খেলাঘরখেলাঘর

হাসি-খুশি

আমাদের এবারের সংখ্যার মনের মানুষ দুই বোন - হাসি আর খুশি। একশো নম্বর গড়পাড় রোডের উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরির প্রথম দুই সন্তানের নাম ছিল রবি ঠাকুরের গল্প 'রাজর্ষি'র দুটি চরিত্রের নামে- 'হাসি' আর 'তাতা'। হাসি নাম হলে কি হবে, তাতার বড়দিদি হাসি কিন্তু মোটেও সবসময় হাসত না। বরং একটু গম্ভীরই থাকত বেশিরভাগ সময়। হাসির নামের সঙ্গে নাম মিলিয়েই রাখা হয়েছিল পরের বোনের নাম - 'খুশি' । ভাবছো এই নামে তো কোন লেখিকার নাম শোননি! আসলে এদেরকে চেন ঠিকই, তবে পোষাকি নামে। 'তাতা' হলেন হাসির রাজা সুকুমার রায়, 'হাসি' হলেন তাঁর দিদি সুখলতা রাও, আর 'খুশি' হলেন তাঁদের মেজ বোন পুণ্যলতা চক্রবর্তী।

নিজেদের পরিবারের ধারা বজায় রেখে, হাসি আর খুশি, মানে সুখলতা আর পুণ্যলতা দুজনেই কিন্তু সফল শিশু-সাহিত্যিক ছিলেন। সুখলতা শিশুদের জন্য অনেক অনেক গল্প, কবিতা, ছড়া রচনা করেন। 'সন্দেশ' পত্রিকায় তাঁর লেখা নিয়মিত বেরোত। লেখার সাথে আঁকতেন সাদা-কালো বা রঙিন ছবি। তাঁর লেখা একটা খুব জনপ্রিয় ছড়া শুনবে নাকি?

দিগনগরের বুড়ি এল,
তিনটি মেয়ে মুঠোয় ধরে;
একটি সেঁকে, একটি বাড়ে,
একটি ভাল রান্না করে,
মিহি সুতো কাটতে পারে,
ঘরের কাজও করতে পারে;
ও গিন্নীমা, কিনবে নাকি
একটি মেয়ে, আদর করে?


শুধুমাত্র ছড়া বা গল্প নয়, সুখলতা নিজে ছোটদের জন্য গানও লিখতেন আর তাদের সুরও করতেন।

ছোটদের জন্য একদম নতুন পদ্ধতিতে নিজে ছবি এঁকে দুটো পড়ার বই লিখেছিলেন তিনি। এই বই দুটির নাম হল 'নিজে পড়' আর 'নিজে শেখ'। 'নিজে পড়' বইটির জন্য তিনি ভারত সরকারের কাছ থেকে 'কাইজার-এ-হিন্দ' সম্মান লাভ করেন।

সুখলতার বিয়ে হয় কটকের ডঃ জয়ন্ত রাও এর সাথে। তিনি সারাজীবন কটকে নানারকম সমাজসেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন।

শুধু বাংলা ভাষাতেই নয়, ইংরাজি ভাষাতেও বেশ কিছু গল্প লিখেছিলেন তিনি। তাঁর লেখা 'গল্পের বই' আর 'আরো গল্প' - এই বই দুটি একত্র করে এখন 'গল্প আর গল্প' নামে প্রকাশ হচ্ছে। এই বইটির মধ্যে নানা জনপ্রিয় দেশি- বিদেশি রূপকথার সংকলন আছে।

সুখলতার বোন পুণ্যলতা খুব বেশি লেখেননি। তবে যেটুকু লিখেছিলেন, তা ছিল সরস, সুন্দর ছোটদের মনের মতন সব লেখা। সন্দেশ পত্রিকাতে তিনি  'গাছপালার কথা' নামে প্রবন্ধ লিখতেন যাতে গাছপালা নিয়ে নানারকম তথ্য থাকত। শেষ বয়সে তিনি লিখেছিলেন তাঁর ছোটবেলার স্মৃতিকথা নিয়ে 'ছেলেবেলার দিনগুলি'। আর লিখেছিলেন একদম ছোট্টদের জন্য গল্পের বই 'ছোট্ট ছোট্ট গল্প' । এই বইয়ের গল্প গুলি কিন্তু সত্যিই খুব ছোট্ট ছোট্ট আর খুব ভাল, সবে যারা পড়তে শিখেছে, তাদের জন্য। এই বইটার উপরি পাওনা হল তাঁর ভাইপো সত্যজিত রায়ের আঁকা ছবি।

এবার তাহলে খুব তাড়তাড়ি কিনে পড়ে ফেল সুখলতার 'গল্প আর গল্প'। আর তোমার যদি ছোট্ট ভাই বা বোন থাকে তাহলে তার জন্য কিনে ফেল পুণ্যলতার 'ছোট্ট ছোট্ট গল্প'। বই গুলো পড়া হয়ে গেলে আমাকে জানাতে ভুলো না কিন্তু...ইচ্ছে হলে দু-এক লাইন লিখেও ফেলো...আর পাঠিয়ে দিও ইচ্ছামতীকে।

 

 

মহাশ্বেতা রায়
পাটুলী

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।