খেলাঘরখেলাঘর

স্বাধীনতার গল্প

কি কেমন আছ তুমি? দোলের রঙ শুকোতে না শুকোতেই দেখছো তো কেমন কালবৈশাখী-র আনাগোনা!বেশ লাগছে কিন্তু বল!বাজ পড়লে ভয় পাও নাকি? কোন্ টাকে ভয় আলো না শব্দ  কে?তুমি নিশ্চয়ই জান যে বাজ যদি না পড়ত তাহলে বিদ্যুত শক্তি বা electricity কোনোদিন আবিষ্কারই হোতো না।সে গল্প তোমাকে আমি পরে বলব।তবে এখন এস, তুমি আমি সব্বাই মিলে জোরহাত করে কালবৈশাখী-কে বলি আমের মুকুলগুলোকে খসিয়ে দিয় না গো!!!! সারাবছর এই রসালের আশাতেই তো ঋতুচক্র গুনে চলি, তাই না!লক্ষ্য করেছ কি না জানি না, বাজার ছেয়েছে তরমুজ-এ। আর গত কয়েক বছর ধরে বিশাল বিশাল, সবুজ ডোরা কাটা কাটা তরমুজ আসছে বাজারে, সেই ঘন কালচে সবুজ রঙের তরমুজের বদলে।কি পাতলা তার খোসা আর মিষ্টি ও বটে। তুমি নিশ্চয়ই ভাবছ যে আমি খুব লোভী!মানুষ তো খাওয়ার জন্যই বাঁচে আর ফল খাওয়া খুব জরুরী। আমাদের শরীরে গরমকালে সবসময় জলের প্রয়োজন হয়। তাই প্রকৃতিদেবী এই সময় এমন সব ফল ফলান যা সব রসে টইটুম্বু্র।সেই রসে থাকে জল, অতি প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা আর নানান রকমের জরুরী লবণ ও পাচক অম্ল।আমি বলি কি, সফট ড্রিঙ্ক না খেয়ে খানিকটা  ফল বা ফলের রস খেয়ে দেখ না।  ঠান্ডা ফলের রস খেতে খারাপ লাগবে না ।

না বাবা আর বাজে বকে তোমার সময় নষ্ট করব না! আসল গল্পে ফিরিঃ

তোমাকে বোধ হয় আআর আলাদা করে বলে দিতে হবে না যে সারা ভারতবর্ষে ইংরেজদের বিরূদ্ধে আন্দোলনে বাংলার একটা আলাদা ভূমিকা সবসময়েই ছিল।একদম শুরু থেকেই দেখা যায় বিশেষতঃ বাংলার কৃষকেরা প্রতি পদক্ষেপেই ইংরেজ শাসন ব্যবস্থার বিরূদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করে স্বাধীনতা সংগ্রাম কে উজ্জীবিত করেছে।

১৭৮৩ সাল। ইংরেজদের তাঁবেদার দেবী সিংহের অত্যাচারে উত্তর বাংলায় জনজীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে।রংপুরে ছিল তার একচেটিয়া আধিপত্য।সন্ন্যাসী-বিদ্রোহ দমনে ইংরেজ কুঠিয়ালরা তার সাহায্য গ্রহণ করেছিল।কিন্তু মজনু শাহের হাতে পরাজিত হয়ে সে সারণের মেলা থেকে পালিয়ে আসে।খাজনা আদায়ের সময় দেবী সিংহের সন্ত্রাস আর নিষ্ঠুরতার জুড়ি ছিল না।রংপুরে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সমস্ত কৃষকরা তার বিরূদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে।ইংরেজ শাসকরা সেই বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রচুর সৈন্য নিয়োগ করে।এই বিদ্রোহের নায়ক ছিলেন দরজি নারায়ন, কেনা সরকার, নুরুলউদ্দিন অ ইস্রায়েল খান। ইংরেজ বাহিনী্র সঙ্গে বিদ্রোহী কৃষকদের সংঘর্ষ দীর্ঘদিন ধরে চলে।রংপুর থেকে এই বিদ্রোহ দিনাজপুর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। রংপুরে দেবী সিংহের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।শেষ পর্যন্ত সে ইংরেজদের সহযোগীতায় কৃষকদের দমন করতে সমর্থ হয়। এই সময়ে অগুন্তি কৃষক কে ধরে ধরে ইংরেজ-রা ফাঁসী দেয়।
বাংলার কৃষকদের জীবনে ঘটে যায় এক বিশাল পরিবর্তন। ইংরেজরা এমন আইন বাঁধে যে বাংলার কৃষক তার জমি ও জীবিকা হারায়। ইংরেজরা ধূর্ত ছিল। তারা কোন সময়েই সরাসরি নিজের হাত কালিমালিপ্ত করতে চায় নি; অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে ব্যবহার করেছে আমাদের-ই  দেশবাসীদের। তাই ঔপনিবেশিক স্বার্থ বজায় রেখে তারা সামন্ততান্ত্রিক প্রথার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করে। ১৭৯৩ সালে পাকাপাকি হয় বাংলার কৃষকদের দুর্ভোগের ললাটলিখনঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত।
কৃষক

১৭৯৩ সালে বাংলার গভর্নর লর্ড কর্নওয়ালিশ ভূমিব্যবস্থা বিন্যাসের উদ্দেশ্যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষণা করেন।উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদার শ্রেনি সৃষ্টি করে বাংলার কৃষকদের জমির ওপর স্বত্ব চিরতরে লোপ করে দেওয়া হয়। বৃটিশ ঔপনিবেশিকদের আগ্রাসী অপশাসন ও বাণিজ্যের নামে দুর্ণীতি ও জুলুমবাজী, মুঘল আমলের চেয়ে দ্বিগুণ তিনগুণ খাজনা আদায় বাংলার কৃষিব্যবস্থাকে তছনছ করে দেয়।বাংলার কৃষকরা ইংরেজদের ধূর্ততার মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে ভূমিহীন হয়।
কৃষকবিদ্রোহ যে রংপুরের পর আরও ব্যাপক আকার নেয়, সেই গল্প তোমাকে পরের সংখ্যায় বলব।

 

আর্য চ্যাটার্জি
কলকাতা

ছবিঃইন্টারনেট

আর্য চ্যাটার্জি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বেশ কয়েকবছর বিভিন্ন ইংরেজি পত্র-পত্রিকায় নানা বিষয়ে লেখালিখি করেন। বর্তমানে পারিবারিক ঐতিহ্যের টানে একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। হাওড়া সালকিয়ার বাসিন্দা আর্য নিয়মিত গান বাজনার চর্চা করেন; নিজের ইচ্ছায় একাধিক তাল যন্ত্র বাজানো রপ্ত করেছেন তিনি। নিজের শখের কিছু লেখা আর ইচ্ছামতী-তে লেখা ছাড়া এখন আর কোনো পত্র-পত্রিকার সঙ্গে আপাততঃ যুক্ত নন। শখের লেখা ব্লগে লেখেন। বেশিরভাগই বড়দের জন্য কবিতা।