সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

'পরশমণি'তে কিছু লেখা মানেই ত' বিজ্ঞানের নিরস বিষয় গুলোর কচকচি, এটাই ভাবছ ত'? না, না, এখন পুজো, তাই আমি বরং অন্য কিছু নিয়ে লিখি। তবে বিজ্ঞানের ধারে কাছে যে যাব না, তা'ও হলফ করে বলতে পারি না! এসে যেতেও পারে কথা প্রসঙ্গে। খারাপ অভ্যেস কিনা !

ছোট্টবেলার পুজোর কথা কার মনে আছে ? অবশ্য তুমি আবার কবে বড় হলে ? আমি কিন্তু অনেক বড় হয়েছি, যদিও থুথ্‌থুরে বুড়ো হইনি, তবে কমও কিছু নয়! আমার ছোট্টবেলার পুজোর কথা কিছু বলি ? নাকি ? এসব সেই ১৯৫১/৫২ সালের কথা। তখন তোমার দাদুও হয়ত আমার মতই ছোট্ট ছিলেন!

সে সময় এখনকার মত এত না থাকলেও তখনকার মত জাঁকজমক ত ছিলই। এখন মন্ডপে মন্ডপে 'থিম'এর ছড়াছড়ি, তখন এসব ছিল না। থিম মানে কি সেটাই ত জানতাম না!

থিম থাকলে বা জায়গা কম থাকলে পুজোমন্ডপের কাছাকাছি স্বাধীনভাবে চলা ফেরা করার বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায় না বলে আমার ধারনা। কেননা আজকাল মন্ডপে ভাল সজ্জা করতে গিয়ে অনেকটা জায়গা দখল হয়ে যায়, যে দখলদারিটা আমাদের পুজো মন্ডপে ছিল না। একটা বড় ফুটবল মাঠের প্রায় অর্ধেকটা ঘিরে নিয়ে তার মাঝে মন্ডপ হত। তাতে দুটো ভাগ থাকত, একটাতে সপরিবারে দেবী প্রতিমা থাকতেন, সেখানে তাঁদের পূজো হত। আর অন্যটা ছিল নাটমন্দির ধরনের। পুজোর পর যাঁরা অঞ্জলী দিতেন তাঁরা দাঁড়াতেন। আর অন্য সময় সেখানে খান কয়েক চেয়ার পেতে দাদারা গালগল্প করতেন, আমরা দৌড়াদৌড়ি করতাম, গাদাগুচ্ছের ভারি ভারি গানের রেকর্ড (মিনিটে ৭৮ পাক ঘোরা গালার তৈরী) সহ রেকর্ড-প্লেয়ার থাকত একখানা চৌকির ওপর, আর থাকত ঢাকির দল তাদের বাদ্যসামগ্রী নিয়ে। হাঁ করে দাঁড়িয়ে দেখতাম আর শুনতাম তাদের কান ঝালাপালা করা বাজানো। একটা ব্যাপার দেখে অবাক হয়েছিলাম সে সময়। যতবার ঢাকি ঢাক পেটাচ্ছে ততবার শব্দের সাথে সাথে ঢকের চামড়া খুব কাঁপছে। এটা দেখে অনেককেই জিজ্ঞেস করে দেখেছি, সবাই বলেছে, ওটাই হয়! কিন্তু কেন হয় তার কোন সমাধান পাই নি। এখনও কিন্তু তোমরা এটাই জান যে পিটিয়ে চামড়াকে কাঁপানো হচ্ছে, তাই বাজছে! কে না জানে,কোন কিছু কাঁপলেই ত' শব্দ তৈরী হয়, নাকি ? বড় হয়ে জানলেও, ছোট বেলায় আমরা অবশ্য এটা জানতাম না, কেননা আমরা ত' নিচু ক্লাসে বিজ্ঞান পড়তাম না। সুতরাং, ঢাক-ঢোল লাঠিপেটা করে না কাঁপালে ত' বাজবেই না! এ কথা এখন আমরা সবাই জানি।

কিন্তু কেবলমাত্র ঢাক-ঢোলই নয়, এমন চামড়াঢাকা বাদ্য যন্ত্র আরও অনেক রকমের আছে। তবলা-ডুগি, ঢোলক, খোল বঙ্গো,কঙ্গো, পাখোয়াজ-- এমন আরও কত কিযে আছে। এদের আকার কিন্তু সকলেরই আলাদা আলাদা। তবলার কথাই ধরো, কেমন ছোট্ট চামড়ার ঢাকনা টান টান করে বাঁধা, কাঠের ছোট খোঁদলওয়ালা, অথচ তার সাথে যে ডুগি সে আবার মাটির তৈরী,বড় খোঁদলের (এখন মাটির বদলে ধাতু দিয়েও হয় একই কাজ হয়, মাটি হলে অল্প আঘাতে ভেঙ্গে যেতে পারে,তাই), চামড়া কেমন ঢিলেঢালা! ডুগি-তবলার একদিকে লাগানো চামড়া পিটিয়ে কাঁপিয়ে দেওয়া হয়, তাতে আওয়াজ বার হয়। তবলার চামড়া টান করার ব্যবস্থা আছে প্রয়োজন মত। ডুগিরও আছে তবে বেশী টানাটানি না করলেও চলে। যা দিয়ে টান করা হয় সেটা তবলার মত নয়, একটু অন্য রকম। ওদের দুজনের জন্য দুরকম ব্যবস্থা!

চামড়ায় ঢাকা খোঁদলগুলো কিন্তু হাওয়া ভরা। চামড়ার কম্পন আর হাওয়া (সঠিক বলতে গেলে ভেতরের হাওয়ার কম্পন), এরা মিলে চাহিদা মত শব্দ তৈরী করে। খোলের আবার দু'ভাগ নেই, একটাতেই দু দিকে দুটো চামড়া লাগানো। তার শব্দ আবার অন্য রকমের। পাখোয়াজ আরও অদ্ভুত। চামড়া টান করে বেঁধে, একদিকের চামড়াতে খানিকটা মাখা ময়দা/আটার ( রুটি বানাবার মত করে মেখে) তাল থেবড়ে চেপে চেপে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে চামড়ার কম্পন একটু অন্য রকম হয়, বাজানো হয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সাথে। এমন আরও অনেক বাদ্যযন্ত্র রয়েছে, যাদের কিছু কিছুর নাম লিখেছি। এরা প্রত্যেকে কিন্তু আলাদা আকৃতির, আর তাতে আওয়াজও হয় ভিন্ন ভিন্ন, ব্যবহার করা হয় দরকারমত। দেখা যাচ্ছে, এদের প্রত্যেকের আকার ত' আলাদা বটেই, কারও একদিকে কারওবা দু'দিকেই চামড়াঢাকা ! এই পিট্টি খাওয়া চামড়ার কাঁপন আর যন্ত্রে আটকা পড়া বাতাসের আকার-- এরা দু'জনে মিলে নানা ধরনের শব্দ তৈরী করে। ঢাক-ঢোলের আওয়াজের বেলাতেও সেই একই কথা খাটে! এমন কাঁপিয়ে দিয়ে শব্দ তোলা হয় আরও নানা বাদ্যযন্ত্রে। কোন কোন তার-যন্ত্র এমন এক-একটা বাদ্য যন্ত্র।

এমন তার-যন্ত্র দেখেছ ? সেতার, সরোদ,গীটার, এস্রাজ, বেহালা, একতারা-- আরও কত কি ! সব বাদ্যযন্ত্রই ( তার -যন্ত্র সহ) নানাভাবে তার বা যন্ত্রে আটকানো অন্য কিছু কাঁপিয়ে বাজানো হয়। নানাভাবে মানে, হয় তারকে হাতুড়ি পেটা করে (যেমন পিয়ানো), নয়ত তারটাকে টেনে নিয়ে পরে ছেড়ে দিয়ে (সেতার বা সরোদ) বা ছড় চালিয়ে (বেহালা, এস্রাজ)। চামড়া বাঁধা বাদ্যযন্ত্র কিন্তু হাত বা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বাজানো হয়। একটা কথা বুঝতে পারছ বাদ্যযন্ত্রে শব্দ তৈরী করতে হলে চামড়া বা তার কাঁপাতেই হবে।

কিন্তু সব যন্ত্রে যে ভিন্ন ভিন্ন মিষ্টি মিষ্টি আওয়াজ হয় তার কি হবে ? এর জন্য দায়ি কে বা কারা ? একটা জিনিষ খেয়াল করে দেখেছ কখনও ? প্রত্যেক তার-যন্ত্রে একটা করে ফাঁপা বাক্স লাগানো আছে! কোনটা লাউ, কোনটা বা কুমড়োর মত, কেউ কেউ আবার তৈরী ফাঁপা কাঠের। এই সব আলাদা মাপের হাওয়া ভরা বাক্সের সাথে তারের কাঁপন মিলে নানা ধরনের শব্দ তৈরী হয়!

দেখতেই পারছ, সব ধরনের শব্দ, তা সে ঢাক-ঢোলই হোক আর সেতার ইত্যাদিই হোক, তৈরীর পেছনে কম্পন থাকলেও, সেই যন্ত্রে ধরে রাখা বাতাসও কম কেরামতি দেখায় না! সে বা তার কোন ভুমিকা না থাকলে এত ধরনের যন্ত্র আর তা' থেকে এত ধরনের সুর পাওয়া যেত নাকি ?

বাদ্য-যন্ত্র আর তা থেকে পাওয়া নানা শব্দ-- এসব নিয়ে অনেক কিছু জানার আছে, বড় হয়ে সব পড়বে।

দেখলে কেমন বদ অভ্যেস! এত কান্ডের পরও সেই 'শব্দ-বিজ্ঞান' এনেই ফেললাম! যাকগে, পুজো এসে গেল। মাঝেমধ্যেই কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে, জলে ভিজে বা অন্য কোন ভাবে ঠান্ডা লাগিয়ে বোস না!


ছবিঃচন্দ্রিমা ঘোষ

সন্তোষ কুমার রায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক। বিষয় পদার্থবিজ্ঞান। শৈশব ও কৈশোর যথাক্রমে বাংলাদেশে এবং কলকাতায় কাটলেও, কর্মজীবন কেটেছে বাংলা বিহার সীমান্তের হিন্দুস্থান কেব্‌ল্‌স্‌ শিল্পনগরীতে। শিল্পনগরী থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় ছোটদের এবং বড়দের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা লিখেছেন বহুবছর। বর্তমানে ইচ্ছামতীর পরশমণি বিভাগে নিয়মিত লেখা ছাড়াও তিনি একটি গ্রুপ ব্লগের সদস্য রূপে লেখালিখি করেন ।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা