২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৬ থেকে ১৯ তারিখের মধ্যে চারদিনের জন্য এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জাপান যাওয়ার সুযোগ ঘটে যায়। আমার যাত্রাপথ ছিল কলকাতা থেকে বিমানে ব্যাংকক হয়ে টোকিও। সেইমত ১৪ তারিখ ভারতীয় সময় রাত দুটোর সময় থাই এয়ার লাইন্সের বোয়িং বিমানে চেপে বসলাম। ঘড়ির হিসাবে ব্যাংকক যেতে ৪ ঘন্টা ১০ মিনিট আর সেখান থেকে টোকিও ৮ ঘন্টা ১০ মিনিট। আমরা সূর্যের গতির উল্টোদিকে যাচ্ছি বলে সময়টা বেশি লাগছে। ফেরার সময় ঘড়ির হিসাব মত এর থেকে অনেক কম সময় লাগবে।
দেখতে দেখতে ব্যাংকক এর সুবর্নভূমি বিমানবন্দরে পৌঁছে গেলাম। এই বিমানবন্দর এত বড় যে এর মধ্যে আমাদের কলকাতার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্তত গোটা বিশেক ঢুকে যাবে। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত এত দূর যে অন্তত গোটা দশেক ফ্ল্যাট এস্কেলেটর আছে।
লম্বা ফ্ল্যাট এস্কেলেটর চলে গেছে কতদূর!
ব্যাংকক থেকে টোকিও পৌঁছে গেলাম সময়ের একটু আগেই। প্রথমেই যা চোখে পড়বে তা হল ঝকঝকে পরিচ্ছন্নতা। অসম্ভব রকমের ভীড়, কিন্তু সব কাজকর্মই হচ্ছে সুশৃংখলভাবে। হোটেলে পৌঁছে স্নান সেরে বেরোলাম রাস্তায়। টোকিওর সব রাস্তা বাধঁনো। কোথাও মাটি দেখা যায় না। চেনা বলতে একমাত্র ম্যাকডোনাল্ড এর দোকান। সেখানেই রাতের খাওয়া সেরে এলাম।
টোকিওর ফুটপাথ -মাটি দেখা যায়না
১৬ তারিখ সারাদিন কাজের পর সন্ধ্যেবেলা অন্যান্য দেশের বন্ধুদের সাথে কাছাকাছি বাজারগু্লো ঘুরতে গেলাম। টোকিওর সব রাস্তাই এত ঝকঝকে যে হারিয়ে যাওয়ার ভয় আছে।
টোকিও শহর
রাতে হোটেলে ফেরার পর পাকিস্তানের বন্ধু সইদ আমাকে দিয়ে গেল ওর দেশ থেকে আনা প্যাকড চিকেন বিরিয়ানি। বাথরুমের গরম জলের কলে প্যাকেট গরম করে নিয়ে খেতে খেতে মনটা ভাল হয়ে গেল। কেমন যেন এক আত্মীয়তার অনুভব হল।
১৭ তারিখ সকালবেলা শিনাগাওয়া রেল স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করলাম ফুকুই নামের এক ছোট শহরের দিকে। চাপার সুযোগ হল সেই বহু শোনা বুলেট ট্রেনে। ভেবেছিলাম এমন জোরে যায় যে ট্রেনে বসেও তা বুঝতে পারব। কিন্তু ও হরি!!- ট্রেনগুলো এমন সুন্দর আর আধুনিক যে কোন ঝাঁকুনিই নেই। মনে হয় শিয়ালদহের লোকাল ট্রেনে যাচ্ছি। এই ট্রেনটার নাম হিকারি সুপার এক্সপ্রেস। এটা মাত্র পাঁচ ঘন্টায় ১০০০ মাইল যায়।সবচেয়ে বেশি স্পিড হচ্ছে ঘন্টায় ২৮৫ কিমি।
বুলেট ট্রেন
১৮ তারিখ সারাদিন কেটে গেল কাজেকর্মে। বিকেল বেলা ফেরার ট্রেন ধরলাম। আগের বারের মতই একদম ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে ট্রেন ছাড়ল। এই ট্রেনেও আগের বারের মত মাত্র একজন সুসজ্জিত হকার তরুনী। কোল্ড কফি, জুস, কেক, এইসব পন্য তার। ট্রেনের কাঁচ তুলে হাওয়া খাওয়ার কোন গল্প নেই, চা গরম বলে কোন হকার নেই, নেই ঝালমুড়ি বা বাদামওয়ালা।
দেখতে দেখতে ব্যাংকক এর সুবর্নভূমি বিমানবন্দরে পৌঁছে গেলাম। এই বিমানবন্দর এত বড় যে এর মধ্যে আমাদের কলকাতার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্তত গোটা বিশেক ঢুকে যাবে। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত এত দূর যে অন্তত গোটা দশেক ফ্ল্যাট এস্কেলেটর আছে।
লম্বা ফ্ল্যাট এস্কেলেটর চলে গেছে কতদূর!
ব্যাংকক থেকে টোকিও পৌঁছে গেলাম সময়ের একটু আগেই। প্রথমেই যা চোখে পড়বে তা হল ঝকঝকে পরিচ্ছন্নতা। অসম্ভব রকমের ভীড়, কিন্তু সব কাজকর্মই হচ্ছে সুশৃংখলভাবে। হোটেলে পৌঁছে স্নান সেরে বেরোলাম রাস্তায়। টোকিওর সব রাস্তা বাধঁনো। কোথাও মাটি দেখা যায় না। চেনা বলতে একমাত্র ম্যাকডোনাল্ড এর দোকান। সেখানেই রাতের খাওয়া সেরে এলাম।
টোকিওর ফুটপাথ -মাটি দেখা যায়না
১৬ তারিখ সারাদিন কাজের পর সন্ধ্যেবেলা অন্যান্য দেশের বন্ধুদের সাথে কাছাকাছি বাজারগু্লো ঘুরতে গেলাম। টোকিওর সব রাস্তাই এত ঝকঝকে যে হারিয়ে যাওয়ার ভয় আছে।
টোকিও শহর
রাতে হোটেলে ফেরার পর পাকিস্তানের বন্ধু সইদ আমাকে দিয়ে গেল ওর দেশ থেকে আনা প্যাকড চিকেন বিরিয়ানি। বাথরুমের গরম জলের কলে প্যাকেট গরম করে নিয়ে খেতে খেতে মনটা ভাল হয়ে গেল। কেমন যেন এক আত্মীয়তার অনুভব হল।
১৭ তারিখ সকালবেলা শিনাগাওয়া রেল স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করলাম ফুকুই নামের এক ছোট শহরের দিকে। চাপার সুযোগ হল সেই বহু শোনা বুলেট ট্রেনে। ভেবেছিলাম এমন জোরে যায় যে ট্রেনে বসেও তা বুঝতে পারব। কিন্তু ও হরি!!- ট্রেনগুলো এমন সুন্দর আর আধুনিক যে কোন ঝাঁকুনিই নেই। মনে হয় শিয়ালদহের লোকাল ট্রেনে যাচ্ছি। এই ট্রেনটার নাম হিকারি সুপার এক্সপ্রেস। এটা মাত্র পাঁচ ঘন্টায় ১০০০ মাইল যায়।সবচেয়ে বেশি স্পিড হচ্ছে ঘন্টায় ২৮৫ কিমি।
বুলেট ট্রেন
১৮ তারিখ সারাদিন কেটে গেল কাজেকর্মে। বিকেল বেলা ফেরার ট্রেন ধরলাম। আগের বারের মতই একদম ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে ট্রেন ছাড়ল। এই ট্রেনেও আগের বারের মত মাত্র একজন সুসজ্জিত হকার তরুনী। কোল্ড কফি, জুস, কেক, এইসব পন্য তার। ট্রেনের কাঁচ তুলে হাওয়া খাওয়ার কোন গল্প নেই, চা গরম বলে কোন হকার নেই, নেই ঝালমুড়ি বা বাদামওয়ালা।
ট্রেনের ভেতর- চা, ঝালমুড়ি, বাদামভাজা...কিছুই নেই!
শিনাগাওয়া স্টেশনে নেমে এক পাশে গিয়ে দর্শকের ভূমিকা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এতবড় স্টেশন , এত লোক ছুটছে, অথচ কোন হুড়োহুড়ি নেই।
স্টেশনে খুব ভিড়, কিন্তু হুড়োহুড়ি, ধাক্কা-ধাক্কি নেই
কাজকর্ম শেষ হয়ে গেল। ২১ তারিখ ফিরে এলাম কলকাতায়। ঠিক নয়দিন বাদে গেলাম টাকি, নিছক বেড়ানোর জন্য। এবার সঙ্গে আমার স্ত্রী। ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে শিয়ালদহ স্টেশনে এসে হাসনাবাদ লোকাল ধরে দুই ঘন্টা পরে টাকি। টাকি হাসনাবাদের ঠিক আগের স্টেশন। মাঝে যে সব স্টেশনগুলো পড়ল, তাদের নামগুলো অদ্ভূত - ভ্যাবলা হল্ট, লেবুতলা হল্ট, কড়েয়া কদম্বগাছি, ভাসিলা, মালতিপুর - নামগুলোর মধ্যেই কোথায় যেন হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানা!! ট্রেনে যেতে যেতে নানারকম টুকটাক খাওয়ার মধ্যে একটা বিশেষ খাবার হল 'মাখা সন্দেশ'।
টাকির পাশে ইছামতী নদী। ইছামতীর পাশের রাস্তাটি সরু, কিন্তু পিচের রাস্তা, এবং পরিষ্কার ও বটে! এই রাস্তাটির কোন নাম আছে কিনা কেউ বলতে পারল না।
টাকিতে নদীর ধার বরাবর রাস্তা
নদীর ধার বরাবর বেশ কটি খাবারের দোকান আছে। বাঁশের বেঞ্চে বসে নদীর দিকে মুখ করে বসলে মনে হবে সারা পৃথিবীটা আমার। হটাত করে মনে পড়ে গেল টোকিওর কথা। এই মুক্ত চেহারাটা ওখানে ছিল না।
ইছামতী নদী
দুপুরবেলা ভ্যান রিকশা চেপে বেড়াতে গেলাম। প্রথমেই গেলাম বাংলাদেশ সীমান্তের সব থেকে কাছে যে জায়গাটা, সেই গোলপাতার জঙ্গলে। আরো দেখলাম রামকৃষ্ণ মিশন আর স্থানীয় বাজারহাট।
পরদিন দুপুরে বেড়তে গেলাম হাসনাবাদ। উল্টোদিকে পার-হাসনাবাদ যাবার জন্য দুই-তিন মিনিট অন্তর লঞ্চ ছাড়ছে। ভাড়া মাত্র পঞ্চাশ পয়সা!! একটু ভালোভাবে যেতে গেলে এক টাকা বেশি দিতে হবে। বিজয়া দশমীর দিন টাকির যে বিখ্যাত ভাসান হয় তার মূল অনুষ্ঠান হয় এখানেই।
হাসনাবাদ - উল্টোদিকে পার হাসনাবাদ
কিন্তু বেশি কাছে যাওয়া বারন। তাই নদীর মাঝ বরাবরই থাকতে হল। দেখতে গেলাম মাছরাঙা দ্বীপ। এই দ্বীপে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির ভেড়া চাষ করা হয়।
দূরে ওই দেখা যায় বাংলাদেশ
দুপুরবেলা আমাদের ফেরার পালা। ভ্যান চেপে স্টেশনের দিকে যেতে যেতে ভাবলাম এই যে এভাবে ভ্যান এ চেপে যাওয়া, খোলা মাঠ, নদীর সঙ্গ, এরকম কি টোকিওতে পাওয়া যায়!! হয়ত জাপানেও এরকম জায়গা আছে, কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে গিয়ে সেই জীবনের স্বাদ পাওয়া যায়না। এমনও হতে পারে, এইরকম আড়ম্বরহীন ভাবে হয়ত খুব উন্নত দেশগুলোতে ঘোরা যায়না। আহা, এমনটা যদি হত যে আমার শহরটার পরিকাঠামো আর ব্যবস্থা টোকিওর মত ঝকঝকে সুন্দর হত, আবার টাকির মত প্রকৃতির কাছাকাছি চলে যাওয়া যেত, তবে কেমন হত ?
লেখা ও ছবি
অঞ্জন দাস মজুমদার
বালি, হাওড়া
বালি, হাওড়া