সাতসুকি আর মেই -দুই বোন। সাৎসুকি বড়, এই আট নয় বছর হবে। মেই কিন্তু একেবারেই ছোট, মোটে তিন বা চার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপানে তাদের বসবাস। তাদের বাবা একজন অধ্যাপক। তাদের মা অনেকদিন ধরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। মায়ের কাছাকাছি থাকার জন্য, সাৎসুকি আর মেই এর বাবা হাসপাতালের কাছাকাছি একটা গ্রামে একটা বাড়ি নিলেন। সেটা বেশ পুরোনো এক বাড়ি। বাড়ির ভেতর ঘুরে ফিরে দেখতে গিয়ে দুই বোনের নজরে এল ছোট ছোট কালো কালো কারা যেন সব হুশ-হাশ করে এ দেওয়াল থেকে ওই দেওয়ালে চলে যাচ্ছে। মেই ছোট্ট হলে কি হবে, সে খুব সাহসী। সে খপ করে একটাকে ধরে ফেলল। কিন্তু হাত খুলে দেখে, কালি ময়লা ছাড়া আর কিছুই নেই। দুদ্দাড় করে নিচে ছুটে এসে দেখে, পাশের বাড়ির ছেলে কান্তার দিদা এসেছেন তাদের ঘর গোছাতে সাহায্য করতে। দিদা বললেন, ওরা নির্ঘাৎ soot spirit বা কালি-ভূতদের দেখেছে ।এইসব ভূতেরা ফাঁকা বাড়িতে থাকে। যাইহোক, দেখা গেল, সেই সুট-স্পিরিটের দল রাতের অন্ধকারে মেইদের নতুন বাড়ি ছেড়ে চলে গেল।
সাৎসুকি নতুন স্কুলে যাওয়া শুরু করল। ছোট্ট মেই দিদির মত কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে, মাথায় টুপি পড়ে বাড়ির সামনের মাঠে খেলে বেড়ায়। একদিন সে দেখতে পেল, ছোট্ট ছোট্ট সাদা সাদা কান আর বড় বড় চোখওয়ালা একটা পূঁচকে আর একটা মাঝারি আকারের চেহারা। তারা তাকে দেখেই পালাতে লাগল, আর সে তাদের পিছু নিয়ে এক বিশাল কর্পূর গাছের নিচে এক অদ্ভূত সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকে পড়ল।
সেখানে গিয়ে মেই এর দেখা হল একজনের সাথে - তার বড় বড় সাদা কান, বড় বড় চোখ, লোমশ গা, আর সে খু-উ-উ-ব বড়। সে মুখ দিয়ে অদ্ভূত সব উচ্চারণ করছিল। মেই ভাবল সে তার নিজের নাম বলছে - তোতোরো। মেই তো তার লোমশ বুকের ওপর গড়াগড়ি খেতে খেতে ঘুমিয়েই পড়ল।
ওদিকে সাৎসুকি স্কুল থেকে ফিরে এসে বোন কে দেখতে না পেয়ে বাবার সাথে খুঁজতে লাগল। ক্ষুঁজতে খুঁজতে দেখতে পেল বোন কর্পূর গাছের নিচে ঝোপের মধ্যে ঘুমিয়ে আছে। এদিকে মেই ঘুম থেকে উঠে বাবা আর দিদিকে তোতোরোর গল্প বলতে শুরু করল। কিন্তু তারা তো সে কথা বিশ্বাসই করে না। গাছের নিচে ডালপালার মধ্যে দিয়ে সেই সুড়ঙ্গের মত পথ দিয়ে গিয়েই সে তোতোরোর কাছে যাওয়ার রাস্তাটা আর খুঁজেই পেল না।
তার বাবা অবশ্য তার কথা বিশ্বাস করলেন, তিনি বললেন- তোতোরো নিশ্চয় জঙ্গলের রক্ষাকর্তা; তার যখন ইচ্ছা হবে, সে ঠিক দেখা দেবে।
এর পরে একদিন সন্ধ্যাবেলা খুব বৃষ্টি পড়ছিল। সাৎসুকি আর মেই-এর বাবা বাসে করে ফিরবেন কাজ থেকে। দুই বোনে বাবার জন্য ছাতা নিয়ে গিয়ে পথের ধারে দাঁড়াল। বাস তো আর আসে না। এদিকে বৃষ্টি ক্রমশঃ বাড়তে লাগল। মেই-এর ও ঘুম পেতে থাকল। সাৎসুকি তখন মেইকে পিঠে নিয়ে ছাতা মাথায় করে দাঁড়িয়ে রইল। এমন সময় দেখে, পাশে যেন কে একটা এসে দাঁড়িয়েছে। তার লোমশ পা, বিশাল গা। ভয়ে ভয়ে ছাতার তলা থেকে উঁকি মেরে সাৎসুকি দেখে- পাশে দাঁড়িয়ে তোতোরো!!
তোতোরো তার মাথা ঢেকে রেখেছে একটা গাছের পাতা নিয়ে। সেই দেখে সাৎসুকি তাকে বাবা জন্য আনা ছাতাটা দিল। সেই ছাতা পেয়ে তোতোরো তো খু-উ-ব খুশি। এমন সময়ে দেখা গেল দূরে একটা আলো এগিয়ে আসছে। সাৎসুকি ভাবল তার বাবার বাস। কিন্তু কাছে এলে দেখে- ওমা! একি! এ কি অদ্ভূত কান্ড! এটা যে একটা আট-দশ পেয়ে বিশাল ডোরাকাটা বেড়াল! তার চোখ দুটোই বাসের আলোর মত জ্বলজ্বল করছিল। যেন বেড়ালের মত দেখতে একটা বাস !সেই বেড়াল-বাসের আবার দরজা-জানালাও আছে। সেই বেড়াল-বাসের দরজা খুলে গেল, তোতোরো সাৎসুকির বাবার ছাতা নিয়ে বাসে উঠে গেল, আর বেড়াল-বাস হু-উ-উ-শ করে চলে গেল। তার একটু পরেই ওদের বাবাকে নিয়ে বাস এসে গেল।
এর পরে কি হল? সে অনেক গল্প। ছাতা ধার দেওয়ার উদারতা দেখে খুশি হয়ে মেই আর সাৎসুকিকে তোতোরো আর কি ভাবে সাহায্য করল, কিভাবে দুই বোনে মা'কে দেখার জন্য বেড়াল-বাসে চেপে আকাশে উড়ে হাসপাতালে চলে গেল, সেই সব জানতে গেলে দেখতে হবে জাপানের প্রখ্যাত অ্যানিমেশন চিত্র পরিচালক হায়াও মিয়াজাকির ছবি ' মাই নেইবার তোতোরো'। এই ছবি তৈরি হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। গোটা দুয়েক পুরষ্কারও পেয়েছে এই ছবি। এই ছবি গল্পও নিজে লিখেছেন মিয়াজাকি।
এই গরমের ছুটিতে, বাড়ির বড়দের জিজ্ঞাসা করে দেখ, 'মাই নেইবার তোতোরো'-র ভিডিও যোগাড় করে দেখা যায় কিনা। মেই আর সাৎসুকির সাথে ছুটিটা তাহলে মন্দ কাটবে না।
মহাশ্বেতা রায় পাটুলি, কলকাতা *এই ছবিটা অনলাইন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, এক্কেবারে ফ্রি! শুধু খুঁজে নেওয়ার অপেক্ষা!