সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

একটা গোটা দেশ দেখা, তার সম্বন্ধে জানা, তার মানুষ চেনা, তার সংস্কৃতিক সম্পদের ইতিহাস বোঝা... আরও কত কী, কয়েকবার ঘুরলেও শেষ হয়না! জর্জিয়াতে কাতার নিবাসীদের ফ্রি এন্ট্রি , কোনো ভিসা লাগেনা, আর কাতার থেকে জর্জিয়া ফ্লাইটে মাত্র ৪ ঘন্টা লাগে। আমরা এখন কাতারের বাসিন্দা, তাই আমরা ছুটি কাটানোর জন্য এই দেশটাকে টার্গেট করলাম। ভাবলাম একবার ঘুরে আসি... দেশটাকে একটু দেখে আসি , কিন্তু একবার ওখানে গিয়ে আর ফিরে আসার ইচ্ছে হলনা। সব কিছু এতো ভালো লাগল.... ঠিক যেমন নিজের দেশকে ভালোবাসি .... তেমন ... প্রত্যেক বছর যেমন নিজের দেশের মাটিতে ফিরে যাই...ঠিক তেমন বার বার ফিরে যেতে ইচ্ছে হল। একবার গেলাম মার্চ'১৭, আবার গেলাম সেপ্টেম্বর'১৭। মার্চ মাসে জর্জিয়া গিয়ে প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে গেলাম আমরা - হটাৎ রাতে বরফের ঝড়, চারিদিক মুহূর্তে সাদা চাদর দিয়ে কে যেন ঢেকে দিলো, পারা পড়লো ২ ডিগ্রিতে। তবে আরো বেশি বরফ দেখতে হলে ডিসেম্বর-জানুয়ারী তে যেতে হবে ।সেপ্টেম্বরে আবার সেই দেশের একেবারে অন্য চেহারা। আমাদের আবার যাওয়ার ইচ্ছে আছে।

জর্জিয়া ভ্রমণে আমার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী সাগরিকা এবং কন্যা শ্যামন্তী। এই গত দুই বারে আমরা কী-কী দেখলাম, শুনলাম, খেলাম, ঘুরলাম..... সেইসব তথ্য কয়েকটা ছবির সাহায্যে তোমার কাছে পৌঁছোবার চেষ্টা করলাম। যদি সুযোগ পাও, তাহলে অবশ্যই ঘুরে এসো জর্জিয়া।

এই দেশের চার দিকে রয়েছে রাশিয়া, টার্কি, আরমেনিয়া, আজারবাইজান; পঞ্চম দিকে 'কৃষ্ণ সাগর' মানে Black Sea। জর্জিয়ার রাজধানী শহর হল তিব্‌লিসি, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি হল - বাতুমি, কুতাইসি, গোরি, বরজমি ।

Mtskheta পাহাড় চূড়ায় Jvari খ্রীষ্টান সনাতন মঠ - এখানে St. Nino-র গ্রেপ-ভাইন ক্রস সংরক্ষিত আছে । একটি বিরল তথ্য জানতে পারলাম – Grape Vine অর্থাৎ দ্রাক্ষালতা দিয়ে বানানো ক্রস, শুধু মাত্র জর্জিয়া-তেই পাওয়া যায়।
Jvari মঠ থেকে এক অভাবনীয় দৃশ্যে আমরা অনেক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেছিলাম - ঘোলা কাদাটে Mtkvari নদী এবং নীল স্বচ্ছ নদী Aragvi-র সঙ্গম স্থল । কথায় আছে - এই জায়গায় জর্জিয়ার মহারানী নানা এবং আইবেরিয়ার রাজা তৃতীয় মিরিয়ান , St. Nino-র দ্বারা খ্রীষ্টান ধর্মে ব্যাপটাইজ্‌ড্‌ হন । মহারানী নানার শারীরিক অক্ষমতাকে St. Nino নিজের অলৌকিক শক্তির দ্বারা দূর করে দিয়েছিলেন । তাই St. Nino-র ওপরে মহারানীর অগাধ বিশ্বাস গড়ে ওঠে।
আর্মেনিয়ার রাজার দেওয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে পালিয়ে জর্জিয়ায় ঢুকে পড়েন St. Nino। বড় কোনো গাছের ডাল না পেয়ে, দ্রাক্ষালতা দিয়েই ক্রস বানিয়ে, নিজের ইষ্টদেবতা যীশু খৃষ্টের নাম জপ করতে থাকেন । দ্রাক্ষালতা কী দিয়ে বেঁধেছিলেন জানো? নিজের চুল ছিঁড়ে দড়ি বানিয়ে, বেঁধেছিলেন ।
জর্জিয়ার পুলিশ হেড কোয়ার্টার এবং সব পুলিশ স্টেশন, কাঁচের তৈরী - কেন? এতে নাকি জর্জিয়ার পুলিশ কতখানি স্বচ্ছ ও সত্যবাদি, বোঝা যায়!
Svetitskhoveli Cathedral, Mtskheta; Sveti মানে 'স্তম্ভ বা খুঁটি' আর tskhoveli মানে 'জীবন দান'। এই স্তম্ভ আর জীবন দানের কথা একটু পরেই বলছি।
সিডার গাছের গুঁড়ি দিয়ে বানানো ক্রস - হাজার বছর পুরোনো, অথচ কোনো রকম ভাবেই নষ্ট হয়নি । কী করে? সেটাও একটু পরে বলছি!
Svetitskhoveli গির্জার ভেতরে সিদোনিয়া-র কবর । কিংবদন্তি বলে - ইলিয়াস, এক ইহুদি, যে যীশু খ্রিস্টের ক্রুশারোহনের সময় তাঁর পরনের কাপড় নিয়ে ফিরে আসে । ইলিয়াসের বোন সিদোনিয়া, গির্জা ঘরের ভেতরে সেই কাপড় হাতে নিতেই মারা যায় । কাপড়টি সিদোনিয়ার হাত থেকে টানাটানি করেও বের করা যায়নি, তাই তাকে কাপড় সমেত সেই গির্জাতেই কবর দেওয়া হয় । সেই কবরের ওপর স্তম্ভটি থেকে আজও জীবনদায়িনী অলৌকিক শক্তি সম্পন্ন এক তেল বেরহয় । ওই কবর থেকেই উঠে আসে সেই সিডার গাছ । এবার বুঝলে Svetitskhoveli নামের মানে?
এখানকার বাচ্চারা উলের খেলনা দিয়ে খেলতে ভালোবাসে
Churchkhela (উচ্চারণঃ চার্চখেলা) - আঙুরের রস দিয়ে মাখা ময়দার খোলস এর ভেতর শুকনো ফল - আখরোট, পেস্তা, বাদাম, কাজু, মোনাক্কা আরও অনেক কিছু । বেশ খেতে!
জর্জিয়ার রাজা – কিং তামার… ভুল বললাম ?? না না .... রাজা তৃতীয় জর্জের-এর মেয়ে, কিন্তু যখন সে সিংহাসনে বসলো, তার রূপ-গুণ, দক্ষতা-ক্ষমতা ছাপিয়ে গেলো বাকি সকলকে । তাই সে King Tamar, পৃথিবীর একমাত্র মহিলা রাজা।
জর্জিয়ার প্রচলিত প্রবাদ - বিবাহযোগ্য ছেলের বাড়িতে যদি ঝুল-বারান্দা না থাকে, তার বিবাহ খারিজ । কারণ ? বাড়ির বৌ-রা পরনিন্দা-পরচর্চা করবে কেমন করে? বোঝ কান্ড!
তামাডা - জর্জিয়ান Supra Toastmaster মানে ভোজ-এর ঘোষক - বাক্পটু, বুদ্ধিমান, চতুর-চালাক, কুশাগ্রবুদ্ধি, কৌতুকরসবোধ যুক্ত এক অসাধারণ মানুষ, ভূত-বর্তমান-ভবিষৎ কে এক সূত্রে একই টেবিলে বাঁধার অকল্পনীয় দক্ষতা রাখতেন তাঁরা।
রাতের অন্ধকার যেন কোথায় হারিয়ে গেছে - ঝলমলে তিবলিসি শহরে
টোনিস্ পুরি - জর্জিয়ান আটার রুটি, বেক করা হয়েছে টোন-এ, জর্জিয়ার দেশীয় উনুন
এটা খিদে নয়, এটা খাবারের প্রতি ভালোবাসা - টোনিস্ পুরি , সঙ্গে চিজ আর দিশি মুরগির ডিম্ ভাজা - এইটুকুই যথেষ্ট আমাদের মতন খাদ্যপ্রেমিক-দের বার-বার জর্জিয়ায় ফিরে যাওয়ার জন্য । সঙ্গে ক্ষেতের টমেটো ও শশা.... খাবার চোটে ছবি তোলার সময় হয়নি ।
জর্জিয়ান সুরাপান করার হরেক রকম 'পিয়ালা'... আমরা যেটাকে 'পেয়ালা' বলি । বেশ মিল আছে .... কী বলো?
এই সুন্দর Bodbe Monastry তে চির-ঘুমে শুয়ে আছেন St. Nino.
Bodbe Monastry-র সন্ন্যাসিনীরা নিজেরাই বাগান করেন, শাক-সবজির ফসল ফলান,...সব কাজ নিজেরাই করেন।
Signagi,ভালোবাসার শহর, এখানে ২৪ ঘন্টা ৩৬৫ দিন বিয়ের লগ্ন .... মানুষ-জন বেশ মিশুকে; ব্যাকগ্যামন খেলা এখানে বেশ জনপ্রিয় ।
Khinkali ( কিনখালী ) ... ভেতরে মেদ-যুক্ত মাংসের কীমা .... ভাপে রাঁধা - অনেকটা বড় আকারের মোমোর মতন । আমাদের জীবনের মৌলিক শান্তি ।
জর্জিয়ান আংটি পরে আমাদের গাইড ডায়ানা ডামেটরাদজে - জন্মগতভাবে রাজবংশীয় ককেশিয়ান মানুষ
শিল্পী-র স্থান ফুটপাথে, তবে তার শিল্পের স্থান হয়তো কোনও প্রাসাদে হবে ।
আকাশ থেকে ধবধবে সাদা গুডাউরি স্কি রেঞ্জ - ছবিটা তোলার সময় প্যারাগ্লাইডিং করছিলাম; হৃৎপিন্ডটা একহাতে ছিল আর ক্যামেরা অন্যহাতে ।
পূর্ব জর্জিয়ার Mtkvari নদীর ধারে প্রাচীন গুহা শহর – Uplistsikhe, মানে 'দেবতার দুর্গ' - একবার ভেতরে গেলে বেরোবার জো নেই
জর্জিয়ান কাশফুল - একটু খয়েরি রংএর ছোট ফুল, তবে আমাদের দেশের কাশ ফুলের কথাই আলাদা ।
Borjomi পার্ক – মিঠে জলের উৎস, লোকে বোতলে করে নিজেদের সারাদিনের পানীয় জলের ব্যবস্থা করে নেয় ।
বাম হাতে সুরাপাত্র নিয়ে সকল মিত্রকে আপ্যায়ন এবং ডান হাতে তরবারি নিয়ে সকল শত্রুদের পাল্টা জবাব দিতে সদা প্রস্তুত কার্টলিস ডেডা, অর্থাৎ জর্জিয়া দেশের মা । তিবলিসি শহরের এক পাহাড়ের মাথার ওপর রয়েছে এই ২০ মিটার উঁচু অ্যালুমিনিয়ামের মূর্তি।
এই পাহাড়ি গাছের লাল শেকড় দিয়ে তৈরী হয় Ester Eggs-কে রং করার এক সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক জলীয় দ্রবণ
জর্জিয়ান কলাই প্রভৃতি মধ্যে "লোবিয়া" খুব পুষ্টিকর এবং জনপ্রিয় ।

সেপ্টেম্বর এ যখন আবার জর্জিয়া গেলাম, তখন অনেক কিছুই পাল্টে গেছে । বুঝতে পারলাম, এই সুন্দর পরিবর্তন কিন্তু মানুষ করেনি, এইরকম বৈচিত্র শুধুমাত্র প্রকৃতিই আনতে পারে ।

প্রমেথেউস - গ্রীক অতিকথা অনুযায়ী, স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করেছিলেন। প্রমিথিউসের এই মূর্তি আছে Borjomi central park-এ।
প্রমেথেউস গুহা - কোন ছবিটা যে তোমাদের দেখাবো.... খনিজ ক্ষরণ থেকে যে এতো সুন্দর ভাস্কর্য হতে পারে.... ভাবা যায়না
জামের মত রসাল ফলবিশেষ - জর্জিয়ার রাস্তার আসে পাশে খুব দেখা যায় .... যত ইচ্ছে খাও!
এই দৃশ্য শহরের একটু বাইরে অনেক দেখা যায় - বাচ্চারা আপেল গাছের নিচে খেলছে আর যত ইচ্ছে আপেল খাচ্ছে!
এই বেগুণী রঙের আঙ্গুর - ছোট ছোট বেগুন বলা যেতে পারে – Saperavi/ সাপেরাভি - জর্জিয়ান লাল আঙ্গুর - এটি জর্জিয়ান লাল মদ তৈরির জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ।
আঙুরের ক্ষেত - মাইলের পর মাইল শুধু দ্রাক্ষাক্ষেত্র ।
Mtsvane-জর্জিয়ান ভাষায় 'সবুজ' - এই আঙ্গুর জর্জিয়ান মদে সুগন্ধি যোগায়।
আতামি - জর্জিয়ান পীচ ফল - এতো হয়েছে যে বেচারা গাছটাই আর ভার সামলাতে পারছে না।
Kliavi - জর্জিয়ান লাল প্লাম - যে কোনো জর্জিয়ান এর বাড়িতে এই ফল থাকবেই - কারণ এর থেকে তৈরী হয় – জর্জিয়ান sour plum sauce
যে কোনো বড় রাস্তার ধারে এই রকম ভাবে নানান ধরণের স্থানীয় ফল বিক্রি হয় - এতো মিষ্টি এতো রসালো যেন আজও মুখে লেগে আছে ।
1084-
পাহাড়ের ওপরেও কোনো ব্যতিক্রম নেই; গ্রামবাসীরা নিজেদের বাগানের আঙ্গুর, ব্লুবেরি, বিক্রি করে - তবে এরা টেস্ট করার জন্য এতো খাওয়ায় যে আর কিনতেই হয়না । তবে আমরা কিনেছিলাম!
ঘোড়সওয়ার মেষপালক - পাহাড়ের সবুজ কচি ঘাস খেতে নিজের পরিবারকে রাস্তা পেরোতে সাহায্য করছে ।
Kazbegi কাজবেগী মঠ - পাহাড়ের ওপরে অবস্থান হলেও, রাশিয়ার আক্রমনের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি
কার্তুলি - ভালোবাসার নাচ - নর্তকীর নয়ন সর্বদা নিম্নগামী, মনে হয় যেন রাজহংস দীঘির শান্ত জলে বিচরণ করছে । নর্তক একটু দূরে নাচে, তার দৃষ্টি সর্বদা নর্তকীর দিকে।

মার্চ ও সেপ্টেম্বর এর পার্থক্য ৫ মাস - কিন্তু প্রকৃতি যেন প্রতিদিন পাল্টায়; জর্জিয়া যেন এক অন্য জগৎ!

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা