব্যবস্থাতে মনোযোগ দেয়। তাদের কাছে এই কলহপ্রবণ অদক্ষ শাসনব্যবস্থা স্বাভাবিক ভাবেই আক্রমণ করার উপযুক্ত মনে হয়। কারণ একাধারে কাঁচামাল ও সস্তার মজুর, অন্যদিকে বিরাট বাজার- এই রকম সম্ভবনা তাদের পরিকল্পনাকে আরও উৎসাহ দিল।

আলিবর্দী খাঁর দৌহিত্র সিরাজউদৌল্লা ১৭৫৭ সালে বাংলার নবাব হন। সেইসময় নবাবের এই আসন ঘিরে ঢাকা ও মুর্শিদাবাদে বেশ টানাপড়েন হয়। অন্যদিকে ফরাসীরা চন্দননগর, আর কলিকাতাতে ইংরেজরা দুর্গ বানানোর চেষ্টা করে।এটা বাংলার সার্বভৌমিকতার ক্ষেত্রে বিপদ হয়ে ওঠে। নতুন অনভিজ্ঞ নবাবের পক্ষে এই শক্তিশালী বাণিজ্যিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ছিল। অন্যদিকে সংঘাত অবশ্যম্ভাবী ছিল। সিরাজউদৌল্লা দমনের চেষ্টা করেন। তিনি কলিকাতা দখল করে নাম রাখেন 'আলিনগর'  (১৭৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি)। কিন্তু নানান ষড়যন্ত্রে বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসের সেই ছোট যুদ্ধটি সংঘটিত হয়, যার প্রভাব পরবর্তী ২০০ বছর স্থায়ী হবে। ১৭৫৭ সালের জুন মাসে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদৌল্লার পরাজয় হয়।বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার যে ভূখণ্ডটি কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে উপমহাদেশের ইতিহাসে জায়গা করে রেখেছিল তার সাথে যুক্ত হল আন্তর্জাতিক একটি শক্তি। মধ্যযুগের শ্লথ অথচ স্বাধীন অবস্থা শেষ হল। বাংলার প্রাচীন সংস্কৃতি বিপন্ন হতে শুরু হল।

প্রাচীন ও মধ্যযুগের বঙ্গদেশ সমন্ধে এই ধরণের রাষ্ট্রনৈতিক বিভাজন ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়। কালে কালে এই গাঙ্গেয় বদ্বীপটিতে নানান পরিবর্তন হয়ে এখনকার আধুনিক রাষ্ট্রনৈতিক সীমান্ত তৈরি হয়েছে।

খুব ছোট থেকে পড়তে ভালবাসেন। তার থেকেই লেখা শুরু। ছোটদের জন্যে কিছু লেখা সব চেয়ে কঠিন। একটু চেষ্টা করছেন লিখতে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা