তুমি কি গারফিল্ডকে চেনো? কিম্বা হিথক্লিফকে? ধরে নিলাম চেনো। হয়তো ভালোও বাসো মনে মনে। আমিও খুব ভালোবাসি ওদের। ওদের সব কিছু দৌরাত্মি ধরা পড়ে কমিকসে। আর সেইসব কান্ড আমরা সবাই খুব তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করি টক-মিষ্টি আচার খাবার মতো করে। তাই না? জানো তো গারফিল্ডের নাম গিনেস বুকেও পাওয়া যায়। পৃথিবীর হেন কাগজ নেই যেখানে নাকি গারফিল্ডকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুনে তো নিশ্চই গারফিল্ডের ল্যাজ মোটা হচ্ছে। তা একটু হোক...ওয়ার্ল্ডে পপুলার বলে কথা। খবরের কাগজে জনপ্রিয়তা লাভের পর গারফিল্ডকে আমরা দেখতে পেলাম টেলিভশনের পর্দায়। সেই সিরিজও তো খুব জনপ্রিয়তা পেলো। ভাবছো হিথক্লিফকে নিয়ে বলছি না কেনো? আরে বাপু দাঁড়াও...একটু সবু্র করো দেখি। বলবো তো তার কথাও। দেখছো না গারফিল্ড কেমন মিটমিট করে তাকিয়ে আছে। আগে তার আবদার মেটাই।
গারফিল্ড
গারফিল্ডের আগে জিম পোকামাকড়দের নিয়ে কমিক স্ট্রিপ আঁকতেন এবং লিখতেন। কিন্তু সেই কমিকস খুব একটা জনপ্রিয় হয়নি আর তেমন প্রশংসাও পায়নি। মনে মনে একটু কষ্ট পাচ্ছিলেন জিম। তখন একদিন এক সম্পাদকের সাথে দেখা হল জিমের তিনি তাঁকে বললেন, "জিম, তুমি আঁকতে ভালোই পারো...গল্পটাও ভালোই বলো...এবার তোমার এমন কিছু নিয়ে কাজ করা উচিত যা পাঠকেরা সহজেই বুঝতে পারবে।" সম্পাদকের পরামর্শ অনুযায়ী সৃষ্টি হলো গারফিল্ডের জীবন বৃত্তান্ত। সবচেয়ে মজার তথ্য হল এই যে গারফিল্ডের নাম থেকে শুরু করে তার চরিত্রের খুঁটিনাটি জিম তৈরী করলেন তাঁর দাদু এ গারফিল্ড ডেভিসের অনুকরণে। আসলে জিমের দাদু বড়ই বদমেজাজি আর অলস। শুরুর দিকে গল্প গুলোতে লেম্যান বলে একটি চরিত্রকে দেখতে পাওয়া যেতো। কারণ ডেভিস ভেবেছিলেন আরবাকলের তো একটা কথা বলার লোকের দরকার। কিন্তু পরে তিনি ভেবে দেখলেন এর জন্য গারফিল্ডই যথেষ্ট। আর সেই থেকে গল্পে একটা নতুন মাত্রা যোগ হয়। মানুষ আর বেড়ালের কথোপকথন আর তার সাথে নানান মজার কান্ড কারখানা। গল্প থেকে লেম্যান চলে গেলেও আরবাকলের বাড়িতে থেকে যায় তার পোষা কুকুর ওডি । গারফিল্ড আবার মাঝে মাঝে টিভি দেখে। শুধু তাই নয় জন যা খাবার আনে গারফিল্ড সব খেয়ে ফেলে। সে এমন লোভী আর পেটুক বেড়াল যাকে ইঁদুরেরা পর্যন্ত খাবারের লোভ দেখিয়ে সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়ায়। গারফিল্ডকে সারাদিন ঘুমোতে দেখে জন নিজের মোবাইল চার্জার দিয়ে তাকে চার্জ করতে চায়!! কিন্তু তাতেও কিছু হয় না পেটুক আলসেমিতে ভরা গারফিল্ডের। সে শুয়েই চোখ মিট মিট করে। দেখো এখানেও কেমন মিটমিট করে তাকিয়ে আছে। কুঁড়ের বাদশা নামে আজও গারফিল্ড জগত বিখ্যাত।
ওরে বাবা ওদিকে তো আবার হিথক্লিফ ডাকতে শুরু করেছে বেজায়। চলো তো দেখি কি বলছে? আচ্ছা বুঝেছি তার গোঁসা হয়েছে। বলছি বাবা...বলছি তোমার কথা। ইচ্ছামতীর বন্ধু একটু মন দিয়ে শোনো হিথক্লিফের কথা। কারণ না শুনলে যা পাড়া বেড়ানো স্বভাব তার, কোনদিন তোমার বাড়ি চলে যাবে।
হিথক্লিফ
হিথক্লিফকে গারফিল্ডের দাদা বলতে পারো। কারণ হিথক্লিফ গারফিল্ডের থেকে পাঁচ বছরের বড়। আসল কথাটা হলো জর্জ গেটলি হিথক্লিফের গল্প শুরু করেন ১৯৭৩ সালে। জর্জ গেটলি ছোটবেলা থেকেই দেখতেন তাঁর চারপাশে ছড়িয়ে আছে নানান কমিকসের বই আর চরিত্রেরা। আর থাকবে নাই বা কেনো তাঁর বাবা আর দাদা তো এই সব নিয়েই চর্চা করতেন। জর্জের দাদা জন একজন নাম করা কার্টুনিস্ট। দাদা এবং বাবার দেখাদেখি জর্জেরও ঝোঁক গেলো আঁকাআঁকির দিকে। ক্যুইনস ভিলেজ ছেড়ে চলে এলেন নিউইয়র্ক শহরে। ভর্তি হলেন বিখ্যাত কলেজ প্র্যাট ইন্সটিটিউটে। পাশ করার পর এক বিজ্ঞাপনের অফিসে কাজ করতে শুরু করেন। কিন্তু কিছুতেই জর্জের মন বসছিলো না। ইচ্ছে হতো দাদার মতো কাজ করতে। ১৯৫৭ সালে জর্জের প্রথম কমিকস বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু তুমি মনে মনে হয়তো ভাবছো এই এতো সবের মধ্যে বেড়াল কই? আরে আছে, হিথক্লিফকে দেখতে প্রায় গারফিল্ডের মতো। কিন্তু দেখতে এক হলে হবে কি দুজনের মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আগেই বলেছি গারফিল্ডের মতো অলস বেড়াল আর দুটি নেই। আর হিথক্লিফ? সে হলো পাড়া বেড়ানো...মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি ভরা এক বেড়াল। পাড়ার কুকুররাও তার ভয়ে তটস্থ। মাছওয়ালা কিম্বা দুধওয়ালার দুরবস্থার কথা না বলাই ভালো।
হিথক্লিফ বাড়ির পোষা বেড়াল। সেই বাড়ির দিদিমা তাকে খুব ভালোবাসে। আর এই হিথক্লিফকে নিয়ে টেলিভিশন সিরিজ শুরু হয় ১৯৮০ সালে। মনে রাখার মতো কথা হলো যে কমিক স্ট্রিপে হিথক্লিফ কোনো কথা বলতো না। টেলিভিশনের পর্দায় সে কিন্তু কথা বললো। বিখ্যাত কমেডিয়ান অভিনেতা মেল ব্লাঁ [Mel Blanc] হিথক্লিফের কন্ঠে অভিনয় করতেন। ১৯৮৪ সালে আবার শুরু হয় হিথক্লিফের টেলিভিশন সিরিজ। এই সময় থেকে হিথক্লিফের গল্পের সাথে জুড়ে দেওয়া হয় ক্যাটিল্যাক ক্যাটস [Catillac Cats] নামের এক মজাদার সিরিজ। এই সিরিজে দেখতে পাওয়া যায় নানা রকমের বেড়ালদের যারা সাধারণত পাড়া চষে বেড়ায়। এরা সবাই থাকে হিথক্লিফের পাড়াতে। রিফ-র্যাফ হলো দলের নেতা বেড়াল। ক্লিও এক সুন্দরী বেড়াল আর রিফ-র্যাফএর বান্ধবী।
এতো গেলো কমিক স্ট্রিপের বেড়ালদের গল্প। তোমার বাড়িতে বেড়াল আছে নাকি? কিম্বা তোমার বন্ধুর বাড়িতে? নিশ্চই তাদের অনেক মজার গল্প আছে। সব লিখে পাঠাও ইচ্ছামতীকে...আর ও হ্যাঁ বলতে তো ভুলেই যাচ্ছি ছবি পাঠিও তার সঙ্গে। মনে থাকবে তো? আমার এক বন্ধুর বাড়িতে পনেরোটা বেড়াল আর দু-তিনটে কুকুর আছে। বুঝতেই পারছো কেমন সব রকমারি গল্প। সে সব না হয় অন্য কোনোদিন বলবো। ভালো থেকো তুমি।
লেখা ও ছবি
পূর্বাশা
নিউ আলিপুর, কলকাতা