সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
 বন্ধু

নাহ্ !! আজ আর রাজকন্যের মনটা একটুও ভালো লাগছে না।
রাণীমা এত্ত যত্ন করে কিশমিস কাজু দেওয়া গোবিন্দভোগ চালের পায়েস রেঁধে আনলেন। রুপোর বাটিতে সোনার চামচ গোঁজা সাদা ধবধবে মিষ্টি গন্ধওয়ালা পায়েস। রাজকন্যের ভারী প্রিয়, তাও এতটুকুনিও মুখে ছোঁয়াল না কন্যে। খেলতেও গেল না সখীদের সাথে।

স্বয়ং রাজা বিক্রমজিৎ দরবারের সব কাজ ফেলে অন্দরমহলে এসে মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে কত্ত গল্প শোনালেন। বাঘ শিকারের গল্প, হরিণ শিকারের গল্প। তাতে তো কন্যের মন গললোই না উল্টে ইয়াব্বড় মুক্তোর মত জলের ফোঁটা টপ টপ করে গড়াতে লাগল চোখ দিয়ে।
রাজামশাই তো আরোই শশব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন,

"কীসের কষ্ট, কাঁদিস কেন?
বল'না আমায় মা!
মুখের কথা খসলে পরেই
পাবি যা চাই তা। "

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কোনোক্রমে রাজকন্যা ইন্দুমতী বলল,

"মানুষ এত দুষ্টু কেন
পশু শিকার করে!
বাবা তোমার তীর ধনুকে
কেউ যেন না মরে।"

এই শুনে তো রাজামশাই সঙ্গে সঙ্গে সারা রাজ্যে পশু শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। সাথে সাথে এও ঘোষণা করলেন পশুপাখিদের জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হবে। আর সেখানে যদি কোনো শিকারী বা ব্যাধ নিরীহ পশুদের আক্রমণ করে, তাহলে তক্ষুনি তাদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে।

এই শুনে রাজকন্যের সোনার বরণ মুখে প্রতিপদের চাঁদের মত একফালি হাসি খেলে গেল। কিন্তু সে মোটেই বেশিক্ষণের জন্য নয়। আবার হাসি মিলিয়ে গিয়ে ঘোর অমাবস্যে নামল।

এবার এলেন রাজকন্যের প্রিয় দাদাভাই, রাজ্যের রাজপুত্তুর ইন্দ্রকুমার, বোনকে ভোলাতে। এমনিতে ভাই বোনে দিন রাত্তির খুনসুটি লেগেই আছে। এই একজন বোনের চুল ধরে টেনে দিয়ে পালাচ্ছে একজন তো অন্যজন দাদার পাঠশালের পুঁথি লুকিয়ে দিচ্ছে।
 
কিন্তু যত ঝগড়াই হোক তবুও বোনের চোখে জল মোট্টে দেখতে ভালো লাগছেনা ছোট্ট রাজপুত্তুরের। তিনি তো অঙ্গভঙ্গী করে মজার মজার ছড়া বলে হাসানোর চেষ্টা করতে লেগে পড়লেন,

"হিহি হাহা হোহো
রাশি রাশি হাসি!
খক খক খুক খুক
হাঁচি আর কাশি!"

তাতেও রাজকন্যে হাসে না। তখন রাজপুত্তুর সোনার দাঁড়ে ঝোলানো ময়না পাখিটাকে এনে রাজকন্যের সামনে রেখে তার লেজ ধরে টানতে লাগলেন। ভাবলেন রাজকন্যে বুঝি ভারী মজা পাবে।
কিন্তু ও মা !! মজা কোথায় রাজকন্যে কাঁদতে কাঁদতে ছুট্টে গিয়ে ময়নার পায়ের রুপোর বেড়ি খুলে দিলেন। ওমনি ময়না ফুড়ুৎ।
রাজপুত্র তো রেগে চীৎকার করতে যাবেন তক্ষুনি ওই একরত্তি মেয়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠল,

"দাদাভাই তুমি দুষ্টুমি করলে যখন গুরুমশাই, বাবা তোমায় শাস্তি দিয়ে ঘরে বন্ধ করে রাখেন, তোমার ভালো লাগে? আর ময়না তো কোনো দুষ্টুমিই করেনি। ও তবে কেন বন্দী থাকবে বলো?"

এর উত্তরে তো কারোর মুখে আর কথা জোগায় না। অগত্যা রাজপুত্তুরও হার মেনে ফিরে গেলেন।

অবশেষে এলেন রাণীমা, পদ্মাবতী। মেয়ের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে কোলে বসিয়ে বললেন,

"হ্যাঁরে ইন্দু মা। বল না মা কী হয়েছে তোর? কেন তোর মন ভার? কেন হাসি নেই তোর মুখে ? তুই কী খেতে চাস বল মা। আমি সরু সরু সাদা চালের ভাত, সোনালী ঘি মাখিয়ে তোর মুখে তুলে দেব? কী পরবি বল মা। সোনা রুপোর জরিতে নকশা তোলা আশমানি রঙের শাড়ি বুনে দেবে কারিগর?তোর কোন খেলনা চাই বল মা। সেই ঝমঝম ঘুঙুর বাঁধা পুতুলটা? নাকি ছোট্ট চোখ ছোট্ট নাকওলা চিনে পুতুলটা?"
"মা আমার কিচ্ছুটি চাই না মা গো।"
"তবে কেন খাসনি মা? কেন তবে খেলতে যাসনি সইদের সাথে? বল আমায় সত্যি কথা।"

রাজকন্যে মাথা নেড়ে ছলোছলো চোখে ধরা ধরা গলায় বলে ওঠে।
"সে কথা আমি বলতে পারব না মা গো।"

রাণীমা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ভাবেন, কীসের এমন কষ্ট মেয়ের যে মাকেও বলতে পারছে না।  নিজের গলা থেকে পান্নার লকেট দেওয়া সোনার হারটা খুলে পরিয়ে দিলেন ইন্দুমতীর গলায়। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
"আমি যখন ছোট ছিলাম তোর মতো, আমার মা আমায় এই লকেটটা দিয়ে একটা মন্ত্র শিখিয়েছিলেন। লকেটটা মুঠোয় ধরে চুপিচুপি এই মন্ত্রটা আওড়ালে, সব সমস্যা জাদুবলে অদৃশ্য হয়ে যাবে। আয় তোকে শিখিয়ে দি।"

"পান্নাপরী, লুকোচুরি
আর খেলোনা আমার সাথে,
ডাকছি তোমায় দাও সাড়াটি
ঘোচাও দুঃখ নিজের হাতে।"

মেয়েকে মন্ত্র শিখিয়ে রাণীমা চলে গেলেন। ইন্দুমতী লকেটটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগল। ভাবতে লাগল তার সমস্যার সমাধান কি সত্যিই হবে এই লকেট দিয়ে। বিড়বিড় করে মায়ের শেখানো মন্ত্রটা আওড়াতে থাকে ইন্দু।

যেই না মন্ত্রটা বলা পুরোটা, অমনি কী কাণ্ড কী কাণ্ড ! পান্নার লকেটটা থেকে সবুজ আলো ঠিকরে উঠলো। চারপাশটা যেন সবুজ আলোর বন্যায় ভেসে গেল। রাজকন্যে তাড়াতাড়ি চোখে হাতটা চাপা দিলেন। কিছুক্ষণ বাদে চোখ থেকে হাত সরিয়ে দেখেন, এক পরী দাঁড়িয়ে। কী সুন্দর, কী সুন্দর দেখতে তাকে। গায়ের রঙ শ্যামবর্ণ, সবুজ রেশমের মত চুল, পিঠের পালকের ডানা দুটোও গাঢ় সবুজ রঙের। আর চোখদুটো! যেন ওই লকেটের পান্নার দুটো টুকরো বসানো। ইন্দু তো অবাক হয়ে দেখতে থাকে তাঁকে। মুগ্ধতা কাটে যখন সেই পান্নাপরী সুরেলা গলায় বলে ওঠে,

"রাজকন্যে ইন্দুমতী
হাজির পান্নাপরী,
তোমার কষ্ট দূর করতে
বলো না কী করি ?"

যে কথা মা বাবা দাদাভাই কাউকে বলতে পারেনি ইন্দুমতী সেই কথা ধীরে ধীরে বলে পান্নাপরীকে।

" জানো পান্নাপরী, কাল বিকেলে সইদের সাথে রাজপ্রাসাদের বসন্তবাগানে খেলা করছিলাম। আমি, মন্ত্রীকন্যে অপালা, সেনাপতিকন্যে রুচিরা, আর মালীকন্যে রূপমতিয়া।
রূপমতিয়া খুব ভালো জানো তো। ও রোজ আমাদের তিনজনের জন্য ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে দেয়, মুকুট বানিয়ে দেয়। তাতে প্রজাপতির ডানা থেকে ঝরে পড়া রঙিন রেণু লাগিয়ে দেয়। কিন্তু ওর গায়ের রঙ আমাদের তিনজনের মত এর'ম সোনার বর্ণ নয়, আর ওর এরকম সোনা রুপো রেশম দিয়ে বানানো জামাও নেই। তাই তো অপালা, রুচিরা ওরা সব বললে, ওর সাথে খেলা নাকি চলবে না। ও কালো, ও গরিব। ও নাকি আমাদের বন্ধু নয়কো মোট্টে।"

পান্নাপরী মধুর হেসে বলে,
"আচ্ছা ইন্দু আমিও তো তোমাদের মত তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা নই। আমার গায়ে দেখো সোনা নয়, সবুজ পাতা আর ফুলের মালা। তাই বলে কি আমার সাথে তোমার বন্ধুত্ব করবে না?"

"আমি তো সব্বার সাথে বন্ধুত্ব করতেই চাই পান্নাপরী। তোমাকে, রূপমতিয়াকে, সব্বাইকে। কিন্তু ওরা যে বলল, রূপমতিয়াকে খেলতে নিলে ওরা সবাই ওদের বাবাদেরকে গিয়ে নালিশ করবে। তখন মন্ত্রীমশাই, সেনাপতিমশাই যদি আমার বাবাকে বলেন তাহলে বাবা তো রূপমতিয়াদের তাড়িয়ে দেবেন। তাই তো আমি কাউকে কিচ্ছু বলিনি। আমি কি করব পান্নাপরী আমায় বলে দাও।"

"ইন্দু তুমি কিচ্ছু চিন্তা কোরোনা। আমি আছি না মুশকিল আসান পান্নাপরী। তুমি এবার সব সখীদের নিয়ে খেলতে যাও দেখি, রূপমতিয়াকেও সঙ্গে নিও। তারপর দেখো আমি কী করি।"

"সত্যি পান্নাপরী ?! তুমি সব ঠিক করে দেবে ?"

"আমি মুশকিল আসান
আমি পান্নাপরী
কষ্ট সব গায়েব হবে
দেখো জাদুকরী"

রাজকন্যে তো ভারী খুশি হয়ে নাচতে নাচতে চললেন বসন্ত বাগানে। অপালা, রুচিরা সব ওর অপেক্ষাতেই বসেছিল। দূরে এক কোণে রূপমতিয়া শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে। বাগানের ভেতর আসার সাহস হয়নি সে বেচারার। রাজকন্যেকে হাসিমুখে আসতে দেখে ওরও মুখে হাসি ফুটল। রূপমতিয়ার হাতটি ধরে ইন্দু তাকে সবার মাঝে নিয়ে এল। ওকে দেখেই তো অপালা আর রুচিরার ভীষণ মুখ ভার। রাজকন্যেকে তারা বলে উঠলো,
"রাজকন্যে ইন্দু! আমরা কিন্তু কিছুতেই খেলব না ওর সাথে। তুমি বেছে নাও ওর সই হবে না কি আমাদের সই হবে।"

ইন্দু তো মনে মনে তখন পান্নাপরীকে স্মরণ করে চলেছে। এমন সময় হঠাৎ সারা বসন্তবাগান সবুজ আলোয় ভরে গেল। সবাই তো ভারী অবাক। একমাত্র ইন্দুই জানে এটা পান্নাপরীর আসার সংকেত। কিন্তু সবুজ আলোর রোশনাই কাটতে সবাই দেখে সামনে একটা থুত্থুড়ে বুড়ি দাঁড়িয়ে। চুলে তার কতদিনের জটা। দাঁতগুলো সব হলুদ। নখগুলো খোঁচা খোঁচা। হাতে একটা বাঁকা চোরা লাঠি। খনখনে গলায় হেসে উঠে বুড়ি বলে উঠলো

"আমি হলাম শ্যাওলা ডাইন
আমি জলের তলায় থাকি,
ছোট্ট ছোট্ট ছেলে মেয়েদের
দাস দাসী বানিয়ে রাখি।"
 বন্ধু

এবার তো সকলেই এমনকি ইন্দুমতীও ভীষণ ভীষণ ভয় পেল। এ কী রে বাবা ! পান্নাপরী কই?! শ্যাওলা ডাইন বাঁকা লাঠিটায় ভর দিয়ে একপাক নেচে নিল। ইন্দুর হাতটা কপাৎ করে ধরে বলল,

"এই তো! এবার রাজকন্যে দাসী করব। আগামী এক বছরের জন্য আমার জলের তলার শ্যাওলা মহলে কাজ করবি তুই। ঘর ঝাড়পোঁছ করবি, রান্না করবি, বাসন মাজবি, কাপড় কাচবি, আমার গা হাত পা টিপে দিবি।"

শুনে তো রাজকন্যে কাঁদতে শুরু করল। কাজ করার কষ্টের চেয়েও তো বেশি কষ্ট হবে মা বাবা দাদাভাই কে ছেড়ে থাকতে। এ কীরকম হল! পান্নাপরী কোথায় গেল? সে যে তবে বলল সব সমস্যা দূর করবে। দুঃখে দু'চোখ বেয়ে জলের ধারা গড়ায় ইন্দুমতীর।

অপালা রুচিরা ওরাও বলে উঠল,
"শ্যাওলা ডাইন তোমরা আমাদের সই রাজকন্যে কে ছেড়ে দাও দয়া করে। সোনা দানা মণি মুক্তো হীরে জহরৎ যা চাইবে সব দেব। শুধু ইন্দুকে ছেড়ে দাও।"

খ্যানখ্যান করে হেসে উঠে ডাইনিবুড়ি বলল,
"আমার বাড়ির ঝি তাহলে কে হবে শুনি? এই যে মেয়ে তবে রাজকন্যের বদলে তুই চল এক বছরের জন্য।"

অপালা ওমনি ঘাবড়ে পিছিয়ে গিয়ে মাথা নেড়ে বলে,
"না না তা কী করে হয়! আমি ওসব কাজ পারিনে মোটেও।"

"তাহলে তুই চল!" রুচিরার দিকে ফিরে বলে শ্যাওলা ডাইন।

রুচিরাও অপালার মতই বলে ওঠে,
"আমি মা বাবাকে ছেড়ে অতদিন কিছুতেই থাকতে পারব না, কিছুতেই না।"

ডাইনিবুড়ি হলুদ হলুদ দাঁত বার করে, জটা নেড়ে, আরো জোরে হেসে বলে ওঠে,
"তোদের তিনটেকেই তবে নিয়ে যাই। আমাকে তাহলে আর তিন বছরের জন্য দাসী খুঁজতে হবে না।"

এই শুনে তো রুচিরা আর অপালা গলা ছেড়ে কাঁদতে শুরু করল। এমন সময় সবার অলক্ষ্যে থাকা রূপমতিয়া কখন যেন গুটিগুটি পায়ে সামনে এগিয়ে এসেছে। ধীর গলায় বলে সে,

"শ্যাওলা বুড়ি! ও শ্যাওলা বুড়ি। তুমি রাজকন্যে ইন্দুমতী, মন্ত্রীকন্যে অপালা আর সেনাপতিকন্যে রুচিরা, তিনজনকেই ছেড়ে দাও। তার বদলে আমাকে নিয়ে চলো তিন বছরের জন্য। আমি তোমার সঅঅঅব কাজ করে দেব। আমার এসব অব্যেস আছে। ওঁরা কি পারেন বলো এত্তসব কঠিন কাজ। আর ওঁরা চলে গেলে রাজ্যেরই বা কী হবে! ওঁদের মা বাবারা কেঁদে কেঁদেই যে সারা হবেন। তখন রাজ্য চলবে কী করে? আমি বরং একছুটে আমার বাবা মা কে সব জানিয়েই ফিরে আসছি। তারপর যেথায় বলবে, যতদিনের জন্য বলবে, আমি যাব। তুমি শুধু আমার সই-দের ছেড়ে দাও দয়া করে।"

ইন্দুমতী সহ বাকিরা অবাক চোখে চেয়ে রইল মালীর মেয়ের দিকে, যার না আছে ওদের মত সোনার বরণ অঙ্গ, না আছে অঙ্গ ভরা সোনার গহণা, না আছে সোনার জরিবোনা রেশমের জামা। কিন্তু আছে একটা সোনার মত নিখাদ নির্মল উজ্জ্বল মন।

ইন্দুমতী বলে উঠল,
"দেখলি অপালা, দেখলি রুচিরা। শুনলি তোরা রূপমতিয়ার কথা। ওর মত বন্ধু ক'জনের আছে?! আর তোরা কীনা ওর সাথেই খেলতে চাইছিলি না।"

অপালা আর রুচিরার চোখের গড়িয়ে পড়া জল বলে দিল ওরা ওদের ভুলটা বুঝেছে আর মনে মনে খুব লজ্জা পেয়েছে। এগিয়ে এসে দুজনে রূপমতিয়ার দুটি হাত ধরে বলল,
"রূপমতিয়া বোন আমাদের। ক্ষমা করে দে আমাদের। আমরা আজ থেকে চারজন প্রাণের সই হলাম।"

রূপমতিয়া তো এদিকে লজ্জায় অস্থির। ইন্দুমতী তো ওর প্রাণের সই ছিলই, আরো দুই সই পেয়ে আজ তো রূপমতিয়া সবচেয়ে ধনী মানুষ সারা রাজ্যে।

চারটে শিশু হাতে হাত দিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। ঘুরে ঘুরে নেচে নেচে গাইতে লাগল।

"আমরা চারটি সই
হাসি গাই আর নাচি,
সবাইকে বিলিয়ে খুশি
আনন্দেতে বাঁচি।"

ভুলেই গেল যে শ্যাওলা ডাইনির মত বিপদ তাদের সামনে। সেদিকে খেয়াল পড়তেই সবাই ভয়ে ভয়ে তাকায়। কিন্তু কোথায় শ্যাওলা ডাইনি? তার জায়গায় দাঁড়িয়ে মিষ্টি একটা সবুজ ডানাওয়ালা পরী, পান্নাপরী। ইন্দুমতী তো দৌড়ে গিয়ে হাতটা ধরল পান্নাপরীর। বলে উঠল,

" পান্নাপরী তুমিই তবে শ্যাওলা ডাইনির ছদ্মবেশ নিয়েছিলে? আমরা তো ভয়েই মরি।"

মিষ্টি হেসে নরম গলায় পান্নাপরী বলে,
"যাদের রূপমতিয়ার মত বন্ধু আছে, তাদের আবার ভয়টা কীসের  শুনি। এবার থেকে তাহলে চার সখীতে মিলে মজা করে থাকো, কেমন? সবসময় মনে রাখবে সোনা-দানা, নাম-যশ, রূপ-রঙ এসব দিয়ে কিন্তু বন্ধুত্বের বিচার হয়না মোট্টে। আসল বন্ধু সেই যে প্রয়োজনে নিজের কথা ভুলে গিয়ে অন্যজনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। তোমরা চারজন একে অপরের এবং রাজ্যের সকলের প্রকৃত বন্ধু হয়ে ওঠো। আর কোনো বিপদে পড়লে আমি তো আছিই। আজ তবে চলি কেমন?"

আমার কথাটি ফুরোলো
নটে গাছটি মুড়োল
চার সখী আর পান্নাপরী
আহা! দেখে চক্ষু জুড়োলো।

 

ছবিঃ বৃষ্টি প্রামাণিক

একটি আড়াই বছরের সন্তানের জননী। স্বামীর কর্মসূত্রে বর্তমানে আমেরিকায় থাকেন, দেশের ঠিকানা হাওড়া। বছর তিন আগে কলকাতার সাহা ইনস্টিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স থেকে পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছেন। শিশু-কিশোর সাহিত্য পড়তে ও লিখতে ভালবাসেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা