কানামাছি ভোঁ ভোঁ, এলাটিং বেলাটিং, বুড়ি চোর - এমন সব শব্দ গুলো কি তোমার চেনা মনে হচ্ছে? হয়তো তোমার কাছে এগুলো সব নতুন শব্দ। আসলে এগুলো এক-একটা খেলার নাম। কি ফিক-ফিক করে হাসছো নাকি? তাহলে শোনো, আমাদের ছোটবেলায় এমনই সব খেলার মধ্যে দিয়ে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামতো। সন্ধ্যের শাঁখের আওয়াজের আগেই অনিচ্ছায় খেলা ছেড়ে...বন্ধুদের ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসতে হতো। আমাদের ছোটবেলার সেই খেলাগুলো কেমন ভাবে খেলা হত সে কথা বলি।
কানামাছি -- উবু দশ,কুড়ি-এমন ভাবে গুণে যতজন মিলে খেলা হত-একশো গুণে তারা সবাই উঠে গেলে শেষের যে জন পড়ে থাকতো তাকেই হতে হতো কানামাছি। তার চোখ বেঁধে, চোখের সামনে আঙুল নিয়ে গুনতে বলে, সে দেখতে পাচ্ছে কিনা...তার পরীক্ষা নিয়ে খেলা শুরু হত। "কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ" বলে অন্যেরা তার চারিদিকে ছোটাছুটি করতো। সেই শব্দ আন্দাজ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় সে যাকে ছুঁতে পারতো, তাকেই আবার কানামাছি হতে হতো।
চোর চোর -- একই রকম ভাবে শুরু করে মানে ঠিক আগেরটার মতোই উবু দশ,কুড়ি করে সকলের শেষে যে পড়ে থাকতো সেই চোর। খেলা একটা নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো। দলের মধ্যে যে সবচেয়ে ছোট অথবা দৌড় ঝাঁপ করতে পারে না-সে হত বুড়ি। যে চোর হত তাকে অন্য খেলুড়েদের দৌড়ে ছুঁতে হতো । কিন্তু ছোঁওয়ার আগে সে যদি বুড়ি ছুঁয়ে দিতে পারতো-তবে সে "মোড়"হবে না। সে বেঁচে যাবে। অপেক্ষাকৃত বড়দের জন্য এই খেলাটির একটা রকমফের ছিলো-"ডপ্পা ডপ"। এই খেলাটারএলাকা অনেক বড় হতো। "ডপ্পা ডপ"শব্দে চোরকে জানান দেওয়া হত। চোর সেই শব্দ সন্ধান করে তাকে খুঁজে পেলে তাকেই আবার চোর দিতে হত।
এই দুটি খেলা ছেলে মেয়ে উভয়েই খলতে পারতো। কিন্তু এলাটিং বেলাটিং খেলাটি মেয়েদের মধ্যেই খেলা হত। দুদলের মধ্যে এই খেলায় একদল প্রথমে-"এলাটিং বেলাটিং শৈল...কিসের খবর আইলো...রাজা একটি বালিকা চাইলো..." বলে যার নাম বলা হত তাকেই অন্য দলে সামিল হয়ে "নিয়ে যাও নিয়ে যাও বালিকা..." তাদের দলেরই কাজে লাগতো। এমন ভাবেই খেলা চলতো যতক্ষণ না কোনো একটি দলের একজন অবশিষ্ট থাকতো।
এক্কা-দোক্কা -- ছয় অথবা দশ ঘরের আয়তকার ক্ষেত্রের মধ্যে দাগ দিয়ে ঘর তৈরী করে এই খেলাটি বাড়ির সামনের মাঠে অথবা উঠোনে খেলা হতো। একপায়ে প্রতিটি ঘর ঘুরে ঘুরে "কিত কিত"শব্দে এসে উলটো মুখে খোলামকুচির ঘুঁটি ছুঁড়ে কোন একটি ঘর নিজস্ব ভাবে কেনা হতো। তাতে একপায়ে সব কটা ঘর পেরবার খাটুনি বাঁচতো। একদমে কিত কিত শব্দের উচ্চারণের ফাঁক পাওয়া যেত "তা" নামক এই বিশ্রামে, নিজস্ব ঘরে। যে ঘর একবার কেনা হয়ে যেত প্রতিপক্ষ সে ঘরের কোনো অধিকার পেত না। তাকে সেই ঘর ডিঙিয়ে পেরোতে হতো। হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি খোলামকুচি যদি ঘরের দাগে পড়তো সে "মোড়"হত। অন্যেরা দান পেত।
বৌ-বসন্ত -- একদলের একজনকে বৌ বসিয়ে অপর দল তার চারপাশে ঘুরবে। অন্যদলের খেলুড়েদের একপায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ছুঁয়ে প্রতিপক্ষকে "মোড়" করতে হবে। অবশ্য বৌ ছুঁয়ে দিলে সে মোড় হওয়া থেকে বেঁচে যাবে। সকলকে মোড় করে তার দলের বৌ ফেরত নিয়ে অপর দলের বৌকে বসানো যাবে। এমন সব অনেক খেলাই তখন গ্রামে শহরতলীতে ছোটরা খেলতো। গ্রামে এসব খেলার চল এখোনো কিছুটা থাকলেও শহরতলীতে এসব খেলা এখন আর কেউ খেলে না।
আশা করি আগামী সংখ্যায় আরো অনেক খেলা নিয়ে তাদের হরেক গল্প নিয়ে তোমার কাছে হাজির হতে পারবো। আজ এই পর্যন্ত থাক। ভালো থেকো।
প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায়
বালি, হাওড়া