মোষ
গরু নিয়ে সবাই লেখে
তার রচনা কেউ কী শেখে ?
কালো বলেই মনে মনে
সক্কলের আক্রোশ ।
মোষ কি এতই খারাপ নাকি,
আচ্ছা একটা ছবি আঁকি;
ক্যানভাস হোক বিশাল তেপান্তর;
দেখতে পাবে গাম্ভীর্য তার
স্পষ্ট হবে সে কত সুন্দর ।
মনে কর মোষের পিঠে
বসে আছে চালক ।
চালক মানে, বাঁশের বাঁশি হাতে
এক সাঁওতাল বালক ।
মোষ চলেছে ধীরগতিতে
অল্পখানিক ওপরদিকে তোলা
মুখে যেন বিষণ্ণতার ছাপ;
ভয়-ধরানো শিঙ হলে কী !
চোখদু’টি নিষ্পাপ ।
মোষ চলেছে মোষ চলেছে
একটুও নেই তাড়া;
বই-এর পাতায় হারিয়ে গেলেও
রাখাল পিঠে সওয়ার বলেই
সে নয় দিশাহারা ।
শাল-পিয়ালের ফাঁক দিয়ে যায় দেখা
পাহাড়তলির ঢালে
দু’চারখানি ঘর, তারই টিনের চালে
ঢলতে-থাকা সূর্যের লালরঙ
আছড়ে পড়ে ঠিকরে আসে
মোষের চোখে আর বালকের গালে ।
শেষ হচ্ছে দিন
একটু পরেই গ্রামটা হবে
অন্ধকারে লীন ।
আবছা আলোয় সেই ছবিটি যেন
কালো পাথর দিয়ে খোদাই করা
মানুষ-পশুর ভালবাসার ছবি,
মা-প্রকৃতির নিজের হাতে গড়া ।
ছবি দেখে হচ্ছে না কী মনে
কী মায়াময় শান্ত-শিষ্ট মোষ ?
তবুও কেন ঠাঁই পায় না
কারোর রচনাতে !
তাই তো আমার মনের ভিতর
প্রবল অসন্তোষ ।
আসল কথা— বানায় যারা সিলেবাস
সবকিছুকে দেখার জন্য
পায় না যারা অবকাশ,
এসব তাদের ইচ্ছাকৃত দোষ ।
ছবিঃ পার্থ মুখার্জি