"চুপ! একদম যেন আওয়াজ না হয়।" কুকুর সাবধানী গলায় বলে উঠলো। একটু ম্যাঁও ম্যাঁও করলে কিন্তু সর্বনাশ হবে। এই কাজ করতে গেলে কিন্তু...."
"আরে ধুর!" বেড়াল বলে উঠলো, "আপনি থামুন না! আমি করছি তো।"
আসলে কী হয়েছে, কুকুর, বেড়াল, আর বাকি কয়েকজন পশু-পাখিরা মিলে চড়ুইভাতি করতে চলেছে। আর খাবার দাবার ছাড়া তো চড়ুইভাতি অসম্ভব। আগে প্ল্যান ছিল যে হরিপ্রসাদ মাছওয়ালার কাছ থেকে মোটা দেখে একটা রুই চুরি করবে। কিন্তু যেমন ভাবা তা কী আর হয়, যেই না হরিপ্রসাদ দেখল যে দুটো বেড়াল আর কুকুর মিলে তার সাধের রুই নিয়ে যাচ্ছে, সে তৎক্ষণাৎ তাদের পিঠে লাঠি দিয়ে দুই ঘা বসিয়ে দিল।
তাই এখন, বেড়াল আর কুকুর পিঠে ব্যাথা নিয়ে, এসেছে ফলের দোকানে। ফল চুরি করতে।
"আচ্ছা তা- তালে কী নেবো এখান থেকে?" কুকুর জিজ্ঞেস করল।
"নেবেন আবার কী? নেবেন আবার কী?" বেড়াল খ্যাঁক করে উঠলো, "চুরি করতে এসেছেন, চুরি করতে হবে। মানুষের মতো কথা বলবেন না তো!"
"আচ্ছা, তো তাহলে কী চুরি করব বলুন।" কুকুর একটু বিরক্ত হয়ে বলল।
"ওই যে দেখুন, সামনে এক ঝুড়ি আপেল রাখা আছে। এখন মনে হচ্ছে ওটাই নিতে হবে।"
"আর আমাদের জন্য কী নিচ্ছেন? আমিও ফল খাই না আর আপনিও ফল খান না।"
"আমাদের জন্য কি আর কিছু হবে!" বেড়াল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, "মাছটা তো হাতের থেকে চলে গেল, আর এখন যদি আপনি পাঁঠার দোকানটা তে যেতে চান তাহলে….."
"এমা না না, খবরদার না!" কুকুর হই-হই করে উঠলো, "আমাদের সাথে তো ছাগলটাও আছে। ওর সামনে পাঁঠা খেলে ওর কেমন লাগবে?"
"তা সত্যি বটে…….."
এসব কথার মাঝখানে, কখন যে ফলওয়ালাটা দোকান টা ছেড়ে উঠল, আর কখন যে বেড়ালটা এক লাফে আপেলের ঝুড়ি মুখে নিয়ে আবার পিঠে আবার চোট পেল, সেটা কুকুর বুঝতে পারল না।
ঝুড়ি মুখে নিয়ে বেড়াল দে দৌড়! আর সেই দেখে কুকুর ও তীরের বেগে ছুটল। ফলওয়ালা কিছুক্ষণ ধাওয়া করল, কিন্তু সেও আর কতদূর এগোয়! বেড়াল আর কুকুরের দুরন্ত গতিতে তারা মুহূর্তের মধ্যেই তাদের আড্ডাখানায় পৌঁছে গেল। সেই পুকুর, টুকুর, স্কুল, মল, ক্লাব, অফিস সব পেরিয়ে, একটা ছোট্ট মাঠের মধ্যে তাদের আড্ডাখানা।
বেড়াল, কুকুর সেখানে পৌঁছে গিয়ে দেখল যে সবাই চলে এসেছে। মোরগ, চড়াই, আর ছাগল তাদের বন্ধুরা।
"এই যে, বড় দেরি করে দিলেন না?" মোরগ রেগে বলল।
"আর বলবেন না, যা হল।" কুকুর বলল।
"না না, কিচ্ছু হয়নি। আপনি না বেশি বলেন।" বেড়ালের মনে হল, যে এখন যদি কুকুর বলে দেয় যে তারা মাছ আনতে গিয়ে একটা মানুষের কাছে মার-ধোর খেয়েছে, তাহলে বেড়ালের প্রেস্টিজ আর থাকবে না।
তবে তা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি আশা করি, কেননা বেড়াল আর বাকি সবাই বেশ মজাতেই চড়ুইভাতি করেছিল। খালি খাওয়া-দাওয়া টাই একটু মনের মতো হলনা। মোরগ আর চড়াই, আপেল গুলোকে ঠোক্কোর মেরে মেরে খেলো। তবে বেড়াল আর কুকুর ফলগুলো খেতে পারেনি, বেশিটাই ছাগলের পেটে গেল।
গল্প লিখেছেঃ
রুদ্রপ্রিয়া সেন
অষ্টম শ্রেণি, সেন্ট জুডস্ হাই স্কুল, মধ্যমগ্রাম, কলকাতা
ছবিঃ শিল্পী ঘোষ
এই গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে 'ছবিতে গল্পঃ ০১ ' লেখলিখির খেলার অংশ রূপে