আমাদের গ্যালাক্সি 'ছায়াপথ' বা 'আকাশগঙ্গা'। রাতের আকাশ পরিষ্কার থাকলে বর্ষার মাঝামাঝি থেকে শুরু করে শরতের শেষ পর্যন্ত আকাশের উত্তর প্রান্ত থেকে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত বেশ চওড়া যে ধোঁয়াটে আলোর ছোপ দেখা যায়, ওটাই 'ছায়াপথ'। খালি চোখে আবছা আলোর ছোপের মতো দেখালেও আসলে ওই 'আকাশগঙ্গা' প্রায় ৪০০০০ কোটি তারার সমষ্টি। তারা ছাড়াও ওর মধ্যে রয়েছে গ্যাস, ধুলো, গ্রহ, গ্রহাণু, নীহারিকা ইত্যাদি। আকাশগঙ্গা বা মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি (The Milky way galaxy) এক বিশাল সর্পিলাকার গ্যালাক্সি। আতস কাঁচের মতো মাঝখানটা ফোলা পাতলা চাকতির আকারের এই সুবিশাল গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রকুন্ডলীর ব্যাস প্রায় ১০০০০০- ১২০০০০ আলোকবর্ষ। ( আলো একবছরে যে দুরত্ব অতিক্রম করে তা হল ১ আলোকবর্ষ (Light year)= ৯৫০০০০ কোটি কিলোমিটার প্রায় )। সে তুলনায় আমাদের সৌরমন্ডলের ব্যাস মাত্র ৯০০ কোটি কিলোমিটার, অর্থাৎ পুরো সৌরমন্ডলীর ব্যাস আকাশগঙ্গার ব্যাসের ১২ কোটি ভাগের এক ভাগ মাত্র। তার মানে, ইডেন গার্ডেন্স স্টেডিয়ামকে যদি আমাদের আকাশগঙ্গা ধরে নেওয়া যায় তাহলে তার ভেতর সৌরমন্ডলের আয়তন হবে একটা ভাইরাসের চেয়েও ছোট, তাকে খালি চোখে দেখা যাবে না। আকাশগঙ্গার কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৭ হাজার আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে আমাদের সৌরজগৎ। কেন্দ্রকে সে প্রদক্ষিণ করছে খুব ধীর গতিতে, প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার বেগে ছুটে গোটা গ্যালাক্সি একবার প্রদক্ষিণ করতেই লেগে যাচ্ছে ২০ কোটি বছর। আর গোটা গ্যালাক্সিটা আশেপাশের গ্যালাক্সির তুলনায় প্রায় ৬০০ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড বেগে ছুটছে।
এহেন বিশাল ছায়াপথের শরীরে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম তারকাগুলিকে খুঁজে বের করা সত্যিই বড় ঝক্কির। অস্বচ্ছ ধুলো-গ্যাস-নীহারিকার বাধা ছাড়াও নক্ষত্রস্তবকের কিম্বা সর্পিলাকার বাহুর কিম্বা কেন্দ্রীয় অংশের আলোর সমষ্টিগত উজ্জ্বলতা গোটা পরিমন্ডলটাকেই দুর্ভেদ্য এবং রহস্যময় করে রেখেছে। কিন্তু বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ অনুসন্ধানে শেষ পর্যন্ত লুকিয়ে থাকতে পারে নি উজ্জ্বলতম তারকাগুলি। ছায়াপথের প্রত্যন্ত কোণ থেকে তারা ধরা দিয়েছে তাদের পূর্ণ রূপ-গুণ-মেজাজ সমেত। এখনো অবশ্য উজ্জ্বলতম তারকার খোঁজ শেষ হয় নি। নিশ্চিত করে চূড়ান্ত ঘোষণাও হয় নি উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের তালিকা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত যেসব তারকা উজ্জ্বলতম স্থানের দাবীদার, তাদের রূপ-গুণ-মেজাজের মাত্রা সাধারণ নক্ষত্র-দেখা-মানুষের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। একে একে জানা যাক সেসব নক্ষত্রের কথা।
নৌকাতল মন্ডলীর( Constellation Carina) ছবি। বাঁদিকের উজ্জ্বলতম তারাটি ইটা ক্যারিনা
উজ্জ্বলতম তারার কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে দক্ষিণ আকাশের নৌকাতল মন্ডলীর( Constellation Carina) তারা ইটা ক্যারিনার কথা। পৃথিবী থেকে প্রায় ৮০০০ আলোকবর্ষ দূরে থাকা এই তারাটির ভর সৌরভরের ১২০ গুণ। এতেই অবাক হওয়ার কিছু নেই। জন্মকালে তারাটির ভর নাকি ছিল প্রায় ১৫০ সৌরভর। অতিকায় এই তারার উজ্জ্বলতা গত তিন শতাব্দী ধরে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে-কমেছে। এর প্রকৃত উজ্জ্বলতা হিসেব করে বিজ্ঞানীরা দেখলেন তা সূর্যের উজ্জ্বলতার প্রায় ৫০,০০,০০০ গুণ। তারাটি ৩০ সৌরভরের একটি তারাকে এবং অতিকায় এক নীহারিকাকে অভিকর্ষ বলের টানে নিজের চারদিকে ঘোরাচ্ছে। ইটা ক্যারিনার ব্যাস বিশাল, -সৌরব্যাসের ২৪০ গুণ। তীব্র আঘাত তরঙ্গ বা শক ওয়েভ তারাটির চারপাশে তীব্র সুপারসোনিক বেগে ছুটে চলেছে। পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রাও অত্যধিক প্রায় ৩৭০০০ কেলভিন। ছায়াপথের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা হিসেবে দাবিদার তারাদের মধ্যে এই তারাটি কিন্তু সবার চেয়ে এগিয়ে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে তারাটির আকর্ষণ অন্য এক কারণে। এ নাকি খুব শিগগির সুপারনোভা বিস্ফোরণে ফেটে পড়বে। ২০০৬ সালে দূর আকাশে ঘটা দু'টি মহাশক্তিশালী সুপারনোভা বিস্ফোরণ 'এসএন ২০০৬ জেসি' (SN 2006jc) (৭.৭ কোটি আলোকবর্ষ দূরে, মার্জার তারকামন্ডলের(Constellation Lynx) গভীরে) এবং 'এসএন ২০০৬ জিওয়াই' (SN 2006gy) ( ২৩.৮ কোটি আলোকবর্ষ দূরে, পার্সিয়ুস তারকামন্ডলের( Constellation Perseus) গভীরে) – এর তারাদু'টির সাথে তাত্ত্বিক মিল দেখে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইটা ক্যারিনা নাকি আমাদের জীবৎকালের মধ্যেই সুপারনোভা বিস্ফোরণে ফেটে পড়বে।
পিস্তল তারকা
পৃথিবী থেকে ২৫০০০ আলোকবর্ষ দূরে ধনুরাশিতে থাকা ' পিস্তল তারকা' (Pistol star) আর এক আশ্চর্য তারা। গত শতাব্দীর নব্বই দশকে এই তারাটি আবিষ্কারের পর মনে করা হয়েছিল এটিই আকাশগঙ্গা গ্যালাক্সির সবচেয়ে উজ্জ্বল আর ভারী তারা। এর ভর সৌরভরের প্রায় ১৩০ গুণ। ধনুরাশির ( Constellation Sagittarius) আলো আর ধুলোর আড়ালে থাকা এই তারার নাম পিস্তল তারা কেন হল তার উত্তর লুকিয়ে রয়েছে এর বদমেজাজী চরিত্রে। আজ থেকে প্রায় ৬০০০ এবং ৪০০০ বছর আগে পিস্তল তারা নিজের শরীরে দুটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রায় ১০ সৌরভর পরিমাণ বিপুল গ্যাস বাইরে ছুঁড়ে দেয়। ওখানেই সে থেমে থাকে নি। তার গরম মেজাজের শরীর ঘিরে এখনো বইছে তীব্র নাক্ষত্রিক বাতাস- সৌরবাতাসের ১০০০ কোটি গুণ বেগে। ঐ বেগে বাতাস সূর্যের শরীরে বইলে সূর্য কবেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত। পিস্তল তারকার উজ্জ্বলতা সূর্যের উজ্জ্বলতার ১৬,০০,০০০ গুণ। সূর্যে গোটা এক বছরে যে আলোকশক্তি উৎপাদন হয়, পিস্তল তারকা মাত্র ২০ সেকেন্ডেই ঐ শক্তি উৎপাদন করে দিতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, পিস্তল তারার বয়স মেরেকেটে ৪০ লক্ষ বছরের বেশী নয়। জন্মকালে তার ওজন ছিল অনেক বেশী, প্রায় ২০০ সৌরভর। বদমেজাজী করে বিপুল পরিমাণ গ্যাস বাইরে নিক্ষেপ করায় এখন তার ভর অনেক কমে গেছে। কিন্তু ভর কমলেও জ্বালানী ফুরোয় নি। সে মৃত্যুপথযাত্রী নয়, সে যুবক তারকা। বিজ্ঞানীরা এই শ্রেণীর তারাদের নাম দিয়েছেন নীলবর্ণ উজ্জ্বল বিষমতারা (Luminous blue variable)। আকাশগঙ্গার ৪০০০০ কোটি তারার মধ্যে মাত্র ১০০টি তারা এই শ্রেণীর। দক্ষিণ আকাশের নৌকাতলমন্ডলীর তারা 'ইটা ক্যারিনা' (Eta Carina), হংসমন্ডলীর 'পি সিগনাই' (P Cygni), বৃশ্চিকরাশির 'ভি ৯০৫ স্করপাই' (V905 Scorpii) –এরা নীলবর্ণের বিষমতারা। এদের ভর যেমন সৌরভরের ১০০ গুণেরও বেশি, তেমনই আকারেও এরা সুবৃহৎ - ব্যাস সৌরব্যাসের অন্তত ১০০ গুণ। এই তারাদেরই আরো দুই জাতভাই হল- নীলবর্ণ অতিদানব তারা (Blue hypergiant) আর পীতবর্ণ অতিদানব তারা (Yellow hypergiant)। এই দুই জাতের নক্ষত্রেরও ভর সৌরভরের প্রায় ৭০-৮০ গুণ, ব্যাসও প্রায় ততগুণ, উজ্জ্বলতা সৌর-ঔজ্জ্বল্যের প্রায় ১০,০০,০০০ গুণেরও বেশি। এই তিনজাতের তারাই কিন্তু স্বল্পায়ু। ৫০-৬০ লক্ষ বছরের বেশি এরা বাঁচে না। পিস্তল তারার বয়স এখন ৪০ লক্ষ বছর। আগামী ১০-২০ লক্ষ বছরের মধ্যেই বিপুল হাইপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটে ওর মৃত্যু হবে।
পিওনি নীহারিকার মাঝামাঝি উজ্জ্বল তারাটি পিওনি স্টার
উজ্জ্বলতম স্থানের অন্যতম দাবীদার 'পিওনি স্টারে'র (Peony nebula star) দিকে এবার তাকানো যাক। ধনুরাশির গভীরে ছায়াপথের কেন্দ্রের কাছে অর্থাৎ পৃথিবী থেকে প্রায় ২৬০০০ আলোকবর্ষ দূরে আছে এই তারাটি। পিওনি নীহারিকার আলো-ধুলোর আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকা এই অত্যুজ্জ্বল এই তারার জন্মকালীন ভর অন্ততপক্ষে সূর্যের ভরের ১৭৫ গুণ ছিল। এর পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা প্রায় ২৫০০০ কেলভিন। বয়স মাত্র ৩০ লক্ষ বছর। উলফ-রায়েট শ্রেণীভুক্ত পিওনি তারকা খুব দ্রুত বিবর্তিত হয়ে মৃত্যুকালীন হাইপারনোভা বিস্ফোরণে ফেটে পড়বে শীঘ্রই ( শীঘ্র মানে জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসেবে আগামী ১০-২০ লক্ষ বছরের মধ্যে )। এই প্রসঙ্গে উলফ-রায়েট শ্রেণীর তারাদের সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলি। অতিকায় অত্যুজ্জ্বল 'ও' বর্ণালীর নক্ষত্রগুলির (O- spectral class stars) জীবনের মূলপর্যায়ের ভর ২০ সৌরভরের বেশী হলে সেগুলি বিবর্তিত হয়ে উলফ-রায়েট তারায় পরিণত হয়। এই তারাদের পৃষ্ঠতল অত্যন্ত উত্তপ্ত- ৩০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ কেলভিন পর্যন্ত তাপমাত্রা হতে পারে। বহির্মন্ডলে নাক্ষত্রিক বাতাস (stellar wind) অত্যন্ত তীব্র- ২০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। ফলে প্রতি বছর এই শ্রেণীর নক্ষত্রগুলির শরীর থেকে সৌরভরের এক লক্ষ ভাগের একভাগ পরিমাণ বিপুল জ্বলন্ত প্লাজমা বাইরে নির্গত হয়, যা সূর্যের ওজন-হ্রাসের প্রায় ১০০ কোটি গুণ।
বাঁদিকের উজ্জ্বল তারাটি হল 'এল বি ভি ১৮০৬-২০'
ধনুনক্ষত্রমন্ডলের অত্যন্ত উজ্জ্বল তারকা এল বি ভি ১৮০৬-২০ (LBV 1806-20) ছায়াপথের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদের অন্যতম। পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০০০ আলোকবর্ষ দূরে থাকা এই তারকার ভর সৌরভরের প্রায় ৩৬ গুণ। সূর্যের উজ্জ্বলতার অন্তত ২০,০০,০০০ গুণ উজ্জ্বলতা এই তারকার। মাত্র ৩০ লক্ষ বছর বয়সী এই তারকাটি রয়েছে একটি রেডিও-নেবুলার কেন্দ্রে। ছায়াপথ গ্যালাক্সির যে অংশে সবচেয়ে বেশী আংশিক আয়নিত হাইড্রোজেন গ্যাস রয়েছে, সেখানে অনেক রহস্যময় এবং বিচিত্র প্রতিবেশী নক্ষত্র নিয়ে অবস্থান এল বি ভি ১৮০৬-২০-এর। পড়শীমহলে রয়েছে ৪টি বদমেজাজী উলফ-রায়েট তারকা, অনেকগুলি অত্যুজ্জ্বল ওবি তারকা (OB star) এবং একটি ম্যাগনেটার (SGR 1806-20)। পারিপার্শ্বিক ধুলো-আলো-গ্যাসের প্রভাব এড়িয়ে এই তারকার প্রকৃত ঔজ্জ্বল্য নির্ণয় করা বড়ই কঠিন।
দক্ষিণ আকাশের নৌকাতল নীহারিকারই এক উলফ-রায়েট তারকা 'ডব্লু আর ২৫' (WR 25)ও কিন্তু উজ্জ্বলতম স্থানের জোরালো দাবীদার। ইটা-ক্যারিনার বেশ কাছেই 'ট্রাম্পার ১৬' (Trumper 16) নক্ষত্রস্তবকের মধ্যে থাকা এই নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা সৌর-উজ্জ্বলতার ৬৩,০০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে। সূর্যের চেয়ে ১১০ গুণ ভারী তারকাটির পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রাও অত্যধিক- প্রায় ৫০০০০ কেলভিন। তারকাটির বহিস্তরের তীব্র নাক্ষত্রিক বাতাস এবং আয়নিত গ্যাস বহির্মন্ডলকে জটিল করে তুলেছে।
'ভি ৪৯৯৮ স্যাজিটারি' তারাটিএ ঘিরে রয়েছে স্বচ্ছ বুদবুদের মত ধনুনক্ষত্রমন্ডল
পৃথিবী থেকে ২৫০০০ আলোকবর্ষ দূরে ধনু নক্ষত্রমন্ডলে থাকা তারকা ‘ভি ৪৯৯৮ স্যাজিটারি’ (V 4998 Sagittari)ও ছায়াপথের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা। ভর খুব বেশী নয়, সৌরভরের ৭ গুণ প্রায়। কিন্তু উজ্জ্বলতা সূর্যের উজ্জ্বলতার প্রায় ৪০,০০,০০০ গুণ। অতীতে পিস্তল তারকার মতোই জ্বলন্ত গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে ভি ৪৯৯৮ স্যাজিটারি। অদূর ভবিষ্যতেই এই তারকা বদমেজাজী উলফ-রায়েট তারকায় পরিণত হবে।
তথ্যসূত্রঃ-
1. The Astrophysical Journal
2. Astronomy and Astrophysics
3. “Astronomy”- Ian Ridpath
4. "The Fate of the Most Massive Stars"- Humphreys and Stanek
(প্রথম ছবিঃ উত্তর চিলির পারানাল অবজারভেটরি থেকে নেওয়া ছায়াপথের কম্পোজিট প্যানোরামা)
ছবিঃ উইকিপিডিয়া মারফত নাসা, ইওরোপিয়ান সাদার্ন অব্জারভেটরি এবং হাব্ল্ স্পেস টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া