সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

আমার মন খুব খারাপ। পড়াশোনা করার সময়টুকুও পাচ্ছিনা। সময় শুধু ছুটিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। কেমন মজা দেখ, তুমি পড়তে বসতে চাও না, কিন্তু আমি চাই, সময় পাই না। মাঝে মাঝে ভাবি, ছোটবেলায় যদি প্রচুর সময় নষ্ট না করে আরেকটু পড়াশোনা করতাম! তখন তো এখনকার মত সময় কাটানোর বা বিনোদনের এর উপায় ছিল না, তাই হাতে সময় ছিল প্রচুর। আমি যখন তোমার মত ছোট ছিলাম, আমাদের বাড়িতে একটা টিভি পর্যন্ত ছিল না। হাসছ তুমি শুনে!!! শুধু রবিবারে এক ঘন্টার জন্য টিভি দেখতে যেতাম, আমার এক বন্ধুর বাড়িতে। আমি অবশ্য শুধু একা নয়। আমার অনেক বন্ধুরাই ওই বন্ধুর বাড়িতে ফি রবিবার টিভি দেখতে যেত। তখন এটাই রেওয়াজ ছিল।আর বাকি যা সময় পেতাম আমি, লিখতাম। অনেক হাবিজাবি লেখা, যার কোনো মানে হয় না।বড়দের কাছে শুনতাম, কলমের জোর নাকি অনেক। সে নাকি সারা দেশ তথা বিশ্ব-কেও টলিয়ে দিতে পারে, তার থেকে নিঃসৃত শব্দের বলে।

ইংরেজদের কপালেও সে রকমই নাচছিল। বিদ্রোহ-বিপ্লব-আন্দোলন তো তারা পেশীর জোরে দমন করে ফেলল। কিন্তু কলমের খোঁচা তো আর সামলাতেই পারল না।তা-ও আবার নিজেদের লোকেদের হাত ধরেই এমন অঘটন শুরু।


বাঁ-দিক জেমস অগাস্টাস হিকি; ডান দিকে 'দ্য বেঙ্গল গেজেট'

কোথা থেকে জেমস অগাস্টাস হিকি নামে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক প্রাক্তন চাকুরে ১৭৮০ সালে চারপাতার এক সংবাদপত্র 'দ্য বেঙ্গল গেজ়েট' প্রকাশ করতে আরম্ভ করলেন। চারিদিকে আলোড়ন পড়ে গেল। আর সেই কলমের খোঁচার আঘাত গিয়ে পড়ল সাগর পারের বিলেতে।

ভারতের কৃষকেরা তো কোনোভাবেই নানা রকম বিদ্রোহ-বিল্পব-আন্দোলন করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অত্যাচার আর কুশাসনের কথা ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারল না। ভারতের গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ফিলিপ ফ্রান্সিস লুকিয়ে লুকিয়ে হিকিকে কোম্পানির কেলেঙ্কারী আর দুর্নীতির খবর পাচার করতেন, আর হিকি সাহেব তাঁর নিজের কলম শানিয়ে সব ঝপাঝপ ছেপে ফেলতেন তাঁর গেজ়েটে। ইংল্যান্ড তখন রাজনৈতিক ভাবে দু' ভাগে ভেঙে গিয়েছে, হুইগ আর টোরি দলে।নতুন উঠে আসা বুর্জোয়া শ্রেণীর দল হল গিয়ে হুইগ। তার কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসার বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়াল।হিকির গেজ়েটের খবর বিলেতে পৌঁছালে সেখানকার পার্লামেন্টে হইচই পড়ে যায়।কোম্পানির অপশাসন আর দৌরাত্মের বিরূদ্ধে হুইগ দল সোচ্চার হয়।সেই চাপের কাছে মাথা নিচু করে শেষে ওয়ারেন হেস্টিংসের মত লোকের বিরূদ্ধে ইম্পিচমেন্টের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় বৃটিশ সরকার।

এসব কথা বললেও সাহেব সম্পাদকরা যে কোম্পানির শাসনের বিরোধীতা করছিলেন, তাতে কিন্তু বাংলার মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা কোথাওই কোনোভাবেই থাকত না।তাহলে তাঁদের লড়াই কিসের জন্য জান? ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে।কখনো কখনো এই বিরোধীতা ছিল একেবারেই ব্যক্তিগত।সেখানেই এল কলমের হাত ধরে জাতীয় চেতনার উন্মেষকাল।পথিকৃৎ, রাজা রামমোহন রায়।

এই সৌম্যসুন্দর ব্যক্তিটি কোনোরকম পদে না থেকে আমদের দেশকে অন্ধকারের মধ্যে প্রথম যে আলো দেখিয়েছিলেন তার জন্য লাগে বিদ্যা, বুদ্ধি, বিচক্ষণতা আর সর্বোপরি, সাহস।কোথাও আমার আজ মনে হয়, গান্ধিজি যেন তাঁর দেখানো আলোকেই সূর্যালোকে পরিণত করেছিলেন।সবকিছুর মিশেলে রাজা রামমোহন রায় আমার ছেলেবেলার আদর্শ ছিলেন। আর ছত্রপতি শিবাজী, রাণা প্রতাপ সিংহ – এঁরা ছিলেন আমার হিরো।তবলার যে বিঁড়ে থাকে, সেটা নিয়ে মাথায় পরে, গোঁফ এঁকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রামমোহন হওয়ার চেষ্টা করতাম।তিনিই প্রথম যিনি একা হাতে সমাজের খোল-নলচে বদলে দিয়েছিলেন; যা যা করবেন ভেবেছিলেন, করে দেখিয়েছেন। তিনিই প্রথম যিনি জাতীয় চেতনার উন্মেষ- কালে ইংরেজদের বিরূদ্ধে লড়াই করবার নিরস্ত্র পথ দেখিয়েছেন। কলমের জোর কাকে বলে আরও একবার টের পেল ইংরেজ সরকার।তিনিই প্রথম যিনি সংবাদ পত্রের ভূমিকা উপলব্ধি করেছিলেন। জনশিক্ষা আর জনচেতনার প্রসারে পুস্তক-পুস্তিকার সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকার কথা তিনি বোঝেন। এর জন্য তাঁর স্থায়ীভাবে কলকাতায় এসে বসবাসের প্রয়োজন হয়।১৮১৫ সালে তিনি স্থায়ীভাবে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। বলা যেতে পারে, ইংরেজ শাসনের বিরূদ্ধে কলমের যুদ্ধের সূচনা ঠিক তখন থেকেই।

রাজা রামমোহন রায়ের বিদ্যার প্রসার ছিল অনেক দূর। একসঙ্গে তিন তিনটি ভাষার সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি – ব্রাহ্মন সেবধী (১৮২৯), সম্বাদ কৌমুদী (১৮২৯)ও মীরাৎ ঊল আখবার (১৮২২)। এর আগে ১৮১৮ সালে শ্রীরামপুরে ব্যাপ্টিস্ট মিশনারীদের উদ্যোগে সমাচার দর্পন ও দিগদর্শন পত্রিকা প্রকাশিত হত।

কি না থাকত সে সব পত্র-পত্রিকায় –ইংরেজ শাসনের সোজাসুজি সমালোচনা, দেশের কৃষক জনসাধারনের দুর্গতি ও তার প্রতিকার দাবী, সতীদাহ নিবারণের যৌক্তিকতা, শিক্ষা প্রসারের প্রয়োজনীয়তা, আর ও কত কি জোরাল বিষয়।ইংরেজ সরকার হঠাৎ-ই এমন এক অন্য রকমের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে গেল।

যাক বাবা! তুমি যেন আবার দিশেহারা হয়ে যেও না, পড়াশোনা করতে করতে। জানি পরীক্ষা এসে গিয়েছে; কিন্তু নিজের জন্য একটু খেলার সময় রেখো। টিভি দেখা কমিয়ে দাও। বরং সে সময়ে একটু পরখ করে দেখো না তোমার কলমের জোর কত!!!!


ছবিঃউইকিপিডিয়া ও অন্যান্য ওয়েবসাইট

আর্য চ্যাটার্জি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বেশ কয়েকবছর বিভিন্ন ইংরেজি পত্র-পত্রিকায় নানা বিষয়ে লেখালিখি করেন। বর্তমানে পারিবারিক ঐতিহ্যের টানে একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। হাওড়া সালকিয়ার বাসিন্দা আর্য নিয়মিত গান বাজনার চর্চা করেন; নিজের ইচ্ছায় একাধিক তাল যন্ত্র বাজানো রপ্ত করেছেন তিনি। নিজের শখের কিছু লেখা আর ইচ্ছামতী-তে লেখা ছাড়া এখন আর কোনো পত্র-পত্রিকার সঙ্গে আপাততঃ যুক্ত নন। শখের লেখা ব্লগে লেখেন। বেশিরভাগই বড়দের জন্য কবিতা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা