স্কুলে ছুটি পড়লে আমার আর তর সয়না, কখন শিলিগুড়ি যাব মনে হয়। শিলিগুড়িতে পরিবারের সবাই থাকে। ঠাম্মা দাদা, কাকা কাকীমণি, মামা মামী আর আমার তুতো ভাই বোনেরা। শিলিগুড়ি তে সবচেয়ে বেশী মজা হয় মামাবাড়িতে গেলে। দোতলা বাড়ি, ওপরে খোলা ছাদ, বড় বড় জানালা...কে কোথায়, কোনদিকে কোন খাটের তলায় গুঁজে বসে থাকে, কেউ টেরও পায়না। সেদিন বিশ্বকর্মা পুজোর দিন দুপুরে সবাই ছাদে উঠে একটু গুলতানি করছিলাম, আমাদের ঘুড়ি ওড়ানোর প্ল্যান ছিল, আর একটু আমের আচার একটু তেঁতুলের আচার খাওয়া। এসবেই তো মজা।
কিন্তু মামার ওসব পছন্দ না। মামা আমাদের সব কটাকে ঘাড় ধরে নামিয়ে গল্প বলতে শুরু করলো। সে কী বোরিং গল্প! কিন্তু সম্পর্কে মামা বলে কিছু বলতেও পারছিলাম না, শুনছিলাম সময় কাটানোর জন্য।
"সেই যে সেবার, আমি যখন জাহাজে চড়ে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম, আমি একটা প্রদীপ পেয়েছিলাম, সে যে সে প্রদীপ নয়, একবারে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ! বুঝলে তো বাবু…ও বাবু...বাবু!" মামা বলল।
"হ্যাঁ হ্যাঁ….কী হলো সে দ্বীপ এর?" আমি খুব খতোমতো খেয়ে বললাম। আমার মাথায় তখন ঘুরছে 'ব্যাটম্যান: দ্য কিলিং জোক' এর দৃশ্য , এখন যদি মামার গল্পের মধ্যে মনোযোগ দিতে হয়, তাহলে আমি কী করব! বাকী সবাইও চুপ।
মামা বুঝতে পারলো আমরা কেউ মন দিয়ে শুনছিলাম না, তাই আবার গলার আওয়াজ অনেক বাড়িয়ে দিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে বলা শুরু করলো।
আমাদের ভাইবোনেদের তো কাঁদো কাঁদো অবস্হা। হঠাৎ চটাস করে একটা শব্দ হলো। কে যেন কাকে মারলো! দেখি দিদা খুব রেগে দাঁড়িয়ে। দিদা বললেন, "বাঁদর ছেলে, দুপুর বেলা এত চিৎকার কিসের?"
গল্পের সভা ভেঙে গেল। আমরা উঠে টিয়াকে ছোলা খাওয়াতে গেলাম।
গল্প লিখেছেঃ
রুদ্রপ্রিয়া সেন
সপ্তম শ্রেণি,
সেন্ট জুডস হাই স্কুল, মধ্যমগ্রাম, কলকাতা
গ্রাফিকঃ মিতিল