খেলাঘরখেলাঘর

 

Jagadish Chandra

লজ্জাবতী গাছ দেখেছ? যাকে ইংরেজি তে ডাকা হয় টাচ-মি-নট বলে? যদি এই গাছের পাতাগুলো একটু হাত দিয়ে ছুঁয়ে দাও, দেখবে আঙ্গুল লাগার সঙ্গে সঙ্গে মেলে থাকা পাতাগুলো গুটিয়ে যাবে। আবার বেশ কিছুক্ষন পরে ধীরে ধীরে পাতাগুলো আগের অবস্থায় ফিরে আসে। ছোঁয়ামাত্র গুটিয়ে যায় বলে এই গাছের নাম লজ্জাবতী - যেন লজ্জা পেয়ে মুখ লুকিয়েছে।

গাছ লজ্জা পায় - ভাবলে অবাক লাগে না? লজ্জা হয়ত সত্যি সত্যি পায়না , কিন্তু গাছটা হাতের ছোঁয়া বা স্পর্শ অবশ্যই বুঝতে পারে। গাছের যে প্রাণ আছে, স্পর্শবোধ আছে, গাছের কোন অংশ কাটলে বা টেনে ছিঁড়লে যে গাছের ও ব্যথা লাগে, আমাদের মত গাছেদের ও খুব ঠান্ডা বা খুব গরমে কষ্ট হয়, একথা আমাদের প্রথম কে জানিয়েছিলেন বলতো? আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে, এই কথা আমাদের জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু। ২০০৮ সালে তাঁর জন্মের ১৫০ বছর পালন করা হচ্ছে।

জগদীশ চন্দ্রের জন্ম হয় ১৮৫৮ খ্রীষ্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর। বড় হয়ে তিনি ইংল্যান্ড এ যান চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে। কিন্তু সেই পড়াশোনা তিনি করতে পারেননি অসুস্থতার কারনে। তার বদলে তিনি কেম্ব্রিজ ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৮৮৪ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসাবে কাজে যোগ দেন। সারাদিন কলেজে পরিশ্রম করে তিনি রাত জেগে তাঁর গবেষণা চালাতেন। তখন কলেজে ভাল ল্যাবরেটরি ছিলনা, একটা ছোট্ট ঘরে তিনি নিজের গবেষণা করতেন। তিনি নিজের হাতে বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি তৈরি করতেন। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে জগদীশ চন্দ্র অনেকরকম আবিষ্কার করেন এবং নানারকম সূক্ষ্ম যন্ত্র তৈরি করেন। সেইসব যন্ত্র এখনো রাখা আছে কলকাতার বসু বিজ্ঞান মন্দিরে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু যন্ত্র কিন্তু এতই সূক্ষ্ম এবং আধুনিক যে আজ ও দিব্বি ব্যবহার করা যায়।

জগদীশ চন্দ্র বসু এক সঙ্গে নানারকম বিষয় নিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা করতেন - সে পদার্থ বিদ্যার বিভিন্ন দিক ই হোক বা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের নানান বিষয় ই হোক। তাঁর অনেক রকম গবেষনার মধ্যে তিনি যে দুটির জন্য সবথেকে পরিচিত, তার মধ্যে একটি তো আগেই বলেছি। তিনি 'ক্রেস্কোগ্রাফ' নামে এক যন্ত্র তৈরি করেন। এই যন্ত্র দিয়ে মাপা যায় একটা গাছ প্রতি সেকন্ড-এ কতটা করে বাড়ছে। গাছের গায়ে ইলেকট্রিক শক দিয়ে, নানারকম রাসায়নিক ব্যবহার করে তিনি দেখান যে গাছ ও বিভিন্ন ভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানায়।পদ্ম ফুল সূর্য ওঠার পর পাপড়ি মেলে আর দিনের শেষে গুটিয়ে নেয়। সূর্যমুখী ফুলের কুঁড়ি সূর্যের দিক বদলের সাথে সাথে মাথা ঘোরায়। একটা গাছকে অন্ধকারে রাখলেও সে ঠিক আলোর দিকে মুখ করে বাড়তে থাকে। জগদীশ চন্দ্রই আমাদের প্রথম জানান যে গাছ গুলি এইরকম করে উষ্ণতার পরিবর্তনের জন্য। গাছেদের সম্পর্কে এইরকম আরো নানা তথ্য আমরা জানতে পারি তাঁর গবেষণার থেকে।

আরেকটি গবেষণা, যার জন্য তিনি বিখ্যাত, হল ওয়্যারলেস প্রযুক্তি নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা। রেডিও আবিষ্কারের শিরোপা যদিও ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মার্কনি কে দেওয়া হয়েছিল, এখন কিন্তু এটা সারা পৃথিবী স্বীকার করে নিয়েছে যে জগদীশ চন্দ্রই প্রথম এই প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। সেই সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক বৈজ্ঞানিক দের মত কলকাতায় বসে জগদীশ চন্দ্র ও এই বিষয়ে অনেক গবেষণা করেন এবং মার্কনির পরীক্ষার অনেক আগেই অনেকদূর কাজ করে ফেলেছিলেন।

কিন্তু তাহলে তখন তাঁর নাম লোকে জানতে পারেনি কেন? আসলে, তিনি ছিলেন একজন সাধকের মত।তিনি চাইতেন তাঁর পড়াশোনা এবং গবেষণা সবার কাজে লাগুক। তিনি তাঁর যাবতীয় ভাবনা চিন্তা সবার সামনে তুলে ধরতেন। তাই তিনি মাত্র একবার এক বন্ধুর অনুরোধ ছাড়া আর কোনদিন তাঁর কোন আবিষ্কারের জন্য "পেটেন্ট" বা স্বত্বাধিকার দাবি করেননি।

তিনি কিন্তু শুধু বৈজ্ঞানিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষায় প্রথম বিজ্ঞান ভিত্তিক গল্প বা সায়েন্স ফিকশন এর লেখক। তাঁর লেখা সেই বইটির নাম "নিরুদ্দেশের কাহিনী"।

জগদীশ চন্দ্রের আগে অবধি সারা পৃথিবী ভারতবর্ষ কে চিনত ধর্ম ও দর্শন শিক্ষার কেন্দ্র বলে। আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুই ভারতবর্ষের আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার প্রথম পথপ্রদর্শক।

 

 

 

 

মহাশ্বেতা রায়
কলকাতা

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।