সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

"প্রজাপতি, প্রজাপতি কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা"- কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই জনপ্রিয় পংক্তিটি আমাদের প্রজাপতির সৌন্দর্যের নিপুন ইঙ্গিত যেমন দেয় তেমনি প্রজাপতির প্রতি আমাদের কৌতুহল কে উস্কে দেয়।

তোমার জন্য নিয়ে এলাম আমাদের আশেপাশে দেখতে পাই এমন কিছু প্রজাপতির ছবি। রয়েছে মূককীট এবং শুককীটের ছবিও।সাথে দিলাম প্রজাপতি বিষয়ে কিছু তথ্যও।


(ছবি বড় করে দেখার জন্য প্রতিটি ছবির ওপরে ক্লিক কর)

প্রজাপতির ডানার রঙ বৈচিত্র্য আমাদের আনন্দ দিলেও প্রজাপতির কাছে এটা আত্মরক্ষা এবং সঙ্গী নির্বাচনের হাতিয়ার। সাধারণত খাদ্য থেকে পাওয়া নানা রাসায়নিক এই রঙের জন্য দায়ী। প্রজাপতির ওপর পাখনা রঙিন হলেও নিচের অংশ হাল্কা অথবা ধূসর হয় যাতে ডানা মুড়ে বসলে শত্রুর চোখে ফাঁকি দেওয়া যায়। কিছু কিছু প্রজাপতি তার খাদকের কাছে বিষাক্ত হলেও পতঙ্গ কুলের মধ্যে প্রজাপতিই একমাত্র পতঙ্গ যা কোন ভাবেই আমাদের অনিষ্ট করেনা, কামড়ায় না, হুল ফোটায় না, কোনও রোগ বহন করে না। শুধু রঙিন ডানা মেলে ফুলে ফুলে উড়ে পরাগ সংযোগ ঘটায় ও পরিবেশে গাছের বিস্তারে সাহায্য করে। মানব সমাজে, নানা দেশে নানা আনন্দ অনুষ্ঠানে প্রজাপতির প্রতীক এমনকি জীবন্ত প্রজাপতি ব্যবহার করা হয় ।

সর্বশেষ তথ্য আনুসারে ভারতে প্রায় ১৫০১ রকমের প্রজাপতি পাওয়া যায়। তাদের আকার, আকৃতি ও রঙ আলাদা আলাদা আর সেই সব পার্থক্য দেখেই তাদের আমরা চিনতে পারি।

তুমি কি শুঁয়োপোকা দেখেছ? হয়ত তুমি শুঁয়োপোকা দেখে ভয় পেয়েছ হয়তো তাদের নষ্ট করে ফেলেছ, কিন্তু তুমি জান ওই কি শুঁয়োপোকাটাই গুটি বাধবে আর সেই গুটি কেটে বের হবে এক অপূর্ব সুন্দর প্রজাপতি !

এসো দেখা যাক ব্যাপারটি কি ভাবে হয়, এক এক ধরনের প্রজাপতি এক এক ধরনের গাছের পাতার তলায় ডিম পারে। সেই ডিম কোনটা গোল , কোনটা লম্বাটে আবার কোনটা তরমুজের আকৃতির। ডিম সাদা, হালকা হলুদ-সবুজ রঙের হয়। ডিম পাড়ার ২-৪ দিনের মধ্যে শূককীট(শুঁয়োপোকা) বের হয়। তোমার তো খেতে যত আপত্তি, নানা রকম খাবার এর বায়না করো, কিন্তু শুঁয়োপোকা তাদের পছন্দের গাছের পাতা গপগপ করে খায়। তখন খাওয়া তাদের একমাত্র কাজ। বেশ মোটাসোটা হলে একটা নিরাপদ জায়গায় গুটি(মূককীট) বাঁধে ও স্থির হয়ে থাকে। আসলে গুটির মধ্যে তখন চলতে থাকে দ্রুত ভাঙা গড়ার খেলা। অবশেষে গুটি কেটে বেরিয়ে আসে অপূর্ব সুন্দর এক প্রজাপতি।অনেক সময় পর গুটি থেকে বেরিয়ে প্রজাপতি ওই গুঁটির ওপরই বসে থাকে- যেন ঘুম ছাড়ায়। ওই সময় সূর্যের তাপে ডানার রক্তচাপ বাড়তে থাকে তার পরেই শুরু হয় ওড়া। প্রজাপতিদের এই জীবনচক্র যদি খুব কাছ থেকে দেখতে চাও তবে প্রজাপতিদের জন্য কিছু গাছ লাগাতে হবে। আমাদের শহুরে চোখে যেগুলো আগাছা যেমন, পু্টুশ, আশশ্যাওড়া, হাতিশুঁড়, ঘেঁটু, আমরুলি- এগুলি প্রজাপতিদের প্রিয়। আবার লেবু , কুল, কারিপাতা গাছও প্রজাপতির প্রিয়। আমরা শখের বাগানে ও টবে যেসব ফুলগাছ করি যেমন গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, এগুলো কিন্তু প্রজাপতিদের একদমই প্রিয় নয়। তাই ফুলের গাছের পাশে প্রজাপতিদের প্রিয়(ধারক) গাছ থাকলে তবেই প্রজাপতি আসবে।

আগেই জেনেছ রঙ প্রজাপতির আত্মরক্ষা ও সঙ্গী নির্বাচনের হাতিয়ার। এছাড়া অন্য প্রজাপতিকে নকল করেও আত্মরক্ষা করে। যেমন বিষাক্ত ধরনের প্রজাপতিকে নকল করে অবিষাক্ত প্রজাপতি শত্রুকে বোকা বানায়। ঋতু ভেদেও প্রজাপতি রঙ পরিবর্তন করে।

অনেক সময় দেখবে ভিজে মাটিতে এক বা একাধিক প্রজাপতি বসে আছে। আসলে তারা মাটি থেকে জল, নানা প্রোটিন, খনিজ লবণ ইত্যাদি সংগ্রহ করছে জীবন ধারণ ও বংশবিস্তার করার জন্য। কোন কোন সময় একই কারণে প্রাণীর বিষ্ঠাতেও বসে থাকে। উত্তরবঙ্গের বালা নদী, জয়ন্তি নদীর চরে এমন হাজার হাজার প্রজাপতির মেলা দেখা যায়।

এতদূর পড়ে, ইচ্ছা করছে তে প্রজাপতি দেখতে আর তাদের সাথে ছোটাছুটি করে খেলতে খেলতে তাদের চিনতে? তাহলে আর দেরী না করে মা, বাবা, শিক্ষক, শিক্ষিকার সাথে চলে এসো প্রজাপতি বাগানে।

কোথায়??????? কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমরিয়াল হলের কাছে মোহরকুঞ্জ, সল্টলেক বিকাশভবনের কাছে বনবিতানে, রাজারহাটে ইকোপার্কে, তারাতলা নেচার পার্কে, চিন্তামনিকর পক্ষী অভয়ারণ্যে অথবা বাড়ির আশেপাশে, জলার ধারে যেখানে ঝোপঝাড় আছে তেমন জায়গায় লক্ষ্য কর, দেখবে রূপের ডালি আর রঙের বাহার নিয়ে হাজির আছে আমাদের রঙিন বন্ধুরা।


তথ্যসূত্রঃ পশ্চিমবঙ্গের প্রজাপতি, যুধাজিৎ দাসগুপ্ত

শৌনক ব্যানার্জি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষাবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চায়। শখের মধ্যে পোকামাকড়ের ছবি তোলা আর প্রচুর ভ্রমণ।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা