ছাদে বিকেল বেলা
মা - কী সুন্দর হাওয়া। এই সময় এসে ভালোই করেছি। ওই দেখ বেগুন! বেগুন গাছের কিন্তু খুব কাঁটা...আরে লংকা, লেবু, সবেদা, বরবটি! কত সবজিই না হয়েছে। নিমও হয়েছে দেখতেই পাচ্ছি। একদম সবকিছু দিয়ে তরকারি বানাবো। আহাহা বাবা কতই না ভালোবাসবে!
আমি ( মুখ কাঁচুমাচু করে প্যাঁচার মত) - তো ভালো তো। করো না। তবে আমাকে দিও না।
মা - তোকে খেতেই হবে। তোর শরীরের জন্য উপকারী। আর তুই না খেলে তো তোর বাবাও খাবে না। তাই...
আমি - দুর ছাই! ভালো লাগে না
রেগে মেগে চলে গেলাম।
রাতে খাবার সময়
বাবা - তরকারি টা খুবই ভালো হয়েছে। উমম্ । তাই না মাম? কী রে?
আমি ( পেঁচার মত) - হুঁ
মা - খা রে সবজি গুলো সব তো গাছের... তাই টেস্ট আরো বেশি...
আমি ( মাকে আর বলতে না দিয়ে) - সবজি তো গাছেই হয়! ...
মা রেগে তাকালো। বাবা হাসলো আর আমি হঠাৎ বললাম, আমি বড় হতে চাইনা।
মা আর বাবা একসাথে - কেন রে?
আমি - বড় হয়ে সবজি খেতে হয় তাই আর... আর বড় হয়ে কিছু একটা হতে হবে । সেই ক্লাস ওয়ান থেকে সবাই বলছে " বড় হয়ে কী হবে? বড় হয়ে কী হতে চাও? আর ভালো লাগে না।
মা - তা বড় হয়ে কিছু তো একটা হতে...
আমি মাকে আবার শেষ করতে দিলাম না...
আমি - আরে দুর ছাই! ভালো লাগে না ...( আস্তে করে) তরকারিটা ভালোই হয়েছে।
মা - শুনতে পেয়েছি কিন্তু!
আমি সবে খেয়ে উঠে জল খাচ্ছিলাম। তখনই বাবা বলে উঠল
বাবা - তা তুই কি বড় হয়ে কিছুই হবি না?
আমার মুখ থেকে জলটা ফোয়ারার মত বেরিয়ে আসার পর কেশে বললাম
আমি - এ্যাঁ ? ... না মানে... বড় মানে... বড় হয়ে কিছু...হতে চাই... তবে একটা কিছু নয়। পেইন্টার, সিঙ্গার, আর্টিস্ট সব একসাথে হতে চাই... আচ্ছা বড় হয়ে কি কিছু হতেই হবে ? বড় হয়ে ...
( মা আর বাকিটা বলতে দিলো না, বলতে দিলে অবশ্য টানা একশ' ঘন্টা বলে যেতাম)
মা - যা তো, বেশি বক বক করিস না। হাঁড়ির মধ্যে গরম রসগোল্লা আছে, নিয়ে...
মার কথা শেষ হবার আগেই আমি রান্নাঘরে গিয়ে দুটো গরম গরম রসগোল্লা মুখে নিয়ে 'আহ্ আহ্' করে বেড়াচ্ছি।
আহ! বড় হয়ে কী ভালো লাগছে! কেউ আর জিজ্ঞেস করে না বড় হয়ে কী হবি? এখন আমার যখন যা ইচ্ছে, তখন সেটাই হব।
গল্প লিখেছেঃ
মরমিয়া মুখোপাধ্যায়
ষষ্ঠ শ্রেণী,
মহাদেবী বিড়লা ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমি
গ্রাফিকঃ মিতিল