খেলাঘরখেলাঘর

রবি ঠাকূর


রবি ঠাকুর, মানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চেন তো? তুমি তো ঘাড় নেড়ে বলবে -হ্যাঁ। কিন্তু সত্যি কি পুরোপুরি চেনো? তাঁর গান, কবিতা, নাটক, নোবেল প্রাইজ, জোড়াসাঁকো, শান্তিনিকেতন এইসব গল্প তো সকলের জানা। আমি বরং তোমায় কিছু বৈঠকী গল্প শোনাই, যা হয়ত তোমার অজানা।

একদিন রবীন্দ্রনাথের বাড়িতে একদল ছেলে এসেছে পুজোর চাঁদা নিতে। তিনি তাদের বসতে বললেন। তারপর বাড়ির কাজের লোককে ডেকে বললেন "যা তো এনাদের জন্য চা নিয়ে আয়"। ওনাদের দলের একজন  বললেন-"না, না, আমরা চা খাই না"। সঙ্গে সঙ্গে কবি বললেন, "ওঃ এঁরা নাচার দলে"; ওনারা ভারি অপ্রস্তুত। ওনাদের আরেকজন বললেন,"We mean, we don't take tea." কবি সঙ্গে সঙ্গে আবার বললেন "ওরে ভুল বলেছি ওনারা [no tea] নটীর দলে..."


আরেকদিন কবির বৈঠকখানায় একঘর লোক বসে আছে। কবি হটাৎ ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন " এ ঘরে একটা বাঁদর আছে।" সক্কলে একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে শুরু করল। কবি কাকে বাঁদর বলছেন রে বাবা! দম বন্ধ করা কয়েক মূহুর্ত! হটাৎ কবি হেসে উঠলেন হা হা করে। বললেন, "ওরে বাবা, এ ঘরে যেমন একটা ডান দোর [দরজা] আছে, তেমন এই দিকে একটা বাঁ দোর ও আছে!"


রবি ঠাকুর নীল রঙের বড় ভক্ত ছিলেন। বলতেন "সব রঙের মধ্যে নীল রংটাই আমার মনকে বেশি করে নাড়া দেয়। কারণ নীল রংটা যে পৃথিবীর রঙ, আকাশের শান্তির রঙ, ওটার মধ্যে আমার চোখ ডুবে যায়। লাল রংটা হল, রক্তের রঙ, আগুনের রঙ, প্রলয়ের রঙ, মৃত্যুর রঙ, কাজেই বেশি দেখতে না পেলে দোষ কি?"
আশ্চর্যের ব্যাপার হল, পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল উনি রঙ কানা ছিলেন!


দুপুরবেলা খাওয়া-দাওয়ার পর কবি শুয়ে আছেন তাঁর ঘরে, ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে। সেই ঘরেই এক কোনায় বসে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী ও নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবী পানের বাটা নিয়ে পা ছড়িয়ে বসে পান সাজছিলেন আর খাচ্ছিলেন; আর কোনও এক গল্পের ছলে হাসিতে লুটিয়ে পড়ছিলেন। কবি তক্ষুনি কাগজ কলম নিয়ে বসলেন, লিখলেন -
"ওলো সই, ওলো সই,
আমার ইচ্ছা করে তোদের মত মনের কথা কই,
ছড়িয়ে দিয়ে পা দুখানি
কোনে বসে কানাকানি
কভু হেসে কভু কেঁদে নীরব হয়ে রই..."

এইরকম আরো নানা সরস গল্প আছে রবি ঠাকুরের বিষয়ে। আবার অন্য কোন বারে, বলব, কেমন? এই গল্পগুলি কেমন লাগল আমায় চিঠি লিখে জানিও কিন্তু।

 

কোয়েলী গঙ্গোপাধ্যায়
ফরতাবাদ, কলকাতা