সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
একটি জলদস্যুর কাহিনী

অনেকদিন আগে প্রাচীন 'ভেনেজুয়েলা' দেশে 'হোভার' নামে একটি গ্রামে 'পল রিও' নামে একটি ছোট্ট ছেলে বাস করত । সে ছিল অনাথ ও একা । তার আত্মীয় স্বজন বলতে কেউ ছিল না । গ্রামবাসীরা তাকে একটুও খাবার তো দিতই না বরং তার সাথে খুব দুর্ব্যবহার করত । এইভাবে অবহেলার সাথে একটু একটু করে সে বড় হতে লাগল । ক্রমশ: সে একজন কুখ্যত জলদস্যু হয়ে উঠল । 'পল রিও' তার মত কিছু বন্ধু বান্ধব জুটিয়ে একটা দস্যুদল বানাল । তারপর একটা জাহাজ চুরি করে ক্যারিবিয়ান সাগরে পাড়ি দিল । সে হল জলদস্যু দলের সর্দার । একবার এক ভয়ঙ্কর ডাকাতির সময় তার একটা চোখ নষ্ট হয়ে যায় । তারপর থেকে সে সবসময় একটা কালো চশমা পড়ে থাকতো । কেউ কেউ তাকে কানা পল বলেও ডাকতো । সে ছিল খুব নিষ্ঠুর । তার মনে দয়া মায়া বলে কিছু ছিল না । সেই সময় ক্যারিবিয়ান সাগরে 'পল রিওর' ভয়ে ব্যবসায়ীরা তাঁদের জাহাজ চালাতে ভয় পেত । বাইরে সে নিষ্ঠুর হলেও তার মনে জীবজন্তুদের প্রতি খুবই দয়া ছিল । পলের একটা পোষা টিয়াপাখি ছিল । ওর নাম ছিল 'জ্যাক' । জ্যাককে 'পল রিও' নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালবাসত । জ্যাকও সবসময় পল রিওর সঙ্গে সঙ্গে থাকত এবং পল রিওকে খুব ভালবাসত । এমনকি ভয়ঙ্কর দস্যুগিরির সময় 'জ্যাক', 'পল রিওর' কাঁধের উপর বসে থাকত । সব জলদস্যুদের একটা নিজস্ব ভয়ঙ্কর চিহ্ন সহ একটা কালো রঙের পতাকা থাকে । সেই পতাকাটা জাহাজের সবচেয়ে উঁচু মাস্তুলের উপর লাগানো থাকে । সমুদ্রের হাওয়ায় ওই পতাকা উড়তে থাকে । যাতে অনেক দূর থেকেও পতাকাটা দেখা যায় । 'পল রিওর' দলেরও একটা ভয়ঙ্কর কঙ্কালের চিহ্ন সহ একটা কালো রঙের পতাকা ছিল । ওই পতাকায় কঙ্কালের চিহ্নের নিচে লেখা থাকত 'জ্যাক পল রিও দা গ্রেট ' । প্রত্যেকবার এক একটা জাহাজ দখল করার পর 'পল রিও' ও তার দলবল আনন্দে হইহল্লা করতে করতে একটা বিশেষ ঘুড়ি ওড়াত । ওই ঘুড়িতেও পতাকার মত দলের ওই চিহ্নটা ছাপা থাকত । ওই ঘুড়িটা যখনই আকাশে দেখা যেত তখনই আশেপাশের গ্রাম ও শহরের অধিবাসীরা ভয়ে ও আতঙ্কে শিহরিত হত । তারা বেশ কয়েকদিন ভয়ে ও আতঙ্কে দিন কাটাত ।

একবার একটা বড়সড় যুদ্ধ জাহাজ লুঠ করার পর 'পল রিওর' দলের দস্যুরা প্রতিবারের মত ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে হইহল্লা করছিল । এমন সময় 'জ্যাক' অর্থাৎ 'পল রিওর' পোষা টিয়া মারা গেল । কয়েকদিন ধরেই জ্যাকের (টিয়াপাখি ) শরীর ভাল যাচ্ছিল না । প্রায় কিছুই খাচ্ছিল না । এই দুঃসংবাদে 'পল রিও' খুব ভেঙ্গে পড়ল । সে ভাবল, সে এবার পুরোপুরি একা হয়ে গেল । সে কাছাকাছি সামনের দ্বীপটাতে তার জাহাজটা নোঙর করতে আদেশ করল । ওই দ্বীপটাতে পল ঘুরতে ঘুরতে একটা ঝর্নার কাছে এসে পৌঁছল । তার খুবই মন খারাপ ছিল , আর জলতেষ্টাও পেয়েছিল । সে ঝর্নার সামনে গেল এবং চোখে মুখে ভাল করে জল দিয়ে তারপর জল খেতে শুরু করল । ঠিক সেই সময় তার নজরে পড়ল ঝর্নার নিচে জলটা যেখানে পড়ছে সেখানে কি যেন একটা চকচক করছে । পল নিচু হয়ে পাথর টাথর সরিয়ে খোঁড়াখুড়ি করে যে জিনিসটা পেল সেটা ছিল একটা পুরনো ধাতুর প্রদীপ । প্রদীপটা দেখতে ঠিক একেবারে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মত । 'পল রিও' কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে প্রদীপটার দিকে তাকিয়ে রইল । তারপর সে প্রদীপটার গায়ে লেগে থাকা ময়লা ও মাটি ঘষে ঘষে ঝর্নার জল দিয়ে ভাল করে ধুতে লাগল । এমন সময় সেই প্রদীপটা থেকে বেরিয়ে এলো নীল রঙের প্রদীপের দৈত্য । দৈত্যটা বেরিয়েই একটা বড়সড় হাই তুলে বলে উঠল, " আদেশ করুন আমার প্রভু, আমি আপনার জন্য কি করতে পারি ? " প্রথমে 'পল রিও' একটু থতমত খেয়ে গেলেও তক্ষুনি নিজেকে সামলে নিয়ে কেশে গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে বলল, "তুমি ঠিক কি কি করতে পার ?" দৈত্য বলল, " আমি সবকিছুই করতে পারি " পল মনে মনে ভাবল, তাহলে কি জ্যাককে (পোষা টিয়া) আবার বাঁচানো যাবে ? সে বলল, " মরা মানুষ বাঁচাতে পার ?" দৈত্য বলল, " না প্রভু।" পল বলল," তাহলে কি মরা পাখি বাঁচাতে পারবে ?" দৈত্য বলল, " না প্রভু" পল তখন হতাশ হয়ে বলল, " তাহলে তুমি আমার জন্য আর কীই বা করবে ?"

দৈত্য তখন পলের হতাশ ও দুঃখী ভাব লক্ষ্য করে জিজ্ঞাসা করল, " কী হয়েছে আমার প্রভু , আপনার দুঃখের কারণ কি জানতে পারি ? সবটা জানলে হয়ত আমি আপনার দুঃখ দূর করার কোন উপায় বার করতে পারি ।" 'পল রিও' কুখ্যত জলদস্যু হলে কি হবে তার একটা নরম মনও ছিল । আসলে সে ভিতরে ভিতরে খুব একা ছিল । তারপর তার পোষা টিয়া মারা যাওয়ায় সে আরও একা হয়ে গিয়েছিল । সে তার জীবনের সব কথা ও দুঃখের কারণ দৈত্যকে খুলে বলল। দৈত্য সব কথা শুনে বলল, " আমি ঐ টিয়াকে হয়ত বাঁচাতে পারব না, তবে ঐ টিয়াকে চিরকালের মত অমর করার একটা উপায় বলতে পারি । জলদস্যু পল খুব উৎসাহিত হয়ে দৈত্যর কাছে উপায়টা জানতে চাইল । দৈত্যটা সত্যিই খুবই ভাল, দয়ালু আর বুদ্ধিমান ছিল । সে বলল, " আমার প্রভু, আপনি এখন থেকে আপনার পোষা টিয়ার নামে সমাজের ভালোর জন্য কাজ করুন, সমাজের গরীব দুঃখী মানুষের জন্য কাজ করুন, যারা আপনার মত একা ও অনাথ তাদের উপকার করুন । আপনি দস্যুগিরি ছেড়ে দিন, আর এই ভালো কাজের জন্য যখন যা অর্থ বা টাকার প্রয়োজন তা আমি ব্যবস্থা করব । "

দৈত্যর এই সুন্দর কথা শুনে ও মিষ্টি মধুর বলার ভঙ্গিমা দেখে জলদস্যু 'পল রিওর' মনে খুব অনুশোচনা হল । সে ঠিক করল দৈত্যর কথা মেনে চলবে এবং দস্যুগিরি ছেড়ে দেবে । এরপর সে দস্যুগিরি ছেড়ে দিল এবং তার দলবল নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে গরীব দুঃখী মানুষদের প্রতিদিন দুবেলা একবাটি করে খিচুড়ি খাওয়াতে লাগল । গরীব দুঃখী মানুষদের দুর্দশার কথা শুনতে লাগল এবং তাদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতে লাগল । তার মত একা ও অনাথ শিশুদের জন্য খাবার , থাকার জায়গা ও পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে লাগল । তার জাহাজ নিয়ে একটা গ্রাম থেকে আরেকটা গ্রামে সে পাড়ি দিতে লাগল ও এইভাবে সমাজের উপকার করতে লাগল । দস্যুদলের সর্দার 'পল রিও' এখন থেকে হয়ে গেল সমাজের উপকারী বন্ধু 'জ্যাক পল' । এখন তার জাহাজে আর কালো পতাকা ওড়ে না । এখন তার জাহাজের পতাকার রং সবুজ আর তাতে আঁকা সাদা রঙের একটা টিয়া পাখি আর তার নিচে লেখা ' জ্যাক দা গ্রেট মাই লাভ '।

 

গল্প লিখেছেঃ
শ্রীমেধা চক্রবর্তী
পঞ্চম শ্রেণি, হোলি চাইল্ড গার্লস হাই স্কুল, কলকাতা

গ্রাফিকঃ মিতিল

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা