কে মেরেছে, কে ধরেছে, কে দিয়েছে গাল?
খুব কেঁদেছ, চোখ ফুলেছে, মুখ হয়েছে লাল?
আজকে বুঝি পড়তে বসার একটুকু নেই ইচ্ছে?
খুব উচাটন মন অকারণ, সবাই বকা দিচ্ছে?
আমার পাশে একটু বসো, গল্প বলি একটা।
পড়ার সময় রইল পড়ে, নামিয়ে রাখো ব্যাগটা।
তোমার মতই রাজকুমারী একটি ছিল মিষ্টি -
পড়ার ঘরে মন টেঁকে না, বাইরে কেবল দৃষ্টি।
বাবামায়ের চোখ এড়িয়ে পালিয়ে যাবার ফন্দি,
ভীষণ রেগে রাজামশাই করল ঘরে বন্দী।
বিদঘুটে এক ডাইনিবুড়ি জুটল এসে শেষটায়,
ভুল বুঝিয়ে কন্যে নিয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টায়।
ফুসমন্তর হাবড়জাবড় কত কিছুই পড়ল -
বন্ধু সেজে রাজার মেয়ের হাত দু'খানি ধরল।
যেই না ছোঁয়া, অমনি মা গো বলছি তোমায় সত্যি-
পাতালঘরে কয়েদ হল, দারোয়ান এক দত্যি।
খুব দেরিতে ডাইনিবুড়ির শয়তানি সে বুঝল -
গরাদ ধরে কাঁদল কতই, কতই মাকে খুঁজল।
রাজ্য জুড়ে নামল আঁধার, কেঁদেই রানী অন্ধ,
রাজার চোখে পড়ল কালি, সভার কাজ ও বন্ধ।
মন্ত্রী সেপাই সান্ত্রী মিলে পেলেন নাকো সূত্র,
দেশ বিদেশের হাজার রাজার এলেন হাজার পুত্র।
ঢাল তলোয়ার তীর ধনুকে বেজায় রণসজ্জা!
মেয়ের তবু খোঁজ মেলে না, বাপ্রে সে কী লজ্জা!
শেষকালে এক বদ্যি এল - নয়কো মিছে গল্প -
চুল পড়েছে, দাঁত নড়েছে, মনের বয়স অল্প।
আমার মতই বাহাত্তুরে, আমার মতই দস্যি,
আমার মতই পান খেত সে, নাকেও নিত নস্যি।
বললে বুড়ো, "রাজকন্যে জলের তলায় বন্ধ।
ডাইনি তাকে চিবিয়ে খাবে, নেইকো তাতে সন্দ।
যুদ্ধজাহাজ করবে না কাজ, নাও কাগজের গড়বে।
অংক বইয়ের লাগবে পাতা, ছোট্ট শিশু চড়বে।
অস্ত্রশস্ত্রে কাজ কী বাপু - ওসব বড় বিশ্রী!
দৈত্যদানব বশ মানাবে? নাও পকেটে মিছরি।
একটি দু'টি ধরিয়ে দেবে, মুখে পুরেই ঠান্ডা,
মারামারির নাই প্রয়োজন, লাগবে নাকো ডান্ডা।
দরজা খুলে কন্যে তুলে আসবে নিয়ে চুপচাপ -
হেঁড়ে গলায় চেল্লাবে না, চলবে নাকো ধুপধাপ।
সব কিছুতে যুদ্ধ খোঁজা মোটেই ভাল কাজ না!
যাও বাড়ি যাও, যুদ্ধ বরং কালকে হবে, আজ না।"
রাজকন্যে ফিরল দেশে, ডাইনি গেল কাঁদতে।
দৈত্য গেল মিছরি কিনে বোঁচকা করে বাঁধতে।
রাজারানী স্বস্তি পেলেন, রাজ্য জুড়ে রোশনি।
বীরপুরুষরা কোথায় গেলেন, আমরা এসো খোঁজ নিই।
ছবিঃ শিল্পী ঘোষ