ছড়া-ছবির যুগলবন্দী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী একে অপরের সমসাময়িক ছিলেন। একে অপরের কাজকে শ্রদ্ধা করতেন। উপেন্দ্রকিশোর যখন ছোটদের জন্য সহজ ভাষায় লেখা ' ছেলেদের রামায়ণ' এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেন, তখন কবিগুরু নিজে সেই বই এর পান্ডুলিপি আর প্রুফ সংশোধন করে দিয়েছিলেন। আব্র অনেকেই জানেন না, রবি ঠাকুরের কবিতা 'নদী'র জন্য বেশ কিছু ছবি এঁকে দিয়েছিলেন উপেন্দ্রকিশোর।
ইচ্ছামতীর এই পাতায় রইল এই দুই স্রষ্টার এক সাথে কাজের এক অনন্য উদাহরণ।
নদী
ওরে তোরা কি জানিস কেউ
জলে কেন ওঠে এত ঢেউ।
ওরা দিবস-রজনী নাচে,
তাহা শিখেছে কাহার কাছে।
শোন্ চলচল্ ছলছল্
সদাই গাহিয়া চলেছে জল।
ওরা কারে ডাকে বাহু তুলে,
ওরা কার কোলে ব'সে দুলে।
সদা হেসে করে লুটোপুটি,
চলে কোন্খানে ছুটোছুটি।
ওরা সকলের মন তুষি
আছে আপনার মনে খুশি।
আমি বসে বসে তাই ভাবি,
নদী কোথা হতে এল নাবি।
কোথায় পাহাড় সে কোন্খানে,
তাহার নাম কি কেহই জানে।
কেহ যেতে পারে তার কাছে,
সেথায় মানুষ কি কেউ আছে।
সেথা নাহি তরু নাহি ঘাস,
নাহি পশুপাখিদের বাস,
সেথা শবদ কিছু না শুনি,
পাহাড় বসে আছে মহামুনি।
তাহার মাথার উপরে শুধু
সাদা বরফ করিছে ধু ধু।
সেথা রাশি রাশি মেঘ যত
থাকে ঘরের ছেলের মতো।
শুধু হিমের মতন হাওয়া
সেথায় করে সদা আসা-যাওয়া,
শুধু সারা রাত তারাগুলি
তারে চেয়ে দেখে আঁখি খুলি।
শুধু ভোরের কিরণ এসে
তারে মুকুট পরায় হেসে।
সেই নীল আকাশের পায়ে
সেথা কোমল মেঘের গায়ে
সেথা সাদা বরফের বুকে
নদী ঘুমায় স্বপনসুখে।
কবে মুখে তার রোদ লেগে
নদী আপনি উঠিল জেগে,
কবে একদা রোদের বেলা
তাহার মনে পড়ে গেল খেলা।
সেখায় একা ছিল দিনরাতি,
কেহই ছিল না খেলার সাথি।
সেথায় কথা নাহি কারো ঘরে,
সেথায় গান কেহ নাহি করে।
তাই ঝুরু ঝুরু ঝিরি ঝিরি।
নদী বাহিরিল ধীরি ধীরি।
মনে ভাবিল, যা আছে ভবে
সবই দেখিয়া লইতে হবে।
নীচে পাহাড়ের বুক জুড়ে
গাছ উঠেছে আকাশ ফুঁড়ে।
তারা বুড়ো বুড়ো তরু যত
তাদের বয়স কে জানে কত।
তাদের খোপে খোপে গাঁঠে গাঁঠে
পাখি বাসা বাঁধে কুটো-কাঠে।
তারা ডাল তুলে কালো কালো
আড়াল করেছে রবির আলো।
তাদের শাখায় জটার মতো
ঝুলে পড়েছে শেওলা যত।
তারা মিলায়ে মিলায়ে কাঁধ
যেন পেতেছে আঁধার-ফাঁদ।
তাদের তলে তলে নিরিবিলি
নদী হেসে চলে খিলিখিলি।
তারে কে পারে রাখিতে ধরে,
সে যে ছুটোছুটি যায় সরে।
সে যে সদা খেলে লুকোচুরি,
তাহার পায়ে পায়ে বাজে নুড়ি।
পথে শিলা আছে রাশি রাশি,
তাহা ঠেলে চলে হাসি হাসি।
পাহাড় যদি থাকে পথ জুড়ে
নদী হেসে যায় বেঁকেচুরে।
সেথায় বাস করে শিং-তোলা
যত বুনো ছাগ দাড়ি-ঝোলা।
সেথায় হরিণ রোঁয়ায় ভরা
তারা কারেও দেয় না ধরা।
সেথায় মানুষ নূতনতর,
তাদের শরীর কঠিন বড়ো।
তাদের চোখ দুটো নয় সোজা,
তাদের কথা নাহি যায় বোঝা।
তারা পাহাড়ের ছেলেমেয়ে
সদাই কাজ করে গান গেয়ে।
তারা সারা দিনমান খেটে
আনে বোঝাভরা কাঠ কেটে।
তারা চড়িয়া শিখর-'পরে
বনের হরিণ শিকার করে।
নদী যত আগে আগে চলে
ততই সাথি জোটে দলে দলে।
তারা তারি মতো, ঘর হতে
সবাই বাহির হয়েছে পথে।
পায়ে ঠুনু ঠুনু বাজে নুড়ি,
যেন বাজিতেছে মল চুড়ি।
গায়ে আলো করে ঝিকিঝিক,
যেন পরেছে হীরার চিক।
মুখে কলকল কত ভাষে
এত কথা কোথা হতে আসে।
শেষে সখীতে সখীতে মেলি
হেসে গায়ে গায়ে হেলাহেলি।
শেষে কোলাকুলি কলরবে
তারা এক হয়ে যায় সবে।
তখন কলকল ছুটে জল--
কাঁপে টলমল ধরাতল,
কোথাও নীচে পড়ে ঝরঝর--
পাথর কেঁপে ওঠে থরথর,
শিলা খান্ খান্ যায় টুটে--
নদী চলে পথ কেটে কুটে।
ধারে গাছগুলো বড়ো বড়ো
তারা হয়ে পড়ে পড়ো-পড়ো।
কত বড়ো পাথরের চাপ
জলে খসে পড়ে ঝুপঝাপ।
তখন মাটি-গোলা ঘোলা জলে
ফেনা ভেসে যায় দলে দলে।
জলে পাক ঘুরে ঘুরে ওঠে,
যেন পাগলের মতো ছোটে।
শেষে পাহাড় ছাড়িয়ে এসে
নদী পড়ে বাহিরের দেশে।
হেথা যেখানে চাহিয়া দেখে
চোখে সকলি নূতন ঠেকে।
হেথা চারি দিকে খোলা মাঠ,
হেথা সমতল পথঘাট।
কোথাও চাষিরা করিছে চাষ,
কোথাও গোরুতে খেতেছে ঘাস।
কোথাও বৃহৎ অশথ গাছে
পাখি শিস দিয়ে দিয়ে নাচে।
কোথাও রাখাল ছেলের দলে
খেলা করিছে গাছের তলে।
কোথাও নিকটে গ্রামের মাঝে
লোকে ফিরিছে নানান কাজে।
কোথাও বাধা কিছু নাহি পথে,
নদী চলেছে আপন মতে।
পথে বরষার জলধারা
আসে চারি দিক হতে তারা,
নদী দেখিতে দেখিতে বাড়ে,
এখন কে রাখে ধরিয়া তারে।
তাহার দুই কূলে উঠে ঘাস,
সেথায় যতেক বকের বাস।
সেথা মহিষের দল থাকে,
তারা লুটায় নদীর পাঁকে।
যত বুনো বরা সেথা ফেরে
তারা দাঁত দিয়ে মাটি চেরে।
সেথা শেয়াল লুকায়ে থাকে,
রাতে হুয়া হুয়া করে ডাকে।
দেখে এইমতো কত দেশ,
কে বা গনিয়া করিবে শেষ।
কোথাও কেবল বালির ডাঙা,
কোথাও মাটিগুলো রাঙা রাঙা,
কোথাও ধারে ধারে উঠে বেত,
কোথাও দুধারে গমের খেত।
কোথাও ছোটোখাটো গ্রামখানি,
কোথাও মাথা তোলে রাজধানী--
সেথায় নবাবের বড়ো কোঠা,
তারি পাথরের থাম মোটা।
তারি ঘাটের সোপান যত,
জলে নামিয়াছে শত শত।
কোথাও সাদা পাথরের পুলে
নদী বাঁধিয়াছে দুই কূলে।
কোথাও লোহার সাঁকোয় গাড়ি
চলে ধকো ধকো ডাক ছাড়ি।
নদী এইমতো অবশেষে
এল নরম মাটির দেশে।
হেথা যেথায় মোদের বাড়ি
নদী আসিল দুয়ারে তারি।
হেথায় নদী নালা বিল খালে
দেশ ঘিরেছে জলের জালে।
কত মেয়েরা নাহিছে ঘাটে,
কত ছেলেরা সাঁতার কাটে;
কত জেলেরা ফেলিছে জাল,
কত মাঝিরা ধরেছে হাল,
সুখে সারিগান গায় দাঁড়ি,
কত খেয়া-তরী দেয় পাড়ি।
কোথাও পুরাতন শিবালয়
তীরে সারি সারি জেগে রয়।
সেথায় দু-বেলা সকালে সাঁঝে
পূজার কাঁসর-ঘণ্টা বাজে।
কত জটাধারী ছাইমাখা
ঘাটে বসে আছে যেন আঁকা।
তীরে কোথাও বসেছে হাট,
নৌকা ভরিয়া রয়েছে ঘাট।
মাঠে কলাই সরিষা ধান,
তাহার কে করিবে পরিমাণ।
কোথাও নিবিড় আখের বনে
শালিক চরিছে আপন মনে।
কোথাও ধু ধু করে বালুচর
সেথায় গাঙশালিকের ঘর।
সেথায় কাছিম বালির তলে
আপন ডিম পেড়ে আসে চলে।
সেথায় শীতকালে বুনো হাঁস
কত ঝাঁকে ঝাঁকে করে বাস।
সেথায় দলে দলে চখাচখী
করে সারাদিন বকাবকি।
সেথায় কাদাখোঁচা তীরে তীরে
কাদায় খোঁচা দিয়ে দিয়ে ফিরে।
কোথাও ধানের খেতের ধারে
ঘন কলাবন বাঁশঝাঁড়ে
ঘন আম-কাঁঠালের বনে
গ্রাম দেখা যায় এক কোণে।
সেথা আছে ধান গোলাভরা,
সেথা খড়গুলা রাশ-করা।
সেথা গোয়ালেতে গোরু বাঁধা
কত কালো পাটকিলে সাদা।
কোথাও কলুদের কুঁড়েখানি,
সেথায় ক্যাঁ কোঁ ক'রে ঘোরে ঘানি।
কোথাও কুমারের ঘরে চাক,
দেয় সারাদিন ধরে পাক।
মুদি দোকানেতে সারাখন
বসে পড়িতেছে রামায়ণ।
কোথাও বসি পাঠশালা-ঘরে
যত ছেলেরা চেঁচিয়ে পড়ে,
বড়ো বেতখানি লয়ে কোলে
ঘুমে গুরুমহাশয় ঢোলে।
হেথায় এঁকে বেঁকে ভেঙে চুরে
গ্রামের পথ গেছে বহু দূরে।
সেথায় বোঝাই গোরুর গাড়ি
ধীরে চলিয়াছে ডাক ছাড়ি।
রোগা গ্রামের কুকুরগুলো
ক্ষুধায় শুঁকিয়া বেড়ায় ধুলো।
যেদিন পুরনিমা রাতি আসে
চাঁদ আকাশ জুড়িয়া হাসে।
বনে ও পারে আঁধার কালো,
জলে ঝিকিমিকি করে আলো।
বালি চিকিচিকি করে চরে,
ছায়া ঝোপে বসি থাকে ডরে।
সবাই ঘুমায় কুটিরতলে,
তরী একটিও নাহি চলে।
গাছে পাতাটিও নাহি নড়ে,
জলে ঢেউ নাহি ওঠে পড়ে।
কভু ঘুম যদি যায় ছুটে
কোকিল কুহু কুহু গেয়ে উঠে,
কভু ও পারে চরের পাখি
রাতে স্বপনে উঠিছে ডাকি।
নদী চলেছে ডাহিনে বামে,
কভু কোথাও সে নাহি থামে।
সেথায় গহন গভীর বন,
তীরে নাহি লোক নাহি জন।
শুধু কুমির নদীর ধারে
সুখে রোদ পোহাইছে পাড়ে।
বাঘ ফিরিতেছে ঝোপে ঝাপে,
ঘাড়ে পড়ে আসি এক লাফে।
কোথাও দেখা যায় চিতাবাঘ,
তাহার গায়ে চাকা চাকা দাগ।
রাতে চুপিচুপি আসে ঘাটে,
জল চকো চকো করি চাটে।
হেথায় যখন জোয়ার ছোটে,
নদী ফুলিয়ে ঘুলিয়ে ওঠে।
তখন কানায় কানায় জল,
কত ভেসে আসে ফুল ফল।
ঢেউ হেসে ওঠে খলখল,
তরী করি ওঠে টলমল।
নদী অজগরসম ফুলে
গিলে খেতে চায় দুই কূলে।
আবার ক্রমে আসে ভাঁটা পড়ে,
তখন জল যায় সরে সরে।
তখন নদী রোগা হয়ে আসে,
কাদা দেখা দেয় দুই পাশে।
বেরোয় ঘাটের সোপান যত
যেন বুকের হাড়ের মতো।
নদী চলে যায় যত দূরে
ততই জল ওঠে পুরে পুরে।
শেষে দেখা নাহি যায় কূল,
চোখে দিক হয়ে যায় ভুল।
নীল হয়ে আসে জলধারা,
মুখে লাগে যেন নুন-পারা।
ক্রমে নীচে নাহি পাই তল,
ক্রমে আকাশে মিশায় জল,
ডাঙা কোন্খানে পড়ে রয়--
শুধু জলে জলে জলময়।
ওরে একি শুনি কোলাহল,
হেরি একি ঘন নীল জল।
ওই বুঝি রে সাগর হোথা,
উহার কিনারা কে জানে কোথা।
ওই লাখো লাখো ঢেউ উঠে
সদাই মরিতেছে মাথা কুটে।
ওঠে সাদা সাদা ফেনা যত
যেন বিষম রাগের মতো।
জল গরজি গরজি ধায়,
যেন আকাশ কাড়িতে চায়।
বায়ু কোথা হতে আসে ছুটে,
ঢেউয়ে হাহা করে পড়ে লুটে।
যেন পাঠশালা-ছাড়া ছেলে
ছুটে লাফায়ে বেড়ায় খেলে।
হেথা যতদূর পানে চাই
কোথাও কিছু নাই, কিছু নাই।
শুধু আকাশ বাতাস জল,
শুধুই কলকল কোলাহল,
শুধু ফেনা আর শুধু ঢেউ--
আর নাহি কিছু নাহি কেউ।
হেথায় ফুরাইল সব দেশ,
নদীর ভ্রমণ হইল শেষ।
হেথা সারাদিন সারাবেলা
তাহার ফুরাবে না আর খেলা।
তাহার সারাদিন নাচ গান
কভু হবে নাকো অবসান।
এখন কোথাও হবে না যেতে,
সাগর নিল তারে বুক পেতে।
তারে নীল বিছানায় থুয়ে
তাহার কাদামাটি দিবে ধুয়ে।
তারে ফেনার কাপড়ে ঢেকে,
তারে ঢেউয়ের দোলায় রেখে,
তার কানে কানে গেয়ে সুর
তার শ্রম করি দিবে দূর।
নদী চিরদিন চিরনিশি
রবে অতল আদরে মিশি।
(ছবিগুলি নেওয়া হয়েছে ১৯৭৩ সালে এশিয়া পাবলিশিং কোম্পানি দ্বারা প্রকাশিত 'উপেন্দ্রকিশোর সমগ্র রচনাবলী'-র প্রথম খন্ড থেকে।
- বিস্তারিত
- লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
বাংলাদেশের জন্য বার্তা
বাংলাদেশ। ভারতের প্রতিবেশী, পশ্চিমবঙ্গের কোল ঘেঁষে থাকা ভারতের ছোট্ট প্রতিবেশী দেশ। এক সময়ে তো ছিল ভারতেরই অংশ, কিন্তু এখন এক সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র। ইচ্ছামতীর অনেক পাঠক বাংলাদেশের, অনেক লেখক বাংলাদেশের। তাই ইচ্ছামতীর সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব বেশ ভালই। আর তাই , গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনা, যা সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে, নাড়া দিয়েছে ইচ্ছামতীকেও।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে সারা পৃথিবী দেখেছিল বাংলাদেশের ঢাকার শাহবাগ স্কোয়ারে এক বিশাল আন্দোলন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অপরাধীদের সঠিক বিচার চেয়েছিল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। সঠিক বিচারের দাবী নিয়ে ধর্ম-বর্ণ-বয়স-নির্বিশেষে কয়েক লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন শাহবাগ স্কোয়ারে। তার নতুন নাম হয়েছিল প্রজন্ম চত্বর। প্রজন্ম চত্বরে জমায়েত মানুষেরা চেয়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষভাবে তাঁদের দেশের শান্তি, স্বস্তি, উন্নতি ফিরিয়ে আনতে।
সেই আন্দোলনের রেশ কাটতে না কাটতেই গত ২৪শে এপ্রিল, ঢাকার সাভার অঞ্চলে, এক বহুতল বাড়ি ভেঙে পড়ে। বেআইনি ভাবে তৈরি এই বাড়িতে ছিল ব্যাঙ্ক, দোকান এবং জামাকাপড় তৈরির কারখানা।আগের দিন বাড়ির দেওয়ালে ফাটল দেখা দেওয়ায় ব্যাঙ্ক এবং দোকানগুলি বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু জনামাকাপড়ের কারখানার দিন-আনি-দিন-খাই শ্রমিকদের রেহাই মেলেনি। তাঁদের কাজে আসতে বাধ্য করা হয়েছিল। আর সেই সকালে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে এই আট তলা বাড়ি। মারা যান ১০০০ জনেরও বেশি নিরীহ মানুষ। আহত হন আরো বহু মানুষ।
আর তার পিছু পিছু মে মাসের শুরুতে এল সাইক্লোন মহাসেন। উত্তর পূর্ব ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার সহ, বাংলাদেশেও আঘাত হানল মহাসেন। তবে যতটা প্রবল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল ততটা হয়নি।
এত সব আঘাত সহ্য করেও, ইচ্ছামতীর প্রিয় বাংলাদেশ যে ঠিক আবার সোজা হয়ে দাঁড়াবে , সে বিষয়ে ইচ্ছামতীর একফোঁটাও সন্দেহ নেই। তাই বাংলাদেশের সব বন্ধুদের জন্য রইল ইচ্ছামতীর তরফ থেকে অনেক শুভেচ্ছা , আর ঝড়ের মুখেও সোজা দাঁড়িয়ে থাকার জন্য অনেক অভিনন্দন।
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
রং-পেন্সিল নিয়ে ইচ্ছেমতন
কণাদ মন্ডল,পাঁচ বছর, কলম্বাস, জরজিয়া,আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
নীলাগ্নি দাস, চতুর্থ শ্রেণী, বি.ডি.এম.ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, কলকাতা
প্রকৃতি গুপ্ত,ষষ্ঠ শ্রেণী,অক্সিলিয়াম কনভেন্ট, ব্যান্ডেল, হুগলি
মধুরিমা গোস্বামী,নবম শ্রেণী, ভবানীপুর গুজরাতি এডুকেশন সোসাইটি স্কুল, কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
IAYP এর সাথে পঞ্চলিঙ্গেশ্বর ভ্রমণ
IAYP- ইন্টারন্যাশ্নাল অ্যাওয়ার্ড ফর ইয়াং পিপল অথবা ডিউক অফ এডিনবার্গ অ্যাওয়ার্ড - এই কথাটির সাথে অনেকেই পরিচিত নন । আমিও পরিচিত ছিলাম না। কিন্তু হঠাৎ করেই আমি আমার স্কুল থেকে এই পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হই।খবরটা শুনে খুব আনন্দ হল। এই পুরষ্কার পাওয়ার জন্য আমাদের অনেকগুলি ক্লাস করতে হয় যেমন- রান্নার ক্লাস, টেবল টেনিসের ক্লাস, ফটোগ্রাফি ক্লাস ও ফার্স্ট-এডের ক্লাস। ফার্স্ট -এড ক্লাসে পড়ারে আসেন ডাক্তারবাবুরা। ফার্স্ট-এডে আমাদের প্র্যাক্টিক্যাল ও থিওরি ক্লাস করতে হয়। ফার্স্ট-এডের সব ক্লাস হয়ে যাওয়ার পর আমাদের পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষায় পাশ করলে আমরা St. John's Ambulance Association বা রেড ক্রস সোসাইটি থেকে সার্টিফিকেট পাই। পড়াশোনার সাথে এইসব করতে বেশ মজা হয়। এছাড়াও আমাদের এক্সপেডিশন বা অভিযানে যেতে হয়।
হোটেলের সামনেই পাহাড় আর জঙ্গল
এবারে আমি প্রথম বার মার্চ মাসে পঞ্চলিঙ্গেশ্বরে ট্রেকিং করতে গেছিলাম। ওখানে গিয়ে আমরা প্রচন্ড মজা করেছিলাম। আমাদের ট্রেন দুয়ালি এক্সপ্রেস ভোর ছটায়, ২৩শে মার্চ, হাওড়া স্টেশন থেকে ছিল। আমরা সবাই ভোর পাঁচটায় এক সঙ্গে হাওড়া স্টেশনে জড়ো হলাম। ট্রেনে গিয়ে বসলাম। চার ঘন্টার মধ্যে আমরা বালেশ্বর পৌঁছে গেলাম।ওখান থেকে গাড়ি করে আমরা পঞ্চলিঙ্গেশ্বর পৌঁছে গেলাম।গাড়ি করে যেতে যেতে নীলগিরি পাহাড়ের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখলাম।সেই জায়গার নিঃস্তব্ধতা আর পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে আমার মন ভরে গেল। নীলগিরি পাহাড়টি পুরোটাই পাথরে তৈরি। আমরা পান্থনিবাস হোটেলে ছিলাম। সেখানে পৌঁছে যে যার নিজের ঘরে চলে গেলাম।
ট্রেকিং শুরু হল
দুপুরবেলা খাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে চারটের সময়ে আমাদের এই ট্রেকিং এর রুল্স্ অ্যান্ড রেগুলেশন্স্ ক্লাস হয়।তারপর আমরা নীলগিরি পাহাড়ে ট্রেকিং এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাই। আমরা ২৫০০ ফিট ওপর অবধি উঠি, তারপরে সন্ধে ছটায় আবার হোটেলে ফিরে আসি। তারপরে আমাদের মাউন্টেনিয়ারিং এর জন্য নট ক্লাস হয়।এই নট ক্লাসে (knot class) আমরা বিভিন্ন রকমের নট বা গিঁট বাঁধা শিখি।তারপরে সন্ধে সাতটার সময়ে স্ন্যাক্স্ খাওয়ার পরে আমরা সবাই এক সাথে অনেক রকমের খেলা খেলি রাত নয়টায় খাবার খেয়ে আমরা যে যার ঘরে শুতে চলে যাই। পরের দিন আমাদের চায়ের টাইম ছিল সকাল ৬ঃ১৫। আমরা তার জন্য ভোর চারটে থেকে উঠে বসে ছিলাম। সাতটার সময়ে জলখাবার খেয়ে আমরা নয়টার সময়ে জঙ্গলে ট্রেকিং এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাই।
জঙ্গলের পথে
আমাদের হোটেল থেকে জঙ্গলের দূরত্ব ছিল মাত্র দশ মিনিট। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে অনেক ধরনের গাছপালা পশুপাখি দেখলাম।চোখে পড়ল একটা বড় পিঁপডের ঢিপি (anthill).
বিরাট পিঁপড়ের ঢিপি
আবার একটা জংলি মোষও দেখেছি।জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে আমরা পৌঁছে গেলাম শিখর মিনার-এ। সেখানে চারিদিকে জল, শুধু মাঝখানে একটি ভাঙা মিনার।
শিখর মিনার
শুনলাম যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, তার ঠিক পিছনেই সিমলিপাল রিজার্ভ ফরেস্ট। সুন্দরবন আর করবেট ন্যাশ্নাল পার্কের পরে সেখানে সবথেকে বেশি বাঘ আছে।
দূরে সিমলিপাল অভয়ারণ্য
হোটেলে ফিরলাম বেলা ১টায়। দুপুরে খেয়ে আমরা ৪টের সময়ে রক ক্লাইম্বিং এর জন্য বেরিয়ে যাই। বেশ একটা নতুন অভিজ্ঞতা হল।
রক ক্লাইম্বিং করতে করতে
ফিরে এসে বিকেলের জলখাবার খেয়ে আমরা কুকিং ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি নিই। আমরা বানালাম আলুর দম।খেতে বেশ ভালই হয়েছিল।তারপর রাতের খাবার খেয়ে আমরা যে যার ঘরে চলে যাই। টিচাররা আমাদের সবার ঘরে এসে বলে যেতেন রাত ১০টা বেজে গেলে ঘুমিয়ে পড়তে। আমরা ঘরের লাইট বন্ধ করে, সবাই যে যার ঘরের বারান্দায়বেরিয়ে এসে টর্চ নিয়ে খেলতাম- এর ওর গায়ে আলো ফেলতাম। সে কি মজাটাই না হত!
তৃতীয় দিন আমাদের ট্রেকিং এর শেষ দিন ছিল। আমরা ভোর ৬ঃ১৫ তে র্যাপেলিং (rapelling)ঙ্গের জন্য বেরিয়ে গেলাম।র্যাপেলিং এ আমাদের একটি পাহাড় থেকে নামতে হবে। সেই দড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নামতে নামতে কি অপূর্ব দৃশ্যই না দেখেছিলাম। চারিদিকে পাহাড় আর আমি এক পাহাড়ের চূড়ার (২,৫০০ মি) ওপরে দাঁড়িয়ে আছি।তারপরে র্যাপেলিং করে এসে আমরা সকালের জলখাবার খেয়ে যে যার ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিই। সকাল নয়টায় আমরা সবাই মিলে এক সাথে ট্রেজার হান্ট খেলি।খেলার পরে আমাদের ক্যাম্প ক্রাফট ক্লাস হয়।সেখানে আমরা কয় ধরনের টেন্ট হয় জানলাম।টেন্ট কি করে পুঁততে হয় শিখলাম।তারপরে দুপুরের খাওয়া খেয়ে যে যার নিজের ঘরে চলে গেলাম।বিকেল চারটের সময়ে আমরা পঞ্চলিঙ্গেশ্বর মন্দিরের দিকে রওনা দিই। সেখানে পাঁচটা পাথর রাখা ছিল। এর পরে আমরা আরো একটা জঙ্গলে গেলাম। সেটা আর একটু গভীর জঙ্গল। সেখানে গিয়ে দেখলাম হাতিরা যেখানে চান করে সেই পুকুর।
হাতিরা স্নান করে এই পুকুরে
গায়ের ওপর পুরো গাছপালা চলে আসছিল।সরিয়ে সরিয়ে যেতে হচ্ছিল। পুরো রাস্তাটা গাছের পাতায় ঢেকে গেছে। কিছুই দেখা যাচ্ছেনা।
ঘন জঙ্গলের মধ্যে
হোটেলে ফিরলাম তখন বাজে সন্ধে ছটা। সাতটা থেকে আমাদের ক্যাম্পফায়ার হয়। সেখানে আমরা মজা করি।তারপর রাত্রে খেয়ে আমরা যে যার ঘরে শুতে চলে যাই।রাত দুটো অবধি আমরা জেগে থাকি। খুব সুন্দর চাঁদ দেখেছিলাম।
পরের দিন আমরা সবাই ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। সেদিন আমাদের ফেরার দিন। সকালে জলখাবার খেয়ে আমরা বালেশ্বরের উদ্দেশ্যে রওনা হই। বালেশ্বর থেকে ট্রেন ধরে আমরা হাওড়া স্টেশনে ফিরে আসি।তার পরে বাড়ি ফিরে আসি।
এটা ছিল আমার ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড এর জন্য। আশা করি এইভাবে আমি আমার সিল্ভার আর গোল্ড অ্যাওয়ার্ডের দিকেও এগিয়ে যেতে পারব।
লেখা ও ছবিঃ
মধুরিমা গোস্বামী
নবম শ্রেণী
ভবানীপুর গুজরাতি এডুকেশন সোসাইটি স্কুল, কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন মধুরিমা গোস্বামী
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
সাভার
হাতে তার একটি চিঠি
মায়ের জন্য লেখা,
দিতে পারেনি তা মাকে
হয়নি তো আর দেখা।
"মাগো,তোমার জন্য আনতে পারিনি ওষুধ
ক্ষমা করে দিও আমায়"
বুকে নিয়ে এমন আকুতি
চলে গেল তার দেহ,
এর জন্য কি নয় দায়ী
আমাদের সমাজের কেহ?
হাজারো মানুষের আত্মা
চাইছে আজ জবাব,
তাদের মৃত্যুর কে দায়ী
নয় কি আমাদের সমাজ?
নিজের স্বার্থ শুধু বুঝলি তোরা
দিলিনা আমাদের জীবনের মূল্য,
তোদের তো বলা যায়না মানুষ
তোরা নয় কি পশুর সমতূল্য?
হাজারো মানুষের না বলা কথা
বলতে দিলি না তুই সাভার,
জবাব তোকে একদিন দিতে হবে
কেন করলি এমন ব্যবহার?
[সাভারের একজন মৃত মেয়ে শ্রমিকের হাতে একটা চিরকূট পাওয়া যায় আর তাতে লেখা ছিল যে মা আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি তোমার জন্য ওষুধ নিতে পারলাম না।তার স্মৃতিকে উৎসর্গ করে আমার এই কবিতা লেখা।]
লেখাঃ
সায়েম সাগর
দশম শ্রেণী
জামালপুর জিলা স্কুল, জামালপুর, বাংলাদেশ
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সায়েম সাগর
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত