সকাল থেকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। ছুটির দিন থাকায় বেরোনোর তাগিদ ছিল না। বরং পিঙ্কি আর তিন্নির উৎসাহে সাকাল থেকেই পিকনিক-পিকনিক আমেজে দিনটা কাটছিল। চায়ের সঙ্গে টা মাঝে মাঝেই সাপ্লাই হচ্ছিল— কখনও পিঙ্কির হাত দিয়ে, কখনও তিন্নির হাত দিয়ে। সঙ্গে ফাউ হিসেবে তিন্নির সঙ্গে খুনসুটি। এই ভাবেই সকালটা কেটে গেল। দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়ার পর ইজিচেয়ারে আয়েস করে সবে বসেছি এমন সময় তিন্নির হাঁকডাক শুরু হয়ে গেল।
-"কাকু, তাড়াতাড়ি এস। জলদি-জলদি।"
তিন্নির হাঁকাহাঁকিতে ঘর থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলাম, কিন্তু ওকে কোথাও দেখতে না পেয়ে চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "তুই কোথায়"?
-"আমি ছাদে, জলদি এস।"
দু'তিনটে করে সিঁড়ি টপকে ছাদে গিয়ে দেখি, ও আনন্দে দু'হাত তুলে নাচছে। একটু রাগ হল বটে তবে তা প্রকাশ না করে বললাম, "কী হল, অমন হাঁকাহাঁকি করছিস কেন"?
"ওই দেখ" বলে ও আকাশের দিকে আঙুল তুলে দেখাল।
তাকিয়ে দেখি আকাশ জুড়ে বিশাল এক রামধনু।
ওকে বললাম, "ওটা কী জানিস?"
ও ঠোট উল্টে বলল, "জানবো না কেন? ওটা তো রামধনু।"
আমি বললাম, "ঠিক, এবারে বলতো ওতে কটা রঙ আছে?"
আবারও ঠোট উল্টে বলল, " কটা আবার, সাতটা?"
-"ঠিক বলেছিস। এবারে রঙগুলির নাম বলতো?"
-"রেড, অরেঞ্জ, গ্রিন, ব্লু, ভায়োলেট" এই পাঁচটা নাম বলেই ও মাথা চুলকোতে শুরু করে দিল।
- "বাকি দুটো নাম কী হল?"
- "মনে পড়ছে না, কাকু।"
-"তাহলে হেরে গেলি?"
- "হ্যাঁ, হেরেই গেলাম। তুমি বলে দাও।"
-"ঠিক আছে, তাহলে নিচ থেকে দুটো চেয়ার নিয়ে আয়।"
তিন্নি ছুটে গিয়ে নিচ থেকে দুটো চেয়ার নিয়ে এল। ওকে একা আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, "পিঙ্কিকে ডাকলি না?" উত্তরে ও বলল, "ও ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছে।" আমি বললাম, "তাই, না ইচ্ছে করে ডাকলি না? তুই একা শুনে পরে দিদির উপর খবরদারি করবি, তাই তো?" ও কোনো উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে চেয়ারটা টেনে বসে পড়লো।
বৃষ্টির পর রোদ উঠলে আকাশে মাঝেমধ্যে রামধনু দেখা যায়। সূর্য আকাশের যেদিকে থাকে তার উল্টো দিকের আকাশে যে সাত রঙের বর্ণালী দেখা যায় সেটাই হল রামধনু। প্রকৃতির এই রঙিন আলপনা মূলত বৃত্তাকার হয়। তবে আমরা অর্ধেকটা দেখতে পাই। এর কারণ এই বৃত্তাকার রামধনুর কেন্দ্র দিগন্ত বরাবর থাকে এবং এই কেন্দ্র থেকে সূর্য পর্যন্ত অঙ্কিত কাল্পনিক সরলরেখা বরাবর আমাদের দৃষ্টি থাকে বলে আমরা রামধনু অর্ধবৃত্তাকার দেখি।
অনেক ওপর থেকে দেখতে পাওয়া যায় সম্পূর্ণ বৃত্তাকার রামধনু
-" গোলাকার বা বৃত্তাকার রামধনু কি কখনই দেখা যায় না? "
-"যায়। তুই যদি হেলিকপ্টারে চড়ে আকাশে অনেক উঁচুতে উঠিস বা কোনো আকাশ ছোঁয়া বাড়ির ছাদে উঠিস তাহলে রামধনুর নিচের অংশটা দেখতে পাবি। অর্থাৎ, তখন অর্ধবৃত্তাকারের পরিবর্তে বৃত্তাকার রামধনু দেখতে পাবি। "
ঠোঁট উল্টে তিন্নি বলল, "নাঃ, গোল রামধনু আর দেখা হল না।"
আমি বললাম, "হতেও তো পারে। যাই হোক তুই যে রঙ দুটো বলতে পারিসনি তার একটা হল "ইন্ডিগো" এবং আরেকটা হল "ইয়োলো"। প্রথমটা বেগুনি ও নীল রঙের মাঝখানে আর দ্বিতীয় গ্রিন ও অরেঞ্জ রঙের মাঝখানে দেখতে পাওয়া যায়। এবারে ভায়োলেট থেকে পর পর রঙগুলি সাজিয়ে বল কী কী পেলি?"
- বেগুনি (Violet), বেগনি নীল (Indigo), নীল (Blue), সবুজ (Green), হলুদ (Yellow), কমলা (Orange) এবং লাল (Red)।
- বেশ, এবারে ইংরেজি শব্দগুলির প্রথম অক্ষরগুলি পর পর লিখলে কী দাঁড়ায় দেখ— "VIBGYOR" বাংলায় উচ্চারণ করলে হয় "ভিবজিওর"। এই নামটা মনে রাখবি তাহলে আর সাতটা রঙের নাম কোনোদিন ভুলবি না।
- বাঃ, নাম মনে রাখার একটা ভালো ট্রিক্ দেখালে তো কাকু।
তিন্নিকে যেটা বোঝালাম সেটা এবার তোমাকেও বলি।
রামধনু একটা প্রাকৃতিক ঘটনা। বৃষ্টির পর বাতাসে ভেসে থাকা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম গোলাকার জলকণার উপর সূর্যের আলো যখন একটা বিশেষ কোনে আপতিত হয় তখন সূর্যের আলো বিশ্লিষ্ট হয়ে এই রামধনু তৈরি হয়। যেসব বস্তু ভেদ করে আলো চলাচল করতে পারে না সেগুলিকে অস্বচ্ছ পদার্থ বলে। আর যেসব বস্তুর ভিতর দিয়ে আলো চলাচল করতে পারে তাদের বলা হয় স্বচ্ছ পদার্থ। জল স্বচ্ছ পদার্থ। তাই বায়ুমন্ডলে ভেসে থাকা জলকণার ভিতর দিয়ে সূর্যের আলো চলাচল করতে পারে। এই চলাচল করার সময় তিনটে ঘটনা ঘটতে পারে— (১) প্রতিফলন, (২) প্রতিসরণ এবং (৩) আলো বিশ্লিষ্ট হয়ে বর্ণালীর সৃষ্টি। এই ঘটনাগুলির জন্যই আকাশে রামধনু দেখতে পাওয়া যায়।
উপরের ছবিটা দেখলে সহজেই বোঝা যাবে রামধনু সৃষ্টির রহস্য। এখানে সূর্যের আলো জলবিন্দুর উপর আপতিত হয়ে প্রথমে প্রতিসৃত হয়েছে। তারপর আভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের পর জলবিন্দু থেকে আলো আগের মাধ্যমে প্রবেশ করার সময় পুনরায় প্রতিসৃত হয়েছে এবং বিশ্লিষ্ট হয়ে বর্ণালী সৃষ্টি করেছে। এখানে লক্ষণীয়, আপতিত রশ্মি ও অন্তিম প্রতিসৃত রশ্মি দুটি বর্ধিত করার পর উৎপন্ন কোণটি। সূর্য দিগন্তের কাছাকাছি থাকলে তবেই এই ধরনের প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে। তাই রামধনু সকালের দিকে অথবা বিকেলের দিকেই দ্দেখতে পাওয়া যায়। দুপুরে সাধারণত দেখা যায় না। এইভাবে প্রতিটি জলবিন্দুতে যে বর্ণালীর সৃষ্টি হয় তা একত্রে রামধনুর আকার ধারণ করে। সূর্য যেদিকে থাকে রামধনু তৈরি হয় তার উল্টো দিকে। সাতরঙা রামধনুর নিচের প্রান্তে যদি বেগুনি রঙ থাকে আর উপরের প্রান্তে যদি লাল রঙ থাকে তাহলে সেই রামধনুকে বলা হয় 'প্রাথমিক রামধনু'। এই রামধনু বেশ উজ্জ্বল হয়। এক্ষেত্রে জলবিন্দুতে আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন একবার হয়। এছাড়াও আরও অনেক রকমের রামধনু আছে।
আমার কথা শুনে তিন্নি বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, "আরও অনেক রকমের রামধনু আছে? আমরা তো এই একটা রামধনুই দেখি"।
আমি বললাম, "দেখিস ঠিকই, তবে সেগুলি এই প্রাথমিক রামধনুর মতো অত সুন্দর দেখতে হয় না বলে মনে রাখার চেষ্টা করিস না। তাই ভুলে যাস"।
-"সেগুলির কি আলাদা আলাদা নাম আছে?"
- "আছে। এবার এদের কথাই বলব। মন দিয়ে শোন।"
জোড়া রামধনু এবং আলেকজান্ডারের ডার্ক ব্যান্ড
মাধ্যমিক রামধনুঃ এই রামধনুর বর্ণালীর সজ্জা হয় প্রাথমিক রামধনুর ঠিক উল্টো, অর্থাৎ এতে বেগুনি রঙ থাকে উপরের প্রান্তে আর লাল রঙ থাকে নিচের প্রান্তে। এই রামধনুর ঔজ্জ্বল্য প্রাথমিক রামধনুর ঔজ্জ্বল্যের তুলনায় কম হয় এবং এটি আকাশে প্রাথমিকের তুলনায় অপেক্ষাকৃত উপরের দিকে গঠিত হয়। এই রামধনু কচ্চিৎ আকাশে দেখা যায়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় রামধনুকে যদি কখনও একসঙ্গে আকাশে দেখা যায় তখন সেটাকে বলা হয় 'জোড়া রামধনু' (Double Rainbow)। এক্ষেত্রে আকাশে ভেসে থাকা জলবিন্দুতে আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন হয় দু'বার। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক রামধনুর মধ্যকার আকাশ বাকি আকাশের তুলনায় একটু বেশি গাঢ় দেখায়। গ্রিক দার্শনিক আলেকজান্ডারের নামানুসারে আকাশের এই অঞ্চলটিকে বলা হয় 'আলেকজান্ডারের ডার্ক ব্যান্ড'। ২০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিনিই প্রথম এই অঞ্চলটি চিহ্নিত করেছিলেন।
যমজ রামধনুঃ আকাশে যদি এককেন্দ্রীয় দু"টি প্রাথমিক রামধনু দেখা যায় তাহলে তাকে বলা হয় "যমজ রামধনু"। এই ধরনের রামধনুর সৃষ্টির কারণ বায়ুতে ভেসে থাকা বিভিন্ন আকারের জলকণা। দু'টি রামধনুতেই বর্ণালী সজ্জা একই রকম হয়ে থাকে।
বৃত্তাকার রামধনুঃ রামধনু সাধারণত বৃত্তাকারই হয়। তবে আমরা দেখতে পাই দিগন্তের উপরের অংশটি। তাই মনে হয় রামধনু অর্ধবৃত্তাকার। আকাশে অনেক উপরে উঠলে দিগন্তের নিচের অংশটি দেখা যায়। পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে বৃত্তাকার রামধনু দেখতে হলে সূর্য আকাশে যেদিকে থাকবে তার বিপরীত দিকে কৃত্রিম উপায়ে জল এমনভাবে স্প্রে করতে হবে যাতে বায়ুতে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জলবিন্দু ভেসে থাকে। রামধনু তৈরির নিয়ম মেনে যদি সূর্যালোক ওই জলবিন্দুগুলির উপর আপতিত হয় তবে গোলাকার রামধনু দেখা যাবে যদিও এই রামধনু আকারে অনেক ছোট হবে।
অতিরিক্ত রামধনুঃ অনেক সময় প্রাথমিক রামধনুর ভিতরের দিকে বা মাধ্যমিক রামধনুর বাইরের দিকে কতগুলি অনুজ্জ্বল রামধনু দেখা যায়। এগুলিকেই অতিরিক্ত রামধনু বলা হয়। এরা এতটাই অস্পষ্ট থাকে যে সহজে দেখা যায় না। এদের বর্ণালী সজ্জাও সব সময় নিয়ম মেনে হয় না। এই ধরনের রামধনুর সৃষ্টি এক বিরল ঘটনা।
প্রতিফলিত রামধনুঃ বড় বড় জলাশয়ের কাছাকাছি আকাশে রামধনু দেখা গেলে অনেক সময় এর প্রতিবিম্ব জলাশয়ের জলের নিচে দেখতে পাওয়া যায়। একেই বলা হয় প্রতিফলিত রামধনু। এক্ষেত্রে দু"টি রামধনু দেখতে পাওয়া যায়। একটি দিগন্তের উপরে আরেকটি দিগন্তের নিচে জলে ভিতরে (প্রতিবিম্ব)।
একরঙা রামধনুঃ সূর্য উদয় হওয়া বা অস্ত যাওয়ার মুখে হাল্কা বৃষ্টি হলে অনেক সময় আকাশে রামধনু দেখা যায়। এই ধরনের রামধনুতে সাতটি রঙের পরিবর্তে মাত্র একটি রঙ দেখা যায় এবং সেটা লাল রঙ।
উচ্চতরক্রম (হায়ার-অর্ডার) রামধনুঃ জলবিন্দুর ভিতর সূর্যের আলোর আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন যতবার হবে রামধনুর ক্রম (অর্ডার) তত হবে। যেমন প্রাথমিক রামধনুতে আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন একবার হয়। তাই একে এক-ক্রম বা ফার্স্ট-অর্ডার রামধনুও বলা হয়। মাধ্যমিক (সেকেন্ডারি) রামধনুর ক্ষেত্রে এই প্রতিফলন হয় দু"বার। তাই একে বলা হয় দুই-ক্রম বা টু-অর্ডার রামধনু। আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন তিনবার হলে তিন-ক্রম বা থার্ড-অর্ডার রামধনু, চারবার হলে চার-ক্রম বা ফোর্থ-অর্ডার… রামধনু বলে।
মুন বো
চাঁদের আলোয় রামধনুঃ বাতাস ভেসে বেড়ানো সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জলবিন্দুর উপর শুধু সূর্যের আলো পড়লেই যে রামধনুর সৃষ্টি হয় তা নয়। চাঁদের আলোতেও রামধনু হতে পারে। তবে এই রামধনু সূর্যের আলোয় সৃষ্ট রামধনুর মতো অত সুন্দর হয় না। সূর্য অস্ত গেলে তবেই আকাশে চাঁদ দেখা যায়। তাই এই রামধনু রাতে দেখতে পাওয়া যায়। বড় বড় ফোয়ারা বা ঝরনার সামনে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জলকণার যে কুয়াশা সৃষ্টি হয় তাতে চাঁদের আলো পড়লে অনেক সময় রামধনু দেখা যায়। একে বলে 'মুন বো' ।
শুধু আকাশেই রামধনু দেখা যায় তা নয়। ঝরনা, ফোয়ারা, সমুদ্রের ঢেউ ইত্যাদির মতো যেসব জলের উৎসের কাছে কুয়াশার মতো জলকণা বাতাসে ভেসে বেড়ায় সেসব জায়গাতেও সূর্যের আলোয় রামধনু সৃষ্টি হতে পারে।
বাঁদিকে সমুদ্রের জলের ওপরে এবং ডান দিকে ঝর্ণার সামনে রামধনু সৃষ্টি হয়েছে
রামধনু কীভাবে তৈরি হয় তার প্রথম বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন অ্যারিস্টটল। তিনি বলেছিলেন যে আকাশের মেঘে সূর্যের আলোর একটি বিশেষ কোণে প্রতিফলন হলে রামধনুর সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে ডেকার্টে এক নতুন কথা শোনালেন। তিনি বললেন যে রামধনু তৈরির জন্য মেঘে উপস্থিত জলরাশির সম্মিলিত প্রতিফলনের প্রয়োজন নেই। একটি জলকণাই যথেষ্ট। প্রতিটি জলকণায় যে বর্ণালীর সৃষ্টি হয় তা সম্মিলিতভাবে রামধনুর জন্ম দেয়।
এবারে একটা অবাক করা কথা শোনাই। বিজ্ঞানীদের ধারণা শনির উপগ্রহ টাইটানেও রামধনু তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ সেখানে মেঘ আছে, বৃষ্টি হয় ফলে আবহাওয়া ভিজে। তবে পৃথিবীর মতো জল সেখানে নেই, সেখানে আছে তরল মিথেন। তাই বিজ্ঞানীদের অনুমান সেখানকার রামধনুর চরিত্র পৃথিবীর রামধনুর মতো নাও হতে পারে।
একটু থেমে তিন্নিকে বললাম, "আজ এই পর্যন্তই থাক। বড় হয়ে আরও বিশদে জানতে পারবি"।
তিন্নি উত্তরে বলল, "স্কুলে রচনা লিখতে দিলে জমিয়ে লেখা যাবে"।
ছবিঃ উইকিপিডিয়া