হাতে দিন দুয়েকের ছুটি, কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু ট্রেনে লম্বা লম্বা ওয়েট লিস্ট। মন খারাপ না করে কলকাতা থেকে মাত্র ১৫০ কিমি দূরে অবস্থিত মল্ল রাজাদের সাম্রাজ্য 'মন্দির শহর' বিষ্ণুপুরে পৌঁছে যেতে পারো রেল পথ বা সড়ক পথে।
বহুকাল আগে বিষ্ণুপুরে শাসন করতেন মল্ল রাজারা। তাঁদের সময়কালের বিভিন্ন স্থাপত্যের মধ্যে অন্যতম হল মাকড়া পাথরের তৈরি টেরাকোটার কাজ করা অপূর্ব সুন্দর সব মন্দির। বর্তমানে কালের নিয়মে ক্ষয়প্রাপ্ত মন্দির গুলিকে সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে Archaeological Survey of India।
আমার দুদিনের সফরে বিষ্ণুপুরে থাকার আস্তানা ঠিক করেছিলাম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগের ট্যুরিস্ট লজ।
সাঁতরাগাছি থেকে সকাল ৬.২৫ এর রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস করে বিষ্ণুপুরে পৌঁছেই দরদাম করে একটা টোটো নিয়ে মন্দির দর্শন করতে বেরিয়ে পড়লাম। নামে মন্দির হলেও অধিকাংশ মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। রাসমঞ্চ দিয়ে ভ্রমণ শুরু হল, কারণ ওখান থেকেই টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। পুরাতত্তের ছাত্র কিংবা পুরাতত্ববিদ না হলেও মন্দির গুলো দেখতে আর টেরাকোটা কাজের ছবি তুলতে বেশ ভালো লাগছিল। বেশ কিছু মন্দির ধংসপ্রায় হয়ে গেলেও এখনো কিছু মন্দির অক্ষত আছে। একে একে ঘুরে দেখলাম, রাসমঞ্চ, শ্যামরাই মন্দির, গুম ঘর, লালজি মন্দির, ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজবাড়ি, ছোট প্রবেশ দ্বার, বৃহৎ প্রবেশ দ্বার, জোড় বাংলা, ছিন্নমস্তা মন্দির, দলমাদল কামান। মন্দিরের দেওয়ালে পশু পাখি, কৃষ্ণলীলা, দশাবতার ও অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনী ভাস্কর্যে রূপায়িত হয়েছে। সমস্ত কিছু দেখতে দেখতে নিজেও যেন মল্ল রাজার আমলে পৌঁছে গেছিলাম।
অনেক মন্দির দর্শন হলেও কেন জানি মনটা খুতখুঁত করছিল। মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করার সময় দেখতে পেলাম ছিন্নমস্তা মন্দিরের রাস্তা দিয়ে সোজা গেলে আরো কিছু মন্দির আছে। ঠিক করলাম শেষ দিন সকাল সকাল দেখতে যাবো মন্দির গুলো।
যেমন ভাবা তেমনি কাজ। পরদিন ভোর হতেই পদব্রজে বেরিয়ে পড়লাম। ছিন্নমস্তা মন্দির ছাড়িয়ে খানিকটা যাওয়ার পরেই চোখের সামনে উন্মুক্ত হয়ে পড়ল প্রকৃতির কোলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা পর পর অনেক গুলি মন্দির, দেখেই মনের মধ্যের খুঁতখুঁতে ভাবটা উধাও হয়ে গেল। অনেক সময় নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নন্দলাল মন্দির, জোড় বাংলা শ্রেণী, কালাচাঁদ মন্দির, রাধমাধব মন্দির দেখলাম। শুধু এই নয় পায়ে হাঁটার ফলে দেখতে পেলাম অনেক বাড়ির মধ্যেও টেরাকোটার মন্দির লোকচক্ষুর আড়ালে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে।
এবার পরে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো বাড়ি ফেরার আগের মুহূর্তে দেখতে গেলাম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের 'আচার্য যোগেশচন্দ্র পুরাকৃতি ভবন', পুরাকৃতির নির্দশনে বোঝাই করা সংগ্রহশালা।
কী করে যাবেঃ
শালিমার থেকে ২২৮৬১ আদ্রা রাজ্য রাণী এক্সপ্রেস সকাল ৬.৩০(সোম, শুক্র, শনি)
শালিমার থেকে ১২৮৮৫ আরণ্যক এক্সপ্রেস সকাল ৭.৪৫( রবি বাদে)
সাঁতরাগাছি থেকে ১২৮৮৩ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস সকাল ৬.২৫ (রোজ চলে)
সড়ক পথেঃ
ধর্মতলা থেকে এসবিএসটিসি ও বেসরকারি বাস যাচ্ছে সোজা বিষ্ণুপুরে। এছাড়া বাংলাশ্রী এক্সপ্রেস আছে। নতুবা আরামবাগ গিয়ে সেখান থেকে প্রচুর বাস যাচ্ছে বিষ্ণুপুরে।
কোথায় থাকবেঃ
১. পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগের বিষ্ণুপুর ট্যুরিস্ট লজ, বুকিং- https://www.wbtdcl.com/home/lodge_search?Lodge_id=MTU&Lodge_destinationName=MTM
২. পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নবনির্মিত বিষ্ণুপুর যুবা আবাস, বুকিং- https://youthhostelbooking.wb.gov.in/pages/SearchAvailability.aspx
৩. একটু নিরিবিলিতে থাকতে চাইলে কৃষ্ণ বাঁধের কাছে পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য উন্নয়ন নিগমের সুন্দর থাকার জায়গা আছে, বুকিং- http://wbsfdc.com/tourism