চিনের উত্তর-পুর্বে রাশিয়ার গায়ে গা লাগিয়ে রাজহাঁসের মতো আকারের একটা প্রভিন্স যার নাম হেইলংজিয়ান(heilongjian)। হারবিন সেই রাজহাঁসের গলায় যেন একটা উজ্জ্বল মুক্ত - মধ্যমনি শহর। সংহুয়া নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত এই শহরটিকে বলা হয় ‘আইস সিটি’ বা ‘বরফের শহর’। ‘হারবিন’ কথাটার আঞ্চলিক মানে ‘মাছ ধরার জাল শুকানোর জায়গা’।
বছরের অর্ধেক সময় এই শহরের তাপমাত্রা থাকে শূন্যের নীচে। শীতকালে এই শহর ঢেকে থাকে তুষারে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছয় -৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। পাশের সংহুয়া নদীর জল জমে বরফ হয়ে যায়। সেই বরফ আর তুষার কাজে লাগিয়ে তৈরী হয় নিপুন ভাস্কর্য। সারা পৃথিবীর নানা দেশ থেকে নামী দামী দক্ষ শিল্পী ও ভাস্কররা ভাস্কর্য তৈরী করতে উপস্থিত হন এখানে । নদীর বুক জুড়ে মুক্তাঙ্গন মেলা বসে। নানা জায়গায় শুরু হয় বরফ আর তুষারের চোখধাঁধানো ভাস্কর্য প্রদর্শনী - ‘আইস এন্ড স্নো ফেস্টিভ্যাল’।
উপরের সব কটি ছবিতে মূর্তি এবং বাড়িটি বরফ দিয়ে তৈরি
বরফ আর তুষার দিয়ে তৈরী করা হয় অসংখ্য সুন্দর সুন্দর বাড়ি, মূর্তি, পৃথিবীর নানা বিখ্যাত স্থাপত্যের প্রতিলিপি । এমনকি পায়ে চলা রাস্তা আর প্রাচীরও তৈরী করা হয় বরফ দিয়ে। বরফের ভেতরে নানা রঙের উজ্জ্বল চকচকে আলো দিয়ে সুন্দর করে সাজানো থাকে। অন্ধকার রাত্রে সেই দৃশ্য দেখার মতো।
রাতের আঁধারে আলোয় সাজানো বরফের তৈরি স্থাপত্য
এই প্রদর্শনী দেখতে দেশ বিদেশ থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভীড় হয়। প্রদর্শনী ছাড়াও নানা আইস স্পোর্টস শুরু হয় এই সময়। হয় নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিছু মানুষ নদীর ওপর বরফ কেটে সেই বরফ গলা জলে স্নান করে। কুকুরে টানা স্লেজ ও ঘোড়ায় টানা নানান গাড়ি চেপে ঘোরা যায় নদীর বরফে।
বরফে ঢাকা নদী
হারবিনের আর এক অন্যতম আকর্ষন সাইবেরিয়ান ব্যাঘ্র পার্ক। সাইবেরিয়ান বাঘ এখন বিলুপ্তপ্রায়। তাই তাদের বাঁচিয়ে রাখার এমন প্রচেষ্ঠা। প্রায় ৩৫৬ একর জায়গা জুড়ে তৈরী এই পার্কে পাঁচশ-র বেশি বাঘ আছে।
সাইবেরিয়ান বাঘ
বাঘ ছাড়াও দেখা মেলে কিছু সিংহ, লেপার্ড, পুমা এমন কি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। ইকোট্যুরিজিমের সৌজন্যে দর্শনার্থীদের গাড়িতে করে ঘোরান হয় পার্কে – বাঘেদের কে খুব কাছ থেকে দেখতে পাওয়ার বিরল সৌভাগ্য মেলে। দর্শনার্থীদের জন্যে আলাদা করে কিছু ভিউইং গ্যালারী করা আছে। সেখান থেকে যে কেউ বাঘদের মাংস খেতে দিতে পারে নিজে হাতে। বাঘদের শিকার করা দেখার ইচ্ছে করলে জ্যান্ত মুর্গী কিনে ছুঁড়ে দিতে পারে বাঘেদের মাঝে।
১৯০৭ সালে রাশিয়ানদের তৈরী কাঠের ১৭৫ ফুট লম্বা সেন্ট সোফিয়া চার্চটাও অসাধারন সুন্দর।
সেন্ট সোফিয়া চার্চ
‘সেন্ট সোফিয়া’ কথাটার মানে ভগবানের wisdom । চার্চটা দেখলে মনে হবে সত্যিই ভগবানের হাতের তৈরী।
লেখা ও ছবি -
রুচিরা
বেইজিং