বৃষ্টি পড়ছে, দুই বন্ধু ছুটছে। বড় পাতা মাথায় দিয়ে ছুটছে। গ্রামের রাস্তা দিয়ে।
ওপরের দৃশ্যটা 'দোস্তোজী' সিনেমার। পরিচালক প্রসূন চ্যাটার্জি। প্রথমেই জানাতে চাই পরিচালককে ধন্যবাদ। আমার মনে হচ্ছিল তথ্যচিত্র দেখছি। ওদের বন্ধুত্ব এতই আসল।
'দোস্তজী' দেখার আগে, ঠিক আগের শো-তেই আমি আরেকটা ছবি দেখেছিলাম । সেটা ভালোই ছিল, কিন্তু নতুন কিছু নয়। সেই একই, রাজপ্রাসাদ ভূত। কিন্তু 'দোস্তজী'অন্য রকমের। যেন আসল। বন্ধুত্ব আর জীবনকে খুব সত্যি একটা রূপে দেখা যায়।
একজন হিন্দু, একজন মুসলিম। কিন্তু সবার থেকে ভালো বন্ধু । ওরা সমাজের ধর্মভেদ নিজেদের মধ্যে আসতে দেয় না। একজন পড়াশুনোয় খুব ভালো, আরেকজন পড়ায় ওঁছা। ওদেরকে পড়তে বললে, ওরা চুপিচুপি খেলতে চলে যেত। একজনের পরিবার গামছা বানায়, আরেক জনের বাবা পুরোহিত। সব বাধা পার করে ওরা খেলে যায়।
পলাশের মৃত্যুর পরে শফি চেষ্টা করে যাচ্ছিল, যাতে শফির মধ্যে দিয়ে পলাশ বেঁচে থাকে। ওদের ধরা শুঁয়োপোকাটাকে যেমন প্রতিদিন খাবার দিত, শফি চেষ্টা করত যে, পড়ার মধ্যে দিয়েও সে নিজের আর দোস্তজীর নম্বর পাবে।
পলাশের মৃত্যুর পরে দুঃখ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাগও হচ্ছিল, কিন্তু শেষে, শুঁয়োপোকা যখন প্রজাপতি হয়ে উড়ে গেল,তখন মনে এল, জীবন যতই কঠিন হোক না কেন, আলো সবসময় পাশে আছে। জীবন জীবনের মত চলবে, তাকে কেউ আটকাতে পারবে না।
আমার ছোটবেলার খুব প্রিয় একটা জাপানী ছবি 'My Neighbour Totoro '* । সেখানে দুই বোন বৃষ্টির মধ্যে খেলে বেড়ায়, Totoro বৃষ্টির মধ্যে পাতা মাথায় দিয়ে দাঁড়ায়। ওটা জাপানী ভাষায় আর অ্যানিমেশন ফিল্ম। 'দোস্তজী'বাংলায়, আসল অভিনয় আর আমার বাড়ির কত কাছে। কিন্তু দুটোর মধ্যে প্রচুর মিল খুঁজে পাই। এই জন্যই 'দোস্তজী'এত প্রিয় আমার। বারবার দেখলেও রেশটা হারিয়ে যাবে না।
তাছাড়া, আমার নিজের বন্ধুর কথাও তো মনে পড়ে গেছিল। ভুল করে , ঘুড়ি ভেঙে যাওয়ার পর, দোস্তজীর অভিমান করায় বা গোঁসা করায় মিল খুঁজে পেলাম। যদিও আমার আর আমার দোস্তোজীর গোঁসা থাকে মাত্র দুই সেকেন্ড।
সুখ, দুঃখ, বেদনা, গোঁসা, রাগ সব নিয়েই জীবন। ফিল্মটা দেখার পাঁচ দিন পরেও মনে হচ্ছে ইচ্ছে ডানা মেলে চলে গিয়ে ওদের সাথে, ওদের দোস্তজী হয়ে খেলি।
সবার দেখার মত ছবি। দোস্তজীদের নিয়ে গিয়ে 'দোস্তজী'দেখা সবার দরকার। আমি মার সাথে গেছিলাম। বাবার সাথেও দেখতে চাই আর আমার দোস্তজীর সাথেও আমি আবার 'দোস্তজী'দেখতে চাই।
* 'মাই নেইবার তোতোরো' , ১৯৮৮ সালে নির্মিত একটি জাপানী অ্যানিমেশন কল্প কাহিনী চিত্র। লেখক এবং পরিচালক হায়াও মিয়াজাকি। দুটি বাচ্চা মেয়ে তাদের বাবার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে থাকতে যায় এবং সেখানে মেয়ে দুটির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় বনের আত্মা বা বনদেবতা সঙ্গে , যার নাম তোতোরো।
রিভিউ লিখেছেঃ
মরমিয়া মুখোপাধ্যায়
অষ্টম শ্রেণী, মহাদেবী বিড়লা ওয়ার্ল্ড একাডেমী
ছবিঃ আই এম ডি বি / বুক মাই শো