আঁকিবুকি
অনুভব শেঠ, ৭ বছর, বেইজিং, চিন
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
গাবলু আসলে হেনরি
তোমরা কি গাবলুকে চেনো? সেই ছোট্ট নেড়া মাথা ছেলেটাকে? যে দুহাত পকেটে পুরে শিষ দিতে দিতে নানারকম কান্ড বাধিয়ে ফেলতে পারে! ক্যান্ডি আর আইসক্রিম খেতে সে বড্ড ভালোবাসে। যারা এখন বেশ বড়, তারা ছোটবেলায় গাবলুর দেখা পেতে "আনন্দমেলা*"র পাতায়, মনে পড়ে কি? কিন্ত গাবলু তো আসলে হেনরি। বাংলা পত্রিকায় কি আর হেনরি নামটা ভাল লাগে? তাই হেনরি কে করে দেওয়া হল গাবলু। এই ধরনের নামের সাথেই বাঙ্গালিদের বেশি পরিচয়। শুধু নামটাই পরিবর্তন করা হয়েছে মাত্র আর সবকিছুই একই আছে। তাই গাবলুর সম্বন্ধে জানতে চাইলে আসলে আমাদের হেনরি সম্বন্ধেই খোঁজ খবর করতে হবে।
কার্ল অ্যান্ডারসন নামে এক আমেরিকান ভদ্রলোক হটাতই এঁকে ফেলেন হেনরিকে। অ্যান্ডারসন আসলে অনেক দিন থেকেই কার্টুন আঁকার পেশায় যুক্ত। উনিশ শতকে যখন দৈনিক খবরের কাগজ নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে, সেই সময় থেকেই তিনি একজন কার্টুনিস্ট। ১৯২৯ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। নিউ ইয়র্ক শহরে অ্যান্ডারসনেরও রোজগার ভাল হচ্ছিল না। শেষমেষ ১৯৩২ সালে তিনি ফিরে এলেন নিজের বাড়িতে। তাঁর মনে পড়ল- আরে, আগে তো আমি ছুতোর ছিলাম!! কাঠের কাজ করতাম!! তাই সেই ৬৪ বছর বয়সে তিনি ঠিক করলেন কাঠের ক্যাবিনেট বানিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবেন। তাহলে হেনরি কোথা থেকে এল?
আসলে কার্টুন ছিল অ্যান্ডারসনের ভালোলাগা আর ভালবাসা। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি একটি সান্ধ্য কার্টুন স্কুলে পড়াতে শুরু করলেন। একদিন পড়াতে পড়াতে তিনি এঁকে ফেললেন এক নেড়া মাথা ভুঁড়িওয়ালা ছেলের ছবি। তাঁর ছাত্রদেরও পছন্দ হয়ে যায় ছেলেটিকে। সাহস করে অ্যান্ডারসন আঁকাগুলি পাঠিয়ে দেন 'স্যাটারডে ইভনিং পোস্ট 'নামে একটি পত্রিকার দপ্তরে। তাদেরও অ্যান্ডারসনের আঁকা ছোট্ট ছেলেটিকে খুব পছন্দ হয়। ব্যাস, ১৯৩২ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু হয়ে যায় 'হেনরি' নামে একটি নতুন কমিক স্ট্রিপ। অ্যান্ডারসন ঠিক করে নিয়েছিলান যে তাঁর কমিক স্ট্রিপের চরিত্ররা খুব বেশি কথা বলবে না, গল্প বলা হবে অল্প শব্দ, কিছু চিহ্ন এবং প্রধানতঃ ছবির মাধ্যমে। এই ধরনের কমিকস কে বলা হয় প্যান্টোমাইম কমিকস (Pantomime comics)। ভাষা জানা না থাকলেও এই ধরনের কমিকস অনায়াসেই বুঝে ফেলা যায়।
দেশে বিদেশে হেনরি খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পৃথিবীর সবথেকে বড় কমিকস প্রকাশনা সংস্থা 'কিং ফিচারস সিন্ডিকেট' এর মালিকের নজরে পরে এই কমিক স্ট্রিপ। তাঁরও হেনরি কে পছন্দ হয়ে যায় আর ছোট্ট হেনরি 'কিং ফিচারস' এর সদস্য হয়ে যায়। সেখানে অ্যান্ডারসন তাঁর দুজন সহকারী ডন ট্র্যাকটে আর জন লিনে কে নিয়ে কাজ শুরু করেন। এক সময়ে বয়সের ভারে অ্যান্ডারসনকে আঁকাআঁকি ছেড়ে দিতে হয়। তাঁর সহকারীরা এগিয়ে নিয়ে যান হেনরির কার্যকলাপ। তাঁরা প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন চরিত্র একেছেন। আরো পরে যাঁরা এই কমিক স্ট্রিপের দায়িত্ব পান, তাঁরা হেনরিকে দিয়ে কথা বলাতেও শুরু করেন।
হেনরি আসলে এক জেদি নির্বিকার ছেলে। সে তার নিজের সমস্যা গুলোর সমাধান করে সব অভাবনীয় উপায়ে। মাঝে মাঝে আবার হেনরি খুব বোকা। একদিন হেনরি রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দেওয়ালে নিজেরই ছায়া দেখে অবাক হয়ে যায়। সে মনে করে কেউ তার পিছু নিয়েছে!! তড়িঘড়ি নিজের ছায়ার সাথে মারামারি শুরু করে সে, আর নিজের হাত ভেঙ্গে ফেলে!! আবার তার মাথায় আসে সব অদ্ভূত বুদ্ধি। হেনরি তার কাকার জন্মদিনে কেক বানাল...কিন্তু বাড়িতে একটাও মোমবাতি নেই। কি করবে সে? - আর কি? কেকের মধ্যে বসিয়ে দিল একটা বৈদ্যুতিক বাতি!!
তোমরাও কি হেনরির এইসব কান্ডকারখানার গল্প গুলো পড়েছ? তোমরা কি হেনরিকে অন্য কোন নামে চেন? আমাকে জানিও তো !
অ্যান্ডারসন ১৯৪২ সালে লিখেছিলেন 'How to Draw Cartoons Successfully' ।এই বই আমাদের সবার জন্য রেখে গেছেন তিনি। হাতের কাছে বইটা পেলে পড়ে দেখ ...আর জানতে চেষ্টা কর হেনরির জনপ্রিয়তার রহস্যটা।
পূর্বাশা
নিউ আলিপুর, কলকাতা
*আনন্দমেলা হল বাংলা ছোটদের পত্রিকা। এটি এ বি পি প্রকাশনালয় কলকাতা থেকে প্রকাশ করে।
- বিস্তারিত
- লিখেছেন পূর্বাশা
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
কেটলির গুঞ্জন
মা যখন রান্না ঘরে রান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তখন সেখানে ঘুর ঘুর করতে ভালই লাগে। ঠিক কিনা বল?
এখন একবার রান্নাঘরে ঢুঁ মারলে কেমন হয়? দেখত মা কি করছেন? বোধ হয় কেটলি করে চায়ের জল চাপিয়েছেন গ্যাসের উপর। চল দেখি কেটলিটাকে নজর করি !
কিছু শুনতে পাচ্ছ? না, কিছুই শোনা যাচ্ছে না তো ! আরে ও কি? ছুই-ই-ই করে একটা শব্দ হল না? হ্যাঁ, ওই তো আর একটা হল। শব্দটা একটু পরেই মিলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু খেয়াল করে দেখ, একটা মিলিয়ে যেতে না যেতেই আর একটা শুরু হচ্ছে। আর ক্রমশঃ শব্দের সংখ্যা বাড়তে থাকছে।
এরকম ভাবে অসংখ্য শব্দ একসাথে তৈরি হচ্ছে আর মিলিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে একটা 'গুন গুন' আওয়াজ বের হচ্ছে কেটলি থেকে। এই আওয়াজটা ক্রমাগত বেড়ে বেশ জোরে শোঁ -শোঁ শব্দ তৈরি করল। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হল এই শব্দটা বেশিক্ষন না থেকেই অন্য রকম একটা 'ফর-র-র, ফর-র-র' আওয়াজ শুরু হল। এর তীব্রতা আগের থেকে অনেক কম।
এই আওয়াজটা শুনে মা বলবেন " জলটা ফুটে গেছে, চা ভেজাতে হবে..." - কি মনে হচ্ছে? জল ফোটার সঙ্গে আওয়াজের একটা সম্পর্ক আছে? ঠিক তাই। আর একটা বিষয় লক্ষ্য করার আছে। কেটলির মুখটা দেখ একবার। কি রকম গোল গোল করে সাদা ধোঁয়া বেরচ্ছে। ধোঁয়া বললাম বটে আসলে কিন্ত ওটা মোটেই ধোঁয়া নয়। ওটা কি তাহলে?
ওটা হল বাষ্প বা জলীয় বাষ্প। ঠিকমত ভাল করে দেখত সবটাই সাদা বাষ্প কিনা! না, কেটলির ঠিক মুখটার কাছে কোন সাদা ত দেখা যাচ্ছেই না, এমনকি কোন কিছু আছে বলেই মনে হচ্ছে না।
এসবের কারন জানতে ইচ্ছে করছে? তাহলে জেনেই নি ব্যপারটা , চল।
গ্যাসের আঁচে যখন জল গরম হচ্ছে তখন প্রথমেই গরম হচ্ছে কেটলির একেবারে তলাকার স্তরের জল। ফলে কেটলির তলায় তৈরি হচ্ছে জলীয় বাষ্পের ছোট ছোট বুদবুদ। ওগুলো বাতাসের বুদবুদ নয় কিন্তু ! বুদবুদ গুলো তো জলের থেকে হাল্কা, তাই ওরা জল ঠেলে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। এদিকে ওপরের জল তো বুদবুদ গুলোর তুলনায় ঠাণ্ডা । তাই তারা ঠাণ্ডা জলের মধ্যে এসে চুপসে ছোট হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত চুপসে একদম মিলিয়েই যায়! এই সময়েই "ছুঁইইই" করে শব্দ হয়।
জল যত বেশি গরম হবে তত বেশি বুদবুদ তৈরি হবে। আর তত বেশি করে শব্দ বেড়ে যাবে। এক সাথে অনেকগুলি শব্দ মিলে 'শন শন' আওয়াজ ছাড়ে।
সবটা জল যখন গরম হয়ে যায় তখন ঠাণ্ডা জল থাকেনা। বুদবুদ গুলিরও চুপসে যাওয়ার কোন কারন থাকেনা। সেগুলি সোজা ওপরে উঠে বড় হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত ফটাস করে ফেটে যায়। ফটাস বললাম বটে তবে তত জোরে শব্দ হয় না। "ফড়" করে শব্দ হয় মাত্র। অনেকগুলো বুদবুদ অনবরত ফাটতে থাকার ফলে "ফড়ফড়" শব্দ তৈরি হয়। ব্যপারটা বোঝা গেল?
"ফড়ফড়" তো বোঝা গেল, কিন্তু সাদা ধোঁয়ার কি হল?
তোমরা বিজ্ঞান বই তে পড়ে থাকবে যে বাতাসে জলীয় বাষ্প আছে। আমরা সেই বাষ্প কি দেখতে পাই? পাই না কারন বাষ্প দেখা যায় না। আমাদের কেটলিটাতে জল ফুটে বাষ্প তৈরি হয়ে নলের মুখ দিয়ে বাইরে আসছে। বাইরে এসেই ঠাণ্ডা বাতাসের ছোঁয়ায় জলকণায় পরিণত হচ্ছে। সেটাই সাদা ধোঁয়ার মত দেখাচ্ছে।
নলের বাইরে যে ছোট্ট জায়গায় সাদা ধোঁয়া দেখা যায় না সেই জায়গার বাষ্প কেটলির খুব কাছে থাকায় ঠাণ্ডা হতে পারে না, আর তাই আমরাও দেখতে পাই না।
কেটলির গান শুনতে শুনতে বাষ্পের কথাও জানা হল। তাহলে বাষ্পের কথা আর একটু শুনতে বিশেষ আপত্তি হবে না বোধ হয়। শীতের সকালে খুব শীত পড়লে কথা বলার সময় মুখ দিয়ে ভকভক করে সাদা ধোঁয়া বার হয় সেটা লক্ষ করেছ তো? সেটার কারণ ও কেটলির বাষ্পের মত।
আমাদের শরীর টা গরম এবং নিঃশ্বাস বায়ু নাক মুখ দিয়ে বেরোবার সময় প্রচুর গরম জলীয়বাষ্প বার হয়। সেটা বাইরে এসেই ঠাণ্ডায় জমে জলবিন্দুতে পালটে যায়। তাই সাদা দেখায়।
দেখ, গল্পে গল্পে কেমন কতগুলো বিজ্ঞানের কথা জেনে ফেললে!!
সন্তোষ কুমার রায়
রূপনারায়ণপুর, বর্ধমান
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সন্তোষ কুমার রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
আলোর জাদুকর
-২-
ধীরে ধীরে সিনেমার জন্য মানুষের কৌতূহল আর নিছক জিজ্ঞাসায় থেমে থাকল না। কেউ কেউ ভাবলেন নতুন এই প্রকাশ মাধ্যমের সীমানা আরো বাড়িয়ে দেওয়া যায় কিনা। আমরা যে সময়ের কথা বলছি, তখনো পর্যন্ত ছায়াছবি শুধু সাধাসিধা বাস্তব কে দেখাতে পারত, তাতেও খুব আলোছায়ার কারিকুরি ছিল না। তারা সরল ভাবে একটা ঘটনা একটাই যায়গা থেকে দেখত।
সিনেমাকে আরেকটু সম্ভাবনাময় করার জন্য এই সময় ফরাসী দেশের ইতিহাস আরেকজন মানুষকে পাঠিয়েছিল - তাঁর নাম জর্জ মেলিয়ে। তিনি পেশায় কিন্তু আসলে জাদুকর ছিলেন। মেলিয়ে ভেবেছিলেন যে তাঁর ম্যাজিক প্রদর্শনীতে এইসব চলমান ছবির মজাটাও জুড়ে নেবেন। শোনা যায়, তিনি লুমিয়ের ভাইদের কাছ থেকে একটা সিনেম্যাটোগ্রাফ যন্ত্র কিনতেও চেয়েছিলেন ১০,০০০ ফ্রাঙ্ক দামে। সে যুগের পক্ষে খুব খারাপ দাম নয়। কিন্তু দুই লুমিয়ের ভাই রাজি হলেন না। তখন মেলিয়ে নিজেই নিজের যন্ত্র বানিয়ে নিলেন।
তখনো শতাব্দী শেষ হতে আর চার বছর বাকি। ১৮৯৬ সালের শরতকালে সেদিন এক মজার ঘটনা ঘটল। প্যারিসের রাস্তায় মেলিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাসের ছবি তুলছেন, এমন সময় তাঁর যন্ত্রের শাটার আটকে গেল। ফলে কি হল বলতো? সমস্ত বাসের ছবিটাই কালো হয়ে গেল। ফিল্ম ডেভেলপ করার পর মনে হতে থাকল যে বাসটি হটাত করে হয়ে গেছে কালোকফিন বহনকারী গাড়ি!! মানুষ গুলি অদৃশ্য হয়ে আবার ফিরে আসছে!! অন্যরা হলে মুষড়ে পড়ত। মেলিয়ে কিন্তু এই ভুলটিকেই মনে করলেন আশীর্বাদ। কেননা তিনি বুঝতে পারলেন যে ক্যামেরা সত্যি কথা বলে এটা ণেহাতই কথার কথা। তাকে দিয়ে ইচ্ছা করলেই বানানো কথাকেও সত্যি বলে প্রমাণ করে দেওয়া যায়। এইভাবেই নিজের অজান্তেই মেলিয়ে আবিষ্কার করে ফেলেন 'স্টপ মোশন টেকনিক'। বলা যেতে পারে, মেলিয়ে হলেন সেই মানুষ যাঁর হাত ধরে সিনেমার ইতিহাসে প্রথম, শুধুমাত্র "ঘটনা" পেরিয়ে, "গল্প" উঁকি দিল।
একটা গল্পকে কিভাবে সাজাতে হবে শটের পরে শট দিয়ে, সেটাও খানিকটা বার করতে পেরেছিলেন মেলিয়ে। আমাদের ভাষায় যেমন দাঁড়ি, কমা, ড্যাশ- এইসব থাকে, ঠিক তেমনি, ছবি জোড়ার সময় 'ফেড- ইন', 'ফেড-আউট', 'ডিসল্ভ'- এইসব কলা কৌশল মেলিয়ে খুঁজে বার করেন।
মেলিয়ের নানা ছবির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে রয়েছে "ভয়েজ টু দি মুন" ( Le voyage dans la Lune)। ছবির মূল গল্প ছিল প্রখ্যাত কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা জুল ভার্নের একটি উপন্যাস। সেই প্রথম ৮২৫ ফিট লম্বা একটা ছবি তৈরি হল যাতে আস্ত একটা গল্প ঠাঁই পেল।
'ভয়েজ টু দি মুন' এর একটি দৃশ্য
আজকে এই ছবিটা দেখলে হয়ত তোমাদের হাসি পাবে। ধরে নেওয়া হয়েছে চাঁদের পিঠ একটা সমতল জায়গা যেখান থেকে কেউ তলায় পড়ে যেতে পারে। আবার চাঁদে অভিযানের সময় যে ধরনের রকেটযানে চড়া এবং নামা দেখানো হয়েছে তাও খুব বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু মেলিয়ে কে আমরা অনেক উঁচু আসনে বসাই কারন যত নড়বড়েই হোক না কেন তাঁর ছবি, তিনিই তো আমাদের প্রথম ফিল্ম এর মাধ্যমে গল্প বলা শিখিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম সিনেমায় নানারকম "স্পেশ্যাল এফেক্টস" ব্যাবহার করেন। আর এই জন্যই যাঁর ছবি আমরা এত ভালবাসি সেই চার্লি চ্যাপলিন জর্জ মেলিয়েকে মনে করতেন "আলোর জাদুকর" (the alchemist of light).
(ক্রমশঃ)
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
অধ্যাপক, চলচ্চিত্র বিদ্যা বিভাগ,
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
ছোটদের তপন সিংহ
তোমরা কি তপন সিংহের নাম শুনেছ? তিনি ছিলেন ভারতের একজন প্রথম সারির চলচ্চিত্র পরিচালক। সিনেমার জগতে তাঁর জীবন শুরু হয়েছিল শব্দযন্ত্রী রূপে। তাঁর অনেক ছবি দেশে বিদেশে নানা সম্মান লাভ করেছে। বাংলা, হিন্দীএবং ওড়িয়া ভাষায় প্রায় চল্লিশটির মত ছবি বানিয়েছেন তিনি। তার মধ্যে অনেকগুলি ছবি কিন্তু ছোটদের জন্য বানানো। গত ১৫ই জানুয়ারি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তপন সিংহ (০২/১০/১৯২৪ - ১৫/০১/২০০৯) ।
শ্রী তপন সিংহ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত গল্প নিয়ে ১৯৫৭ সালে তপন সিংহ তৈরি করেন 'কাবুলিওয়ালা'। এই ছবিটি তোমরা দেখেছ কি? যেখানে ছোট্ট মেয়ে মিনির সঙ্গে ভাব হয়ে গেল দূর আফগান দেশ থেকে সওদা করতে আসা রহমত কাবুলিওয়ালার। ছোট্ট মিনির 'মেঘের কোলে রোদ হেসেছে' গানের সাথে নাচ দেখলে রহমতের মত তুমিও তাকে ভালবেসে ফেলবেই! রহমত কাবুলিওয়ালার সাথে বড় হয়ে যাওয়ার পরেও মিনির ভাব ছিল কি? ছবিটা বরং নিজে দেখে জেনে নিলে কেমন হয়?
১৯৬৫ সালে তৈরি হয় 'অতিথি'। সেটাও কিন্তু কবিগুরুর লেখা গল্প। এ সেই আপনভোলা ছেলে তারাপদর গল্প - যাকে মায়ের স্নেহ বা বন্ধুর ভালবাসা, কোন কিছুই বেশিদিন এক জায়গায় বেঁধে রাখতে পারেনা। তাই বাঁশীর সুরে , সব ভুলে, দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ায় তারাপদ।
১৯৭৪ সালে তপন সিংহ তৈরি করেন ছোটদের জন্য হিন্দি ছবি 'সফেদ হাতি' । এই ছবিটির গল্প তিনি নিজে লিখেছিলেন। সে এক আশ্চর্য সুন্দর ছবি!! গ্রামের ছোট্ট ছেলে শিবুর সাথে বন্ধুত্ব হয় জঙ্গলের হাতিদের রাজা , ধপধপে সাদা হাতি ঐরাবতের।ঐরাবত শিবুকে সোনার মোহরের সন্ধান দেয়। শিবুর কুটিল কাকিমা সব কিছু জানতে পেরে যায়। তারপর একদিন এক মহারাজা জঙ্গলে শিকার করতে এলে, লোভী কাকা কাকিমা তাকে গিয়ে সাদা হাতির কথা বলে দেয়। মহারাজা তখন শিবুকে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। তাই দেখে, বন্ধু ঐরাবত নিজের থেকে রাজার হাতে ধরা দেয়। এত অবধি পড়ে কি মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল? - আগে শেষটুকু তো শোন! ঐরাবতকে ধরা দিতে দেখে, শিবুর বন্ধু ময়না পাখি জঙ্গলের অন্য সব পশুপাখিদের ডেকে আনে। জঙ্গলের যত হাতি, বাঘ, সাপ আর পাখিরা মিলে, রাজা আর তার সঙ্গীদের ভয় দেখিয়ে ঐরাবতকে জঙ্গলে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
ছোটদের জন্য তৈরি করা তাঁর অন্যান্য ছবিগুলি হল 'সবুজ দ্বীপের রাজা' (১৯৭৯), 'আজ কা রবিনহুড' (১৯৮৭/হিন্দী), 'আজব গাঁয়ের আজব কথা'(১৯৯৯) আর 'অনোখা মোতি (২০০০/হিন্দী)। তবে তাঁর আরো বেশ কয়েকটি ছবি আছে যেগুলি বড়দের সঙ্গে ছোটরাও দেখে মজা পাবে। যেমন, 'এক যে ছিল দেশ' (১৯৭৭)। এই ছবিতে এক তরুন বৈজ্ঞানিক এমন এক ওষুধ আবিষ্কার করেন যে তার এক ফোঁটা পেটে গেলেই সবাই সত্যি কথা বলতে শুরু করবে। তার ফলে হল কি? -যত কালোবাজারি আর মিথ্যাবাদী নেতারা সব সত্যি কথা বলে ফেলতে শুরু করল আর বেঁধে গেল নানা গন্ডগোল। ১৯৬৬ সালের 'গল্প হলেও সত্যি' এইরকম আরেকটা মজার ছবি। এক বড়সড় ঝগড়াটে পরিবারে, একদিন ভোরবেলা রাঁধুনি হয়ে এল এক অদ্ভুত মজার মানুষ। সে এমন এমন কান্ড ঘটাতে লাগল যে, সেই পরিবারের লোকজন সব ঝগড়া করতে ভুলে গেল!!
তপন সিংহের বেশিরভাগ ছবির মধ্যেই থাকত কোন না কোন সামাজিক ঘটনার দিকে আলোকপাত। তাঁর অনেক ছবির গল্পই কিন্তু জীবন থেকে নেওয়া সত্যি ঘটনার আদলে তৈরি। সেইসব ছবি তোমরা বড় হলে নিশ্চয়ই দেখবে। কিন্তু আপাততঃ বাবা-মাকে বলে দেখত- যদি যোগাড় করতে পার 'সফেদ হাতি' বা 'সবুজ দ্বীপের রাজা'র একটা কপি! তাহলে দেখে ফেলতে পার এইসব দারুণ ছবি। সেইসঙ্গে একটু একটু করে চিনে নিতে পারবে সেই বিশেষ মানুষটিকে- যাঁর নাম তপন সিংহ।
মহাশ্বেতা রায়
পাটুলি, কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন মহাশ্বেতা রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত