আবার রান্নাঘর। আবার মা-এর শরনাপন্ন হওয়া! কেন বলত! কি করতে যাচ্ছি এখন ? বীজ থেকে কি করে ছোট্ট গাছ জন্মায়, বা বীজের অঙকুরোদ্গম কি করে হয় সেটা বলতে যাচ্ছি। যা বলছি, সেইমত করলে চোখের সামনে সব কিছু ঘটতে দেখতে পাবে।
কয়েকটা গোটা ছোলা আর একটা কাচের প্লেট চেয়ে নাও মা'র কাছ থেকে। আর দোকান থেকে যোগার কর কয়েকটা ভুট্টাবীজ, যা দিয়ে খই হয়। সবার বাড়িতেই কিছুটা তুলো থাকেই, চেয়ে নাও বাবার কাছ থেকে।
এবার তুলোটা একটু টেনেটুনে কাচের প্লেটে বিছিয়ে দাও আর তাতে একটু জল ছিটিয়ে দাও যাতে তুলো ভিজে যায়। জল এমন ভাবে দিতে হবে যাতে প্লেটে জল জমে না যায়। এবার এতে একদিকে ছোলাগুলো, আর অন্যদিকে ভুট্টাদানাগুলো ছড়িয়ে দাও। এখন অন্য কিছু করতে চলে যেতে পার। একটু পরে এসে দেখতে পাবে যে ছোলা আর ভুট্টাদানা গুলো জল শুষে নিয়ে বেশ ফুলে গেছে।
এখনই কিন্তু সব দেখতে পাবে না, কয়েকদিন ধরে দেখতে হবে। যেমন এখন ফোলা ফোলা বীজ দেখলে, কিন্তু পরিবর্তন দেখতে পাবে পরদিন সকালে।
সকালে খেয়াল করলে দেখতে পাবে যে বীজগুলোর খোসা এক জায়গায় ফেটে গিয়ে সাদা মত কিছু একটা গজিয়েছে। একটা ছোলা নিয়ে তার খোসাটা সাবধানে ছাড়াও। লক্ষ্য কর, দুটো ডালের (ছোলার ডাল) মত অংশ। এবার অল্প চাপ দিয়ে ডালের মত অংশদুটিকে মেলে দাও সাদা জিনিষটার দু'পাশে। দেখ ডাল কেমন আটকে রয়েছে ঐটার দু'দিকে।
এই সাদা জিনিষটা হল শিশুগাছ,আর ডালের দানা দুটি হল ওই শিশুর খাদ্য। যতদিন ওই শিশুগাছ নিজের খাবার নিজে তৈরী করতে না পারছে, ততদিন ডালের মধ্যে সঞ্চিত খাবার খেয়েই বেঁচে থাকে। আমরাও কিন্তু ঐ সঞ্চিত খাবার রান্না করে ডাল হিসেবে খেয়ে থাকি।
এই ডাল দুটিকে বলে বীজপত্র। আর দুটো বীজপত্র থাকে বলে ছোলা গাছের নাম দ্বি-বীজপত্রী উদ্ভিদ। মটর, শিম-- এইসব গাছও এমন এক একটি গাছ। এরকম আরও অনেক উদাহরণ আছে।
একটা ভুট্টা দানা নিয়ে দেখতে পার এবার। সাদা কিছু একটা গজিয়েছে ঠিকই, তবে যতই চাপা চাপি কর ছোলার মত দুটো বীজপত্র পাবে না। এর বীজপত্র মাত্র একটা, গোটা ভুট্টাটাই (সাদা শিশুগাছটা ছাড়া) একটা বীজপত্র। খই ভাজতে গেলে যেটা ফেটে খই হয় সেটাই বীজপত্র। শিশু গাছ এই খাবারই খায়। ধান, গম ইত্যাদিরও এই রকম একটা করে বীজপত্র। এদের নাম একবীজপত্রী উদ্ভিদ।
প্রথম দিন এর বেশী আর কিছু দেখতে পাবে না। দেখে নাও তুলোটা ভেজা আছে কিনা। শুকিয়ে গেলে আর একটু জল দিয়ে সেটা ভিজিয়ে দাও। আবার কাল সকালের জন্য অপেক্ষা কর।
পরদিন সকালে দেখতে পাবে যে সাদা সুতোর মত জিনিষটা আরও বড় হয়েছে দৈর্ঘে, আর তুলোর মধ্যে ঢুকে যাবার চেষ্টা করছে সেটা। এটা আসলে ঐ বীজে যে গাছ গজাল, তার শিকড় বা মূল। এটা হল প্রধান মূল।
তৃতীয় দিন সকালে দেখা যাবে, এই মূলের ডগার দিকে আরও সরু সরু সুতোর মত কিছু গজাচ্ছে। এরা হল শাখামূল। এইভাবে দিন সাতেক লক্ষ্য করতে হবে।
প্রতিদিনই কিছু না কিছু পরিবর্তন দেখা যাবে। এই সময় দেখতে পাবে বীজের যেখানে শিকড় বের হয়েছে সেখানে এবার ওপরের দিকে কিছু গজাচ্ছে। এটা হল গাছের যে অংশ মাটির ওপর থাকে সেটা, যার নাম হল কান্ড।
দ্বিবীজপত্রী (ছোলা) গাছের বীজপত্র দুটি নিয়েই কান্ডটা তুলোর ওপর দাঁড়িয়ে যাবে। আর ভুট্টার বীজপত্রটি তুলোতেই থেকে যাবে। গাছটা সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। খেয়াল রাখবে যেন কখনও জল না শুকিয়ে যায়। এটা কিন্তু খুব দরকারি।
এক আধ দিনের মধ্যেই দেখতে পাবে কান্ড থেকে শাখা-প্রশাখা, পাতা ইত্যাদি বেরোচ্ছে।
তুমি যদি রোজ সকালে একটা করে বীজ ঐ প্লেটের ওপর রাখ, তাহলে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই বীজ থেকে গাছ তৈরী হওয়ার প্রতিটি স্তর তোমার চোখের সামনে দেখতে পাবে।
একটা কথা। গাছ তো আর তুলোয় জন্মায় না, মাটিতে হয়। নরম তুলতুলে ভিজে মাটিতে গাছ হয়। যে বীজ থেকে গাছ অঙকুরিত হওয়ার স্তরগুলি দেখলাম সে সবই মাটি্র ভেতরে হয়। কিন্তু আমরা তো আর মাটির ভেতর কি হচ্ছে দেখতে পাই না, তাই তুলোর সাহায্যেই করে দেখতে হয়।
অঙ্কুরোদ্গম কিন্তু কতকগুলো শর্ত মেনে হয়। আলো, জল আর বাতাস না পেলে কিন্তু এটা হবে না। চোখের সামনেই দেখে নাও। ওপরের মত করে যা সব করা হল, সব কিন্তু দিনের আলোতে করতে হবে, দরজা জানালা বন্ধ করে অন্ধকার ঘরে এসব একেবারেই হবে না।
তিনটি ডিশ নাও। একটাতে শুধু কয়েকটা ছোলা রাখ, আর একটায় কয়েকটা ছোলা রেখে বেশী করে এমনভাবে জল দিয়ে দাও যাতে সেগুলো ডুবে যায়। আর তৃতীয়টাতে ভেজা তুলোতে কিছু ছোলা রাখ, ঠিক ওপরের পরীক্ষার মত। ঘরে যদি আলো থাকে তাহলে কি পরিবর্তন লক্ষ্য করবে, বলতে পার ?
একমাত্র তৃতীয় ডিশে ওপরের মত পরিবর্তন দেখতে পাবে, বাকি দুটো পাত্রে কোন কিছুই ঘটবে না, যেমন ছিল তেমনই থাকবে। শুধু দ্বিতীয় পাত্রের ছোলা জল শুষে ফুলে উঠবে।
কারণ কি ? প্রথম ডিশে আলো-বাতাস ছিল, কিন্তু জল ছিল না। দ্বিতীয় পাত্রে আলো আর জল ছিল, কিন্তু বাতাস ছিল না। জলের মধ্যে বাতাস যাবে কি করে! আর শেষ পাত্রে আলো,জল আর বাতাস সবই ছিল। তাই পরিবর্তন হয়েছে, বীজ থেকে গাছ জন্মেছে।
সন্তোষ কুমার রায়
কোদালিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
ছবিঃ উইকিপিডিয়া