রেলিংয়ে শুকোতে দেওয়া একটা জামা, আর একটাকে খুব করুন গলায় বলে উঠল "কেমন আছো বন্ধু? " সদ্য কিনে আনা নীল রঙের জামাটি, পুরোনো সবুজ জামাটির প্রশ্নের উত্তরে, বিদ্রূপ করে বলল, "আমার উচ্ছাস দেখে বুঝতে পারছো না? নিশ্চয়ই ভালোই আছি! " সবুজ জামাটি বলল "হ্যাঁ বন্ধু, একদিন তোমার মত আমিও নতুন ছিলাম, তাই তোমার উচ্ছাসকে আমি উপলব্ধি করতে পারি! " কিছুটা অবাক হয়েই, নীল জামাটি জিজ্ঞেস করল, "তা, এই পরিণতির কারন? " সবুজ জামাটি বলল, "দুই বছর আগে, তাতানের ছোট মামা, আমায় তুলে দিয়েছিল, তাতানের হাতে, ওর জন্মদিনে। আমি ওর প্রিয় জামা ছিলাম। তখন আমায় ও চোখে হারাতো। এমন কোন জায়গা ছিলনা যেখানে, তাতান আমায় পরে যেত না! আমায় ও খুব ভালোবাসত এবং খুব যত্ন সহকারে রাখতো। কিন্তু সময়ের সাথে, আস্তে আস্তে, তাতানের কাছে, আমার মর্যাদা কমতে থাকল। আমায় একদিন ভুলে গেলো তাতান, কারন এখন ও বড় হয়ে গেছে, কিন্তু আমি সেই ছোটটাই থেকে গেছি। এখন শুনছি, আমায় কেটে নাকি ঘর পরিস্কার করতে ব্যবহার করা হবে! " নীল জামাটি, সবুজ জামাটির এই করুন পরিনতি শুনে কেঁদে ফেলল। তাদের মধ্যে এক গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। নীল জামাটি ভেবে দেখলো যে, কোন এক অজানা নতুন জামার আগমনে, একদিন তারও এই অবস্থা হতে পারে!
দুজনে মিলে, মাথা খাটিয়ে, ঠিক করল যে, কোন একদিন, আবার যখন তাদের একসাথে শুকোতে দেওয়া হবে ওই রেলিংয়ে, তারা পালিয়ে যাবে!
অবশেষে এল সেই সন্ধিক্ষণ। হাওয়ার ছোটো ছোটো ধাক্কায় তারা ভাগ করে নিল তাদের সুখ দুঃখ। শেষে এক দমকা হাওয়ায়, সর্বশক্তি দিয়ে তারা, হাতায় হাতা দিয়ে, উড়ে গেল! হারিয়ে গেল পাশের ঘন জঙ্গলে!
গল্প লিখেছেঃ
শুভায়ন চাকী
নবম শ্রেণি, সেন্ট আগস্টিনস্ ডে স্কুল, ব্যারাকপুর
ছবিঃ শিল্পী ঘোষ