"এইতো সবে নভেম্বরের শুরু এরই মধ্যে কী রকম ভোরবেলাতে বরফ পড়তে শুরু করে দিয়েছে, লক্ষ্য করেছ কি, মিস্টার ধাড়া?" মিস্টার ঝা হাঁটতে হাঁটতেই বলে যাচ্ছিলেন কথাগুলো ।
উত্তরে মিস্টার ধাড়া বললেন, "যা বলেছ ভাই, এমন উদ্ভট জায়গায় থাকতে আর ভাল্লাগেনা ।"
এই দুজনার সাথে আরও একজন, মিস্টার বেনুগোপাল, একমনে হাঁটছেন। তিনি অকারণে মোটেও কথা বলেন না,বরং সান্ধ্য-ভ্রমণ করার সময় একমনে হাঁটতেই ভালো লাগে তাঁর । এই তিনজনেই হিমালয়ের কোলে এক স্কুলে নতুন শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন।একসাথে প্রতিদিনই বিকেলের পর হাঁটতে বেরুত তারা। বিভিন্ন রকম কথাবার্তা হত।
বেনুগোপাল সুদূর কেরালার থেকে সেখানে এসেছেন। মিস্টার ধাড়া খিদিরপুর থেকে আর মিস্টার ঝা পাটনা থেকে, এদের দুজনারই মতে সমুদ্র তল থেকে এগার হাজার ফুট উপরের সেই পাহাড়ি জায়গা মোটেও ভালো নয়, " এত ঠাণ্ডা... এখানে তো ভালো করে পড়াশুনোর কোন চর্চাই করা যায় না। তাদের দুজনের স্কুলে ছাত্র ছাত্রী দের পড়ানোর মুডটাই নষ্ট হয়ে যায় বার বার, তার উপর বৃষ্টি, যদি একবার শুরু হল, থামতেই চায় না।" আশেপাশের গ্রামের লোকেরা নাকি বাসরাস্তার নীচের দিকে প্রায় মিনিট দশেকের হাঁটা-পথে কোন বুড়ো ওঝা থাকে, তার কাছে মুরগি নিয়ে যায়, পুজো পাঠ মন্ত্র তন্ত্র হয়, এটা জানার জন্য, যে কত দিন ধরে বৃষ্টি চলবে, অথবা কবে বৃষ্টি বন্ধ হবে, কী আজব জায়গা রে বাবা! পাটনার মিস্টার ঝা আর খিদিরপুরের মিস্টার ধাড়ার কাছে সেই হিল-স্টেশন, যেখানকার স্কুলে তারা সবাই একই সাথে কাজ করছিলেন , ছিল 'এক্কেবারে অখাদ্য'। প্রায় দিনই বিকেলের পর এই হাঁটার সময়টাতে এই একই কথা তারা বার বার বলে যেতেন আর বিভিন্ন রকম যুক্তি দিয়ে সেই জায়গাটাকে আরও বেশী করে অদ্ভুত এবং একঘেয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন।
এক দিন হটাৎ বেণু অর্থাৎ কেরালার তিরুবানন্তপুরমের মিস্টার বেণুগোপাল, বলে ওঠেন, "আমার তো এই জায়গা্টা দারুণ লাগে, দুচোখ ভরে দেখি এই প্রাচীন অকৃত্রিম প্রকৃতির শোভা, আমার মনে হয় পড়াশোনা করার জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা আর হয় না।" মিস্টার ঝা বেশ বিরক্তির সাথে সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠেন, "তাই নাকি? বেশ তাহলে, এই 'গড-ফরবিডেন-হিলসে' যে কোন একটা বিজ্ঞানের বিষয় তুমি নিয়ে নাও এবং তারপর এই জায়গা কে মাথায় রেখে তার আলোচনা কর, আমাদের বোঝাও, প্রমাণ কর তা তুমি এমন আকর্ষক করে তুলবে যে তোমার ছাত্র-ছাত্রীরা কোন দিনও তা ভুলবে না।" মিস্টার ধাড়াও একই সুরে বললেন, "কই শুরু কর ভাই, কিন্তু মনে রেখো তুমি এই জায়গাকে মাথায় রেখেই তোমার বিষয়টা আলোচনা করবে।"
এই কথা শুনে অল্প হেসে বেণু বললেন, "নিশ্চয়ই, আমি এই জায়গাটাকেই মাথায় রেখে বিজ্ঞানের একটা আলোচনার-বিষয় শুরু করছি। ... মাধ্যমিক স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ান হয় এই বিষয়, যার নাম ট্যাক্সনমি (Taxonomy), বা ক্লাসিফিকেশন অথবা বর্গীকরণ, 'লেটস লারন প্ল্যান্ট ক্লাসিফিকেশন', এসো আমরা পড়ি উদ্ভিদের বর্গীকরণ বা Plant Classification।"
"এই যে আমরা হেঁটে চলেছি, রাস্তার এই পাশে কোনও কোনও জায়গায় একটু করে জল জমা আছে আর তাতে শ্যাওলা [Algae] দেখতে পাচ্ছি, এই শ্যাওলার মত উদ্ভিদ-গুলোর আমরা আলাদা আলাদা কোন পার্টস মানে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন ধর শিকড়, কাণ্ড, পাতা ইত্যাদি দেখতে পাই না। তাহলে এই ধরনের সমস্ত প্ল্যান্টস বা উদ্ভিদ গুলিকে আমরা একটি বিভাগে (প্রথম) পৃথক করে রাখতে পারি। আর অন্য বাকি সব উদ্ভিদেরা আলাদা থাকল। এই প্রথম বর্গের পৃথক করে নেওয়া উদ্ভিদ গুলিকে নাম দেওয়া হয়েছে থ্যালোফাইটা [Thallophyta] কারণ থ্যালস [Thallos] শব্দের অর্থ হল এমন কিছু যার আলাদা আলাদা কোন পার্টস বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয় না [undifferentiated] ।"
" আর ওপাশে ওই যে আপেল গাছ গুলোতে কোন কোন ডালের উপর ছোট ছোট গোল গোল ছাল উঠে যাওয়া তালির মত [Foliose Lichen] এবং কোন কোন ডালের থেকে ঝুলন্ত বুড়ো-দাদুর দাড়ির মত [Fruticose Lichen] এছাড়াও কখনো কোন পাথরের উপরিভাগে রঙের-প্রলেপ-দেওয়া ছোপের মত [Crustose Lichen] লাইকেন গুলো দেখছি, এগুলিও থ্যালোফাইটার মধ্যেই পড়ে।"
এত অবধি বলে বেণু জিজ্ঞাসা করলেন, "সুতরাং মিস্টার ঝা উদ্ভিদজগতের এই প্রথম ধাপ বর্গীকরণ টাকে বুঝতে কোন অসুবিধা নেই তো?" মিস্টার ঝা গম্ভীর মুখে তাঁর মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন।
এরপর বেণু আবার বলে চললেন," এবার বাকি রইল যে সমস্ত উদ্ভিদদের মধ্যে কিছু রকম আছে যাদের আলাদা আলাদা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তো আছে কিন্তু বিশেষ পরিবহন-কলা বা ভাস্কুলার টিস্যু (vascular tissue) নেই। ভাস্কুলার টিস্যুর উদাহরণ হল জাইলেম(xylem)টিস্যু যা মাটির থেকে শোষণ করা জল ও খনিজ কে একসাথে শেকড় থেকে উপরে একদম পাতা অবধি পরিবহন করে আর অন্যটি ফ্লোয়েম(phloem)টিস্যু, ফোটোসিন্থেসিস(photosynthesis) অর্থাৎ সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে তৈরি করা শর্করা(glucose) পাতার থেকে সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গতে পরিবহন করে। সুতরাং এই ধরনের সমস্ত উদ্ভিদ গুলিকে আমরা আরও একটি বিভাগে (দ্বিতীয়) পৃথক করে রাখতে পারি।ঠিক আছে তো মিস্টার ঝা, বুঝতে কোন অসুবিধা নেই তো?" মিস্টার ঝা আবার তার মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন।
"আবার একবার বাকি অন্য সব উদ্ভিদেরা আলাদা করা থাকল। এই দ্বিতীয় গুলির নাম হল ব্রায়োফাইটা [Bryophyta]। এই যে দেখছ এই দিকটা যেদিকে পাহাড় কেটে পাথরের দেয়ালের মত রয়েছে সেই ভিজে দেয়ালের উপর সবুজ কার্পেটের মত অতি ছোট ছোট প্ল্যান্টস গুলি যার ইংরেজি নাম মস [Moss] এবং ঐযে ওদিকে পাথরের গায়ে মনে হচ্ছে যেন হলদেটে-সবুজ এবং হলদেটে-বাদামি রঙের গোল গোল ছোপ, সেগুলো হল লিভারওয়ার্টস [Liverworts]। এগুলি সবই ব্রায়োফাইটা।"
"অতএব মিস্টার ধাড়া সমস্ত গাছেদের এই দুই ধাপ বর্গীকরণটাকে বুঝতে আপনার কোন অসুবিধা নেই তো?" মিস্টার ধাড়া ঞ্জানতে চাইলেন কলকাতা শহরে কি এই দ্বিতীয় বর্গের গাছগুলি দেখতে পাওয়া যাবে? বেণুগোপাল জানালেন, খোঁজাখুঁজি করলে কোন পরিত্যক্ত কুয়োর ভেতরের দেয়ালে অথবা বর্ষার পর কোন পোড়ো-বাড়ির অথবা মন্দিরের দেয়ালে দেখা যেতে পারে তবে তা বেশ কষ্ট করেই খুঁজে বের করতে হবে অবশ্য ।
যাইহোক, এরপর বেণু জানালেন, আর বাকি যে সমস্ত উদ্ভিদ রইল, তার মধ্যে থেকে কিছু উদ্ভিদের আলাদা আলাদা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে, পরিবহণ কলা বা ভাস্কুলার টিস্যুও আছে কিন্তু তাদের বীজ নেই। তার মানে এই ধরনের সমস্ত প্ল্যান্টস বা উদ্ভিদ গুলিকে আমরা আরও একটি আলাদা বিভাগে (তৃতীয়) পৃথক করে রাখতে পারি। এবং আগের মতই বাকি অন্য সব উদ্ভিদেরা আলাদা থাকল। এই তৃতীয় গুলির নাম হল টেরিডোফাইটা [Pteridophyta] বা ফার্ন [Fern]।
"ঐযে ওদিকে দেখছ বড় বড় ওক গাছের গুঁড়ি আর ডালের উপরিভাগে ভিজে ছালের উপর ঠাসাঠাসি করে হয়ে আছে ছোট ছোট বাহারি সুন্দর পাতার ছোট ছোট গাছগুলি যাতে ফুল কখনই আমরা দেখিনা, সেগুলিই হল ফার্ন, তাছাড়াও দেখ রাস্তার দুই পাশে কোন কোন জায়গায় একসাথে বেড়ে উঠেছে প্রচুর ফার্ন, এই দেখ এখানে ভিজে মাটির উপর ঘোড়ার লেজের মত দেখতে আরও একটি ফার্ন, এর নাম ইকুইজেটাম (Equisetum), আর ওই যে ওপাশে খুদে খুদে পাতায় সাজান মেয়েদের লম্বা-চুল বাঁধার সুতোয় বুনা ট্যাসেল এর মত দেখতে যে ফার্ন, তার নাম সেলাজিনেলা (Selaginella), আবার এই দেখ পাশের পাথুরে দেয়ালের থেকে ঝুলছে পাতা গুলি এমন ভাবে সাজান যেন মনে হয় মেয়েদের সুন্দর লম্বা আকর্ষক চুলের গোছা, তাইতো এর নাম দেওয়া হয়েছে মেইডেন-হেয়ার [Maidenhair Fern]।" বেণুগোপাল এবারও মনে করিয়ে দেয় কোন পরিত্যক্ত কুয়োর ভেতরের দেয়ালে অথবা বর্ষার পর কোন পোড়ো-বাড়ির অথবা মন্দিরের দেয়ালে ফার্ন এরও দেখা পাওয়া যেতেও পারে তাদের নিজেদের দেশে তবে তা বেশ কষ্ট করে খুঁজে বের করতে হবে অবিশ্যি।
কিছুক্ষণ বিভিন্ন ফার্ন দেখার পরে মুচকি হেসে বেণুগোপাল জিজ্ঞাসা করলেন, "সুতরাং মিস্টার ঝা সমস্ত গাছেদের এই তিন-ধাপ বর্গীকরণটাকে বুঝতে কোন অসুবিধা নেই তো?" মিস্টার ঝা এবারও তার মাথা নেড়ে উত্তরে হ্যাঁ বললেন। বেণু এবার জানালেন, "আমার এই বিষয়ের মূল অংশের অনেকটাই আমি আলোচনা করে ফেলেছি। কারণ, উদ্ভিদ-জগতের সমস্ত উদ্ভিদগুলিকে বিভিন্ন ছোট বড় বর্গতে আলাদা আলাদা করতে হলে যে তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য জানা দরকার সেগুলি বোঝান হয়ে গেছে। উদ্ভিদের বর্গীকরণ (plants classification)এই তিনটি বৈশিষ্ট্যর উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে। প্রথমটি আলাদা আলাদা পার্টস মানে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ [differentiated body] আছে কি নেই, দ্বিতীয়টি বিশেষ ভাস্কুলার টিস্যু [special vascular tissue] আছে কি নেই এবং তৃতীয়টি হল বীজ [seed] আছে কি নেই। ব্যস মাত্র তিনটি।"
"এখন আর বাকি যে সমস্ত উদ্ভিদ রইল, তার মধ্যে থেকে কিছু উদ্ভিদের আলাদা আলাদা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, বিশেষ ভাস্কুলার টিস্যু এবং বীজ সবই আছে কিন্তু বীজ হয়ে থাকে অনাবৃত, তাই ফল বলে আলাদা কিছু হয় না, অন্য দিকে বাকি সমস্ত উদ্ভিদের বীজ হয় আবৃত সুতরাং ফলও হয় আর বীজের মধ্যে হয়তোবা দুটি কিম্বা একটি বীজপত্র বা কটিলেডন থাকে। আবৃত হোক কি অনাবৃত, যে সমস্ত উদ্ভিদের বীজ থাকে তাদের বলা হয় স্পরমাটোফাইটা (Spermatophyta)," জানালেন বেণু।
"এই অনাবৃত বীজ ওয়ালা উদ্ভিদগুলির অন্যতম হল চীর বা পাইন, যে গাছের জঙ্গল এখানে যে দিকে তাকাই সেদিকেই। পাইন ছাড়াও আছে ফার, স্প্রুস, লার্চ, থুজা, দেওদার [Cedrus Deodara] এবং আরও অন্য প্রকার যেগুলিকে চিনে নিতে হয়। এই সব গাছের উপর সুন্দর মোচাকৃতি যেগুলিকে দেখা যায় তাকে বলে 'কোন' [Cone বা Strobilus], ছোট বড় এই 'কোন' গুলি পুরুষ এবং স্ত্রী, দুই ধরনেরই হয়। এগুলিরই সাহায্যে এই গাছ গুলির জনন প্রক্রিয়া হয়ে থাকে। তাই এই 'কোন' গুলিকে বলা যেতে পারে প্রাচীন ফুল [Male-Microsporophyll & Female-Megasporophyll]। এই অনাবৃত বীজ ওয়ালা উদ্ভিদগুলির বর্গ কে নাম দেওয়া হয়েছে জিম্নোস্পারম [Gymnosperm], আর আবৃত বীজ-ওয়ালা উদ্ভিদগুলির বর্গকে বলে অ্যাঞ্জিওস্পারম [Angiosperm]।"
"এই আবৃত বীজ-ওয়ালা উদ্ভিদগুলি অর্থাৎ এঞ্জিওস্পারম [Angiosperm or The Flowering Plants] এই উদ্ভিদগুলির বীজের মধ্যে যদি দুটি বীজপত্র বা কটিলেডন থাকে, তাহলে বলা হয় ডাইকট [Dicot] আর যদি একটি বীজপত্র থাকে তাহলে বলা হয় মনোকট [Monocot]। ছোলা, মটর, সর্ষে ইত্যাদি ডাইকট [Dicot] উদ্ভিদ আর ধান, গম, বাজরা, জোয়ার, নারকেল ইত্যাদি মনোকট উদ্ভিদ।"
"কতক গুলি খুবই সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করার আছে যার সাহায্যে আমরা ডাইকট এবং মনোকট উদ্ভিদ সহজেই সনাক্ত [Identify] করতে পারি। ডাইকট উদ্ভিদগুলির পাতায় জালের মত শিরাবিন্যাস, ফুলের বিভিন্ন অংশগুলির একক হয় চার কিংবা পাঁচের গুণিতক, শেকড় হয় একটি প্রধান-মূল এবং একাধিক শাখা মূল [Tap-root system] । অন্যদিকে মনোকট উদ্ভিদগুলির পাতায় সমান্তরাল শিরাবিন্যাস, ফুলের বিভিন্ন অংশগুলির একক থাকে তিন অথবা তিনের গুণিতক, আর শেকড় হয় গুচ্ছমূল [Fibrous-root system]."
ওপরের সারিতে ডাইকটস বা দ্বিবীজপত্রী বিভিন্ন গাছের ছবি; নিচের সারিতে মোনোকটস বা একবীজপত্রী বিভিন্ন গাছের ছবি
এই ছোট্ট ক্লাস শেষ করে বেণুগোপাল বললেন "আমি এই জায়গাটাকেই মাথায় রেখে বিজ্ঞানের এই বিষয়টা - 'প্ল্যান্টস-ক্লাসিফিকেশন' অর্থাৎ উদ্ভিদের বর্গীকরণ, আলোচনা করলাম। আশা করি তোমরা কোন দিন এটা ভুলবে না, কি বল? এই জায়গাটা তেমন খারাপ নয়, তাই না?"
পরে মিস্টার বেণুগোপাল উদ্ভিদের বর্গীকরণ নিয়ে আরোও কিছু তথ্য দিয়েছিলেন তাঁর বন্ধুদের। সেগুলি এখানেও সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হলঃ
এই বিবিধতা-পূর্ণ উদ্ভিদজগতের সমস্ত উদ্ভিদগুলিকে বিভিন্ন ছোট বড় বর্গতে আলাদা আলাদা করার জন্য সব-থেকে-বড়োর থেকে শুরু করে সব-থেকে-ছোটো পর্যন্ত যে বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস [Hierarchy] তা হল এই রকম :
জীববিজ্ঞানী অগাস্ট উইলহাম এইচলার, জন্ম ২২-শা-এপ্রিল, ১৮৩৯-সাল, জার্মানির শহর Neukirchen এতে, রীতিমত যুক্তিসঙ্গত ভাবে তিনি সম্প্রসারণ করেন উদ্ভিদ-জগতের বিশেষ বৈজ্ঞানিক এই শ্রেণীবিন্যাস :
(১)থ্যালোফাইটা, যার মধ্যে পড়ে শ্যাওলা, ছত্রাক এবং লাইকেন
(২)ব্রায়োফাইটা যার মধ্যে পড়ে মস্ এবং লিভারওয়াটস্
(৩)টেরিডোফাইটা যার মধ্যে পড়ে ফার্ন এবং হর্স-টেল
(৪)স্পরমাটোফাইটা যার মধ্যে আছে (i) জিম্নোস্পারম এবং (ii) এঞ্জিওস্পারম,
জিম্নোস্পারম উদ্ভিদগুলির বীজ অনাবৃত যেমন সাইকাস, পাইন ইত্যাদি আর এই এঞ্জিওস্পারম উদ্ভিদগুলির বীজের মধ্যে যদি দুটি বীজপত্র বা কটিলেডন থাকে, তাহলে বলা হয় (a) দ্বিবীজপত্রী বা ডাইকট আর যদি একটি মাত্র বীজপত্র থাকে তাহলে বলা হয় (b) একবীজপত্রী বা মনোকট।
একটি মজার নিমোনিক
একটি মজার নিমোনিক (mnemonic), উপরের পাঁচটি নামকে সহজে মনে রাখার জন্য বেশ উপযুক্ত <Thames in Britain, Pteropus in Gym, Anglo-Indians paired and single> Thames=থ্যালোফাইটা মনে রাখার জন্য, Britain=ব্রায়োফাইটা, Pteropus=টেরিডোফাইটা, Gym=জিম্নোস্পারম, Anglo-Indians=এঞ্জিওস্পারম, paired=ডাইকট বা দ্বিবীজপত্রী, এবং single=মনোকট বা একবীজপত্রী ।
গ্রাফিক্সঃ মহাশ্বেতা রায়