তুমি কি অপুকে চেনো? তার দিদি দুর্গাকে? তাদের গ্রাম নিশ্চিন্দিপুরকে?
আমিও ছোটবেলায় চিনতাম না। একদিন দেখলাম আমাদের বাড়ির সবাই সন্ধ্যেবেলায় খুব সেজে গুজে কোথাও যাবার তোড়জোড় করছে।
মাকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাচ্ছ মা?
মা বললো পাশের মাঠে।
কিহবে সেখানে?
'পথের পাঁচালী'সিনেমা দেখানো হবে।
আমিও সঙ্গ নিলাম সবার। দেখলাম অপুকে...দুর্গাকে...তাদের পিসি ইন্দিরঠাকরুনকে...মা সর্বজয়াকে
...বাবা হরিহরকে।
তার বেশ কিছুদিন পরে পড়েছিলাম 'আম আঁটির ভেপু'। পরিচয় হয়েছিলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। যিনি এই অপু, দুর্গার সৃষ্টিকর্তা।
আমিও ছোটবেলায় চিনতাম না। একদিন দেখলাম আমাদের বাড়ির সবাই সন্ধ্যেবেলায় খুব সেজে গুজে কোথাও যাবার তোড়জোড় করছে।
মাকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাচ্ছ মা?
মা বললো পাশের মাঠে।
কিহবে সেখানে?
'পথের পাঁচালী'সিনেমা দেখানো হবে।
আমিও সঙ্গ নিলাম সবার। দেখলাম অপুকে...দুর্গাকে...তাদের পিসি ইন্দিরঠাকরুনকে...মা সর্বজয়াকে
...বাবা হরিহরকে।
তার বেশ কিছুদিন পরে পড়েছিলাম 'আম আঁটির ভেপু'। পরিচয় হয়েছিলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। যিনি এই অপু, দুর্গার সৃষ্টিকর্তা।
গতবারের ইচ্ছামতীর শীত সংখ্যায় পড়েছিলে বিভূতিভূষণের ডায়রীর কিছু অংশ। এবার একটু জেনে নিই তার সম্বন্ধে।
১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কাঁচড়াপাড়ার কাছে মুরাতিপুরে গ্রামে মামার বাড়িতে বিভূতিভূষণের জন্ম হয়। তাঁর নিজের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বারাকপুরে। বাবা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সংস্কৃতের পন্ডিত। পান্ডিত্য এবং কথকথার জন্য তিনি শাস্ত্রী উপাধি পেয়েছিলেন। মা মৃণালিনী দেবী। বাবার কাছে পড়াশুনোর হাতে খড়ি। তারপর নিজের গ্রাম আর অন্য কয়েকটা গ্রামের পাঠশালায় পড়াশুনো করার পর ভর্তি হন বনগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ে। তিনি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়েন তখন তাঁর বাবা মারা যান। এরপর অনেক কষ্ট করে বিভূতিভূষণ পড়াশুনো করেছেন। থেমে থাকেননি। সেই গ্রামের ছেলেটা একদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি টপকেছিলো। আশীর্বাদ পেয়েছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের। আরো কত বিখ্যাত...আরো কত সাধারণ মানুষের। তিনি তাঁর জীবন দিয়ে দেখিয়েছিলেন মনের ইচ্ছে থাকলে আর পরিশ্রম করতে পারলে একদিন স্বপ্ন সার্থক
হয়।
'প্রবাসী' সেই সময়কার বিখ্যাত এক সাহিত্য পত্রিকা। এই পত্রিকার মাঘ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় বিভূতিভূষণের প্রথম গল্প 'উপেক্ষিতা'। সেতো ১৯২১ সালের কথা। এর আটবছর পর প্রকাশিত হবে 'পথের পাঁচালী'। আর বিভূতিভূষণ জয় করে নেবেন অসংখ্য মানুষের মন। এরপর একের পর এক লিখবেন 'অপরাজিত', 'দৃষ্টিপ্রদীপ', 'আরণ্যক', 'আদর্শ হিন্দু হোটেল' ইত্যাদি উপন্যাস। ছো্টদের জন্য লিখবেন 'চাঁদের পাহাড়', 'আইভানহো', 'হীরা মাণিক জ্বলে' আরো অনেক কিছু। তাঁর লেখায় ফিরে ফিরে আসে আমাদের গ্রামের কথা... ভালোলাগা নদীটির কথা... দেশের কথা... আর এক অন্তহীন পথ চলার কথা...।
বিভূতিভূষণ আমাদের ছেড়ে চলে যান ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর।
এর ঠিক পাঁচ বছর পরেই তরুণ গ্রাফিক আর্টিস্ট সত্যজিত রায় তাঁর প্রথম ছবির জন্য 'পথের পাঁচালী'কে বাছেন। তারপরের গল্প এক অন্য ইতিহাস।
কল্লোল লাহিড়ী
উত্তরপাড়া, হুগলী
উত্তরপাড়া, হুগলী
তথ্য সংকলন-
মৌমিতা সরকার
বালি, হাওড়া
মৌমিতা সরকার
বালি, হাওড়া