সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
বন্ধু

চরিত্র- ছয় বন্ধু- লাল, নীল, টাপুর, টুপুর, বৃষ্টি আর লালন। মা ( তিন জন ), বাবা ( তিন জন), বন্ধুদাদু, বৃষ্টি বুড়ো।

।। প্রথম দৃশ্য।।

বাচ্চাদের গরমের ছুটি চলছে, সারাদিন বাড়িতে মায়ের শাসন, হোমটাস্ক, নাচের স্কুল, গানের স্কুল। আর ভালো লাগে না। কোথায় বন্ধুরা সবাই মিলে জমিয়ে আড্ডা দেবে, গল্প করবে, বিকেলে খেলতে যাবে, আইসক্রিম খাবে, সিনেমা দেখবে, বেড়াতে যাবে , সেসবের কোন ব্যাপারই নেই। তাই তাদের ভারী দুঃখ।
 
লাল, নীল, টাপুর, টুপুর, বৃষ্টি আর লালন খুব বন্ধু এক পাড়াতেই থাকে সব ভীষণ বন্ধু। সবাই মিলে বিকেলে পার্কে গান ধরে।
 
খুব গরমে দারুন মজা আইস্ক্রিম আর কুল্ফিমালাই
ইচ্ছে করে সকাল বিকেল সাইকেলটা একলা চালাই,
দুপুরবেলা খাবার পরে এক দুখানা ভূতের গল্প
আট দশটা ফুচকা খাব রোজ বিকেলে অল্পসল্প;
নইলে ধর সিমলা উটি দার্জিলিং এ দূর পাহাড়ে
যেই বলেছি মা বলবে ভাবব না হয় পরের বারে!
সেসব না হয় নাই বা হল,সিনেমা বা কার্টুন মুভিজ
বললে বাবা বলবে বসে,বোকাবোকা ফালতু রাবিশ;
স্কুল ছুটি তো কি হয়েছে পাহাড়  প্রমাণ হোমটাস্কে-
স্কুল থাকে তো ব্যাগের বোঝা জলের বোতল টিফিন বাক্সে;
নানান ছবি নিজেই আঁকি রঙ পেন্সিল ছবির খাতার
এসব নিয়ম ভাল্লাগেনা রোজ বিকেলে শুধুই সাঁতার!
মা বলবে গ্রমারটা দেখ,বলবে বাবা সন্ধি সমাস
খুব সিরিয়াস হতেই হবে হাতে সময় মাত্র ক'মাস;
বাবার শাসন মায়ের বকা বহুত পড়া রোজ সকালে
বাইরে গেলে মা বলবে আবার বুঝি ভিজলি জলে-
শনিবারে গানের ক্লাসে তবলা বায়া হারমোনিয়াম
দাদুর বাড়ি গেলেই পেতাম দিদার আদর গাছপাকা আম;
বার্গার কি পিৎজা ভাল,চুমুক দেব পেপসি কোলায়
জাঙ্ক তো এসব বলবে বাবা,নিষেধ মেলা নাগরদোলায়?
এসব কিন্তু দারুণ জুলুম আপ্নারা এর করুন বিচার
মা বাবাকে শাস্তি দিলে,প্রাইজ পাবেন কুলের আচার।।

বন্ধু

।। দ্বিতীয় দৃশ্য।।

 মা বাবারা সারাক্ষণ একই কথা বলে যাচ্ছেন।ছেলেমেয়ের পড়া, পরীক্ষা আর ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁদের ভারী চিন্তা। দিনরাত ছেলেমেয়ের পেছনে খুটখুট করছেন, এটা করিস না, সেটা করিস না, এখানে যাস না, সেখানে যাস না সারাক্ষণ না না করে যাচ্ছে্ন।
 
মা১
বলে বলে মুখ ব্যাথা হয় এত্তবড় সিলেবাস
বড় বড় ডেরিভেসন সঙ্গে আবার ক্যাল্কুলাস,
গ্রামারটা তো বড্ড কঠিন সাথে পি কে দে সরকার
সন্ধিসমাস কেমন পারিস,খেলতে যাবার কি দরকার?
 
মা২
হোমটাস্কের খাতা কোথায়,কখন এসব করবি শেষ
ইউরোপিয়ান লিগ দেখছিস,আনন্দেতে আছিস বেশ
ম্যাডাম যখন গোল্লা দেবে,পরীক্ষাতে করবি ফেল
নিজের ভাল বুঝবি কবে? ভাবি তোদের কি আক্কেল।
 
মা৩
সকাল সন্ধ্যে দেখিস টি ভি,ফোনে ফোনেই সারাক্ষণ
সোশাল সায়েন্স বাংলাটা পড়, মায়ের কথা একটু শোন
সারাক্ষনই হা হা হি হি,ঘুড়ি লাটাই ক্রিকেট ব্যাট
ঘুমের ঘোরে চেঁচিয়ে উঠিস, স্কোয়ার ড্রাইভ হাউস দ্যাট।।
 
বাবা১
ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে এখন থেকেই ট্রেনিং নাও
কমপ্ল্যান আর হরলিক্সের সঙ্গে তুমি দুগ্ধ খাও
আই আই টি টা কঠিন বটে, প্রশ্নগুলো ঝকমারি
তাইতো বলি অনলাইনে ট্রেনিং নেওয়া দরকারি।।
 
বাবা২
এখন থেকেই তৈরি হবি,ডাক্তারিটাই লক্ষ্য হোক
ধন্য ধন্য করবে দেখিস,মাসি  পিসী পাড়ার লোক,
এসব কি আর এমনি হবে,পড়তে হবে রাত্রি ভোর
স্টাডি চলুক সমস্ত দিন,কোন প্রশ্নের কি উত্তর।।
 
বাবা৩
আমরা কি আর এত সুযোগ পেয়েছিলাম বাল্যকালে
পাঠশালাতে পড়তে যেতাম বাল্যকালে রোজ সকালে
এখন তো তোর এত্ত সুযোগ, কিসের চিন্তা কিসের ভয়
ডাক্তার কি ইঞ্জিনিয়ার হওয়া তেমন শক্ত নয়।।
 
রাতে পড়তে বসে সবাই নিয়ম করে, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম পেয়ে যায়। পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের মধ্যে বাচ্চারা স্বপ্ন দেখে, কত জায়গায় ঘুরতে যায়, কতজনের সাথে দেখা হয়।
 
বাচ্চাদের কোরাস-
দুপুরবেলা স্কুলের শেষে ফিরছি যখন বাড়ি
গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে আইসক্রিমের গাড়ি;
ভ্যানিলা না ম্যাঙ্গো খাবি, পাইনএপেল ফ্লেবার
কুলফিমালাই সেটাও ভাল, খেয়েছিলাম সেবার;
এসব খেলে মা বুঝে যায়, রঙিন সিরাপ লাল নীলে
হঠাৎ করে গলায় ব্যাথা ঠাণ্ডা, জ্বর আর টনসিলে
আলুকাবলি ভাল্লাগেনা! ফুচকা সাথে তেঁতুল জল
নুন মশলা লঙ্কা দিলে খেয়েই যাব অনর্গল;
মা বলবে নোংরা এসব, বড্ড নালি আনহাইজেনিক
ধুলো, বালি উড়ছে মাছি, মায়ের কথা খানিকটা ঠিক;
চীনেবাদাম বিক্রি করে সেই যে দাদু গল্প বলে
কত্ত তাসের ম্যাজিক জানে, ভেল্কি দেখায় খেলার ছলে।।
 

।। তৃতীয় দৃশ্য।।

 

এমন সময়  কোথা থেকে এক দাদু উপস্থিত। সাদা চুল সাদা দাড়ি, একটা আলখাল্লা পরে মনের সুখে সে পার্কের বাচ্চাদের ছড়া গান শোনায়। সে নানা দেশের গল্প, পাখির গল্প, মানুষের গল্প, গাছের গল্প, বেড়াবার গল্প।
 
খোকা খুকু পৌঁছে গেছ, কাল গেছিলাম অস্ট্রেলিয়া
ক্যাঙ্গারু সব দুষ্টু ভারি তাদের কথা বলব কী আর!
ভলকানো এক উঠল জেগে, লাভার স্রোত আর উড়ছে ধোঁওয়া
বলে কয়ে শান্ত করা! ছেলেখেলা হাতের মোয়া?
গেলাম, ওদের বুঝিয়ে বলি, শান্ত হ’বাপ বাদাম খাবি?
লঙ্কা পেঁয়াজ ছোলা মটর ওদের আবার অনেক দাবী;
সেখান থেকে মঙ্গোলিয়া বিখ্যাত সেই কলার ভেলায়
সাইবেরিয়ার হাজার পাখি জিরোচ্ছে বেশ বিকেলবেলায়;
যেই দেখেছে আমায়, তখন ওদের মধ্যে সবচে বড়
বল্ল দাদু ইন্ডিয়াটা কোনদিকেতে বলতে পার?
আমি বললাম এখান থেকে হাজার মাইল পূবের দিকে
হিমালয়ের হদিস পাবে, তোমরা যাবে কি পিকনিকে?
সকাল সকাল বেড়িয়ে পর অনেক দূরের রাস্তা জান
এত্ততুকু বাচ্চা পাখি, শুনিয়ে দিল বাংলা গানও;
পাখির ছানা বায়না ধরে, তুমিও দাদু সঙ্গে চল
এদিক ওদিক আর কয়েকটা সঙ্গে নিল পাখির দলও;
নীচে সাগর, কোথায় জিরোয়, ভোরের আলো পাখির ডানায়
আর কতদূর শুধোয় মাকে কি আর বোঝে পাখির ছানা?
ঐযে দূরে পাহাড় নদী, লোক দেখা যায় ধানের ক্ষেতে
পৌঁছে গেছি পৌঁছে গেছি বলল পাখি আনন্দেতে।।
 
 
বাচ্চারা তো দারুণ খুশী, বলতে বলতে কথা নেই বার্তা নেই এক ভবঘুরে উপস্থিত। তাঁর গায়ে রঙবেরঙের জামা, মাথায় টুপি তাতে আবার পাখির পালক গোঁজা। কাঁধে এক ঝোলা ব্যাগ। জিজ্ঞের করতে সে বলে আমি বৃষ্টি নামাই, সবাই জিজ্ঞেস করে তুমি বৃষ্টি বুড়ো, বারিষওয়ালা রেনম্যান?
বাচ্চারা বৃষ্টি বুড়োর গান ধরে, বৃষ্টি বুড়োও ওদের সাথে গলা মেলায়।
 
এমন সময় সেই লোকটা যাচ্ছিল যে বৃষ্টি নামায়
হরেক রকম মেঘের ছবি চিত্রিত তার সুতির জামায়;
আমরা বলি বড্ড গরম, বৃষ্টি কবে আসবে জান?
দু এক ফোঁটা বৃষ্টি এতো সমস্তটাই লকদেখানো;
আর কটা দিন সবুর কর, মৌসুমি মেঘ আসল বলে
দেরীর কথা আর বোলো না, পথে নানান গণ্ডগোলে
মৌসুমি মেঘ পথ হারিয়ে কেরল থেকে আন্দামানে
কোথায় উড়ে পালিয়ে গেল মেঘগুলো সব কে তা জানে!
আমি তখন মন্ত্র পড়ি, মেঘকে বলি আয় ফিরে আয়,
বৃষ্টি পড়ুক টাপুর টুপুর করমচা কি পদ্মপাতায়;
বৃষ্টি হবে আগাম খবর, ব্যাঙের তখন বেদম হাসি
খুব জমেছে রথের মেলা, নাগরদোলা পাতার বাঁশি;
বৃষ্টি এখন খামখেয়ালি উদাস বিশ্ব উষ্ণায়নে
গাছ কাটে সব নির্বিচারে, মেঘের কথা কেই বা শোনে?
আমার জ্বালা, বলছে সবাই তোমার ম্যাজিক দেখাও তবে
মাঠের ফসল, গাছগাছালি শুধোয় কবে বৃষ্টি হবে!
রেগে বলি ডাক তবে তোর মন্ত্রী, নেতা শিল্পপতি
যুদ্ধ করিস অস্ত্র ধরিস দূষণ সেতো সবার ক্ষতি;
নদীনালায় জল থাকে না, একটুখানি ছায়ার খোঁজে
বর্ষাকালে বৃষ্টি ভাল, মানুষ কি আর সেসব বোঝে?
কালো মেঘে বৃষ্টি আসুক, শহর থেকে দূরের গ্রামে
টাপুর টুপুর বৃষ্টি নামুক, আমার তোমার সবার নামে।।

 

 ।। চতুর্থ দৃশ্য।।

 

ঘুম ভেঙে যায় আর স্বপ্নে দেখা গল্পটা শেষ হয় না।মাঝে মাঝে খুব ভয় হয়, বাবা মা না থাকলে এত্ত কাজ কে করে দেবে?
লাল, নীল, টাপুর, টুপুর, বৃষ্টি আর লালন খানিকটা খানিকটা করে গাইতে থাকে, নিজেরাই সুর দেয় বা আবৃত্তি করে। আসলে ওরা তো খুব ছোট বাবা মা যতই বকুক শাসন করুক বাবা মা ছাড়া এক মুহুর্ত ওদের চলে না।
 
বাবার সাথে ক্রিকেট খেলি রোববার কি ছুটির দিন
অ্যাটলাসে তো বাবাই দেখায় কোথায় জাপান কোথায় চিন
বাবা চেনায় গঙ্গাফড়িং শালিক চড়ুই সঙখচীল
বর্ষাকালে বৃষ্টি নামে শরতকালে আকাশ নীল
মা বেছে দেয় মাছের কাঁটা,রান্না করে মালাইকারি
জুতো মোজা কোথায় টিফিন এক্ষুনি তো আসবে গাড়ি ;
মায়ের কাছে গল্প শুনি, ঘুমিয়ে পড়ি গভীর রাত
শপিং মলে হারিয়ে যাব, আঁকড়ে ধরি মায়ের হাত;
বাবা কেমন বুঝিয়ে দেবে,অঙ্ক খাতায় করলে ভুল
মায়ের বুকের গন্ধ আসে,আচড়ে দেবে মাথার চুল;
খেলায় হেরে ফিরলে বাড়ি, বাবা কেমন সাহস দেয়
আসল কথা খেলার মজা,হারজিত তো কিচ্ছু নয়;
বাবা যেন ম্যাজিক জানে,সব প্রশ্নর কি উত্তর
মা বলবে যাস না মাঠে ঝড় উঠেছে ভীষণ জোর
মা বলবে ছাতা খুলিস,বাইরে দেখিস কি রোদ্দুর
মাকে নিয়ে বিদেশ ঘুরে যাচ্ছি আমি অনেক দূর;
স্বপ্ন দেখি পাখির মত যাচ্ছি উড়ে নানান দেশ
ঘরবাড়ি আর পাহাড় নদী ওপর থেকে লাগছে বেশ ;
হাট্টিমাটিম কুমড়োপটাস পাগলা দাশু গানের দল
নতুন জামা পুজোর মজা দেখব ঠাকুর সবাই চল।
মা বাবা কি শুধুইই বকে? একদমই তা সত্যি নয়
মা বাবাকে দুঃখ দিতে আমার ভীষণ কষ্ট হয়।।
 
(সমাপ্ত)

গ্রাফিক্সঃ মহাশ্বেতা রায়

আশুতোষ ভট্টাচার্য্যি নিয়মিত ছোটদের এবং বড়দের বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালিখি করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা