খেলাঘরখেলাঘর

FacebookMySpaceTwitterDiggDeliciousStumbleuponGoogle BookmarksRedditNewsvineTechnoratiLinkedin

 

tapan-sinha

 তোমরা কি তপন সিংহের নাম শুনেছ? তিনি ছিলেন ভারতের একজন প্রথম সারির চলচ্চিত্র পরিচালক। সিনেমার জগতে তাঁর জীবন শুরু হয়েছিল শব্দযন্ত্রী রূপে। তাঁর অনেক ছবি দেশে বিদেশে নানা সম্মান লাভ করেছে। বাংলা, হিন্দীএবং ওড়িয়া ভাষায় প্রায় চল্লিশটির মত ছবি বানিয়েছেন তিনি। তার মধ্যে অনেকগুলি ছবি কিন্তু ছোটদের জন্য বানানো। গত ১৫ই জানুয়ারি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তপন সিংহ (০২/১০/১৯২৪ - ১৫/০১/২০০৯) ।

tapan sinha portrait
শ্রী তপন সিংহ


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত গল্প  নিয়ে ১৯৫৭ সালে তপন সিংহ তৈরি করেন 'কাবুলিওয়ালা'। এই ছবিটি তোমরা দেখেছ কি? যেখানে ছোট্ট মেয়ে মিনির সঙ্গে ভাব হয়ে গেল দূর আফগান দেশ থেকে সওদা করতে আসা রহমত কাবুলিওয়ালার। ছোট্ট মিনির 'মেঘের কোলে রোদ হেসেছে' গানের সাথে নাচ দেখলে রহমতের মত তুমিও তাকে ভালবেসে ফেলবেই! রহমত কাবুলিওয়ালার সাথে বড় হয়ে যাওয়ার পরেও মিনির ভাব ছিল কি? ছবিটা বরং নিজে দেখে জেনে নিলে কেমন হয়?

১৯৬৫ সালে তৈরি হয় 'অতিথি'। সেটাও কিন্তু কবিগুরুর লেখা গল্প। এ সেই আপনভোলা ছেলে তারাপদর গল্প - যাকে মায়ের স্নেহ বা বন্ধুর ভালবাসা, কোন কিছুই বেশিদিন এক জায়গায় বেঁধে রাখতে পারেনা। তাই বাঁশীর সুরে , সব ভুলে, দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ায় তারাপদ।

১৯৭৪ সালে তপন সিংহ তৈরি করেন ছোটদের জন্য হিন্দি ছবি 'সফেদ হাতি' । এই ছবিটির গল্প তিনি নিজে লিখেছিলেন। সে এক আশ্চর্য সুন্দর ছবি!! গ্রামের ছোট্ট ছেলে শিবুর সাথে বন্ধুত্ব হয় জঙ্গলের হাতিদের রাজা , ধপধপে সাদা হাতি ঐরাবতের।ঐরাবত শিবুকে সোনার মোহরের সন্ধান দেয়। শিবুর কুটিল কাকিমা সব কিছু জানতে পেরে যায়। তারপর একদিন এক মহারাজা জঙ্গলে শিকার করতে এলে, লোভী কাকা কাকিমা তাকে গিয়ে সাদা হাতির কথা বলে দেয়। মহারাজা তখন শিবুকে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। তাই দেখে, বন্ধু ঐরাবত নিজের থেকে রাজার হাতে ধরা দেয়। এত অবধি পড়ে কি মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল? - আগে শেষটুকু তো শোন! ঐরাবতকে ধরা দিতে দেখে, শিবুর বন্ধু ময়না পাখি জঙ্গলের অন্য সব পশুপাখিদের ডেকে আনে। জঙ্গলের যত হাতি, বাঘ, সাপ আর পাখিরা মিলে, রাজা আর তার সঙ্গীদের ভয় দেখিয়ে ঐরাবতকে জঙ্গলে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

ছোটদের জন্য তৈরি করা তাঁর অন্যান্য ছবিগুলি হল 'সবুজ দ্বীপের রাজা' (১৯৭৯),  'আজ কা রবিনহুড' (১৯৮৭/হিন্দী), 'আজব গাঁয়ের আজব কথা'(১৯৯৯) আর 'অনোখা মোতি (২০০০/হিন্দী)। তবে তাঁর আরো বেশ কয়েকটি ছবি আছে যেগুলি বড়দের সঙ্গে ছোটরাও দেখে মজা পাবে। যেমন, 'এক যে ছিল দেশ' (১৯৭৭)। এই ছবিতে এক তরুন বৈজ্ঞানিক এমন এক ওষুধ আবিষ্কার করেন যে তার এক ফোঁটা পেটে গেলেই সবাই সত্যি কথা বলতে শুরু করবে। তার ফলে হল কি? -যত কালোবাজারি আর মিথ্যাবাদী নেতারা সব সত্যি কথা বলে ফেলতে শুরু করল আর বেঁধে গেল নানা গন্ডগোল। ১৯৬৬ সালের 'গল্প হলেও সত্যি' এইরকম আরেকটা মজার ছবি। এক বড়সড়  ঝগড়াটে পরিবারে, একদিন ভোরবেলা রাঁধুনি হয়ে এল এক অদ্ভুত মজার মানুষ। সে এমন এমন কান্ড ঘটাতে লাগল যে, সেই পরিবারের লোকজন সব ঝগড়া করতে ভুলে গেল!!


তপন সিংহের বেশিরভাগ ছবির মধ্যেই থাকত কোন না কোন সামাজিক ঘটনার দিকে আলোকপাত। তাঁর অনেক ছবির গল্পই কিন্তু জীবন থেকে নেওয়া সত্যি ঘটনার আদলে তৈরি। সেইসব ছবি তোমরা বড় হলে নিশ্চয়ই দেখবে। কিন্তু আপাততঃ বাবা-মাকে বলে দেখত- যদি যোগাড় করতে পার 'সফেদ হাতি' বা 'সবুজ দ্বীপের রাজা'র একটা কপি! তাহলে দেখে ফেলতে পার এইসব দারুণ ছবি। সেইসঙ্গে একটু একটু করে চিনে নিতে পারবে সেই বিশেষ মানুষটিকে- যাঁর নাম তপন সিংহ।

 

 

মহাশ্বেতা রায়
পাটুলি, কলকাতা

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।