তোমার বাড়িতে কি ছোট ভাই বা বোন আছে, যে কীনা বেজায় দস্যি, কিন্তু পছন্দসই হাতের কাজ পেলে খুব মন দিয়ে সেটা করে ফেলে? সেরকম কেউ যদি না থাকে, আর তুমি যদি একটু বড়ও হও, তাহলেও অসুবিধা নেই- এই মজার কিন্তু সহজ হাতের কাজটা করতে মন্দ লাগবে না। খুবই সহজে, কম সময়ে আর সাধারন কিছু জিনিষ দিয়েই তৈরি করে ফেলা যায় এই রঙচঙে কাগজের মাছ। আর সঙ্গে সঙ্গে শিখে ফেলা যায় বুনন বা weaving এর একটা প্রাথমিক পদ্ধতি; শিখে নেওয়া যায় টানাপড়েন/টানা-পোড়েন সম্পর্কেও।
রঙিন কাগজে বোনা মাছ তৈরি করতে যা যা লাগবেঃ
১। একটা বড় সাদা কাগজ, আর্ট পেপার হলে ভালো
২। ৫-৬ টা নানা রঙের কাগজ - A4 মাপের
৩। পেন্সিল, স্কেল, ইরেজার,
৪। কালো স্কেচ পেন
৫। আঠা
৬। ছোট কাঁচি
( সঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসার খোলা জায়গা, হাতে খানিক সময়, আর মনে নতুন কিছু করার আনন্দ)
১। সাদা কাগজে নিজের ইচ্ছেমত একটা মজাদার মাছের ছবি আঁকো।
২। খুব সাবধানে, প্রয়োজনে বড়দের সাহায্য নিয়ে, দাগ বরাবর সেই মাছটাকে কেটে নাও।
৩। এবার কাগজের মাছটাকে মাঝবরাবর লম্বালম্বি ভাঁজ কর।
৪। ভাঁজের দাগ ধরে, ছবিতে যেভাবে দেখানো হয়েছে, সেভাবে একটু দূর দূর দিয়ে খানিকটা করে কেটে ফেল। এটা খুব সাবধানে করতে হবে।
৫। সব'কটা অংশ যেন মোটামুটি সমান হয়, আর কাটা প্রান্তগুলো যেন একই রেখা বরাবর থাকে
৬। এরপরে তোমার পছন্দমত রঙিন কাগজ নাও। স্কেল দিয়ে মেপে সমান ভাবে প্রতিটা রঙের একটা করে ফালি কেটে নাও।
৭। এবার একটা রঙের কাগজ নিয়ে শুরু। কর। সাদা কাগজের মাঝখানে আগে কাটা পরপর ফাঁকগুলি 'টানা' (warp) তৈড়ী করে দিয়েছে। এই টানার মধ্যে দিয়ে ওপর নিচ করে রঙিন কাগজগুলিকে 'পোড়েন' (weft) হিসাবে ব্যবহার করে আমরা মাছের রঙিন দেহটা বুনে তৈরি করব।
৮। মনে রাখতে হবে, প্রথম পোড়েন যদি ওপর দিয়ে শুরু হয়, তাহলে পরেরটা শুরু হবে টানার তলা দিয়ে।
৯। এইবারে আমাদের টানাপোড়েন মাছের রঙিন বোনা দেহ তৈরি সম্পূর্ণ হয়েছে।
১০। মাছের দেহ তো হল... কিন্তু তার পাখনা কই? পাখনা তৈরি হবে পোড়েনের বেরিয়ে থাকা অংশগুলো দিয়ে। স্কেলের সাহায্যে মাছের দেহের তলার দিকের বেরিয়ে থাকা অংশগুলির ওপরে কোণাকুনি দাগ টেনে নাও।
১১। এভার দাগ অনুযায়ী কেটে নিলেই তৈরি মাছের দেহের নিচের দিকের দুটো পাখনা। একইভাবে কেটে তৈরি করে নাও ওপরের পাখনাটিও।
১২। রঙিন পোড়েন গুলির কেটে ফেলা বাড়তি অংশ গুলিকে দিয়ে নিজের পছন্দমত সাজিয়ে ফেল মাছের লেজ ।
১৩। একই ভাবে সাজিয়ে ফেল আর গায়ের বাকি অংশ।
১৪। কালো স্কেচ পেন দিয়ে এঁকে ফেল মাছের চোখ। ব্যস, তোমার টানাপোড়েন মাছ একেবারে তৈরি।
১৫। তোমার রঙিন টানাপোড়েন মাছকে ম্যাগ্নেটের সাহায্যে আলমারি বা ফ্রিজের গায়ে আটকে রাখো।
হাতের কাজের সঙ্গে সঙ্গে বুননের একটা পদ্ধতিও শেখা হয়ে গেল। এই মাছের সাহায্যে তুমি তোমার বন্ধুদের সহজেই বুঝিয়ে দিতে পারবে কেমন করে তাঁতে কাপড় বোনা হয়। সঙ্গে ফাউ হিসাবে বাঙলা ভাষার একটা খুব পরিচিত শব্দকে নতুন করে চেনাও হল।
আরোও তথ্যঃ
বাংলা ভাষায় টানাপোড়েন শব্দটি এসেছে তাঁত থেকে। ‘টানাপড়েন’ বানানটিও শুদ্ধ। তাঁতের ফ্রেমে বাঁধা দৈর্ঘ্যের সুতোকে টানা ও প্রস্থের সুতোকে বলা হয় পোড়েন। পোড়েনের সুতো মাকুতে জড়ানো থাকে। মাকু ডানে-বামে অনবরত আসা-যাওয়া করে। ওতেই তাঁতের কাপড় বোনা হয়।
-জিয়াউদ্দিন সাইমুম, ডেইলি বর্তমান ডট কম