জনাথন নামক শহরে মায়া নামে একটি ছোট্ট মেয়ে বাস করত । মায়া ছবি আঁকতে খুব ভালবাসত । একদিন সে তার বাড়ির উল্টোদিকের পার্কের বেঞ্চে বসে ছবি আঁকছিল । এমন সময় সেখানে একজন বয়স্ক লোক উপস্থিত হল । লোকটি বলল, " এই যে মেয়ে আমায় একটু খাবার আর জল দেবে ? আমি দুদিন কিছুই খাইনি ।" বৃদ্ধ লোকটির কথা শুনে মায়ার খুব কষ্ট হল । মায়া একছুটে বাড়িতে গিয়ে কিছু খাবার ও জল নিয়ে এলো এবং বৃদ্ধ লোকটিকে দিল । লোকটি খেতে খেতে দেখল যে, মায়া ছবি আঁকছে । তা দেখে বৃদ্ধ লোকটি বলল, " তুমি বুঝি ছবি আঁকতে খুব ভালবাস ? ঠিক আছে , আমি তোমাকে একটা জিনিস দেব ।" মায়া ছবি আঁকতে আঁকতে মুখ তুলে লোকটির দিকে তাকালো এবং বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল ! দেখল সেই বৃদ্ধ লোকটি আর নেই । তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে একজন টুপি পরা ম্যাজিক বুড়ো । ম্যাজিক বুড়ো বলে উঠল " ছোট্ট মেয়ে তুমি ভয় পেয়ো না, " এই বলে তাকে একটি রং পেন্সিলের বাক্স দিল । তখন মায়া বলল, " আমার তো অনেক রং পেন্সিল আছে, তুমি আবার আমায় এটা দিলে কেন ?" ম্যাজিক বুড়ো বলল, " এটা দেখতে সাধারণ হলেও আসলে এটা কিন্তু কোনো সাধারণ রং পেন্সিলের বাক্স নয় ! এই রং পেন্সিল দিয়ে তুমি যদি কোনো বস্তু, জিনিস বা প্রাণীর ছবি আঁক, তাহলে তা সত্যি বা জীবন্ত হয়ে উঠবে । আর যদি তুমি কোনো জায়গার ছবি আঁক, তাহলে তুমি সেই জায়গায় পৌঁছে যাবে । তোমার যখন আমাকে প্রয়োজন হবে তখন এই রং পেন্সিল দিয়ে তুমি আমার ছবি আঁকবে, এবং তিনবার আমাকে স্মরণ করবে । তাহলেই আমি সেখানে উপস্থিত হব ।" মায়া বলল, "আমি তাহলে তোমাকে ম্যাজিক দাদু বলে ডাকব ।" ম্যাজিক দাদু হেসে সম্মতি জানাল। মায়া রং পেন্সিলের বাক্সটা হাতে নিতেই ম্যাজিক দাদু অদৃশ্য হয়ে গেল । মায়া খুব খুশি হয়ে ম্যাজিক দাদুর কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরে গেল । বাড়ি গিয়ে মায়া ভাবল একটা সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি আঁকবে । এরপর সে খুব সুন্দর একটি পাহাড়ি জঙ্গলের ছবি আঁকল । আঁকা শেষ হওয়া মাত্র চোখের পলকে খাতা ও রং পেন্সিল সহ মায়া পৌঁছে গেল সেই জঙ্গলে । জঙ্গল দেখে সে ভয়ে কাঁদতে লাগল । কাঁদতে কাঁদতে সে হঠাৎ লক্ষ্য করল, একটু দূরে একটা বাচ্চা হাতি ও একটা বাচ্চা হরিণ খেলা করছে । মায়া কান্না থামিয়ে ওদের খেলা দেখতে লাগল । খেলতে খেলতে ওরা দুজন একটু দূরে চলে গেল । তাই দেখে মায়াও ওদের পিছন পিছন গিয়ে একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে ওদের খেলা দেখতে লাগল । এমন সময় ওদের বন্ধু মাছরাঙা পাখিও সেখানে এসে সামনের কলাগাছটায় গিয়ে বসল । তারপর ওরা তিনজন মিলে খুব গল্প করতে লাগল । এমন সময় হঠাৎ সেখানে একটি সার্কাসের দল এলো । এবং মুহূর্তের মধ্যে হাতি ও হরিণের বাচ্চাদুটিকে জাল ফেলে বন্দি করে ফেলল । বন্ধু মাছরাঙা পাখি কি করবে বুঝতে না পেরে চিৎকার করে ডাকতে লাগল ।
মায়া ছোট্ট মেয়ে হলেও বুদ্ধিমতী ছিল । সেও খুব তাড়াতাড়ি কয়েকজন পুলিশের ছবি এঁকে ফেলল । পুলিশ এসেই সার্কাস দলের সকলকে বন্যপ্রাণী ধরার অপরাধে ধরে নিয়ে গেল । এবং হাতি ও হরিণের বাচ্চাদুটিকে জাল থেকে মুক্ত করে দিল । এখন মায়া কী করবে ভাবতে লাগল । এমন সময় তার ম্যাজিক দাদুর কথা মনে পড়ল । সে চট করে খাতা ও রং পেন্সিল নিয়ে ম্যাজিক দাদুর ছবি এঁকে ফেলল, ও তিনবার "ম্যাজিক দাদু" বলে ডাক দিল । সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিক দাদু সেখানে উপস্থিত হল । ম্যাজিক দাদু সব ঘটনা জেনে খুব খুশি হল । তারপর দাদু মায়াকে তার বাড়ির ভিতরের ঘরের ছবি আঁকতে বলল। মায়ার ছবি আঁকা শেষ হতেই সে দেখল খাতা ও রং পেন্সিল সহ বাড়ি পৌঁছে গেছে । ম্যাজিক দাদুর এই আশ্চর্য উপহার ও অসামান্য উপকারের জন্য সে মনে মনে দাদুকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাল ।
গল্প লিখেছেঃ
শ্রীমেধা চক্রবর্তী
পঞ্চম শ্রেণি, হোলি চাইল্ড গার্লস হাই স্কুল, কলকাতা
গ্রাফিকঃ মিতিল