কিছুদিন আগে ইচ্ছামতীর ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছিল। সেটা এতদিনে তুমি জেনেই গেছ। ইচ্ছামতীর মত একটা নিরীহ, কারোর সাতে-পাঁচে না থাকা ছোট্ট আদুরে ওয়েবসাইট পত্রিকা, যেটা কিনা আবার একেবারেই বিনামূল্যে পড়তে পাওয়া যায় (অর্থাৎ ফ্রি! ফ্রি! )- তাকে যে কার বা কাদের নষ্ট করতে ইচ্ছা হয়েছিল, আর কেন হয়েছিল, কেই বা জানে! যাইহোক, সেই সমস্যা থেকে বেরোতে গিয়ে কিছু রদবদল করতে হল। তাই মাঝে কিছুদিন ইচ্ছামতীর সাইটে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।কিন্তু এখন, নতুন গ্রীষ্ম সংখ্যা নিয়েই একেবারে আবার ফিরে এল ইচ্ছামতী।
চারিদিকে নিত্যদিন কত ঘটনাই না ঘটে চলেছে।পচা গরম - বৃষ্টি-নিম্নচাপ-ঝড়-সাইক্লোন---গত কয়েকদিনে কত কিছুই না হয়ে গেল। আমপাকা গরমে নাজেহাল অবস্থা হচ্ছিল। তারপরেই হঠাৎ করে আকাশ বাতাস কালো মেঘে ঢেকে গেল, দুরন্ত বাতাস বইল। মহাসেন নামে এক সাইক্লোন পশ্চিমবংগে তিন-চার দিন জল ঢেলে, বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়ে চলে গেল মায়ানমার। তার মধ্যেই আবার খবর পেলাম অরুণিমা সিন্হা নামের এক সাহসী মেয়ে , প্রথম মহিলা প্রতিবন্ধীরূপে এভারেস্ট জয় করেছেন। একটা ট্রেন দুর্ঘটনায় এই জাতীয় স্তরের ভলিবল খেলোয়াড় একটা পা হারান। কিন্তু এই দুর্ঘটনা তাঁর মনের সাহস আর ইচ্ছাশক্তিকে এক বিন্দু টলাতে পারেনি। সেইরকমই আরেকজন সাহসী মেয়ে হলেন ছন্দা গায়েন - যিনি ভারতের মধ্যে সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে প্রথম মহিলা যিনি এভারেস্ট জয় করলেন। ওদিকে আবার খবর পেলাম পাকিস্থানের সেই সাহসী মেয়ে, যে কিনা স্কুলে যেতে চেয়েছিল, সেই মালালা ইউসুফজায়ির জীবন নিয়ে সিনেমা তৈরি হবে।এই সব ইচ্ছামতীদের এগিয়ে চলার গল্প শুনতে শুনতে নতুন সংখ্যা নিয়ে তৈরি হচ্ছিলাম।কিন্তু এইসব নানাধরনের খবরের মধ্যে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত যে খবরটা পেলাম মাত্র তিন দিন আগে, সেটা মেনে নেওয়া যে কোন বাংলা ভাষাভাষী মানুষের পক্ষে খুব কষ্টকর।
হঠাৎ করেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন বিখ্যাত সিনেমা পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ। মাত্র ৪৯ বছর বয়স হয়েছিল তাঁর। ঋতুপর্ণ ঘোষ মূলতঃ বড়দের কথা ভেবে ছবি বানাতেন, কিন্তু তাঁর প্রথম ছবি কিন্তু ছিল ছোটদের জন্য তৈরি 'হীরের আংটি'। ইচ্ছামতীর শরৎ সংখ্যা ২০০৯ এ 'ছবির খবর' বিভাগে 'হীরের আংটি'-র গল্পও বলা হয়েছিল। আর তিনি কিন্তু শুধু ভাল ছবি বানাতেন না, খুব ভাল লিখতেনও। তাই আমি সত্যি সত্যি খুব কষ্ট পেয়েছি।
কিন্তু জীবনের মূল মন্ত্রই হল এগিয়ে চলা। যাই ঘটে যাক না কেন, আমাদের এগিয়ে চলতেই হবে। থেমে থাকার যো নেই। আর তাই ইচ্ছামতীর নতুন গ্রীষ্ম সংখ্যাও এসে গেল জৈষ্ঠের শেষে। গত কয়েকদিনে অনেকেই বলেছে - বৃষ্টি তো পড়েই গেল, এই সংখ্যাটা তাহলে বর্ষা সংখ্যাই নাম হোক। কিন্তু দুইদিন বৃষ্টি পড়লে কি হবে, কাগজে কলমে তো এখনো গ্রীষ্মকালই রয়েছে, তাই না? চাঁদের বুড়ি একটু ধীরে ধীরে কাজ করে বটে, কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই মোটামুটি ঠিক সময়ে ইচ্ছামতীর নতুন সংখ্যা সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে চলে আসে, কি বল?
আর কথা বাড়াব না। এই সংখ্যায় তোমার জন্য রইল প্রচুর গল্প। সাথে থাকছে নিয়মিত বিভাগগুলি। অবশ্যই দেখ, বিশেষ রচনা- রবি ঠাকুরের কবিতার সাথে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর আঁকা ছবি। আর হ্যাঁ, এই সংখ্যায় আছে ইচ্ছামতীর তিন বন্ধুর লেখা - ইচ্ছেমতন বিভাগে। অবশ্যই পড়ে দেখ।
তোমার জন্য রইল আমের সুগন্ধ আর কৃষ্ণচুড়ার রঙ ।
ভাল থেক।
চাঁদের বুড়ি
রবিবার,
২রা জুন, ২০১৩
১৮ই জৈষ্ঠ, ১৪২০